ওপারে

“ওপারে”
খুব কম সংখ্যক বই-ই আমাকে জীবন নিয়ে ভাবতে শিখিয়েছে। তার মধ্যে “ওপারে” বইটি অন্যতম৷ লেখিকা কিংবা বই সম্পর্কে কিছু না জেনেই বইটা পড়া শুরু করি আর বইটা পড়া শেষে লেখিকা সম্পর্কে খোঁজ তার অন্য আরেকটা বই “নট ফর সেল” সেটাও সংগ্রহ করি। মুগ্ধতার যেনো শেষ নেই।

আচ্ছা ‘ওপারে’ বলতে আমরা কী বুঝি? মৃত্যুর পরবর্তী জীবনকেই কিন্তু। জি, লেখিকাও বইয়ের প্রতিটি লেখাতে মৃত্যুর পরবর্তী জীবনের কথাই এনেছেন কিন্তু কোনো গতানুগতিক মোটিভেশনাল কথাবার্তার মাধ্যমে নয়। সম্পূর্ণ নতুন ধারায় মৃত্যুর পরবর্তী জীবন নিয়ে আলাপ পেয়েছি “ওপারে” বইটিতে।

বইটিতে ২৭ টি শিরোনামে ২৭ টি ভিন্ন গল্প আছে, যেগুলোর মূল এক সূতায় গাঁথা আর তা হলো ওপারে, মৃত্যুর পরের জীবন। লেখিকা একেকটি বাস্তব জীবনের ঘটনা বলেছেন, সাথে সাথে ভাবনার দোরগোড়ায় মৃত্যুর পরবর্তী জীবনকে দাঁড় করিয়েছেন৷ কোনো অতিরঞ্জিত কথা নয়, স্বাভাবিক কথা, স্বাভাবিক ঘটনা যা অহরহ আমাদের সামনে ঘটছে কিংবা আমাদের সাথেই ঘটে যাচ্ছে কিন্তু সেগুলো আমরা উপলব্ধি করতে পারছি না৷ জীবনের রঙিন চশমা আমাদেরকে ভুলিয়ে রাখছে, আর সেই অস্বাভাবিকতাই লেখিকা আমাদেরকে চোখে আঙুল দিয়ে একদম কোমল ভাবে, নরৃম ভাষায় দেখিয়ে দিতে বইটির রচনা করেছেন।

জীবনের অভিজ্ঞতা থেকেই আমাদের সবচেয়ে বেশি শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ আসে। কিন্তু সেই উপলব্ধিবোধ না থাকলে শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ নেই৷ বিবেক খাটিয়ে প্রতিটি ঘটনার অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা গ্রহণ সম্ভব যদি পরকালীন ভাবনা আমাদের মনে জাগ্রত থাকে। প্রতিটি গল্প আলাদা আলাদা অভিজ্ঞতা দিবে কিন্তু পরিণতি নিয়ে যাবে ওপারে।

লেখিকার লিখনশৈলী, ভাষা প্রাঞ্জলতা একবারের জন্যও আপনাকে বিরক্ত করবে না, বরং হতাশার সাগরে ছোট্ট ডিঙি নৌকার মতো আশার আলো দেখাবে। জীবন সাগরে ডুবতে থাকা ব্যক্তিকে নতুন করে বাঁচার জন্য উদ্দেশ্য দিবে আর রিমাইন্ডার দিবে এইতো সময় ফুরিয়ে গেলে আর কিছুই করার থাকবে না৷ যা করার করতে হবে সময় ফুরানোর আগেই।

বইটি আমি বেশ উপভোগ করেছি। যারা বড় কলেবরের বই পড়তে পছন্দ করেন না কিন্তু লেখায় জীবনবোধ খোঁজেন তাদের জন্য বইটি অবশ্যই সাজেস্ট করবো।