মিতুর বেশ ঘুম পাচ্ছে। কিন্তু ঘুমানো যাবে না। রাসেল এসে যদি দেখে নতুন বউ ঘুমাচ্ছে, বিশ্রী ব্যাপার হবে। ঘরটা জুড়ে ফুলের গন্ধ। ড্রেসিং টেবিলের উপরে একটা ফুলদানীতে দোলনচাঁপা ফুল রাখা। খুব সুন্দর গন্ধ আসার কথা থাকলেও আসলে আসছে না; কারন ঘরে গাঁদাফুল আর রজনীগন্ধার গন্ধ। ওর গাঁদা আর রজনীগন্ধার গন্ধ খুব বাজে লাগে। ওর ইচ্ছা করছে সামনের জানালা দিয়ে গাঁদা আর রজনীগন্ধাগুলো ফেলে দিতে। শুধু দোলনচাঁপার গন্ধ থাকবে রুম জুড়ে। কিন্তু ইচ্ছে করলেই তো আর হবে না। জীবনে মানুষের বেশির ভাগ ইচ্ছাই পূরন হয় না। দুনিয়া ইচ্ছা পূরণের জায়গা না, পরিক্ষার জায়গা। এটাই নিয়ম। মাঝে মধ্যে হঠাত করে দুই একটা ইচ্ছা পূরন হয়ে যায়।
এই যেমন মিতুর খুব ইচ্ছা ছিলো ওর বিয়েটা খুব সাধারন হবে। বড়জোর ৫০ জন মানুষ উপস্থিত থাকবে। কিন্তু সেটা হলো না। মিতুর অন্তরে বদ্ধমূল ধারণা যে সাধারণ বিয়ের দম্পতিরাই অসাধারণ সুখী জীবন যাপন করে। এর মধ্যে কী অদৃশ্য সূত্র কাজ করে তা মিতু জানে না।
ফেরদাউস মিক্বদাদ –
বইটি পড়েছি, ভালো লেগেছে।
ফেরদাউস মিক্বদাদ –
বইটি পড়েছি, ভালো লেগেছে। মনে হচ্ছে এর দ্বিতীয় আরেকটি বই বের হলে আরো উপকৃত হতাম।
Khadijatul kubra –
গল্পটা পড়ে দুচোখ ভিজে গিয়েছে। অথচ বাস্তব জীবন গল্পের চেয়েও সুন্দর কিংবা কঠিন। জীবন নাটকের চেয়েও নাটকীয়, গল্পের চেয়েও গল্পময়।
রুক্ষ পৃথিবীর বহুরঙ দেখার পরেও কোনো অলৌকিক ছোঁয়ায় সবকিছু ঠিক করে দিতে ইচ্ছা হয় খুব।
গল্পেও জীবন খুঁজে পাওয়া মানুষের তথাকথিত বড় হওয়া হলো না!
এই বইতে অনেকগুলো চমক আছে। আর বিশেষ আকর্ষণ হলো এর সমাপ্তি।
কাঠখোট্টা জ্ঞানের বই থেকে একটু বিরতি নিতে,একটু বিশ্রামের সময় অনন্য সঙ্গী হতে পারে এই বই।
Farzana Ashrafi –
‘শেষ পর্যন্তও’ এক কথায় চমৎকার একটা উপন্যাস। হুমায়ূন আহমেদ ব্যতিত সমসাময়িক দেশীয় অন্য ঔপন্যাসিকদের লেখা তেমন পড়া হয়নি। কারণ একটাই, ভাল লাগেনি। ‘শেষ পর্যন্তও’ তেমন নয়। লেখাটা যখন পড়েছি তখনো এটা ‘বই’ হয়নি। একটা ফেইসবুক পেইজ থেকে লেখক আপডেইট দিতেন। আর অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতাম পরের অংশটা কখন আপলোড দেয়া হবে।
রাসেল আর মিতুকে ভীষণ আপন লাগত। নতুন বিয়ের পর ওদের উথাল-পাথাল দাম্পত্য প্রেম আর তার পরেই সম্পর্কের তার কেটে যাওয়া, এ যেন ঠিক ঘরের গল্প!
পড়তে পড়তে বারবারই মনে হত, কত ভুলই যে করি আমরা! বিয়ের পর এদেশের সিংহভাগ নারী-পুরুষ সস্পর্কটাকে ‘ফর গ্রান্টেড’ ধরে নেয়। বাচ্চা হয়ে গেলে তো কথায় নেই। “ও আর যাবে কোথায়?” এমন একটা ধারণা থেকে পরস্পরের প্রতি মনোযোগ, যত্নশীলতা সব বিলুপ্তি পায়। ফলাফল একই ছাদের নিচে থেকেও সৃষ্টি হয় যোজন যোজন দূরত্ব। তা যেন আর ঘুচবারই নয়! এমন করেই যৌথ জীবন পার করেন অজস্র দম্পতি। অথচ সম্পর্ক ব্যাপারটা ঠিক একটা চারা গাছের মত। ফুল, ফল পেতে নিয়মিত সার-পানি দিতে হয়। ঝড়ঝাপটা থেকে বাঁচতে ঠেকনো দিতে হয়। চারপাশে শক্ত বেড়া বেধে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হয়। তবেই তা থেকে ফুল-ফলে প্রাপ্তি ঘটে।
ছন্দবদ্ধ একঘেয়ে জীবনে বিরক্ত মিতু যখন সেপারেশনের সিদ্ধান্ত নেয় তখনই তাদের উপলব্ধিতে ধরা পড়ে পরস্পরের প্রতি অমনোযোগীতা আর কমিউনেশন গ্যাপ তাদের চমৎকার ‘হতে পারত’ সম্পর্কটাকে অন্ধকার খাঁদে নিয়ে ফেলেছে। সংসারের কর্তব্যকর্ম করতে গিয়ে নিজেদের কেই তারা হারিয়ে ফেলেছে। অসংখ্য বাঙালি দম্পতির চিরচেনা গল্প। লেখিকা গল্পের ছলে সেই ভুল গুলোকেই চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়েছেন যা আমাদের চোখ এড়িয়ে যায়। প্রায় মৃত একটা সম্পর্ক নিয়ে দম বন্ধ হয়ে আসা সংসার সায়রে বসে যা আমাদের উপলব্ধিতে আসেনা। লেখিকাকে ধন্যবাদ।
‘শেষ পর্যন্তও’ ভাললাগার প্রধান কারণ এটা কোন অবাস্তব, লুতুপুতু প্রেমের গল্প না। লেখিকা গল্পের ঢংয়ে চিন্তার খোরাকের যোগান দেন। লেখার ভঙ্গিটাও দারুণ। সহজ-সরল। বাহুল্যতা নেই। পড়তে একটুও একঘেয়ে লাগেনা।