আমরা আল্লাহকে ঠিক কী রূপে চিনি? যখনই কেউ আমাদেরকে আল্লাহর কথা স্মরণ করিয়ে দেয়, তখন আমাদের মনে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা সম্পর্কে কী রূপ ধারণা জেগে ওঠে? আমাদের মনে জেগে ওঠে আল্লাহ হচ্ছেন তিনি, যিনি মানুষকে পরকালে শাস্তি দেবেন। আল্লাহ হচ্ছেন তিনি, যিনি পরকালে মানুষকে জাহান্নামে পাঠাবেন। আল্লাহ হচ্ছেন তিনি, যিনি পাপীদের দুনিয়া ও আখিরাতে লাঞ্চনা-গঞ্জনা দেবেন। কিন্তু, আল্লাহ কি কেবল এসব গুণাবলীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ? তিনি কি পাপীদের ক্ষমা করেন না? অপরাধীর আকুল ফরিয়াদে তিনি কি সাড়া দেন না? নিশুতি রাতে বান্দার অশ্রুজলের বিনিময়ে তিনি কি তার গুনাহ মাফ করেন না? চরম বিপদে নিপতিত বান্দাকে বিপদ থেকে কি তিনি উদ্ধার করেন না? তিনি কি বান্দার জন্য রিযিকের ব্যবস্থা করেন না? তিনি কি মায়ের গর্ভে আমাদের লালন-পালন করেন না? আমাদের বেঁচে থাকার জন্য কি তিনি দুনিয়ায় আলো-বাতাস-পানির ব্যবস্থা করেন না? তথাপি, আমরা যখন আল্লাহকে স্মরণ করি, আমরা কি তাঁকে এই গুণগুলো দিয়ে ভাবি?
আল্লাহর রয়েছে সুন্দর সুন্দর গুণবাচক নাম। এগুলোকে বলা হয় আসমাউল হুসনা। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা কুরআনুল কারিমে বলেছেন, ‘আর আল্লাহর রয়েছে সুন্দর সুন্দর নামসমূহ। কাজেই তোমরা আল্লাহকে সেসকল নাম ধরে ডাকো।’ [আল আরাফ : ১৮০]
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা কুরআনে তাঁকে তাঁর সুন্দর সুন্দর নামগুলো ধরে ডাকতে বলেছেন। কিন্তু কেন তিনি এমনটা বলেছেন? কখনো কি চিন্তা করেছি? আল্লাহর নামগুলোর পেছনে কী নিগূঢ় এক রহস্য, কী যে এক মাহাত্ম্য লুকিয়ে আছে, তা কি আমরা জানি?
এই সুন্দর সুন্দর নামগুলো আমাদের বুঝতে হবে। এই নামগুলোর পেছনে রয়েছে রহস্য। রয়েছে জ্ঞান লাভ করার, আত্মশুদ্ধি লাভ করার দিক নির্দেশনা। এই নামগুলোর মধ্যে রয়েছে বান্দার জন্য পথ নির্দেশ। বান্দা যখন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলাকে তাঁর সঠিক নামে, সঠিক পরিচয়ে, সঠিক অভিধায় অভিধিত করতে পারে, তখন আল্লাহ বান্দার ফরিয়াদ কবুল করে নেন। যারা তাঁকে তাঁর যথার্থ নাম ছাড়া, যথার্থ অভিধা ছাড়া ভিন্ন অভিধায় অভিধিত করেছে, তাদের সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘তারা আল্লাহকে যথার্থ মূল্যায়ন করতে পারেনি।’ [আনআম : ৯১]
আল্লাহর গুণবাচক নামগুলোকে বাস্তব জীবনে প্রতিফলিত করতে পারার মধ্যেই সাফল্য নিহিত। কিন্তু, আমরা যদি না-ই বা বুঝি তিনি কী রকম, তাহলে আমরা কীভাবে তার গুণগুলো নিজেদের জীবনে ফুটিয়ে তুলব? কীভাবে তাঁকে ডাকব? তাঁর কাছে চাইব? তাঁর কাছে হাত পাতব? আল্লাহর গুণগুলো দিয়ে নিজেদের রাঙিয়ে নেওয়ার জন্য, আল্লাহর গুণগুলো বুঝে সেগুলোকে জীবনে প্রতিফলিত করতে পারার জন্য, নিজেদের প্রয়োজনে, তাগিদে আল্লাহর শরণাপন্ন হওয়ার জন্য যাতে আমরা তাঁকে ঠিক সেইভাবেই বুঝি, যেভাবে তাঁকে বুঝতে হবে, তার জন্য শায়খ আলী জাবের আল ফিফী (হাফিজাহুল্লাহু) রচনা করেছেন লি আন্নাকা আল্লাহ নামে এক অনবদ্য বই। বইটাতে লেখক আল্লাহর গুণবাচক সিফাতগুলোর সাথে আমাদের বাস্তব জীবনের এমন এক অভিনব সমন্বয় ঘটিয়েছেন যে, যে কারও জন্য বইটি হতে পারে আল্লাহর সাথে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তোলার মাধ্যম, ইনশাআল্লাহ। বাংলায় বইটি অনুবাদ হয়েছে তিনিই আমার রব নামে। অনুবাদ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ মজুমদার।
সিরাজাম বিনতে কামাল –
▪️”তিনিই আমার রব” শিরোনাম স্পষ্টত’ই জানান দিচ্ছে বইটি কী সম্পর্কিত! বইটিতে রয়েছে প্রিয় রব্বের দশটি গুণবাচক নাম এবং নামসমূহের ব্যাখা। ব্যক্তিগতভাবে বইটি আমার খুব খুউব প্রিয়। এবং আমার একাকীত্বের সঙ্গী, ডিপ্রেশনের মহৌষধ। আলহামদুলিল্লাহ!
তো চলুন দেখে নেয়া যাক বুক রিভিউ:
📚প্রাককথন:
———————
দুঃখ-সুখের বুননেই গড়ে উঠে প্রত্যেকের জীবন। কাউকে কিছু না বলেই চলে আসে বিপদ, জীবন ছেঁয়ে যায় দুশ্চিন্তায়। কিছুতেই প্রশান্তি লাগে না, অবর্ণাতীত যন্ত্রণায় কাটে জীবনের দুঃসময়গুলো। একসময় এই অসহনীয় যন্ত্রণাগুলো দূর হয়। জীবনে আবার ফিরে আসে প্রশান্তি।
মানুষ অসুস্থ হয়, অসুস্থতা ঝেড়ে এক সময় সুস্থ হয়ে উঠে।নানা ধরণের বিপদ আপদে জর্জরিত মানুষের জীবন। এক সময় বিপদ আপদগুলোও কেটে যায়। আমরা কখনো হাঁটি ভুল পথে, আবার ভুল বুঝে ফিরে আসি।
আমরা বড়ই অকৃতজ্ঞ। কেউ একজন আমাদের এইসব বিপদাপদ থেকে রক্ষা করছেন, হৃদয়ে সুকুন ঢেলে দিচ্ছেন তা যেনো ভাবতেই পারিনা। অথচ বিপদের সময় মনের অজান্তেই সেই একজনকে ডেকে ওঠি, ইয়া আল্লাহ! সাহায্য করো। কখনো বলে ওঠি, আল্লাহ বাঁচাইছে না হয় কী যে হতো!
এক্সাক্টলি, আমাদের সকল দুঃখ যাতনা দূর করে দিয়ে যিনি হৃদয়ে সুকুন ঢেলে দেন; যিনি সমস্ত চিন্তা, ভাবনার অবসান করে একটা ব্যবস্থা করেই দেন; যিনি রোগ থেকে আরোগ্য দান করেন; যিনি অব্যক্ত কথাগুলো বুঝে নিয়ে মনে খুশির বারতা ঢেলে দেন। তিনি, তিনিই আমাদের রব।
📚বই অভ্যন্তরে:
————————
আল্লাহর রয়েছে গুণবাচক ৯৯টি নাম। যে নাম ধরে ডাকলে তিনি খুশি হয়ে যান। যে নামের উছিলায় তিনি দু’আ কবুল করে নেন। যে নামগুলো পাঠ করলেও আমলনামার ঝুলিতে নেকী জমা হয়, হৃদয়ে সুকুন বয়ে যায়। সেই গুণান্বিত নামসমূহের ১০টি নাম নিয়ে সাজানো হয়েছে এ’বই। বইটিতে নামসমূহের অর্থ, মাহাত্ম্য, কখন কোন পরিস্থিতিতে কোন নামে ডাকবো রবকে তা’ই আলোচনা করা হয়েছে।
📚বইটি কেন পড়বেন:
——————————–
মহামহিম রব কীভাবে আমাদের আগলে রেখেছেন আলোচনার পরতে পরতে তা সুস্পষ্টভাবে ফুটে ওঠেছে। এই বই পাঠের মাধ্যমে কোন পাপী মন প্রিয় রবের অনুগ্রহ অনুধাবন করতে পারবে। বইটি পড়ার মাধ্যমে আমরা আমাদের প্রিয় রবের পরিচয় পাবো। রবকে নিয়ে আরো জানতে ইচ্ছে হবে। আল্লাহর প্রত্যেকটা গুণবাচক নামের মাহাত্ম্য জানতে ইচ্ছে হবে। (আমার হয়েছে আরকি)
আশা করি বইটি সবাই পড়বেন। শুরুতেই বলেছি আমার খুব ভালো লেগেছে। প্রিয় বইগুলোর একটি।
Meher Afroz –
📙বুক রিভিউ📗
বই: তিনিই আমার রব
লেখক : শাইখ আলী জাবির আল ফাইফী
প্রকাশনী : সমকালীন প্রকাশন
অনুবাদক: আব্দুল্লাহ মজুমদার
সম্পাদনা: আকরাম হোসাইন
পৃষ্ঠা : ১৬৫
আল্লাহ কুরআনে বলেছেন তাঁকে তাঁর সুন্দর সুন্দর নামগুলো ধরে ডাকতে। কিন্তু কেনো তিনি এমনটা বলেছেন? কখনও কি কেউ চিন্তা করেছি? আল্লাহর নামগুলোর পেছনে যে নিগূঢ় এক রহস্য ও মাহাত্ম্য লুকিয়ে আছে, তা কি আমরা জেনেছি? আল্লাহর গুণবাচক নামগুলোর ওপর এমন তাত্ত্বিক অথচ হৃদয়গ্রাহী রচনা সত্যিই বিরল। ‘তিনিই আমার রব’ বাংলা ভাষায় এই টপিকে এটিই একক ও অনবদ্য গ্রন্থ। এই বইটিতে আছে মহান আল্লাহ সুবাহান ওয়া’ তা’য়ালার দশটি মহান নামের ব্যাখ্যা। আল্লাহ রাব্বুল আলা’মীনের এ দশটি নামকে জীবনের প্রতিটা দৃষ্টিকোণ, প্রতিটা ক্ষেত্র থেকে ব্যাখ্যা করতে লেখক ‘আলী জাবির আল ফাইফী’ পাঠকদের নিয়ে প্রবেশ করেছেন ভিন্ন এক জগতে। সেই জগতে নেই কোন দুঃখ, নেই কোন কষ্ট। নেই কোন হতাশা, না পাওয়ার যাতনা। সেই জগত কেবল রব আর তাঁর বান্দার। সে জগতে রাজা হলেন আরশের অধিপতি, আর দাস তথা প্রজা হলো বান্দারা।
পাঠ্যানুভূতিঃ—
বইটা যখনই পড়েছি তখন কোনো না কোনো কষ্ট আমাকে তাড়া করছিল। আর বইটার মাধুর্যমন্ডিত লিখনশৈলী আসলেই চমকপ্রদ। বইটা পড়ছিলাম আর যেন মনে হচ্ছিল কেউ বুঝি আমাকে এসে মাথায় হাত বুলিয়ে কষ্ট গুলো ভুলিয়ে দিয়ে বলছে, ‘আল্লাহর উপর ভরসা করলে আল্লাহই তোমার জন্য যথেষ্ট! ’
তাছাড়া আল্লাহর নামগুলোর এতো মাহাত্ম্য ও ভাবার্থ এতো গভীরতর! এ বইটা না পড়লে তেমন করে ভাবানুভূতি জাগ্রত হতো না। এই বইটার লেখক, অনুবাদক, সম্পাদক এবং বাদ- বাকি সকলের কাছে চিরো কৃতজ্ঞ হয়ে গেলাম।আলহামদুলিল্লাহ।
রিভিউদাতাঃ Meher Afroz