পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদ দীর্ঘদিন ধরে প্রাচ্যের আকাশে গভীর কালো ছায়ার মতো বিস্তৃত হয়েছে—নীরবে ও ধীরে। শিক্ষা, চিকিৎসা, সমাজসেবার নামে তারা এসেছে—ধর্মের কথা বলেছে, কিন্তু সে-ধর্ম তাদের; সংস্কৃতির আলো ছড়িয়েছে, কিন্তু সে-আলো পাশ্চাত্যের। মিশনারিরা তাদের কলমে এঁকেছে ইসলামের বিকৃত এক ছবি, যার মধ্য দিয়ে ম্লান হয়েছে ইসলামি জীবন ও বিশ্বাসের দীপ্তি, হীনমন্যতায় পর্যবসিত হয়েছে মুসলিম সমাজ।
শুধু শব্দের কারসাজিতেই সীমাবদ্ধ থাকেনি মিশনারিরা—তারা বিদ্যালয় গড়েছে, হাসপাতাল খুলেছে, দাতব্য প্রতিষ্ঠানের ছদ্মবেশে ঢুকেছে মুসলিম জীবনের গভীরে। পশ্চিমা ভাবধারার বিষাক্ত প্রবাহ ধীরে ধীরে ঢেলে দেওয়া হয়েছে মুসলিম মানসে। মুছে ফেলা হয়েছে আত্মপরিচয়ের অনিবার্য রেখা।
এই বই সেই প্রবাহের বিরুদ্ধে একটি ছোট্ট প্রয়াস—একটি উদাত্ত আহ্বান। এই আহ্বান সচেতনতার, আত্মপরিচয় রক্ষার এবং ঐক্যবদ্ধ হওয়ার। পশ্চিমা মানবতাবাদের মুখোশ সরিয়ে তাদের আধিপত্য বিস্তারের পথচিত্র তুলে ধরা হয়েছে এখানে। একইসঙ্গে, জায়োনিজমের বিপদের কথাও বলা হয়েছে—যা শুধু মুসলিমদের জন্য নয়, বরং সমগ্র বিশ্বের ভারসাম্যের জন্যও বিপদজনক।
লেখক পরিচিতি:
ড. উমর ফররুখ (১৯০৬-১৯৮৭) ছিলেন একজন লেবানিজ গবেষক, ঐতিহাসিক, সাহিত্যিক ও শিক্ষক। তিনি বৈরুতে জন্মগ্রহণ করেন এবং আমেরিকান ইউনিভার্সিটি অব বৈরুত (AUB) থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন (১৯২৪)। পরে জার্মানির বার্লিন ও আরলানগেন-নুরেমবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন এবং দর্শনে পিএইচডি অর্জন করেন। শিক্ষকতাকে তিনি জীবনের প্রধান পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন। তিনি বৈরুতের মাকাসিদ ইসলামিক স্কুল, আল-সানাভিয়া আল-আমেলিয়া এবং বাগদাদ ও বোম্বের দারুল মুয়াল্লিমিনে শিক্ষকতা করেন। আরবি ছাড়াও তিনি ফরাসি, জার্মান, ইংরেজি, ফার্সি ও তুর্কি ভাষায় পারদর্শী ছিলেন। তার গবেষণার মূল বিষয়বস্তু ছিল ইসলামি সভ্যতা, আরবি ভাষা, পাশ্চাত্য চিন্তাধারা ও আধুনিকতা। তিনি পাশ্চাত্য আধুনিকতাবাদের সমালোচনা ও পর্যালোচনার জন্য বিখ্যাত।
ড. মুস্তফা খালিদি (১৮৯৫ – ১৯৭৮) ছিলেন একজন লেবানিজ চিকিৎসক, অধ্যাপক ও সমাজসেবক। তিনি আমেরিকান ইউনিভার্সিটি অব বৈরুত (AUB)-এ চিকিৎসাবিজ্ঞান পড়ার সময় অটোমান সেনাবাহিনীতে যোগ দেন এবং অটোমান সরকারের অধীনে একটি কলেজ থেকে মেডিকেল ডিগ্রি লাভ করেন। যুদ্ধ শেষে তিনি পুনরায় AUB-তে ফিরে আসেন এবং ১৯২০ সালে আন্তর্জাতিক চিকিৎসা ডিগ্রি অর্জন করেন। রকফেলার বৃত্তি লাভ করে তিনি যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, লন্ডন ও প্যারিসে উচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। ১৯৫২ সালে তিনি ‘খালিদি হাসপাতাল’ প্রতিষ্ঠা করেন। লেবাননের অন্যতম শীর্ষ স্ত্রীরোগ ও প্রসূতি বিশেষজ্ঞ হিসেবে তিনি বিশেষভাবে পরিচিত ছিলেন।
Reviews
There are no reviews yet.