“উমাইয়া শাসনামলে (৬৬১-৭৫০ খ্রিষ্টাব্দ) খিলাফত শাসনব্যবস্থা রাজতন্ত্রে রূপ নেয়। তাই রাষ্ট্রপ্রধানের মতকে আর শারই ব্যাপারে চূড়ান্ত হিসেবে গ্রহণ করা হতো না। আলিম সাহাবিগণ এবং তাদের ছাত্ররা ইসলামি রাষ্ট্রের কেন্দ্র ছেড়ে বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়তে থাকলেন। এর ফলে ইজতিহাদের পরিসর ক্রমান্বয়ে বিস্তৃত হতে থাকল এবং ইজমা গঠন করা একরকম প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ল।
এ পর্যায়ে এসে ফিকহশাস্ত্রের অধ্যয়ন একটা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করে। ছাত্ররা স্বাধীনভাবে এবং নিয়মতান্ত্রিকভাবে বিভিন্ন শিক্ষকের কাছে অধ্যয়ন করা শুরু করেন এবং নিজেদের মধ্যে বিভিন্ন আইনি বিষয়ে মতবিনিময় আরম্ভ করেন। এ কারণে আব্বাসীয় শাসনামলে (৭৫০-৮৫০) অনেকগুলো মাযহাবের জন্ম হয় এবং তারা প্রত্যেকে স্বতন্ত্রভাবে পরিচিতি লাভ করে। তবে আইনি সিদ্ধান্ত প্রদান কিংবা গ্রহণের ক্ষেত্রে তাদের মধ্যেও পূর্ববর্তীদের মতো উদারতা, বিনয় ও পরমতসহিষ্ণুতা বিদ্যমান ছিল।
ব্যাপকভাবে স্বীকৃত চারটি মাযহাব ছাড়াও তৎকালীন সময়ে আরও বেশ কয়েকটি পরিচিত মাযহাব ছিল। যেমন, আওযাই, লাইসি, সাওরি, যাহিরি এবং জারিরি মাযহাব।”
.
মাযহাব মানা না মানা, গ্রহণ বর্জন নিয়ে আমাদের ধর্ম অনুশীলনকারীদের সমাজে তর্কের শেষ নেই। কিন্তু সঠিক জ্ঞানের অভাবে এই তর্ক শেষ হয় যে-কোনো একটি প্রান্তিকতা অবলম্বনে গিয়ে। ফলাফল : উম্মাহ্র মধ্যে অনৈক্য বিভেদ, বিবাদ বিসম্বাদ। কিন্তু সঠিক জ্ঞানটুকু যদি আমাদের থাকত, তাহলে এই চরমপন্থা থেকে সহজেই নিজেদের রক্ষা করতে পারতাম। ঐক্য ও সংহতির সুবাতাস বইত আমাদের মাঝে।
মুসলিম জাতির ঐক্য ও সংহতি রক্ষার এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি নিয়েই আমাদের এই পরিবেশনা—মাযহাব : অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যত। লিখেছেন প্রতিথযশা লেখক ড. আবু আমিনাহ বিলাল ফিলিপস।
Umme Suraiya –
বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম
বই:মাযহাব
লেখক :ড.আবু আমিনাহ বিলাল ফিলিপস
প্রকাশন:সিয়ান পাবলিকেশন
মুদ্রিত মূল্য :৪৫০ টাকা
★কিছু কথা:
———————
“মাযহাব:অতীত, বর্তমান,ভবিষ্যৎ” বইটিতে লেখক ইসলামি আইনশ্রাস্ত্র ও তার বিভিন্ন মাযহাবের ক্রমবিকাশের সংক্ষিপ্ত পর্যবেক্ষন তুলে ধরেছেন। মাযহাবের আবির্ভাবের এবং তাদের মতপার্থক্যের অন্তর্নিহিত মূল কারন আলোকপাত করা হয়েছে। ফিকহা কেন্দ্রিক মতপার্থক্যের ইতিবাচক ও নেতিবাচক উভয় দিক নিয়ে আলোচনা করা হলেও বইটির মূল বার্তা মুসলিম উম্মাহর একত্রীকরন প্রস্তাবনা।
★লেখক পরিচিতি:
——————————–
বু আমিনা বিলাল ফিলিপ্স (জন্ম ডেনিস ব্র্যাডলি ফিলিপ্স, ৬ জানুয়ারি ১৯৪৬) হলেন একজন কানাডীয় সালাফি মুসলিম শিক্ষক, বক্তা, লেখক এবং ইসলামিক অনলাইন ইউনিভার্সিটির প্রতিষ্ঠাতা ও আচার্য যিনি কাতারে বসবাস করেন।
★প্রচ্ছদ:
—————–
বইটির পেইজ কোয়ালিটি, এবং বাইন্ডিং ভালো ছিল। কিন্তু প্রচ্ছদ আরও একটু সুন্দর হলেই হয়তো ভালো লাগত…🙂
★পাঠ পর্যালোচনা এবং গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা সমূহ :
—————————————————————-
বইটি সর্বমোট এগারোটি অধ্যায় রয়েছে। যার প্রতিটি পাতায় রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা এবং বিস্তারিত আলোচনা। নিচে সংক্ষেপে কিছু পয়েন্ট তুলে ধরা হলো-
(১)ফীকহের ক্রমবিকাশ [ভিত্তি, প্রতিষ্ঠা,নির্মান,বিকাশ ](২)ইসলামী অাইনে বিভিন্ন মাযহাব
(৩)মতপার্থক্যের নেপথ্য কারণ
(৪)ইমাম ও তাকলীদ
(৫)উম্মাহর মধ্যে মতপার্থক্য
★পাঠ- প্রতিক্রিয়া:
—————————–
বইয়ের প্রতিটি পেইজ আমার চিন্তার খোঁড়াক আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। ইসলাম সহজ।অথচ মাযহাব নিয়ে বাড়াবাড়িই আমাদের অন্তঃ কোলাহলের মূল কারণ। আল্লাহ সবাইকে বোঝার তৌফিক দান করুন। আমিন।
আমার মতামত :
————————–
বইটি যে কারনে কৌতুহলের দাবিদার সেটা হচ্ছে লেখক মাযহাব সম্পর্কে যেসব মর্মভেদী গভীর প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন তা সত্যই প্রশংসাযোগ্য।মাযহাব সম্পর্কে অনেক আগে থেকেই আমার মনে নানান প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিলো। আজ বইটা শেষ করার পর মনটা অনেকটা স্বস্তি পেলেও আরো নতুন কিছু প্রশ্ন মনে দানা বেঁধেছে।
তবে সত্যিই বড় আফসোস হচ্ছে সেই সব মানুষদের জন্য যারা বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে গেছে বা যাচ্ছে । তারা আজও তর্কে-বিতর্কে লিপ্ত। অথচ দীনের সঠিক জ্ঞান কখনও ই এমন কথা বলে না। আল্লাহ আামাদের সকলকে এক হাওয়ায় তৌফিক দিন।(আমিন)
★শেষ কথা:
——————–
বইটি আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছে। হৃদয়ের অন্তঃস্থল থেকে দোয়া সকলের জন্য যারা এই বইটি আমাদের হাত পর্যন্ত সাহায্য করেছেন।
রিভিউ দাতা:Umme Suraiya
Mahbuba Islam Disha –
মুসলিম জিবনে ফিকহ সম্পর্কে জ্ঞান অর্জনের গুরত্ব অপরিসীম। কুরআন এবং সুন্নাহ হলো এই ফিকহের মূল উৎস। এই দুই উৎস থেকেই ইজতিহাদ ও গবেষণার মাধ্যমে ফিকহ শাস্ত্র সকল নতুন সমস্যার সমাধান দিয়ে আসছে।
এই ইসলামি ফিকহ এর ইতিহাস নিয়েই মূলত “মাযহাব” বইটা।
ইসলামি আইন ও ফিকহের বিকাশ ও বিভিন্ন যুগে ফিকহি ইজতিহাদের ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে বইটাতে। কেন এবং কিভাবে বিভিন্ন মত ও মাযহাব তৈরি হলো তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। উম্মাহর ঐক্যের জন্য মুসলিমদের করনীয় কি তা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
বইটিতে মোট এগারোটা অধ্যায় আছে। প্রতিটা অধ্যায় থেকেই কোনো না কোনো নতুন কিছু শেখার আছে, ইনশাআল্লাহ ।এই বই থেকে আলাদা করে নোট করার কিছু নেই কারণ পুরো বইটাই একটা নোটবুক। অসাধারণ একটা বই, আলহামদুলিল্লাহ।
মাযহাবকে কেন্দ্র করে আমাদের মাঝেই আজ অজ্ঞতায় ভরপুর । মুসলিমদের মাঝে বিভক্তির একটা মূল কারণ হলো মাযহাব কেন্দ্রিক অজ্ঞতা। অজ্ঞতা দূর করার সংগ্রামে এই বইটি একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার।
চোখ ও অন্তর খোলা রেখে যদি কেউ এই বইটা পড়েন তাহলে আমার মনে হয় তার মাঝে মাযহাব অনুসরণ বা বর্জন নিয়ে কোনো দ্বিধা থাকবে না, ইনশাআল্লাহ।
আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা লেখকে, এবং এই বইটি প্রকাশনার জন্য যারা তাদের শারীরিক এবং মানসিক শ্রম দিয়েছেন তাদেরকে উত্তম প্রতিদান দিন।