মৌখিকভাবে সকল মুসলিম যদিও স্বীকার করে যে, ইসলাম ধর্মের মূল ভিত্তি হলো কুরআন-সুন্নাহ; কিন্তু তাদেরকে সঠিক অর্থে কুরআন-সুন্নাহর দিকে ফিরে আসার আহ্বান জানানো হলে তারা নানান অজুহাত দিতে আরম্ভ করে। সবচেয়ে বেশি যে কথা বলা হয় তা হলো, “আমাদের অঞ্চলে এ ধরনের নিয়মের প্রচলন নেই”। এ ধরনের অসার যুক্তিতেই এসব মুসলিমদের মগজধোলাই হয়ে আছে।
ছেলেমেয়েরা একটু বড় হলে যদি তারা কোনো আচার-প্রথা নিয়ে প্রশ্ন তোলে, তাহলে মুরব্বিরা এই বলে তাদেরকে তিরস্কার করে যে, “তোমাদের পূর্বপুরুষরা যেহেতু কাজটিকে ভালো মনে করেছেন, সেহেতু তোমাদেরও এটা করা উচিত”, অথবা, “তুমি কী মনে করো তোমাদের বাপদাদারা সবাই ভুল ছিল?” মাক্কার মুশরিকদেরকে যখন ইসলামের দিকে আহ্বান করা হতো, তারাও একই রকম কথা বলত!
আল্লাহ কুরআনে বলছেন,
“যখন তাদেরকে বলা হয়, ‘আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তার দিকে ও রসূলের দিকে আসো’, তারা বলে, ‘আমরা আমাদের পিতৃপুরুষদের যার ওপর পেয়েছি, তা-ই আমাদের জন্য যথেষ্ট।’ তাদের পিতৃপুরুষরা কিছুই জানত না এবং হিদায়াতপ্রাপ্ত ছিল না তবুও?” [আল-মা’ইদাহ, ০৫ : ১০৪]
মুসলিমরা যদি তাদের সভ্যতাকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে চায় এবং বিশ্ববাসীর কাছে নিজেদের জীবনব্যবস্থাকে পশ্চিমা সভ্যতার বিকল্প হিসেবে প্রমাণ করতে চায়, তাহলে সংস্কৃতি কিংবা আচার-প্রথা নামক এ জাহেলি জঞ্জালকে অবশ্যই বর্জন করতে হবে। কারণ পশ্চিমা সভ্যতার সাংস্কৃতিক আগ্রাসনকে মোকাবেলা করার ক্ষমতা কেবল বিশুদ্ধ ও নির্ভেজাল ইসলামেরই আছে।…
Amit Hasan –
■ বই- সভ্যতার সংকট
ইসলামের সূচনালগ্ন থেকেই ইসলামের শক্তিকে বিনষ্ট করার অপচেষ্টা শুরু হয়েছিল যা এখনও বিদ্যমান। শুধুমাত্র বদলেছে কর্মকৌশল। কিন্তু ইসলামের শক্তি ওহীর নূর দ্বারা পরিপূর্ণ তাই সত্যিকারার্থে ইসলামকে বিনষ্ট করা আদৌও। সম্ভব নয় কারণ স্বয়ং আল্লাহ ইসলামকে হেফাজতের ঘোষণা দিয়েছেন। বক্ষ্যমাণ গ্রন্থটিতে ইসলামি সভ্যতার সাথে পশ্চিমা সভ্যতার পারস্পরিক দ্বন্দ্ব এবং তার তুলনামূলক বিশ্লেষণ তুলে ধরা হয়েছে।
■ বইটিতে যা যা আছে-
বইটি পাঁচটি অধ্যায়ে বিন্যস্ত। প্রথম অধ্যায়ে পশ্চিমা সভ্যতার সূচনাবিন্দু শিরোনামে পশ্চিমা সভ্যতায় পৌত্তলিক চেতনার প্রভাব, এর ফলাফল, রোমান সভ্যতার ইতিবৃত্ত, ডারউইনিজম, পশ্চিমা সভ্যতার সৃষ্ট ধর্মনিরপেক্ষতা ও গণতন্ত্র, এর মূল নীতি এগুলোর সাথে ইসলামের সংঘাত কোথায় তার তুলনামূলক বিশ্লেষণ আলোচনা করা হয়েছে।
আজ পশ্চিমা সভ্যতার বিষবাষ্পের হাওয়া ছড়িয়ে পরেছে মুসলিম বিশ্বে। যার ফলাফল আজকের মুসলিম সমাজ ইসলাম থেকে বিচ্যুত হয়ে পশ্চিমাদের সৃষ্ট মতবাদে বুঁদ হচ্ছে। বক্ষ্যমাণ বইটির দ্বিতীয় অধ্যায়ে রেওয়াজ-প্রথার জালে বাধাঁ পড়া ইসলাম শিরোনামে পশ্চিমা শক্তির বেড়াজালে মুসলিমদের আটকে পড়ার কারণ, এর সমাধান, যুগে যুগে এমন বেড়াজাল থেকে বের হওয়ার প্রচেষ্টারত সংস্কারগণ, তাঁদের দ্বারা সংঘটিত আন্দোলন, তাঁদের হাত ধরে ইসলামের পুনর্জাগরণ বিষয়ক আলোচনা উঠে এসেছে।
তৃতীয় অধ্যায়ে ইসলামি সংস্কৃতি শিরোনামে ইসলামের ভিত্তি, ইসলামে নৈতিক মূল্যবোধ এর ভিত্তি, মানদন্ড, নৈতিকতার সূত্রাবলি আলোচিত হয়েছে।
চতুর্থ অধ্যায়ে ইসলামের মৌলিক ভিত্তিসমূহ, এই ভিত্তি গুলো যে ব্যক্তিত্ব গড়ে তোলে তার বৈশিষ্ট্য ও প্রভাব, এগুলোর ব্যাপারে গতানুগতিক মুসলিমদের দৃষ্টিভঙ্গি আলোকপাত করা হয়েছে।
বইটির শেষ অধ্যায়ে ঈমানের স্তম্ভ সমূহ সবিস্তার আলোকপাত করা হয়েছে। এই স্তম্ভ গুলোতে যে ব্যক্তিত্ব গড়ে তোলে তার বৈশিষ্ট্য ও মানব চরিত্রে এগুলোর প্রভাব আলোচনা করা হয়েছে।
■ পাঠ পরবর্তী প্রতিক্রিয়া-
সাবলীল অনুবাদ ও অসাধারণ সাহিত্যমান বইটিকে করেছে অনন্য। বইটি একটি তথ্যবহুল বই। কুরআন সুন্নাহর পাশাপাশি কিছু পরিভাষা ব্যবহার করা হয়েছে এবং সেগুলোর যথাযথ রেফারেন্স উল্লেখ করা হয়েছে।
বইটি প্রতিটি সচেতন মুসলিমের পাঠ করা উচিত বলে মনে করি। বইটি পাঠের মাধ্যমে একজন মুসলিম তার পালনকর্তা প্রদত্ত জীবন ব্যবস্থার সাথে মানব রচিত সভ্যতার মূল্যায়ন করতে পারবে। ইসলামি সভ্যতাই যে একমাত্র প্রতিষ্ঠিত মননশীল সভ্যতা তা অনুধাবন করতে পারবে।