ঈমানী শক্তি, দ্বীনি আবেগ, নৈতিকতা ও উৎকর্ষ এবং জ্ঞান ও কর্মগত সেবার দিক থেকে ইসলামের রয়েছে তিনটি ধারাবাহিক ‘খাইরুল কুরুন’ তথা উত্তম যুগ। আর তা হল সাহাবা, তাবি’ঈন, তাবে-তাবি’ঈনের যুগ। এই তিনিটি সময়ে মুসলিমরা জ্ঞান চর্চা, আধ্যাত্মিক উৎকর্ষতা, পার্থিব অর্জন ও সফলতার চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে যায়। এর পরে যে উন্নতি ও উৎকর্ষ মুসলিমরা অর্জন করে তা কেবল সভ্যতারুপী প্রাসাদের বাহ্যিক রুপ ও অলংকার। বিভিন্ন জীবনীভিত্তিক কিতাবে রাসূলের সীরাহ এবং সাহাবীদের জীবনিই বেশী প্রাধান্য পেয়ে থাকে সাধারণত। তাই সাহাবীদের পরের শ্রেষ্ঠ প্রজন্ম তাবি’ঈদের নিয়ে আলোচনার যথেষ্ট জায়গা আছে বলে প্রতীয়মান হয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ছাত্র ছিলেন সাহাবারা, আর সাহাবাদের সরাসরি ছাত্র ছিলেন তাবি’ঈরা। উম্মাহর এই মহান প্রজন্মে ক্ষুরধার আলেম যেমন রয়েছেন, তেমনি রয়েছেন আবেদ, আল্লাহর পথের মুজাহিদ, নেতা। এসব শ্রেষ্ঠ মানুষদের কাছ থেকে আমরা অবশ্যই ঈমানের কিছু আঞ্জাম পেতে পারি। আরো কিছুটা আল্লাহর দ্বীনের, রাসূলের আদর্শের কাছাকাছি যেতে পারি। আর তাই সাহাবাদের নিয়ে আসহাবে রাসূলের জীবনকথার সফল রচনার পর ড.আব্দুল মাবুদ স্যার রচনা করেছেন চার খণ্ডের আরেকটি অসাধারণ কিতাব ‘তাবি’ঈদের জীবনকথা’।
Copyright © 2025 Seanpublication.com
Farzana Ashrafi –
সাহাবা, তাবি’ঈ এবং তাবি-তাবি’ঈন গণ ছিলেন আক্ষরিক অর্থেই মুসলিম উম্মাহর ‘হীরের টুকরো’। তাঁদের সময়কালেই মুসলমানরা দ্বীনের চর্চা, আধ্যাত্মিক উৎকর্ষতা, পার্থিব সফলতার চূড়ায় পৌছতে সক্ষম হয়। ইসলামের ইতিহাসে এ সময়কালকে বলা হয় ‘খায়রুল কুরুন’ বা সর্বোত্তম যুগ।
যেসব মুসলমান রাসূলের (সা.) সাক্ষাৎলাভের সৌভাগ্য লাভ করেননি কিন্তু তাঁর সাহাবীদের (রা) সাক্ষাৎ এবং সান্নিধ্য লাভ করেছেন তাঁরাই তাবি’ঈ। রাসূলের (সা.) অনুসারিদের মধ্যকার শ্রেষ্ঠ তিন প্রজন্মের দ্বিতীয় প্রজন্ম তাঁরা। তাবি’ঈ- রা (রহ) ছিলেন সাহাবা (রা)-দের প্রতিচ্ছবি। প্রচুর অধ্যাবসায় আর ত্যাগ স্বীকারের মধ্য দিয়ে সাহাবা (রা.) থেকে পাওয়া জ্ঞান ও নৈতিকতার কল্যাণ সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে দিয়েছেন তাঁরা।
সেরকমই কতিপয় প্রসিদ্ধ তাবি’ইর জীবনী সংকলন ড. মুহাম্মদ আবদুল মাবুদের ‘তাবি’ঈদের জীবনকথা’। সিরিজটির চারটি খণ্ডে প্রথম সারির ৯৯ জন তাবি’ঈ- র সংক্ষিপ্ত জীবনী মলাটবদ্ধ হয়েছে। বিশেষত দ্বীনের চর্চা, প্রচার-প্রসারে যারা অগ্রগণ্য ছিলেন, সেই সমস্ত তাবে’ঈ-দের জীবনভাষ্যেরই লিখিত রুপ দিয়েছেন লেখক।
যারা ইতোপূর্বে অধ্যাপক ড. মাবুদের ‘আসহাবে রাসূলের জীবনকথা’ পড়েছেন তারাই জীবনী সাহিত্য রচনায় লেখকের মুন্সিয়ানার কথা জানেন। প্রাঞ্জল বর্ননা আর প্রচুর তথ্যসূত্রের ব্যবহার সংকলনগুলোকে মাস্টারপিসে পরিণত করেছে। ‘তাবি’ঈ- দের জীবনকথা’ ও বাংলা সাহিত্যে একটি অনন্য সংযোজন।
সহজ-সরল বর্ননাভঙ্গি এই বইয়ের প্রধান বৈশিষ্ট্য। প্রচুর রেফারেন্সের সমাগম ঘটলেও ধারাবর্ণনার কোনরুপ বিচ্যুতি ঘটেনি। পড়তে পড়তেই ছাপার অক্ষর মনেও প্রভাব ফেলতে শুরু করে।
‘ধূলিমলিন উপহার: রামাদান’ বইয়ে শাইখ জিবলীলের চমৎকার একটা উপদেশ ছিল। পাঠককে উনি নিজের প্রতিযোগি হিসেবে একজন সালাফকে বেছে নিতে বলেছেন। যার জীবনীর সাথে মিলিয়ে আমরা নিজেদের আমল, ইবাদত, আধ্যাত্মিকতার উৎকর্ষ সাধন করব। ‘তাবি’ঈ- দের জীবনকথা’ আমাদের সামনে সেরকমই একটা সুযোগের দ্বার উন্মোচন করে দেয়। উমার ইবন আবদুল আযীয, হাসান আল বাসরী, আহনাফ ইবন কায়স, ‘আতা ইবনে আবী রাবাহ, মুহাম্মাদ ইবনে সীরীন, উরওয়া ইবন আয-যুবাইর, উওয়াইস ইবন আমির আল-কারনী প্রমুখ তাবি’ঈ- দের পূণ্যময় সফল জীবন ও কর্মের ধারাবিবরণী আমাদেরকেও তাঁদের পথে হাটতে উৎসাহিত করবে, ইনশাআল্লাহ।