ঘর ঝাড়ু দিয়ে পরিষ্কার করা হয়েছে। অনেকগুলো হাবিজাবি জিনিসের মধ্যে বাচ্চাটার চোখ আটকে গেল একটা ব্লেডের দিকে। পুরনো জং ধরা ব্লেড। কাজ করতে থাকা বুয়ার চোখ এড়িয়ে সে হাতিয়ে নিল জিনিসটা। হাঁচড়ে-পাঁচড়ে খাটের উপর উঠে দেখল মা শুয়ে আছে। মায়ের কাছে গিয়ে বসে বাড়ানো ধবধবে হাতটাতে ব্লেড দিয়ে আড়াআড়ি একটা টান দিল সে। কি সুন্দর রক্ত বেরোচ্ছে! আধো মুখে বলতে লাগল, ‘মা তুমি মরো, মা তুমি মরে যাও।’
এই বাচ্চার মা কোনো গল্পের মা নয়। তিনি আমার মায়ের সহকর্মী, ঢাকার একটি নামী সরকারী কলেজের শিক্ষিকা। আল্লাহ তাকে অল্পের উপর দিয়ে বাঁচিয়ে দিয়েছিলেন। হাতের রেডিয়াল আর্টারিটা কেটে গেলে অনেক রক্তক্ষরণ হতো, আর সাথে সাথে এমন কিছু নার্ভ কাটা পড়তে পারত যে, হাত হয়তো অচল হয়েই যেত।
কারণ অনুসন্ধানে জানা গেল—শিশুটি টিভিতে এক সিরিয়াল কিলারকে খুন করতে দেখেছে। এরপর তা অনুকরণ করেছে। এর পরের ঘটনা আরও ভয়াবহ। বাচ্চাটির বাবা বাসায় এসে এমন মার মেরেছে যে, অবোধ শিশুটা ভয়ে শক্ত হয়ে গেছে। সে বুঝতেও পারছে না কেন তাকে মারা হচ্ছে। সে তো শুধু ওই লোকটার মতোই করেছিল, যার কাজ-কর্ম বাবা-মা প্রতিদিন অধীর আগ্রহে দেখেন।
…
M. Hasan Sifat –
সাল ২০১৬, বিবিএ ২য় বর্ষে পড়ি তখন । একদিন কিভাবে কিভাবে যেন অনলাইনে “তত্ত্ব ছেড়ে জীবনে” বইটার সন্ধান পেলাম । আমার জীবনে প্রথম অনলাইনে কেনাকাটা ছিল “বই” । আর সেগুলো ছিল সিয়ান ও সরোবর পাবলিকেশনের কয়েকটা বই ।
–
সেক্যুলার প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করে, তাদের ধ্যান ধারনায় বড় হওয়া এই আমাকে সেদিন প্রচন্ড জোড়ে ধাক্কা দিয়েছিলো একটা বই । “তত্ত্ব ছেড়ে জীবনে” । ক্যাম্পাসের সেই অস্থিতিশীল পরিবেশেও স্রোতের বিপরীতে একাকী চলতে সাহস জুগিয়েছিল একটা বই । “তত্ত্ব ছেড়ে জীবনে” ।
–
একটা সময় প্রচুর গান গাইতাম, গান শুনতাম ।
“গান না শুনলেই কি নয়”, “এত সুর এত গান”– এই দুটো আর্টিকেল পড়ার পর একদিন সাহস করে মেমোরী কার্ড থেকে সমস্ত গানের শিকড়সহ উপড়ে ফেলে দিয়েছিলাম ।
–
দাড়ি রাখা সম্পর্কে অনেক ভুল ধারনা ছিল আমার, সে অজ্ঞতা দূর হয়েছে এই বইটি পড়ে ।
“দাড়ি কি রাখতেই হবে” শিরোনামের আর্টিকেলটি দাড়ি রাখতে আমাকে উদ্বুদ্ধ করেছিল । যেদিন দাড়ি রাখার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিলাম, সেদিন সাহস যোগানোর জন্য দুটো বইয়ের দুটো আর্টিকেল রিভিশন দিয়েছিলাম একটা হচ্ছে- “তত্ত্ব ছেড়ে জীবনে” বই থেকে আরেকটা হচ্ছে “ডাবল স্ট্যান্ডার্ড” বই থেকে ।
–
“তত্ত্ব ছেড়ে জীবনে” বইটা যখন পড়ছিলাম, মনে হচ্ছিলো আমার এতদিনের করা ভুলগুলো চোখে আঙুল দিয়ে কেউ দেখিয়ে দিচ্ছে । চিন্তাশীল অন্তর নিয়ে, পুরো বইটা পড়েছিলাম । ইসলামের আদেশ-নিষেধ, অনুশাসনগুলোর সাথে আমার বাস্তব জীবন কীভাবে সম্পৃক্ত, মুসলিম হিসেবে আমার কী করার কথা আর আমি কী করছি– এই ব্যাপারগুলো আমাকে ভাবাতে বাধ্য করেছিল । জাহিলিয়াতের ঘোর কেটে বাস্তবতায় ফিরে এসেছিলাম । বইটা পড়ার পর এ কথা গুলোই মনে হয়েছে যে,, এত দিন কেন জানিনি ? কেন বুঝিনি ? কেন এভাবে চিন্তা করতে শিখিনি ?!
–
বইটি সামগ্রিক দৃষ্টিকোণ থেকে খুবই উপকারী । বিশেষ করে আমরা যারা জেনারেল লাইনে পড়াশোনা করেছি তাদের জন্যে । আমার পরিবর্তনের পিছনে যে বইয়ের এতো এতো ভূমিকা রয়েছে, আর যাই হোক সেগুলোকে অস্বীকার করতে পারবো না ।
–
–
বই— “তত্ত্ব ছেড়ে জীবনে”
প্রকাশনী— সিয়ান পাবলিকেশন ।