জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরের বাসিন্দা যারা…
আভিধানিকভাবে ‘নিফাক’-এর মূল ধাতুর অর্থ হলো ইঁদুর জাতীয় প্রাণীর গর্তের অনেকগুলো মুখের একটি মুখ। তাকে কোনো এক মুখ দিয়ে খোঁজা হলে অন্য মুখ দিয়ে সে বেরিয়ে যায়।
নিফাক প্রথমত দুপ্রকার হয় :
১. বিশ্বাসের ক্ষেত্রে নিফাক
২. আমল বা কর্মের ক্ষেত্রে নিফাক
বিশ্বাসের নিফাকি হলো বড় নিফাকি। এটা তখন হয়, যখন কোনো ব্যক্তি বাহ্যিকভাবে নিজেকে মুসলিম হিসেবে প্রকাশ করে; কিন্তু মনের মধ্যে কুফরি গোপন রাখে। এটা মানুষকে দীন ইসলাম থেকে সম্পূর্ণ বের করে দেয়। পরিণতিতে সে জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে নিজের জায়গা করে নেয়।
আল্লাহ সূরা আল-বাকারাহর শুরুতে তিন শ্রেণির লোকদের কথা বর্ণনা করেছেন : মুমিন, কাফির ও মুনাফিক়। মুমিনদের সম্পর্কে চারটি আয়াত, কাফিরদের সম্পর্কে দুটি আয়াত এবং মুনাফিক়দের সম্পর্কে তেরটি আয়াত অবতীর্ণ করেছেন।
মুনাফিকদের সংখ্যাধিক্য, সমাজে তাদের নিফাক-এর ব্যাপক প্রাদুর্ভাব এবং ইসলামের ব্যাপারে মুসলিমদের জন্য তারা ভয়ানক ফিতনা সৃষ্টির কারণেই তাদের ব্যাপারে এত বেশি আলোচনা করা হয়েছে।
মুনাফিকদের কারণে মুসলিম জাতির উপর অনেক বেশি বিপদ-আপদ আপতিত হয়, কেননা ইসলামের শত্রু হওয়া সত্ত্বেও তারা সমাজে মুসলিম হিসেবে পরিচিত এবং তাদেরকে অনেক সময় ইসলামের বন্ধুও ভাবা হয়।
তারা এমন সব উপায়ে ইসলামের শত্রুতা করে থাকে যা দেখে বাহ্যিকভাবে মনে হতে পারে যে, তারা ইসলামের খেদমত করছে। ফলে অজ্ঞ লোকেরা মনে করে যে, এ হলো তাদের দ্বিনি ইলমের প্রচারণা ও সমাজ সংশোধনমূলক কাজ। অথচ বাস্তবে তা তাদের মূর্খতা ও ফাসাদ সৃষ্টি বৈ কিছু নয়।
এ ধরনের নিফাক আবার ছয় ভাগে বিভক্ত। এর কোনো একটিও যদি কারও মধ্যে পাওয়া যায়, তবে খাঁটি মুনাফিক হিসেবেই সাব্যস্ত হবে এবং তার স্থান হবে জাহান্নামের নিম্নতম স্তরে। যথা :
(ক) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে মিথ্যা সাব্যস্ত করা,
(খ) তাঁর আনীত শারিআহর কোনো অংশকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করা,
(গ) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা,
(ঘ) তাঁর আনীত শারিআহর কোনো অংশের প্রতি বিদ্বেষ রাখা,
(ঙ) তাঁর আনীত দীনের পরাজয়ে খুশি হওয়া,
(চ) তাঁর আনীত দীনের বিজয়ে অখুশি হওয়া কিংবা মনে কষ্ট অনুভব করা।
–
ইমাম মালিক (রহ.) বলেন, এই জাতির পরবর্তী প্রজন্ম কেবল সেই উপায়েই নিজেদেরকে সংশোধন করতে পারবে, যে উপায় অবলম্বন করে জাতির প্রথম প্রজন্ম নিজেদেরকে সংশোধন করেছিলেন। আর এ কথা বলার অপেক্ষাই রাখে না যে, সেই উপায়টির সর্বপ্রধান অনুষঙ্গ হলো বিশুদ্ধ আকীদা-বিশ্বাস।
আরব বিশ্বের প্রতিথযশা আলিম ড. সালিহ আল ফাওযান তার ‘আকীদাহ আত-তাওহীদ’ বইয়ে আকীদা-বিশ্বাসের মৌলিক বিষয়গুলো সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত মানুষের জন্য বোধগম্য করে সংক্ষিপ্তভাবে আলোচনা করেছেন। ইসলাম সম্পর্কে মৌলিক ধারণা রাখার জন্য অসাধারণ একটি বই। অনুবাদ করেছেন, বাংলাদেশের প্রখ্যাত আলিম ড. মানযুরে ইলাহী।
Mahbuba Islam Disha –
বর্তমানে আমরা এমন এক কঠিন সময় পার করছি যেখানে নাস্তিক্যবাদ, বৈরাগ্যবাদ, কবর পূজার মতো শির্কি এবং আমলের ক্ষেত্রে নানা ধরনের বিদআতি কর্মকান্ডে ছড়ানো চারিপাশ।
এমন সময়ে যদি মুসলিমদের মাঝে কুরআন, সুন্নাহ ও সালফ আস সালেহীনদের বিশুদ্ধ আকীদাহর জ্ঞান না থাকে তাহলে এই ভ্রান্ত মতবাদ গুলোর ভয়াল থাবা থেকে বেচেঁ থাকাটা অসাধ্য হয়ে পড়বে।
ড. সালিহ আল ফাওযান বর্তমান সময়ের
সালাফ আস সালেহীনদের মানহাজের উপর থাকা একজন প্রথিতযশা আলিম। “আকিদাহ আত-তাওহীদ” তার একটি অনবদ্য গ্রন্থ।
এই গ্রন্থ থেকে একজন পাঠক জানতে পারবেন কেন ইবাদাত কবুলের ক্ষেত্রে বিশুদ্ধ আকীদাহ থাকা প্রয়োজন, কেন আল্লাহর রুবুবিয়্যাত মেনে নিলেও উলুহিয়্যাত অস্বীকার করলে কোনো ব্যাক্তি মুসলিম থাকতে পারবে না।
আকীদাহর ব্যাপারে পূর্ববর্তী আলিমদের নীতি কি ছিল, কেন সঠিক আকীদাহ থেকে বিচ্যুত হয়ে যায় মানুষ, বিশুদ্ধ ইবাদাতের মৌলিক উপাদান কি কি, শির্ক, বিদআত, কুফর, কবর-মাজার পূজা, ভাগ্য গণনা, নাস্তিক্যবাদ ও বস্তুবাদের কুপ্রভাব সহ ইসলামী আকীদাহর সাথে সাংঘর্ষিক এমন প্রতিটা বিষয় উপস্থাপন করা হয়েছে এই বইটিতে।
যা আমাদের প্রত্যেকের অবশ্যই জানা উচিত। এমন বই ছড়িয়ে পড়ুক সব জায়গায়, তাওহীদের আলোয় আলোকিত হোক প্রত্যেকে।