মুসলিমবিশ্ব ও ফিলিস্তিন সংকট গ্রন্থটি এক রক্তাক্ত ইতিহাসের ভাষ্য। এতে ফুটে উঠেছে মুসলিম বিশ্বের গৌরবোজ্জ্বল অতীত, বিপর্যস্ত বর্তমান এবং অনিশ্চিত ভবিষ্যতের বাস্তব চিত্র। লেখক অত্যন্ত দরদের সঙ্গে দেখিয়েছেন, কীভাবে মুসলিম সমাজ একসময় জ্ঞান, ইনসাফ ও আদর্শের আলোয় উদ্ভাসিত ছিল, অথচ আজ তা জুলুম, দুর্নীতি ও বিভেদের অন্ধকারে নিমজ্জিত। মঙ্গোল আক্রমণে বাগদাদের পতন থেকে শুরু করে আধুনিক ফিলিস্তিন সংকট—সবই ইতিহাসের নির্মম পুনরাবৃত্তি। সত্যের পথ থেকে সরে গিয়ে মুসলিম বিশ্ব আজ স্বার্থপরতা ও রাজনৈতিক তোষামোদের শিকার।
লেখক স্পষ্ট করেছেন—এই বিপর্যয় আকস্মিক নয়; বরং এটি বহু দিনের অবহেলা, অনৈক্য ও অবিচারের পরিণতি। নেতৃত্বের দুর্বলতা, নৈতিক স্খলন এবং বিভেদের বিষ মুসলিম সমাজকে গভীর সংকটে ফেলে দিয়েছে। যা মূলত নবি ও খলিফাদের আদর্শকে উপেক্ষা করার অনিবার্য পরিণতি। মুসলিম উম্মাহ বিলাসবিপুল জীবনযাপনে আচ্ছন্ন। ফিলিস্তিনে নিরপরাধ মানুষের রক্ত ঝরছে, নিষ্পাপ শিশুদের কান্না আকাশে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। অথচ ক্ষমতাধর রাষ্ট্রগুলোর ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণই যেন প্রধান মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর একমাত্র নীতিতে পরিণত হয়েছে।
লেখক নির্মোহ বিশ্লেষণের মাধ্যমে দেখিয়েছেন—ইতিহাসের শিক্ষা গ্রহণ ছাড়া মুসলিম উম্মাহর পুনরুত্থান সম্ভব নয়। এই গ্রন্থ তাই শুধু অতীতের দলিল নয়, বরং ভবিষ্যতের পাথেয়—মুসলিম উম্মাহর আত্মজাগরণের পথনির্দেশিকা।
তার সাহিত্যকর্ম ইসলামী বিশ্বে গভীর প্রভাব ফেলে। সীরাতে সাইয়েদ আহমদ শহীদ গ্রন্থের মাধ্যমে তিনি পরিচিতি লাভ করেন, তবে মুসলমানদের পতনে বিশ্ব কী হারাল (মা যা খাসিরাল আলামু বিনহিতাতিল মুসলিমিন) গ্রন্থটি তাকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খ্যাতি এনে দেয়। উর্দু ও আরবি ভাষায় রচিত তার অসংখ্য গ্রন্থ যুগ যুগ ধরে পাঠক ও গবেষকদের অনুপ্রাণিত করে আসছে।
ইসলামী বিশ্বের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে তিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন। রাবেতায়ে আলমে ইসলামী ও অক্সফোর্ড ইসলামিক সেন্টারের মতো প্রতিষ্ঠানে তিনি গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। এছাড়া, ভারতীয় মুসলমানদের অধিকার রক্ষায় তিনি মুসলিম পারসোনাল ল বোর্ডের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
তার অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি বাদশাহ ফয়সাল আন্তর্জাতিক পুরস্কার, অক্সফোর্ড ইসলামিক সেন্টারের সুলতান ব্রুনাই অ্যাওয়ার্ড এবং দুবাই কর্তৃক বর্ষসেরা আন্তর্জাতিক ইসলামী ব্যক্তিত্ব পুরস্কারসহ বহু সম্মাননা লাভ করেন।
১৯৯৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর, জুমার আগে সুরা ইয়াসিন তেলাওয়াতরত অবস্থায় এই মহান মনীষী শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
Reviews
There are no reviews yet.