চিন্তালাপ

ভার্চ্যুয়াল যৌনাচার : এক নীরব ঘাতক — জাহিদ হাসান

ভার্চ্যুয়ালি যৌনতা বেশ সহজলভ্য। অল্প টাকায় এক জিবি ডাটা কিনে বেশ সহজেই হারিয়ে যাওয়া যায় পর্নোগ্রাফির নিষিদ্ধ পল্লিতে। আর যাদের ব্রডব্যান্ড সংযোগ আছে—তাদের জন্য তো কথাই নেই। অল্প দামেই ক্ষয় করা যায় অফুরান জীবনীশক্তি। আহা, কী অপরিণামদর্শী অপচয়!

একটা সময় ছিল—যখন বিকৃত রুচির মানুষজন নিষিদ্ধ পাড়ায় যেত, তাও বেশ গোপনে। মনে সারাক্ষণ জাগরিত থাকত ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়। কেউ ধরা পড়ে গেলে সমাজে আর তার মানমর্যাদা বলে কিছু থাকত না। তাই অনেকে চাইলেও সেসব নিষিদ্ধ পাড়ায় গমন ছিল একপ্রকার দুঃসাধ্য।

অবশেষে মানুষের এই ভোগবাদী কামনাকে স্যাটিস্ফাই করতে এগিয়ে এলো পশ্চিমা পুঁজিবাদী পর্ন ইন্ডাস্ট্রি। তারা পর্নোগ্রাফির লালসাকে করল ভার্চ্যুয়ালে রূপায়ণ। বিকৃত যৌনাচার চলে এলো একদম হাতের নাগালে। ভার্চ্যুয়াল যৌনাচারে হরহামেশাই করা যায় রুচির পরিবর্তন। এক মডেলে আকর্ষণ ফুরিয়ে এলে ইচ্ছে মতো করা যায় মডেল পরিবর্তন। বাছাই করা যায় নিজের পছন্দমাফিক ক্যাটেগরির পর্ন। এভাবেই পর্নের ভোক্তারা এক নতুন নেশায় বুদ হয়ে যায়, ইচ্ছায় কিংবা অনিচ্ছায়।

এছাড়াও আইটেম গানের নামে একধরনের অসুস্থ যৌন উত্তেজক বিনোদনের রেওয়াজ চালু করেছে ভারতীয় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি। এইধরনের সফটকোর পর্নের ভোক্তা নারীপুরুষ নির্বিশেষে এ দেশের অসংখ্য মানুষ। অনিবার্য যত ক্ষয়—তার সবটার ভুক্তভোগী হচ্ছি আমরা ধীরে ধীরে, পুরো জাতি।

পর্নোগ্রাফি মানুষের মস্তিষ্কের প্যাটার্ন বদলে দেয়। মানুষের মস্তিষ্কের যে অংশকে বলা হয় রিওয়ার্ড সেন্টার—সেখান থেকে মাত্রাতিরিক্ত ডোপামিন নিঃসৃত হতে থাকে পর্ন আসক্তির ফলস্বরূপ। ছোট ছোট ভালো লাগার কারণগুলোতে তখন আমাদের মন আর উদ্দীপিত হয় না। ক্রমেই মন ছেয়ে যায় হতাশা, অনিহা, গ্লানি আর অবসাদে। হারিয়ে যায় জীবনের রং। দুরন্ত যৌবন পরিণত হয় অবসাদগ্রস্ত বার্ধক্যে।

মানুষ তার স্বাভাবিক যৌন চাহিদা মেটাতে না পারলে বেছে নেয় বিকৃত সব উপায়। পর্নাসক্তি কারো কারো মননকে হায়না বানিয়ে দেয়। সে তখন ধর্ষণের মতো গর্হিত পন্থা বেছে নেয় নির্দ্বিধায়। উপযুক্ত বয়সে কেউ বিয়ে না করা মানে এই নয় যে—সে যৌনাচার থেকে মুক্ত থাকে, বরং তার থাকে এক উদ্ভ্রান্ত যৌনজীবন। সে যতটুকু পারে সেটা লোকচক্ষুর আড়াল করে রাখার চেষ্টা করে। আর এ ক্ষেত্রে ভার্চ্যুয়াল যৌনাচার তার কাজকে বেশ সহজসাধ্য করে তোলে।

সমাজে বিয়ে কঠিন হয়ে গেলে যেনা-ব্যভিচারের উপায় উপকরণ বেশ সহজ হয়ে যায়। মানুষ তার স্বভাবগত বৈশিষ্ট্যের কারণেই সেসব উপায় উপকরণের প্রাপ্তিকে সহজ করে তোলে। আর মানুষের এই চাহিদাকে টার্গেট করেই কোটি-কোটি টাকা কামিয়ে নেয় পর্ন ইন্ডাস্ট্রির হর্তাকর্তারা।

নিজেকে একবার প্রশ্ন করুন, এই পর্ন ইন্ডাস্ট্রির একজন নিয়মিত ভোক্তা হয়ে আপনি কি শুধুই নিজের শরীর, মন ও মস্তিষ্কের ক্ষতি করছেন না? নিজের অজান্তেই হারিয়ে যাচ্ছেন না অন্ধকারের গহ্বরে?

সমাজের কালেক্টিভ বিবেকের কাছে প্রশ্ন—বাল্যবিবাহের বিরোধিতা এবং ক্যারিয়ারের হুজুগ তুলে আর কতকাল বিয়েকে কঠিন করে রাখবেন? মিডিয়ায় চাইল্ড রোমান্টিসিজমকে পেট্রোনাইজ করে বিয়ের বেলায় বাল্যবিবাহের ব্যাপারে প্রদর্শিত সেনসিটিভিটি নামক নিরেট ভণ্ডামি থেকে কবে বেরিয়ে আসবেন?

নাগরিক সমাজে আমরা যেমন কপট, আমাদের সন্তানরাও হয়ে উঠছে একেকজন কপট আর উদ্ভ্রান্ত নাগরিক। এর থেকে মুক্তি ততক্ষণ মিলবে না—যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা সমস্যা দেখেও না দেখার ভান করে থাকব। ধিক জানাই আমাদের এমন নির্লিপ্ততাকে!

© জাহিদ হাসান
সিয়ান | বিশুদ্ধ জ্ঞান | বিশ্বমান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *