একটি ভ্রূণের হৃদয়-বিদারক অনুভূতি এবং বেঁচে থাকার তীব্র আকুলতা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে এ বইটির পাতায় পাতায়। ভ্রূণহত্যার মতো গর্হিত কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখতে এবং সুন্দর একটি সমাজ গড়ে তুলতে এমন বইয়ের জুড়ি মেলা ভার।
Copyright © 2024 Seanpublication.com
৳152 ৳112
You Save TK. 40 (26%)
Share This Book:
একটি ভ্রূণের হৃদয়-বিদারক অনুভূতি এবং বেঁচে থাকার তীব্র আকুলতা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে এ বইটির পাতায় পাতায়। ভ্রূণহত্যার মতো গর্হিত কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখতে এবং সুন্দর একটি সমাজ গড়ে তুলতে এমন বইয়ের জুড়ি মেলা ভার।
No account yet?
Create an Account
Meher Afroz –
বইঃ ভ্রুণের আর্তনাদ
লেখিকাঃ শাহীনা বেগম
প্রকাশনঃ সমকালীন প্রকাশনী
লেখিকা শাহীনা বেগম রচিত ‘ ভ্রুণের আর্তনাদ’ বইটির প্রতিটা পাতাজুড়ে কণ্যা ভ্রুণ চিৎকার করে তার পাষান্ড এক মাকে বলছে, ‘মা আমাকে মেরো না! আমারও বাঁচার অধিকার আছে। আমিও গাছপালা- নদী নালা, পাহাড়,শীতের শিশির দেখতে চাই।’
সে বার বার তাঁর মাকে বিভিন্ন কুরআনের আয়াত, এর ভয়াবহকতা বর্ণনা করে হুশিয়ার করে যাচ্ছে। কিন্তু, দুঃখজনক হলেও এটাই সত্য এখন এমন পরিবার পাওয়া দুস্কর, যারা ভ্রুণ হত্যা করেনি।এমন ডাক্তার হাতে-গোনা কম পাওয়া যাবে যার হাত ভ্রুণের রক্তে রক্ষিত হয়নি। সমাজে নারী অধিকার নিয়ে সভাশালা হয়; সেই মেয়ে ভ্রুণকে যেভাবে হত্যা করা হচ্ছে তা নিয়েই কেবল প্রতিবাদ উঠে না।হয়না কোনো লেখালেখি। এই ভ্রুণ যে কেবল মাত্র ‘রক্তপিন্ড নয়’ একটা জীবনও ; তা- তো আল্লাহ কুরআনে স্পষ্ট করে বলে’ই দিয়েছেন। তবুও, দৈনিক কতশত মা ভ্রুণ হত্যা করে তার ইয়ত্তা নেই। সমাজ সেই মাকে খুনি বলে না কারণ, এই খুনগুলো হয় খুবই নিরবে- নিভৃতে। যার স্বাক্ষ্যি এক আল্লাহ, মা নিজে আর ডাক্তার।
আল্লাহর অশেষ রহমত যে, এই প্রথম এমন একটি টপিকে বোন শাহিনা বেগমের মতো একজন মানুষ কলম ধরেছেন। এবং সেই খুনি মায়েদের চিন্তার উদ্রেক জাগানোর জন্য ছড়িয়ে দিয়েছেন তাঁর কথাগুলো।
বই থেকে কিছু অংশঃ—
ঔষুধ কিনে বাড়ী ফিরলেন মা। বাবার চোখের আড়ালে লুকিয়ে ফেললেন সেগুলো।রাতে সবাই ঘুমিয়ে পড়লে মা ফ্রিজের ঠান্ডা এক গ্লাস পানি আর ওই ঔষুধ গুলো নিয়ে বসলেন।ওগুলো নাড়াচাড়া করছেন আর ভাবছেন, ‘ কী করা যায়? যদি ছেলে হয়! ছেলেটিকে মেরে ফেলব?’ ভাবেন আর ভাবেন,‘ রাখব, না ফেলব?’ স্থির হতে পারছেন না, কী করবেন।
পৃষ্ঠা নং— ১৩
‘মায়ের শিরদাঁড়া দিয়ে এক ঠান্ডা শীতল স্রোত বয়ে যায় যেন, নির্বাক বোকা চাহনিতে তাকিয়ে থাকেন কিছুক্ষণ বুয়ার মুখের দিকে। ‘ একটা টুকরা রয়া গেছিল!’— কথাটা মায়ের কানে অনবরত বাজতে থাকে।ঘন্টার মতো। কোন টুকরোটা কে জানে! চোখ, নাক, ঠোঁট, আঙ্গুল নাকি তার তুলতুলে হৃৎপিণ্ডের কোনো টুকরো!’
পৃষ্ঠা নং—১৭
‘সেদিন মায়ের এক বান্ধবী চমৎকার একটা কথা বলেছিলেন এই ব্যাপারে,‘আমরা জন্মাই খ্রিষ্টানদের মতো মোমবাতিতে ফুঁ দিয়ে আর মারা যাই হিন্দুদের শ্রাদ্ধের মতো কুলখানি, চল্লিশা করে।’
পৃষ্ঠা নং— ৩৫
‘বউ হয়তো কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে, এখন বাচ্চা হলে পড়াশোনা আর শেষ করা যাবে না, ডিগ্রি হাসিল হবে না। অতএব, ফেলে দাও এটাকে!’
পৃষ্টা নং— ৩৬
‘ মায়ের ছোট একটি ভুল শিশুটির সারা জীবনের কান্নার কারণ হয়।’
পৃষ্ঠা নং— ৪২
‘ মায়েরা বিষ দিয়ে বাচ্চা হত্যা করে আর ডাক্তাররা M.R. দিয়ে ছোট্ট কচি বাচ্চাটার তুলতুলে নরম শরীরটাকে ছিন্নভিন্ন করে, টুকরো টুকরো করে হত্যা করে বের করে আনে।’
পৃষ্ঠা নং— ৫২
পাঠ্যানুভূতিঃ—
বইটা পড়ার পর বার বার একটা কথাই মনে হচ্ছিলো– আজ যদি গর্ভবতী নারীকে কোনো পাষান্ড পুরুষ শারীরিক নির্যাতন করত এবং তাতে তার বাচ্চা নষ্ট হতো৷এবং মারা যেতো! তখন ঐ দুষ্টু লোকটিকে সমাজ ঠিকই শাস্তি দিতো। ‘চরম শাস্তি অথবা মৃত্যুদন্ড ও দেওয়া হতো। অথচ যে সমাজে মা নিজেই ‘ভ্রুণ হত্যাকারী’, সেই সমাজে এই খুনগুলো যেন স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে।
বুয়া যখন বলছিলো,‘পরথমে কয়েকদিন খালি আনারস আর সিরকা খাইলাম, কিচ্ছু অইলো না। তারপর চাইর বচ্ছরের মাইয়াডারে প্যাটের ওপী চরাইয়া লাথিদিতে কইলাম, তাও কামে দিলো না….’ তখন ঠিক তখনই ইচ্ছে করছিলো ঐ মহিলাকে কষিয়ে একশটা থাপ্পড় মারি।
আবার যখন ‘বুঝবান মা’ ভ্রুণ হত্যার জন্য বরিগুলো পানি দিয়ে খেয়ে নিয়েছিলো।তখন ঐ মাকে খুন করতে ইচ্ছে করেছিলো। এরকম মহিলাগুলো মা জাতির কলঙ্ক।
স্পষ্টভাষী লেখিকা খুব চমৎকারভাবে তাঁর উপস্থাপন ফুটিয়ে তুলেছেন। বিষয়টাকে সহজে মনের গহিণে স্পর্শ করাতে ‘মা’/ বুয়া চরিত্রদের টেনে ধরছেন।তাছাড়াও, সমাজে মেয়েদের নির্মম অবস্থা তো ফুটিয়ে তুলেছেন’ই পাশাপাশি নারীদের পণ্য হিসেবে ব্যবহার করা পশ্চিমাদের মুখোশ উন্মোচন করেছেন।
মন্তব্যঃ—
চিকন এই বইটি এতোটা নির্মম সত্য বহণ করছে, পাঠক সমাজ তা না পড়ে দেখলে কোনোভাবেই জানতে পারবে না।
চমকিত হওয়া বিষয়, বইটি যিনি লিখেছেন তিনি একজন সম্ভ্রান্ত ঘরের মেয়ে।এতো উচ্চ পর্যায়ের মানুষের ভেতর থেকে এত সুন্দর চিন্তাধারা বেড়িয়ে এসেছে [ যেখানে মানুষ উচ্চ পর্যায়ে আরোহণ করলে নিন্মের মানুষদের কথা ভুলে যাওয়ার সংখ্যাই বেশি।]।সত্যিই এটা আল্লাহর বিশেষ রহমত। আল্লাহ লেখিকাকে অতি উত্তম প্রতিদান দান করুক। আমিন।
রিভিউ দাতাঃ Meher Afroz