জর্জ হেগেল বলেছিলেন, “ইতিহাসের সবচেয়ে বড় শিক্ষা হলো, ইতিহাস থেকে কেউ শিক্ষা নেয় না।” হুমায়ুন আজাদও এ ক্ষেত্রে তেমনটাই করেছেন। জাহিলি আরবের ইতিহাস থেকে তিনি শিক্ষা নেননি; বরং জাহিলি যুগকে তিনি প্রমোট করেছেন। তিনি বোঝাতে চেয়েছেন, জাহিলি যুগে আরবে নারীদের অধিকার, মর্যাদা ও সম্মান বেশি ছিল। সমাজে তাদের বেশি মূল্যায়ন করা হতো। আরবে ইসলাম যখন প্রতিষ্ঠা লাভ করে, তখন নারীরা তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়। তাদের কাছ থেকে তাদের প্রাপ্য অধিকার হরণ করা হয়।
.
“আরব নারীদের নানা ইতিহাস লেখা হয়েছে; সবগুলোতেই স্বীকার করা হয় যে ইসলামপূর্ব আরবে অনেক বেশি ছিলো নারীদের স্বাধীনতা ও অধিকার। তারা অবরোধে থাকতো না, অংশ নিতো সমস্ত সামাজিক ক্রিয়াকাণ্ডে; এমনকি তাদের প্রাধান্য ছিলো সমাজে।” [হুমায়ুন আজাদ, নারী, পৃষ্ঠা : ৮১]
তিনি আরও বলেছেন, ইসলাম আসার আগে আরবের নারীদের অবস্থা সম্পর্কে যে বর্ণনা প্রদান করা হয়, তা ঐতিহাসিকভাবে সত্য নয়।
“প্রচারের ফলে মুসলমানদের মধ্যে জন্মেছে এমন এক বদ্ধমূল ধারণা যে ইসলামপূর্ব আরবে নারীদের অবস্থা ছিলো শোচনীয়; ইসলাম উদ্ধার করে তাদের। প্রতিটি ব্যবস্থা পূর্ববর্তী ব্যবস্থার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালায়; তবে ঐতিহাসিকভাবে সাধারণত সত্য হয় না।” [প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা : ৮১]
“ইসলামের আগে আরবের নারীদের অবস্থা যতোটা খারাপ ছিল ব’লে প্রচারিত, ততোটা খারাপ ছিলো না; ঐতিহাসিকদের মতে নারী অনেক বেশি স্বাধীন ছিলো অন্ধকার যুগের আরবে।” [প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা : ৩৬৯]
.
মজার বিষয় হলো, এই আলোচনা করতে গিয়ে তিনি ইতিহাস থেকে কোনো দলিল দিতে পারেননি। কোনো ঐতিহাসিকের মতামতও আনতে পারেননি। শুধু একটি হাদিস উল্লেখ করেছেন। সেটাও এই ক্ষেত্রে দলিল হিসেবে ব্যবহার করার অযোগ্য।
এই ভ্রান্তিবিলাস বইতে নানান রেফারেন্সে উঠে এসেছে পৌত্তলিক আরবের সামাজিক অবস্থার বর্ণনা। সে সমাজের কুসংস্কার, নারীর অধিকার, সম্মান, বিবাহের রেওয়াজ, দাসী-প্রথার বৃত্তান্ত কী ছিল, ইসলাম কী পদক্ষেপ নিয়ে কী কী কাজ করেছে, ইত্যাদি বিষয়ে দালিলিক ও যৌক্তিক আলোচনায় খণ্ডন করা হয়েছে হুমায়ুন আজাদের নারী বইটির সমস্ত মিথ্যাচারকে।
Reviews
There are no reviews yet.