আমরা মুসলিম। মুসলিম হিসেবে আমরা কিছু মৌলিক বিশ্বাস এবং আদর্শ ধারণ করি। আমাদের এই বিশ্বাস মোতাবেকই আমরা আমাদের জীবন পরিচালনা করি। তাই আত্মবিশ্বাস অর্জনের যেসব পদ্ধতি আছে, তার চেয়ে আমাদের অনুসৃত পদ্ধতি ভিন্ন হবে। আমরা তা নিরূপণ ও অনুসরণ করব আমাদের আদর্শের আলোকে।
সেক্যুলার চিন্তাবিদরা মানুষকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অস্তিত্বশীল সত্তা মনে করেন। মানুষের যাবতীয় চাহিদা পূরণ করাটাকেই তারা জীবনের মূল উদ্দেশ্য মনে করেন। অন্যদিকে ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা করলে আমরা কেবলই আল্লাহর দাস। তাঁর দেওয়া বিধান অনুসরণ করে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন করাটাই হলো আমাদের জীবনের আসল উদ্দেশ্য।
জীবন সম্পর্কে আমাদের এই ধারণা আত্মবিশ্বাসের ব্যাপারে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিতেও প্রভাব ফেলে। ‘আমরা নিজেরাই নিজেদের চালানোর জন্য যথেষ্ট’—এ ধরনের ভাবনা আমরা লালন করি না। বরং আমরা আল্লাহর দাস। তাই নিজেদের যোগ্যতার ওপর আমাদের যে বিশ্বাসটুকু আছে, সেটা সৃষ্টিকর্তা হিসেবে আল্লাহর ওপর আমাদের বিশ্বাস থেকে আসে। আমরা এই বিশ্বাসটুকু পাই তিনি আমাদের যেভাবে সৃষ্টি করেছেন, তা থেকে এবং তাঁর করা ওয়াদা থেকে।
ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করলে আত্মবিশ্বাস থাকাটা আরো বেশি শক্তিশালী ব্যাপার মনে হয়। কারণ, এক্ষেত্রে আমরা শুধু আমাদের নিজস্ব ক্ষমতার ওপর নির্ভর করছি না। আমাদের আত্মবিশ্বাসের শক্তিকে আরো বেশি বলীয়ান করছে আল্লাহর ওয়াদা। তিনি ওয়াদা করেছেন আমরা কল্পনাও করতে পারব না, এমনসব উপায়ে তিনি আমাদের সাহায্য করবেন। তাই আমাদের লক্ষ্য অর্জন করতে গিয়ে এমন অলৌকিক কিছুও ঘটতে পারে, যা অন্য কারো ক্ষেত্রে হয়তো হবে না।
Shuvo –
অসাধারণ একটি বই।
নিজের আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর জন্য।
nayeem_sharder –
জীবন চলার পথে আমাদের কোন না কোন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি দাঁড়াতে হয়। একজন হতাশাগ্রস্ত মানুষের জন্য তা খুবই কষ্টসাধ্য। তাই মনে করি, একজন ব্যক্তির মহা মূল্যবান উপহার হলো, তাকে আত্মবিশ্বাসী করে দেওয়া।
এই মূল্যবান জিনিসটি নিজের মধ্যে ধারণ করার জন্য হতে পারে “সেলফ কনফিডেন্স” সেরা বই। একটি চমৎকার গাইড লাইন।
স্রষ্টার কাছ থেকে আমরা যথেষ্ট যোগ্যতা নিয়ে পৃথিবীতে এসেছি। কিন্তু আমরা নষ্ট করে ফেলেছি নিজেরাই নিজেদের কনফিডেন্স। এখন প্রয়োজন আত্মবিশ্বাসের সাথে নেমে পরা। বইয়ের শুরুর দিকেই ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে আত্মবিশ্বাসের চমৎকার একটি আলোচনা পাওয়া যাবে।
মানুষ ভেদে অনেকের অনেক সীমাবদ্ধতা থাকলেও একটু গভীর ভাবে ভাবলে অপার সম্ভাবনা দেখতে পাবো। এর জন্য দরকার নিজের ভিতরটাকে শক্তিশালী করার। এটাই সেলফ কনফিডেন্সের কাজ। যখন আত্মবিশ্বাস তার চরম পর্যায়ে পৌছে যায় তখন হিমালয় সম বিপদ ডিঙিয়ে যাওয়ার সাহস তৈরী হয়।
Amit Hasan –
■ বই- সেলফ কনফিডেন্স
আত্মবিশ্বাস যেমন কোনো মানুষের ব্যক্তিত্ব কে সমুন্নত করে আবার অধিক আত্মবিশ্বাস ব্যক্তিত্বকে করে প্রশ্নবিদ্ধ। আমরা মনে করি যে, ইসলামের সাথে আত্মবিশ্বাসের কোন সম্পর্ক নেই কিন্তু ইসলামের শুরুই হয় বিশ্বাসের ভিত্তিতে এবং ইসলামের মূলনীতি গুলো পালনে আমাদের আত্মবিশ্বাসের ভিত্তি হতে হয় মজবুত ও পরিপূর্ণ। পরিপূর্ণ মুমিন হতে গেলেও আত্মবিশ্বাসের রয়েছে অনস্বীকার্য ভূমিকা।
■ বই কথন-
১৩ টি অধ্যায়ে সুসজ্জিত বইটি। প্রথম অধ্যায়ে “আত্মবিশ্বাস কেন প্রয়োজন” শিরোনামে আমাদের দুনিয়া এবং পরকাল উভয় জগতে সফলতার জন্য আত্মবিশ্বাসের অপরিহার্যতা তুলে ধরা হয়েছে।
দ্বিতীয় অধ্যায়ে “আত্মবিশ্বাস নিয়ে যত ভুল” শিরোনামে ইসলামের সাথে আত্মবিশ্বাসের সঠিক সম্পর্ক নিরূপণ স্বরূপ ইসলাম যে আত্মবিশ্বাসকে সমুন্নত করে তা আলোকপাত করা হয়েছে।
তৃতীয় অধ্যায়ে “আত্মবিশ্বাস কমে যায় যেসব কারণে” শিরোনামে আত্মবিশ্বাসের মৌলিক কারণ, সেগুলোর প্রয়োজনীয়তা এবং সেগুলোর অভাবজনিত ফলাফল তুলে ধরা হয়েছে।
চতুর্থ অধ্যায়ে “স্রষ্টার সাথে সংযোগ” শিরোনামে আমাদের আত্মবিশ্বাসের ভিত্তি যে আল্লাহকে বিশ্বাস করে তাঁর সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের সাথে সম্পর্কিত তা আলোকপাত করা হয়েছে।
পঞ্চম অধ্যায়ে “এই দুনিয়ার জীবন” শিরোনামে পার্থিব জীবনের তুচ্ছতা নিরূপণের আলোকে এই দুনিয়ার যাবতীয় পরীক্ষাগুলো থেকে কিভাবে অনুপ্রেরণা ও শিক্ষা অর্জনের মাধ্যমে আমরা আত্মবিশ্বাস অর্জন করে বিজয়ী হতে পারি তার ফর্মুলা প্রদান করা হয়েছে।
ষষ্ঠ অধ্যায়ে “মানুষ সম্ভাবনা এবং সীমাবদ্ধতা” শিরোনামে প্রতিটি মানুষের ভিন্ন ভিন্ন দক্ষতা, তাদের মাঝের সুপ্ত প্রতিভার আলোকে মানুষের লক্ষ্য গুলো কেমন হওয়া উচিত? S.M.A.R.T লক্ষ্য কি? এবং মানুষ হিসেবে আমাদের সীমাবদ্ধতা বিষয়ক আলোচনাগুলো সবিস্তার আলোকপাত করা হয়েছে।
সপ্তম অধ্যায়ে “বন্ধু প্রভাবক” শিরোনামে একজন ভালো বন্ধু কিভাবে আত্মশক্তি বাড়াতে ভূমিকা রাখে? খারাপ সঙ্গের মোকাবেলা করার উপায়, ভালো বন্ধু খুঁজে পাওয়ার উপায়, বন্ধুত্বকে কিভাবে আরো গভীর করা যায় তার দিকনির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।
জীবনের প্রতিটি কাজেই আমাদের বাধার সম্মুখীন হতে হয়। বিশেষ করে ভালো কাজে। ঠিক তেমনি আমাদের আত্মবিশ্বাসের যাত্রায় কোনো বাধা আসলে তা মোকাবেলা করার উপায়গুলো উঠে এসেছে “আত্মবিশ্বাসের যাত্রায় বাধা সামলানোর উপায়” শিরোনামে অষ্টম অধ্যায়ে।
ভুলের মাঝেই আমাদের সদা ব্যস্তরণ। অথচ এই ভুল থেকে আমরা যেমন শিক্ষা নিতে পারি আবার এই ভুলের মাঝেই হারিয়ে যেতে পারি। নবম অধ্যায়ে “ভুলগুলোর পুর্নপাঠ” শিরোনামে দুনিয়াবী ভুলগুলো মোকাবেলা করার উপায় এবং তা প্রয়োগের বাস্তবতা তুলে ধরা হয়েছে।
দশম অধ্যায়ে “ভয় করি জয়” শিরোনামে মানুষের স্বপ্নপূরণের যাত্রায় ভয়কে জয় করার অভয়বাণী ও বিভিন্ন প্রকার ভয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
একাদশ অধ্যায়ে “কর্মফোর্ট জোনের সীমানা বাড়িয়ে দিন” শিরোনামে আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের বেড়াজাল থেকে মাঝে মাঝে বেরিয়ে এসে আমাদের সীমাবদ্ধতা গুলো কিভাবে নিরূপণ করা যায়, কর্মফোর্ট ও আত্মবিশ্বাসের মধ্যে সম্পর্ক, কেন নিজের সীমানা ছেড়ে বেরিয়ে আসবো ইত্যাদি বিষয় আলোচনা করা হয়েছে।
দ্বাদশ অধ্যায়ে আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধির ১১ টি গুরুত্বপূর্ণ টিপস প্রদান করা হয়েছে এবং সেগুলোর যথাযথ প্রয়োগ তুলে ধরা হয়েছে।
বর্তমান সেকুল্যার চিন্তাধারা ও ইসলামি চিন্তাধারার মাঝে রয়েছে বিস্তর ফারাক। একজন মুমিনের আত্মবিশ্বাস হবে ইসলামি মূল্যবোধের আলোকে যা তার যাত্রাকে মসৃণ করবে এবং একজন মুসলিমের মনে রাখতে হবে যে তার কাজ হবে তার আত্মবিশ্বাসকে মুসলিম উম্মাহর স্বার্থে কাজে লাগানো.. এটিই বইটির শেষ অধ্যায়ের মূলভাব। যা পুরো বইটির আলোচনাকে বহন করে।
■ পাঠ পরবর্তী পর্যালোচনা-
আত্মবিশ্বাস উন্নয়নে অসংখ্য বই দেখা যায়। মুসলিম হিসেবে সেগুলোর অধ্যয়নে আমাদের পুরোপুরি ফায়দা অর্জন সম্ভব হয়না। কারণ সেই সমস্ত বইয়ের আলোচনা ইসলামকেন্দ্রিক হয় না। তবে এই বইটি তার ব্যতিক্রম। বইটির প্রতিটি আলোচনাই ইসলামকেন্দ্রিক। সাবলীল ঝরঝরে অনুবাদে বইটি পাঠের মাধ্যমে একজন পাঠক নিজের আত্মবিশ্বাসকে আরও শক্তিশালী করতে পারবে এই প্রত্যাশা..