আবু বাকর আস-সিদ্দীক

বইঃ আবু বাকর আস- সিদ্দীক
লেখকঃ ড. আলি মুহাম্মদ সাল্লাবি

বর্তমান প্রজন্ম সমাজ অশ্লিলতা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী নায়ক-গায়ক, খেলোয়ার কিংবা তাগুতি শাসকদের সম্পর্কে যতটা জানে; খুলাফা রাশিদূনের মহান ব্যক্তিবর্গ সম্পর্কে ততটাই কম জানে। এ প্রজন্ম টিভি সিরিয়ালে কৃত্তিম বীরপুরুষের ‘সাহসিকতা’ দেখে চমকিত হয়। অথচ ইসলামের শ্রেষ্টতম খলিফাগণ কেমন সাহসী ছিলেন তা তারা জানেই না। মোটামুটি সচেতন মুসলমান ভাইদের ভেতর থেকেও যখন প্রশ্ন করা হয়ঃ ‘ইসলামের প্রথম খলিফা সম্পর্কে কিছু বলুন?’ তখন অনেকেই নির্বাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন।উত্তর দিতে পারেন না।
যে খলিফাগণ কুফফার /তাগুত দমন করে ইসলামের শান্তির বাণী দিকে- দিকে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন আজ আমরা তাদেরকেঔ ভুলতে বসেছি। মুসলমান হিসেবে এর চাইতে লজ্জাজনক আর কী আছে?আহ!

আমাদের জানার পরিধিকে বিস্তৃত করার তাগিয়ে সিয়ান পাবলিকেশন প্রকাশ করেছেন ‘ইসলামের ইতিহাস’ বিষয়ক গ্রন্থ ‘আল- খুলাফা- আর- রাশিদূন’ । যার ২য়- পর্ব হলো ‘আবু বাকর- আস- সিদ্দিক [রাঃ]’। গ্রন্থটি নির্মিত হয়েছে ইসলামের প্রথম খলিফা আবু- বাকর [রা.]- এর জীবনী ভিত্তিক তথ্যমালাকে একত্র করে।যেমন– তাঁর জন্ম- মৃত্যু, ইসলাম গ্রহণের ঘটনা, মদিনা হিজরত জীবন, কাফিরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ময়দানে তাঁর ভূমিকা, নবিজি [স.] ওফাতকালে তাঁর ভূমিকা, প্রশাসনিক কার্যক্রমে তাঁর অসামান্য কৃতিত্ব, মুরতাদের বিরুদ্ধে কঠোর বিদ্রোহ, ভন্ডনবীদের সমূলে উৎপাটন সহ বিভিন্ন সময়ে ইসলামের তরে বিভিন্ন ভূমিকা। তিনি ছিলেন ইসলামের তরে ‘সর্বদা নিবেদিত প্রাণ’।

বই থেকে কিছু অংশঃ—
১। যদি আমাকে না পাও, তা হলে আবু বাকরের কাছে যেয়ো।
পৃষ্ঠা নং— ১৯৮

২। মৃত্যুকে খোঁজো! তুমি জীবনকে পেয়ে যাবে।
পৃষ্ঠা নং— ২৬৩.

৩।সত্যতার সবচেয়ে উচ্চতর দিকটি হলো বিশ্বস্ততা।আর সবচেয়ে খারাপ মিথ্যা হলো বিশ্বাসঘাতকতা।’
পৃষ্ঠা নং— ২৬৩

৪।আল্লাহর শপথ! তারা আল্লাহর রাসূলকে যা দিত, এমন একটি ছাগল ছানাও দিতে যদি অস্বীকার করে, আমি তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব।
পৃষ্ঠা নং—২৮০

পাঠ্যানুভূতিঃ—

আবু বাকার [ রাঃ] ছিলেন সত্যিকার অর্থে একজন বিজ্ঞ ও দূরদর্শী খলিফা ছিলেন।তিনি তাঁর জীবনের প্রত্যেকটা পদক্ষেপের ব্যাপারে দূরদর্শিতার পরিচয় দিয়েছেন। যখন কঠোর হওয়া দরকার ছিল, তিনি কঠোর হয়েছেন।পাশাপাশি যখন দয়া, ক্ষমা ও শীথিলতা দেখানোর প্রয়োজন পড়েছে, তখনও তিনি সেসব গুণ প্রকাশের ক্ষেত্রে কুন্ঠিত হননি।সঠিক স্থানে তিনি তা প্রকাশও করেছে।

গ্রন্থটি যেন গল্পের মতো শেষ হয়ে গেলো। বই পড়ে কল্পনার জগৎ বিচরণ করে খুঁজে পেলাম পবিত্র এক ‘আত্মার সন্ধান’।যিনি আমরণ ইসলামের তরে জীবন বিলিয়ে দিয়েছিলেন। প্রতিটা সময় জীবন বাজি রেখে দ্বীনের আলো ছড়িয়েছেন। মুসলিম উম্মাহ তাঁর কর্মের জন্য চিরোকাল ঋণী হয়ে থাকবে।আবু- বাকার [রাঃ]- সম্পর্কে বিস্তৃত পরিসরে জানার ক্ষেত্রে বইটি অনেক বেশি গ্রহণযোগ্যতা পাবে বলে মনে করছি।বইটির রেফারেন্স গুলো খুবই স্ট্রং।বেশিরভাগ’ই সহিহ হাদিস, কুরআনের উদ্বৃতিসমূহ একত্র করে বর্ণিত হয়েছে। রেফারেন্স গুলো প্রতি পৃষ্ঠার নিচে ছোট্ট করে উল্লেখ্য করার কারণে অনেক সহজেই নোটস করা সম্ভব হয়েছে। বাইন্ডিং মজবুত ছিলো। প্রচ্ছদ এবং পৃষ্ঠা কোয়ালিটিও চমৎকার ছিলো।সবমিলিয়ে ভালো লেগেছে।

রিভিউ: Meher Afroz