ইসলামের ইতিহাস যেসব ব্যক্তির জীবন ও কর্মের মাধ্যমে সমৃদ্ধ হয়েছে শায়খ আবদুল কাদির জিলানি তাঁদের অন্যতম। শায়খ জিলানি ইতিহাসে বিখ্যাত হয়ে আছেন ইসলামের প্রতি আহ্বান, সমাজ থেকে শিরক-বিদআত দূরীকরণ, দীনি শিক্ষার প্রসার ও উম্মাহকে জিহাদের প্রতি উদ্বুদ্ধকরণে তাঁর আকর্ষণীয় পদ্ধতির কারণে। তাঁর ইসলামি বক্তব্যে হাজার হাজার মানুষ পাপ ও অন্যায় কাজ থেকে তাওবা করত; ইসলাম পালন ও টিকিয়ে রাখার আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ত। আব্বাসি খিলাফতের সেই সময়টায় তাঁর এই কর্মযজ্ঞ বিশেষ গ্রহণযোগ্যতা লাভ করে। অনেকেই তাঁকে অনুসরণ করে দীনি দাওয়াত ও ব্যক্তিপরিশুদ্ধির কাজ করতে থাকে। তাঁর কাজ ও পদ্ধতির অনুসরণই একটা সময় ‘কাদিরিয়া তরিকা’ নামে প্রসিদ্ধি পায়।
ভারত উপমহাদেশে যাঁরা ইসলাম প্রচারে কাজ করেছেন তাঁদের অনেকেই শায়খ আবদুল কাদির জিলানির পদ্ধতি অনুসরণ করেছেন। ফলে উপমহাদেশে তিনি বড়পির হিসেবে সুপরিচিতি পেয়েছেন। তাঁর প্রতি অতি শ্রদ্ধা থেকে মানুষের মুখে মুখে জন্ম নিয়েছে নানা কল্পকাহিনি। তৈরি হয়েছে তাঁর বানোয়াট জীবনকথা। বিশ্বখ্যাত ইতিহাসবিদ ড. শায়খ আলি মুহাম্মাদ সাল্লাবি বিষয়টি লক্ষ করে রচনা করেছেন তাঁর বিশুদ্ধ জীবনচরিত। তথ্য ও বিশুদ্ধ বর্ণনার আলোকে তুলে ধরেছেন একজন সত্যিকার দায়ির কর্ম ও জীবনের উদ্দেশ্য।
আমাদের দেশের সর্বসাধারণের মাঝে শায়খ আবদুল কাদির জিলানিকে নিয়ে যেসব মনগড়া কল্পকাহিনি প্রচলিত আছে; শায়খকে নিয়ে যেসব শিরক-বিদআতের ব্যবসা রমরমা হয়ে আছে, সে-সবের অসারতা ও বাস্তবতা উপলব্ধি করতে পাঠককে পথ দেখাবে শায়খ আবদুল কাদির জিলানির এই জীবনীগ্রন্থ। সত্য ইতিহাসের বইতালিকায় এই গ্রন্থ সমৃদ্ধির ইট হিসেবে যুগ যুগ ধরে টিকে থাকবে ইনশাআল্লাহ।
Md Amdadullah Tafhim –
বইঃ আবদুল কাদের জিলানি
লেখকঃ ড. আলি মুহাম্মাদ সাল্লাবি
■ প্রাক-কথনঃ
ভারতীয় উপমহাদেশে যে সুফি-সাধকের নাম সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত হয় তিনি শায়েখ আবদুল কাদের জিলানি র.। একজন সৎ, নির্ভীক ও উচ্চ মনোবল সম্পন্ন সমাজ সংস্কারক। সমাজ সংস্কারকমূলক গণদাওয়াত, ওয়াজ-নসীহত ও আত্নশুদ্ধির মেহনত করে নতুন মানসপটে জাগিয়ে তুলতেন ঈমানী চেতনা ও আল্লাহ প্রদত্ত বিধানাবলী মেনে চলার অদম্য স্পৃহা। মানুষের হৃদয়কাননে গেঁথে দিতেন আল্লাহ প্রেমের অমিয়সুধা। সঠিক ও প্রকৃত জ্ঞানার্জন ও ইবাদাতের বিশুদ্ধ ও নির্ভেজাল তরিকায় উম্মাহকে উদ্ধুদ্ধ করতেন আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের প্রতিযোগিতায়।
কতক অজ্ঞ ও জাহেলদের মাধ্যমে মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়েছে কল্পিত, বানোয়াট জীবনকথা। ফলে জনমনে দানাবেঁধেছে সংশয় ও সন্দেহের বীজ। এ বিষয়টির প্রতি লক্ষ রেখে আবদুল কাদের জিলানি র. এর জীবনী গ্রন্থের প্রয়োজন ছিল সময়ের অপরিহার্য দাবী। আর সে দাবীর বাস্তবিক রুপ ড. আলী মুহাম্মাদ সাল্লাবি রচিত ও কালান্তর প্রকাশনীর শ্রমলব্ধ প্রচেষ্টা “আবদুল কাদের জিলানি” বইটি।
■ বিষয়বস্তুর নিরিখে-
ছোট কলেবরের এই বইটির নাম থেকেই বিষয়বস্তু পরিস্কার হয়ে যায়। আবদুল কাদের জিলানি র. এর জীবন ও কর্ম নিয়ে বইটি নয়টি অধ্যায়ে বিভক্ত। যে বিষয়গুলো স্থান পেয়েছে তার সংক্ষিপ্তসার-
• শুরুর দিকে বইটিতে তাঁর নাম,বংশ, জ্ঞান অন্বেষণে সফর ও তাঁর শায়েখদের নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। তাঁর আকিদা-বিশ্বাস ও আকিদা বিশ্লেষণ পদ্ধতি নিয়ে বিস্তর আলোচনা স্থান পেয়েছে।
• সহজ-সাবলীলভাবে বোধগম্য ভাষায় ঈমান, কবিরা গুনাহ, তাওহিদে উলুহিয়্যাহ, রুবুবিয়্যাহ, ইবাদাত কবুলের শর্তাদি ও তাওহীদ বিধ্বংসী কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে তাঁর অবস্থান পরিস্কার করা হয়েছে।
• ইসলামে বিদ’আতের নিন্দা ও ভয়াবহতা ,কুরআন সুন্নাহ অনুযায়ী জীবনযাপনের গুরুত্ব, দ্বীনি বিষয়ে নেতৃত্বশীলদের আনুগত্য বিষয়ক অবস্থান, তাসাউফের মর্ম ও তাৎপর্য, আধ্যাত্মিক চর্চা-সাধনা, বিশুদ্ধ জ্ঞানার্জন ও তদানুসারে আমলের গুরুত্বারোপের বিস্তারিত আলোচনা স্থান পেয়েছে।
• ‘কাদেরিয়া তরিকা’ প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট এবং যে বৈশিষ্ট্যগুলোর জন্য অন্যান্য তরিকা থেকে ‘কাদেরিয়া তরিকা’ আলাদা তা আলোচনার পাশাপাশি তরিকার উসুল ও মূলনীতি, ইসলামি শিক্ষা ও শিষ্টাচার এবং শায়েখ প্রণীত মুরিদের শিষ্টাচারনীতির বিশদ ব্যখ্যা এবং তাঁর সমাজ সংস্কার মূলক কাজগুলোর পর্যাপ্ত আলোচনার মাধ্যমে বইটি পূর্ণতা লাভ করেছে।
■ বইটি কেন পড়া অতীব জরুরিঃ
ড. আলী সাল্লাবির অধ্যয়ন ও গবেষণার অনুপম সার-নির্যাস সম্পন্ন এই বইটি থেকে পাঠক জানতে পারবেন একজন পীর কেমন হওয়া উচিত এবং মুরিদের সাথে ভক্ত বা মুরিদের আচরণ কেমন হওয়া উচিত। এছাড়াও, সত্যিকারার্থে দুনিয়ার প্রতি অনাসক্তি বলতে কি বোঝায়, আল্লাহকে পেতে হলে কি পরিমাণ ও কি ধরণের চেষ্টা মুজাহাদা প্রয়োজন তা সম্পর্কে পাঠক সম্যক ধারণা লাভ করবে। সর্বোপরি, একজন সহিহ আকিদাধারী বিশুদ্ধ মানুষ হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলার প্রত্যয় খুঁজে পাবেন প্রতিটি পাঠক।
■ লেখক সম্পর্কে কিছু কথাঃ
জীবন ও কর্ম বিষয়ক বক্ষমান গ্রন্থটির লেখক প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ, কুরআন ও সুন্নাহর বিশুদ্ধ জ্ঞানের অধিকারী, সালাফগনের বক্তব্যের আবেদন ও প্রকাশশৈলী রক্ষায় তৎপর ড. আলি মুহাম্মাদ সাল্লাবি। যারা তাঁর বইপত্রের সাথে পরিচিত তারা জানেন গ্রন্থ রচনার ক্ষেত্রে অন্যসব বিষয়ের থেকে তিনি প্রাধান্য দেন তথ্য ও প্রমাণাদির সন্নিবেশের ক্ষেত্রে। ফলে তাঁর গ্রন্থগুলোতে প্রকাশিত হয়ে উঠে তথ্যবহুল ও বাহুল্যবর্জিত সর্বাঙ্গীন ও সুন্দররুপ। তেমনি একটি যুগান্তকারী একটি বই ‘আবদুল কাদের জিলানি’।
■ বইটির বেশ কিছু দিকঃ
• তথ্যসমৃদ্ধ ও বাহুল্যবর্জিত।
• প্রয়োজনীয় রেফারেন্স সমৃদ্ধ।
• ছোট কলেবরে হলেও গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাদিতে অত্যন্ত
প্রভাব সৃষ্টিকারী।
■ ব্যক্তিগত অনুভবের অনুসিঞ্চনঃ
শিক্ষাব্যবস্থায় বাধ্যতামূলকভাবে অনেক বিজ্ঞ মনিষীদের (ল্যালিন,স্টালিন,কাল মার্কস, সক্রেটিস,আইনস্টাইন ইত্যাদি) জীবনী ও কৃতিত্ব আমরা পড়ে থাকি। কিন্তু সেগুলো থেকে শিক্ষালাভ এবং জীবনে প্রয়োগযোগ্য তথ্যের সমাহার খুব কমই পরীলক্ষিত হয়। কিন্তু শরীয়াত ও তরীকতের উচ্চমার্গীয় ব্যক্তি হিসেবে আবদুল কাদের জিলানি র. এর জীবন ও কর্ম বিষয়ক বইটি ব্যক্তিগত ভাবে একজন আদর্শ মানুষ হতে, বিশুদ্ধ আকিদা ও আখলাক অর্জনে যথেষ্ট অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে।
■ শেষ কথাঃ
দুনিয়া বিমুখতার মূর্তপ্রতীক আবদুল কাদের জিলানি র. ছিলেন সমকালীন আলেমদের মধ্যে মর্যাদায় অনন্য ও অতুলনীয়। তাঁর জীবন ও কর্মের প্রত্যেক পরতে পরতে ছড়িয়ে আছে অসংখ্য ও অগুনিত মুক্তোঝরা উপদেশাবলি। দুনিয়া প্রীতি ও অন্তরের অসুস্থতা পরিহার করে আবদুল কাদের জিলানি র. এর জীবন থেকে অমূল্য নসিহাহ নিয়ে দ্বীন ও দুনিয়া সাজানোর অপরিসীম প্রত্যয় নিয়ে সুখপাঠ্য এই বইটি পড়ার আমন্ত্রণ জানিয়ে শেষ করছি।
■ এক নজরে বই পরিচিতিঃ
বইঃ আবদুল কাদের জিলানি
লেখকঃ ড. আলি মুহাম্মাদ সাল্লাবি
অনুবাদকঃ আব্দুল্লাহ তালহা
প্রকাশনাঃ কালান্তর প্রকাশনী
ধরণঃ জীবন ও কর্ম বিষয়ক
পৃষ্ঠাঃ ১৪৭
মুদ্রিত মূল্যঃ ২০০/-
কভারঃ হার্ড কভার
______________________