কেন পড়বেন ‘সিন্ধু থেকে বঙ্গ’?
অস্তিত্বের জন্য প্রতিটি মানুষের শেকড়ের সন্ধান জানা জরুরি। শেকড়কে জানতে হলে জানতে হবে ইতিহাস। বাংলাদেশের মুসলিম মানসের শেকড় জানতে হলে ভারত উপমহাদেশের ইতিহাস জানা জরুরি। দুঃখজনকভাবে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ভারত উপমহাদেশের মুসলিম শাসনের ইতিহাস অনেকটা অবহেলিত।
উপমহাদেশে প্রাথমিক মুসলিম শাসনের সূচনা হয় ৯০ হিজরির আগে, বিখ্যাত মুসলিম সেনাপতি মুহাম্মাদ বিন কাসিম রহ.-এর হাত ধরে। তবে তা কেন্দ্রীয় শাসন ছিল না। নানা কারণে দীর্ঘস্থায়ীও হয়নি। ভারতে মুসলিম অভিযানের সূচনা হয় আরও আগে। দ্বিতীয় খলিফা উমর ইবনুল খাত্তাব রাযিয়াল্লাহু আনহুর যুগেই ভারত অভিযান শুরু হয়। এই ঘটনা ১৫ হিজরির পরের কথা। এই অভিযান পরিণতি পায় মুহাম্মাদ বিন কাসিমের হাত ধরে। এরপর পর্যায়ক্রমে উত্থান-পতন শেষে বৃটিশ শাসনের আগ পর্যন্ত প্রায় ৮০০ বছর মুসলিম শাসকদের হাতে ভারতবর্ষ শাসিত হয়।
ভারতবর্ষে আনুষ্ঠানিক মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠিত হয় গজনি রাজবংশের হাত ধরে। ৯৭৭ থেকে ১১৮৬ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত এই রাজবংশ স্থায়ী হয়। গজনি বংশ ১১৮৬ খ্রিষ্টাব্দে ঘোর বংশের হাতে পরাজিত হয়। ঘুরিদের শাসন স্থায়ী হয় ১২১৫ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত।
বাংলায় আনুষ্ঠানিক মুসলিম শাসনের সূচনা হয় ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মাদ বখতিয়ার খিলজির হাত ধরে, ১২০৬ খ্রিষ্টাব্দে। এই বাংলা বিজয়ের মাধ্যমে ভারতবর্ষে সুলতানি আমলের সূচনা হয়। সুলতানি আমল স্থায়ী হয় ১২০৬-১৫৯৬ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত। অপরদিকে ১২০৬ খ্রিষ্টাব্দে মামলুকদের হাতে বিজিত হয় দিল্লি অঞ্চল। সূচনা হয় দিল্লি সালতানাতের। দিল্লি সালতানাত স্থায়ী হয় ১২০৬-১৫২৬ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত। দিল্লি সালতানাতে এই সময় শাসন করে মামলুক, খিলজি, তুঘলক, সৈয়দ ও লোদি রাজবংশ। ১৫২৬-এ প্রতিষ্ঠিত হয় মুঘল সাম্রাজ্য, সম্রাট বাবরের হাত ধরে। মুঘল সাম্রাজ্য স্থায়ী হয় ১৫২৬-১৮৫৮ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত।
কেন হয়েছিল ক্ষমতার এত পালাবদল? কেমন ছিল মুসলিম রাজবংশগুলোর শাসনব্যবস্থা? কেমন ছিল সেসময়ের রাষ্ট্রীয় ও জাতীয় ব্যবস্থা? কেমন ছিল শিক্ষাব্যবস্থা? সে যুগের সাথে এ যুগের পার্থক্য কী? মুসলিম শাসন ভারতবর্ষে কতটা ইসলামের ছাপ রাখতে পেরেছে? আর কতটা রাজনীতির ছাপ? এগুলো কি নিছক শাসনব্যবস্থা ছিল না ইসলামি শাসনব্যবস্থা? উপমহাদেশে এবং এই বাংলায় এত মুসলিম ও মসজিদ-মাদরাসা কীভাবে শেকড় গেঁথেছে? কী তার উৎস, কী তার ইতিহাস?
‘সিন্ধু থেকে বঙ্গ’ বইতে ভারত উপমহাদেশের ইতিহাসের এই প্রশ্নগুলোর জবাব অনুসন্ধান করা হয়েছে। মোট দুই খণ্ডের বইটির প্রথম খণ্ড ২১টি অধ্যায়ে বর্ণিত হয়েছে বিস্তৃত ইতিহাস। ইবরাহিম আলাইহিস সালামের মুনাজাত থেকে শুরু করে প্রাচীন ভারতের শিক্ষাব্যবস্থা, ইসলাম প্রচারে ওলি-আউলিয়ার অবদান, বঙ্গে ইসলাম প্রচার, মুসলিম শাসনের সূচনা, সিন্ধু বিজয়-সহ রাজবংশগুলোর ইতিহাস বিবৃত হয়েছে সাবলীলভাবে।
প্রথম খণ্ডে আলোচিত হয়েছে গজনি থেকে ইলিয়াস-শাহি বংশ (১৩৪২-১৩৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর্যন্ত। দ্বিতীয় খণ্ড পুরোটাজুড়ে আলোচিত হয়েছে মুঘল শাসনের ইতিহাস। মুঘল শাসকদের জীবনী, তাদের শাসনকাল, অবদান, যুদ্ধ-বিগ্রহ, ধর্মীয় ও সামাজিক অবস্থা ইত্যাদি বিস্তারিতভাবে আলোচিত হয়েছে। ২০ অধ্যায়ের এই খণ্ডটির শেষ পাঁচটি অধ্যায়ে আলোচিত হয়েছে পর্যায়ক্রমে মুঘল শাসনব্যবস্থায় সমাজ ও সংস্কৃতি, হিন্দু-মুসলিম সম্পর্ক, শিল্পব্যবস্থা, শিক্ষা-সাহিত্য এবং ভারতবর্ষে সভ্যতা নির্মাণে ইসলামের ঐতিহাসিক অবদান।
নিজের শেকড় ও অস্তিত্ব, মাটি ও মানবের ইতিহাস জানতে পড়ুন ‘চেতনা’ প্রকাশিত ‘সিন্ধু থেকে বঙ্গ।’
Arafat Shaheen –
বই: সিন্ধু থেকে বঙ্গ
লেখক: মনযূর আহমাদ
ইসলামের ইতিহাসের শিক্ষার্থী হিসেবে অ্যাকাডেমিকভাবে সামান্য হলেও ইতিহাস পাঠের সুযোগ হয়েছে। তাছাড়া নিজেও গভীর অনুসন্ধিৎসু মন নিয়ে ইতিহাস পাঠ করে থাকি। এই বইটির সূচীপত্রে চোখ বোলানোর পর; সত্যি বলতে—আমি একেবারে হতবাক হয়েছি! লেখক নিজেকে ইতিহাস-লেখক হিসেবে পরিচয় না দিয়ে শুধুমাত্র পাঠক হিসেবে পরিচয় দিলেও তার গভীর অনুসন্ধানী দৃষ্টি আমার চোখ এড়ায়নি। ১১০০ পৃষ্ঠার বৃহৎ কলেবরে রচিত এই বইয়ে ভারতবর্ষের বিস্তারিত ইতিহাস উঠে এসেছে।
দুই খণ্ডে রচিত বইটির প্রথম খণ্ডে এসেছে সুলতানি আমলের ইতিহাস এবং দ্বিতীয় খণ্ডে স্থান পেয়েছে মোগল আমলের ইতিহাস। ভারতবর্ষের ইতিহাস রচনাকারী বেশিরভাগ লেখকই তাদের বইকে এভাবে ভাগ করেছেন। মনযূর আহমাদও তার ব্যতিক্রম করেননি। তবে তিনি ‘শর্টকাট’ ইতিহাস রচনার পরিবর্তে বেছে নিয়েছেন গভীরভাবে বিশ্লেষণের অমসৃণ পথ। যে বিষয়গুলো নিয়ে ইসলাম ও মুসলিমবিদ্বেষীরা সবচেয়ে বেশি জল ঘোলা করার চেষ্টা করেছে, তিনি সে বিষয়গুলোতে আলাদাভাবে আলো ফেলার চেষ্টা করেছেন। ফলে তার আলোচনার সারমর্ম থেকে সহজেই সঠিক বিষয়টি উপলব্ধি করা সম্ভব হবে।
•
প্রথম খণ্ডে মোট অধ্যায় রয়েছে একুশটি। এখানে মুসলিম জাতির অতীত ইতিহাস থেকে শুরু করে সুলতানি আমলের শেষপর্যন্ত সময়কালের ইতিহাস বর্ণিত হয়েছে। বিষয়গুলো হলো—ভারতের প্রাচীন ইতিহাস, সুলতানি আমলে শিক্ষাব্যবস্থা, এ অঞ্চলে ইসলাম প্রচার, ভারতে মুসলিম শাসনের গোড়ার কথা, মুসলিমদের আগমনের সময় ভারতের সামাজিক অবস্থা, গজনি বংশ, ঘুর বংশ, দিল্লির তুর্কি সাম্রাজ্য, বিভিন্ন বংশের শাসন, বাংলায় মুসলিম শাসনের প্রতিষ্ঠা, তৈমুরের ভারত আক্রমণ, সুলতানি শাসনের পতন।
দ্বিতীয় খণ্ডের বিশটি অধ্যায়ে মোগল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠার ইতিবৃত্ত থেকে শুরু করে এর পতন এবং ভারতবর্ষে সভ্যতা নির্মাণে ইসলামের অবদান পর্যন্ত আলোচনা স্থান পেয়েছে। বাবর, হুমায়ূন, শের শাহ, আকবর, মুজাদ্দিদে আলফে সানি, জাহাঙ্গীর, আওরঙ্গজেব, শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলবিদের জানা না থাকলে কিছুতেই এ অঞ্চলের ইতিহাস জানা সম্ভব নয়। তাই লেখক বিস্তৃত পরিসরে তাদের সম্পর্কে আলোচনা এনেছেন।
•
বিশেষ বৈশিষ্ট্য:
বর্তমান সময়ে ইসলামি প্রকাশনাগুলো অনুবাদের দিকে এতবেশি মনোযোগ দিয়েছে, আমাদের এই বঙ্গদেশেও যে বস্তুনিষ্ঠ ইতিহাস রচয়িতা রয়েছেন সেটা বোঝা বেশ কষ্টকর। চেতনা প্রকাশন সেই জায়গা থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করছে। ‘সিন্ধু থেকে বঙ্গ’ সেরকম একটি ব্যতিক্রমধর্মী প্রয়াস এবং আমি বিশ্বাস করি, এটা সফলতার মুখ দেখবে ইনশাআল্লাহ।
বাংলাদেশে মুসলিমদের শিকড় বেশ গভীর এবং এখানে সংখ্যার দিক দিয়ে ভারতের অন্যান্য অংশের তুলনায় মুসলিম জনসংখ্যা অনেক বেশি। ফলে এটা নিয়ে বিরোধীদের নানামুখী কথাবার্তা চালু রয়েছে। তাই বাংলাভাষী পাঠকের কাছে ইতিহাসের সঠিক বার্তা তুলে ধরার জন্য ‘বাংলায় মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠতা : একটি ঐতিহাসিক বিশ্লেষণ’ নামে আলাদা অধ্যায় লিখেছেন মনযূর আহমাদ।
মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেব আলমগির-কে নিয়ে সবচেয়ে বেশি আপত্তি রয়েছে হিন্দু ও পশ্চিমা চিন্তার ঐতিহাসিকদের। ‘আওরঙ্গজেবের চরিত্র বিচার’ নামে স্বতন্ত্র একটি অধ্যায় রচনা করে লেখক যুক্তির মাধ্যমে তাদের এ অপচেষ্টাকে খণ্ডন করার চেষ্টা করেছেন।
বইটি রচিত হয়েছে সাধারণ পাঠক ও গবেষক উভয়েরই উপযোগী করে। বাংলায় রচিত ভারতবর্ষের ইতিহাসের ওপর বেশ কয়েকটি বই পড়ার ও নেড়েচেড়ে দেখার সুযোগ হয়েছে। তবে এই বইটির সূচীপত্র দেখে সেগুলোর চেয়ে একে বেশি সমৃদ্ধ বলে মনে হয়েছে।
একদিকে এই বইটি যেমন তথসমৃদ্ধ এবং মুসলিম ও অমুসলিম লেখকদের রেফারেন্স দিয়ে পূর্ণ, তেমনি এখানে অধ্যায়ের বিন্যাসও অনেক বেশি সুসংহত বলে মনে হয়েছে।
বেশি রঙচঙে না করে প্রচ্ছদে একটা ক্ল্যাসিক ভাব আনার চেষ্টা করা হয়েছে। বিষয়টি ভালো লাগার মতো। বইটির নামকরণও এর বিষয়বস্তু সার্থক প্রতিনিধিত্ব করবে।
•
আগেই বলেছি, ইসলামের ইতিহাসের শিক্ষার্থী হিসেবে এই বিষয়টি নিয়ে আমি বেশ ঘাটাঘাটি করেছি। সত্যি বলতে কী—অনেক নামি-দামি লেখকের লেখার চেয়েও মনযূর আহমাদের বইটি আমাকে বেশি আকর্ষণ করেছে। এবং আমার মনে হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাসে যে-সব বই রয়েছে ভারতবর্ষের ওপর, তা এর চেয়ে কোনো দিক দিয়েই উন্নত নয়। তাই ‘সিন্ধু থেকে বঙ্গ’ বইটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যতালিকায়ও যুক্ত হওয়ার সক্ষমতা রাখে। এই লেখার মাধ্যমে আমি দাবিটি জানিয়ে রাখলাম।
আমি আশা করি, বিষয়বস্তুর মতো বইটির কাজও চমকপ্রদ হবে। তবে একটু কষ্টের কথা হলো—যেহেতু এদেশের অধিকাংশ বইয়ের পাঠকই শিক্ষার্থী, তাই তাদের অবস্থা চিন্তা করে হলেও বইয়ের দাম আরেকটু কমিয়ে রাখা উচিত ছিল।
ভূমিকায় বলা লেখক, চিন্তক ও গবেষক মুসা আল হাফিজের এই বক্তব্যটি যেন আমারই চিন্তার প্রতিচ্ছবি: ‘বইটি পাঠকের জন্য এমন এক উপহার, যা উপমহাদেশে মুসলিম সভ্যতার অতীতের সাথে তার সংলাপ ও সংযোগকে স্বচ্ছ ও সত্যসন্ধ করবে। ফলে এর গুরুত্ব শুধু আজ নয়, আগামীকালও জারী থাকবে এবং বেড়ে চলবে।’
আল্লাহ যেন বাঙালি মুসলিমদের নবজাগরণে এই বইটিকে সহায়ক হিসেবে কবুল করে নেন। আমিন।
Amit Hasan –
বই- সিন্ধু থেকে বঙ্গ
কোন ঘটনাই পৃথিবী থেকে বিলীন হয়ে যায় না। কেবল বর্তমানকাল থেকে অতীতের গহ্বরে পুঞ্জীভূত হয়। আর পুঞ্জীভূত ইতিহাস কাজ করে অনেকটা দর্পণের ন্যায়। দর্পণকে যেমন আমরা বানিয়েছি আমাদের বাহ্যিকতা দেখার বস্তু। ঠিক তেমনি ইতিহাসের প্রতিটি পাতা প্রদর্শন করে অতীতের বিজয়গাঁথা কিংবা পরাজয়ের গ্লানি। উভয় থেকেই আমরা লাভ করতে পারি মননশীল চেতনা যাকে লাগিয়ে আমরা আমাদের জাতীয়তাবোধকে জাগ্রত করে নিজ জাতির পরিচয়কে বিস্তৃত করতে পারি। ইসলামের ইতিহাস ও সেই একই মূল্যবোধ ধারণ করে। সেই যে সুদূর শুষ্ক মরুভূমি থেকে এর বিজয়গাঁথা শুরু হয়েছিল ক্রমান্বয়ে তা ছড়িয়ে পড়ে পৃথিবীর নানা প্রান্তে। এক পর্যায়ে তা পৌঁছে যায় ভারতীয় উপমহাদেশে এর পর বঙ্গে। কেমন ছিল এই ইসলাম প্রবাহের পথ? কিভাবেই বা পৌঁছেছিল? কাদের হাত ধরে পৌঁছেছিল? এই প্রশ্নগুলোর উওর জানান দেবে আলোচ্য বই “সিন্ধু থেকে বঙ্গ”
● বইটিতে যা যা আছে-
দুই খন্ডে রচিত বইটির ৪১ টি অধ্যায়ে ভারতীয় উপমহাদেশের ৭১২ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত মুসলিম শাসনের স্বর্ণালি ইতিহাস উঠে এসেছে।
মুহাম্মদ বিন কাসিমের সিন্ধু জয়ের মধ্য দিয়ে ভারতীয় উপমহাদেশে ইসলামের যে সূচনা ঘটে যা ক্রমান্বয়ে প্রসারিত হয়ে ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজির হাত ধরে বঙ্গে প্রবেশ করে। এই যাত্রা পথ মোটেই মসৃণ ছিল না। নানা উত্থান পতনে টিকে চড়াই উতরাই পেরিয়ে টিকে ছিল এই সভ্যতা।
প্রথম খন্ডের ২১ টি অধ্যায়ে ইসলামের শিকড় থেকে শুরু করে ইসলাম পূর্ব ভারতের স্বরূপ, ইসলাম পরবর্তী কাদের হাত ধরে ইসলামি শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, তাদের শাসন ব্যবস্থা ইত্যাদি সুবিস্তর আলোচনা করা হয়েছে।
বইটির ২য় খণ্ডের ২০ টি অধ্যায়ে মুঘল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা, তাদের শাসন ব্যবস্থা, পতনের কারণ সহ ভারতবর্ষে সভ্যতা নির্মাণে ঐতিহাসিক অবদান ইত্যাদি তুলে ধরা হয়েছে।
● পাঠ্যানুভূতি-
ইতিহাস মানেই আমরা মনে করি অনেক কঠিন একটি বিষয়। কিন্তু এই বইটি কাঠিন্যের দিক থেকে অনেক সহজতর। এর ভাষাশৈলী, শব্দচয়ন ও শব্দবিন্যাস অন্যান্য ইতিহাস গ্রন্থের তুলনায় আমার কাছে সহজবোধ্য মনে হয়েছে। ফলে পাঠকের কাছেও বইটি পঠন সুখপাঠ্য হবে আশা করছি। যা এই ইতিহাস পাঠের ধারাকে আরো মসৃণ করবে। এছাড়া পুরো বইটির সকল আলোচনাই নির্ভরযোগ্য দলীলভিত্তিক রেফারেন্স সহিত আলোচিত হয়েছে। যা পাঠকের মনে কোন সংশয় সৃষ্টি করবে না আশা করি। মোট কথা বাংলা ভাষা-ভাষী মানুষের জন্য চমৎকার একটি ইতিহাস গ্রন্থ।
● বইটির প্রয়োজনীয়তা-
মুসলিমরা আজ পরস্পরের ভাই না হয়ে পারস্পরিক অন্তঃক্রন্দলে জর্জরিত। যা মোটেও সুখকর নয়। অথচ এই মুসলিম জাতির ছিল এক সোনালী সমৃদ্ধ অতীত। জ্ঞান বিজ্ঞান থেকে শুরু করে সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রতিটি রন্ধ্রে রন্ধ্রে ইসলাম আলো ছড়িয়েছিল দেখিয়ে ছিল মুক্তির দিশা। পরিবার থেকে শুরু করে সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, বিচার ব্যবস্থা, জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিল্প সাহিত্য ইত্যাদি প্রতিটি শাখায় ইসলাম সমুন্নত ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। যারা এর পেছনের কারিগর ছিলেন তাঁরা ছিলেন সত্যনিষ্ঠ মুসলিম। যারা ইসলামকে ছাড় দেননি বরং ইসলামি আদর্শকে বুকে ধারণ করে সবার কাছে ইসলামকে ছড়িয়ে দিতে চেয়েছিলেন। তাঁরা সফল হয়েছিলেন। বক্ষ্যমাণ গ্রন্থটিতে খুব সাবলীল ভাবে উপমহাদেশে মুসলিমদের সোনালী ইতিহাস উপস্থাপন করা হয়েছে। একজন পাঠক গ্রন্থটি পাঠ করলে তার শেঁকড়ের সন্ধান পাবে। মুসলিমদের যাবতীয় অর্জন গুলো তার হৃদয়ে আলোড়ন তুলবে। যা তাকে জাগিয়ে তুলতে পারে ভবিষ্যতের কাণ্ডারী হিসেবে!
● বইটি কাদের জন্য-
প্রতিটি মুসলিমেরই উচিত তার অতীত ইতিহাস সম্পর্কে জানা এবং সেই ইতিহাস থেকে শিক্ষাগ্রহণ করা। সে হিসেবে এই বইটি সকল মুসলিমের জন্যই প্রযোজ্য। এছাড়া যারা ইসলামী ইতিহাস নিয়ে পড়াশোনা করেন তারা বইটি পাঠের মাধ্যমে তাদের জ্ঞানের পরিধিকে আরো বিস্তৃত করতে পারবেন ইনশাআল্লাহ।
● বই বৃত্তান্ত-
বইয়ের নাম: সিন্ধু থেকে বঙ্গ (দুই খণ্ড)
লেখক: মনযূর আহমাদ
ধরন: ইতিহাস ও ঐতিহ্য
বাইন্ডিং: হার্ডকভার
প্রচ্ছদ: মুনির সাদাত
প্রকাশনায়: চেতনা প্রকাশন
পৃষ্ঠাসংখ্যা: ১১০০
মুদ্রিত মূল্য: ১৮০০/-
Muhammad Rashed Ahmad –
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
মুগ্ধতার প্রথম পর্ব :
________________
• মাওলানা শামসুল হক আফগানি রহ. লিখেছেন, ‘দুনিয়াবি উন্নতির জন্য চারটি কাজ উপস্থিত থাকা অত্যন্ত জরুরি।
ক) অতীতের সাথে সম্পর্ক, খ) পরিকল্পনা ও কাজের মিল, গ) উন্নতির উপকরণ লাভ, ঘ) লাগাতার পরিশ্রম।’
তাঁর কথানুযায়ী অতীতের সাথে সম্পর্কের একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে ইতিহাস। আর মুসলমান দুনিয়ায় কামিয়াবি অর্জন করে আখিরাতে কামিয়াবির পূর্ণতার নিয়তে।
অতীতের ইতিহাস আমাদের সেই শিক্ষাই দিয়ে থাকে।
• কিন্তু আফসোস! আজ আমাদের সঙ্গে অতীতের কোনো যোগাযোগ নেই। হীনমন্যতার জাঁতাকলে উত্তপ্ত রক্ত আজ টিকটিকির রক্তের ন্যায় শীতল হয়ে পড়েছে। কারণ আমরা আমাদের সোনালি ইতিহাস জানি না! আমরা জানি না, এই ভারত উপমহাদেশে মুসলিমদের আগমন কীভাবে হয়েছিল? কেন বা কোন কারণে মুসলমান বর্তমানে এ অবস্থানে আছে? কী করে বাংলাদেশের মতো একটি রাষ্ট্র পৃথিবীর মুসলিম দ্বিতীয় বৃহৎ রাষ্ট্রের মর্যাদা পেলো? এ সব কিছুই আমাদের জানা নেই।
অজ্ঞতার এই মাশুল আমরা এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি। হাজার বছরের রাজত্ব হারিয়ে আজ আমরা ভাসমান কচুরিপানার ন্যায় ভেসে বেড়াচ্ছি, হচ্ছি পদদলিত। এর মূল কারণ আমরা শিকড় থেকে বিচ্ছিন্ন, আমরা বীরের জাতি, বিজয় ছিল আমাদের নেশা; এ ধ্যানধারণা আমাদের মন-মগজ থেকে পরিপূর্ণ মুছে গেছে। প্রবীণ সম্পাদক ও বিজ্ঞ লেখক মুহতারাম মনযূর আহমাদ সেই গ্লানিবোধের তাড়না থেকে রচনা করেছেন ‘সিন্ধু থেকে বঙ্গ’। দুই খণ্ডের এই বিশাল কলরবের বইতে তিনি শিক্ষক হয়ে আঙুল ধরে ধরে দেখিয়েছেন–ভারত উপমহাদেশে মুসলিমদের হাজার বছরের শাসনকাল। দেখিয়েছেন উত্থান-পতনের চিত্র।ইতিহাসপ্রিয় ক্ষুদ্র পাঠক হওয়ার সুবাদে বইটির শর্ট পিডিএফ আমার মুগ্ধতার রাজ্য মুহূর্তেই জয় করে নিয়েছে।
পরিচয় হোক শিকড়ের সঙ্গে :
________________________
• বইয়ের শিরোনাম থেকেই পাঠকের পরিচয়পর্ব শুরু। অবাক হচ্ছেন? অবাক হওয়ার কিছু নেই। এই ‘সিন্ধু’ শব্দটি মুসলিম উম্মাহর ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় বলে বিবেচিত। প্রাচীন কাল থেকেই বিশ্ব মানচিত্রে ভারতীয় উপমহাদেশের একটি বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। এটি আসলে কেবল একটি দেশই নয়; বরং বিভিন্ন জাতি ও বর্ণের সমন্বয়ে গঠিত একটি ছোট মহাদেশ।
• সিন্ধু হচ্ছে একটি নদীর নাম। উপমহাদেশে সিন্ধু রাজ্য ছিল সেই সময়ে একটি বিশাল অঞ্চলের রাজধানী। উত্তর-দক্ষিণে আরব উপসাগরের তীর হয়ে মুলতান পর্যন্ত; পূর্ব-পশ্চিমে রাজপুতানা থেকে মাকরান পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আর্বিভাবের সময় এখানকার শাসনক্ষমতা চালাতেন রাজা হর্ষ। খুলাফায়ে রাশিদিনের সময় থেকেই মুসলমানরা ভারত উপমহাদেশে খণ্ড খণ্ড আক্রমণ শুরু করেন। হযরত মুআবিয়া রাযি. এর সময়ে খায়বার চূড়ার গিরিপথ পাড়ি দিয়ে মুসলিমবাহিনীর অভিযান বর্তমান পাকিস্তানের লাহোর পর্যন্ত পৌঁছে। কিন্তু তখনও পূর্ণ বিজয় আমাদের হাতে ধরা দেয়নি।
• আরব বণিকরা ইসলামের পূর্বেও ভারত উপকূলে এসে বাণিজ্য করত। উমাইয়া শাসক ওয়ালিদ ইবনে আবদুল মালিক-এর সময় হাজ্জাজ ইবনে ইউসুফ পুনরায় ভারত অভিযানের পরিকল্পনা করেন। সেই সুবাদে তিনি তার জামাতা ও তরুণ রণকৌশলী মুহাম্মাদ ইবনু কাসিমকে নির্বাচন করেন। ৯২ হিজরি মোতাবেক ৭১১ খ্রিস্টাব্দে তিনি বাহিনীসহ সিন্ধু সীমান্তে প্রথম প্রবেশ করেছিলেন। বিরতিহীনভাবে জারি রেখেছেন বিজয়ের ধারাবাহিকতা।
এ হচ্ছে সিন্ধুর শব্দটির সঙ্গে মুসলমানের ঐতিহাসিক সম্পর্ক। বঙ্গে ইসলাম প্রবেশের ধারা এ সিন্ধু বিজয়ের মাধ্যমেই শুরু হয়েছে। বর্তমানে বলিউড থেকে হলিউড, খেলাধূলা থেকে বিজ্ঞান— এসব ব্যাপারে বাঙালি মুসলমানদের বেশ জানাশোনা আছে। আমরা জানি না তো নিজ ধর্মের বিজয়গাঁথার ইতিহাস জানি না, জানি না এই ভারত উপমহাদেশে ইসলাম আগমনের সঠিক তথ্য। অপর দিকে বাংলা ভাষায় এ জাতীয় সঠিক ইতিহাসগ্রন্থ আমাদের নাগালেও ছিল না। কিন্তু সেই শূন্যতা পূরণ হচ্ছে, চেতনা প্রকাশন থেকে প্রকাশিতব্য মনযূর আহমাদ রচনায় ”সিন্ধু থেকে বঙ্গ” বইটি।
এক কলসে সমুদ্র বিদ্যমান :
_______________________
• ঋদ্ধ কলমবিদ ও শ্রদ্ধেয় মনযূর আহমাদ বইটিতে নিজেকে ইতিহাসের একজন পাঠক হিসেবে পেশ করেছেন। কিন্তু প্রকাশিত হওয়া শর্ট পিডিএফে নজর দিলে বোঝা যায়, এ বইটি দিয়ে তিনি স্বাচ্ছন্দ্যে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করতে পারতেন। সফল ও মানসম্পন্ন একটি থিসিসের মূল্য রাখে ”সিন্ধু থেকে বঙ্গ” বইটি। এ যেন এক কলসে সমুদ্র রাখার মতো। হাজার বছরের মুসলিম শাসন, পাশাপাশি আর্যদের পূর্ব অবস্থান, কোটি কোটি দেব-দেবীর উপাসনা, নানান ঘাত-প্রতিঘাতের বর্ণনা সবকিছু পাবেন বইটিতে। আমি পাঠকের আগ্রহবোধ বৃদ্ধির জন্য সংক্ষিপ্তভাবে উভয় খণ্ডের সূচিপত্র তুলে ধরলাম।
প্রথম খণ্ডে যা থাকছে :
__________________
প্রতিষ্ঠিত লেখক, বুদ্ধিজীবী, কবি মুসা আল হাফিজের তথ্যপূর্ণ ভূমিকা, প্রাচীনকালে ভারতের শিক্ষাব্যবস্থা, নিজামুদ্দিন আউলিয়া সহ ইসলাম প্রচারে আউলিয়াগণ, শাহ জালাল রহ. আগমণ ও সিলেটের ইসলাম প্রচার, মুসলিমদের সিন্ধু বিজয়, গজনি বংশ ও সুলতান মাহমুদ রহ. এর তথ্য, ঘুর বংশ, মুহাম্মাদ বিন বখতিয়ার খিলজির জয়, লক্ষ্মণ সেনের পলায়ন, দিল্লির তুর্কি সাম্রাজ্য, সুলতান কুতুবউদ্দিন আইবেক-শামসুদ্দিন ইলতুতমিশ, সুলতানা রাজিয়া, গিয়াসুদ্দিন বলবন, খিলজি বংশ, আলাউদ্দিন খিলজির ইতিহাস, মোঙ্গল আক্রমণ, তুঘলক বংশ, তৈমুরের ভারত আক্রমণ, সৈয়দ বংশ ও খিজির খান, লোদি বংশ, ইলিয়াস শাহি বংশ, জৈনপুর-মালওয়া-গুজরাট-কাশ্মীর
-খান্দেশ-হিন্দু রাজ্য, দিল্লি সুলতানদের শাসন ও সমাজ ব্যবস্থা। প্রথম খণ্ড মোট ৫৬৭ পৃষ্ঠা।
দ্বিতীয় খণ্ডে যা থাকছে :
____________________
মুঘল সাম্রাজ্যের পরিচয়, জহিরুদ্দিন বাবারের শাসনকাল, বাদশা হুমায়ুন ও শের শাহ, হুমায়ুনের রাজ্যোদ্ধার, সম্রাট আকবর, পানিপথের যুদ্ধ, আকবরের বঙ্গবিজয়, দ্বীনে ইলাহি, আকবরের শাসনব্যবস্থা, সম্রাট জাহাঙ্গির, ইউরোপীয়দের সঙ্গে জাহাঙ্গিরের সম্পর্ক, মুজাদ্দিদে আলফে সানি রহ., বাদশা শাহজাহান, সম্রাজ্ঞী মমতাজ মহল, ১৬৩০-১৬৩২ দুর্ভিক্ষ ও মহামারি, শাহজাহানের শাসনব্যবস্থা, জামে মসজিদ-মতি মসজিদ-ময়ূর সিংহাসন, উত্তরাধিকারের দ্বন্দ, আওরঙ্গজেবের শাসনকাল, আওরঙ্গজেব এর জীবনচরিত, ফতোয়ায় হিন্দিয়া, অস্তাচলে মোগল সাম্রাজ্য, বাহাদুর শাহ শাসনকাল, নাদির শাহ শাসন, তৃতীয় পানিপথের যুদ্ধ, শাহ ওয়ালি উল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলবি, মোঘল সাম্রাজ্য পতনের কারণ, মোঘল আমলে সামাজিক ও অর্থনৈতিক স্বচ্ছতা, হিন্দু-মুসলিম সম্পর্ক, মোঘল আমলে শিল্প, শিক্ষা ও সাহিত্য চর্চা, ভারতবর্ষে সভ্যতা নির্মাণে ইসলামের অবদান। এ হচ্ছে দ্বিতীয় খণ্ডের সূচিপত্র। ৭১২ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত হাজার বছরের মুসলিম শাসন ইতিহাস লেখক সুনিপুণভাবে জমা করেছেন। প্রয়োজনীয় টীকা ও ব্যাখ্যা সংযোজন করেছেন।
আশা করি সূচিপত্র থেকেই পাঠকগণ বুঝতে পারবেন ইতিপূর্বে বাংলায় এমন মৌলিকগ্রন্থ আমরা এখনো পাইনি। বাংলা ভাষাভাষী প্রত্যেক মুসলমানদের জন্য বইটি সংগ্রহে রাখা অত্যন্ত জরুরি; বিশেষ করে আমরা যারা ইতিহাস থেকে রেফারেন্স সহকারে লিখতে-বলতে আগ্রহী তাদের জন্য বইটি মাস্টারপিস। বিভিন্ন প্রতিযোগিতার আয়েজন করে বইটি’র পাঠচক্র তৈরি করা যেতে পারে। কলকাতায় থাকা অন্যান্য মুসলিমদের সুবিধার্থে সেখানকার লাইব্রেরিগুলোতে রাখার ব্যবস্থা করার চিন্তা-ভাবনাও করা যেতে পারে। আল্লাহ তাআলা বইয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত সবাইকে উত্তম প্রতিদান দান করুন। আমিন।
বই পরিচিতি :
___________
বই : সিন্ধু থেকে বঙ্গ ( দুই খণ্ড)
লেখক : মনযূর আহমাদ
প্রকাশক : চেতনা প্রকাশন
পৃষ্ঠা সংখ্যা : ১১০০
মুদ্রিত মূল্য : ১৮০০৳
সিরাজাম বিনতে কামাল –
▫️অবতরণিকা:
____________________
অতীতের সাক্ষী, সত্যের আলো, জীবন্ত স্মৃতি, জীবনের শিক্ষা ও প্রাচীনতত্ত্বের বার্তাবাহক হলো ইতিহাস।
-সিচেরো
আমাদের রয়েছে এক গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। যদিও তা কালের গহ্বরে তলিয়ে যাচ্ছে বললে বোধহয় ভুলই হবে। তলিয়ে গিয়েছে। আমরা নই ইতিহাসপ্রেমী। আবার আমাদের বাংলা সাহিত্য ইতিহাসগ্রন্থে নয় সমৃদ্ধ। যৎসামান্য যা আছে তা ঘাটলেও দেখা যায় কোথাও সত্য-মিথ্যের মিশেল, তো কোথাও গোজামিল।
আমাদের ইতিহাস আমাদের কাছেই যেন বিকৃতভাবে উপস্থাপনের পায়তারা। চলে আমাদের ইতিহাস আমাদের থেকে লুকিয়ে রাখার অপচেষ্টা।
জাতির এমন ভগ্নদশায় লুকিয়ে রাখা আমাদের প্রকৃত ইতিহাসকে বাংলা ভাষাভাষী সবার কাছে ছড়িয়ে দিতে চান “সিন্ধু থেকে বঙ্গ” শিরোনামে ইতিহাসপ্রেমী মনযূর আহমাদ। আর চেতনা প্রকাশন সবার কাছে উন্মোচন করে দিচ্ছেন ইতিহাস গ্রন্থ “সিন্ধু থেকে বঙ্গ”।
.
▫️বই অভ্যন্তরে:
___________________
ভারতীয় উপমহাদেশে হাজার বছর মুসলিম শাসনের স্বর্ণালি ইতিহাস (৭১২-১৮৫৭খ্রি.)। হাজার বছরের চিত্র ফুটে উঠেছে এই বইয়ে। সময়ানুসারে পর্যায়ক্রমে সকল ঘটনার বর্ণনা করা হয়েছে। এ যেন ছলছল প্রবাহে বইয়ে যাওয়া কোন এক সাগর। আর সেই সাগর থেকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে নানা নদী, শাখানদী, উপনদী। বইয়ের সমৃদ্ধ সূচিপত্র দেখে তা’ই মনে হয়েছে।
বইটি মূলত দুই খন্ডে বিভক্ত।
.
🔸 প্রথম খন্ডে আলোকপাত:
_____________________________
প্রথম খন্ডে আমরা ২১টি অধ্যায়ের মাধ্যমে জানতে পারব ইবরাহীম আ. এর সময়কাল থেকে দিল্লি সুলতানের সময়কাল পর্যন্ত। প্রত্যেকটি অধ্যায় আবার নানাভাগে বিভক্ত। যা আমাদের সামনে আমাদের ইতিহাসকে খু্ঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখিয়ে দেবে।
প্রথম খন্ডের মাধ্যমে আমরা মহাভারত, প্রাচীনকালে শিক্ষাব্যবস্থা, ইসলাম প্রচারে ওলি-আউলিয়াদের অবদান, ভারতের সমাজ পরিবেশ, মুসলিমদের সিন্ধু বিজয়সহ, ভারতীয় উপমহাদেশের ঐতিহাসিক বংশ, এদের উত্থান-পতন এবং উত্থান-পতনের সময়কাল সব কিছুই জানতে পারব।
এ খন্ডে আমরা আরো জানতে পারব কুতুবউদ্দিন কাকি রহ., নুর কুতুবে আলম রাহ., শাহজালাল মুজাররাদ ইয়েমেনি রাহ., মুহাম্মদ বিন কাসিম সহ নাম না জানা আরো অনেক ব্যক্তিবর্গের কৃতিত্বপূর্ণ ইতিহাস।
🔸দ্বিতীয় খন্ডে আলোকপাত:
______________________________
দ্বিতীয় খন্ডে রয়েছে ২০টি অধ্যায়। যা মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা থেকে শুরু হয়ে ভারতবর্ষে সভ্যতা নির্মাণে ইসলামের ঐতিহাসিক অবদানের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়েছে।
দ্বিতীয় খন্ডে আমরা জানতে পারব সেই সময়কার শিল্প, সংস্কৃতি, শিক্ষা, সাহিত্য, চিত্রকলা, হিন্দু মুসলিম সম্পর্ক, সামাজিক, অর্থনৈতিক অবস্থা, বিচারব্যবস্থা ইত্যাদি।
তাছাড়াও মুঘল সাম্রাজ্যের পতনের কারণ, মসনদ সম্পর্কীয় বিরোধের কারণ ও তার দালিলিক বিবরণ, কখনো ইসলামের প্রতি অনুরাগের জন্য জয়, কখনো বা ভুল সিদ্ধান্তের ফলাফল, কখনো সম্রাটের দুর্বলতা, অদূরদর্শিতাসহ রাজবংশের পূর্ণ চিত্র ও তাদের রাজনীতি কালির আঁচড়ে আঁকা হয়েছে এ বইয়ের পাতায় পাতায়।
.
▪️পাঠ্যানুভূতি:
_________________________________
পিডিএফ পড়ে জানতে পারলাম, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাহাবিদের ভারতে অভিযান পরিচালনা করতে উদ্ধুদ্ধ করেছেন। ৬৩৬-৬৩৭ খ্রিস্টাব্দে ওমর রা. এর খেলাফতের সময় ওমান থেকে ভারতের উপকূলভাগে আরবদের প্রথম অভিযান পরিচালিত হয়।
আরো জেনেছি, জাতি বিচারে বাঙালি বর্তমান আরবের পর বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম জাতি।
দীর্ঘ ১১০০ পৃষ্ঠার এই বইটির প্রথম খন্ডের প্রথম অধ্যায় দেওয়া হয়েছে পিডিএফে। এ’যেন বিশাল সাগর থেকে এক মুঠো কুড়ানো পানি। তো সম্পূর্ণ বইটি পড়ার জন্য কত আকাঙ্খা জন্মেছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখছে না।
তাছাড়া সময় এবং ঘটনা উল্লেখ থাকাতে এবং পুরো ইতিহাস ক্রমান্বয়ে উল্লিখিত হয়েছে বলেই বইটি বেশ সুশৃঙ্খল হয়েছে। যদি পুরো ইতিহাস একসাথে মলাটবদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায় তো ইতিহাস প্রেমীগণ সেই বই লুফে নিবে বিনাবাক্যে। এছাড়াও বইয়ের পাদটীকায় উল্লিখিত অথেনটিক সোর্স আর প্রয়োজনীয় ব্যাখাগুলো খুব সহজেই সত্যান্বেষী পাঠকের মন কুড়িয়ে নিবে।
আর এইরকম বৈশিষ্ট্যসমৃদ্ধ মাস্টারপিস একটি বই “সিন্ধু থেকে বঙ্গ”।
.
▫️বইটির প্রয়োজনীয়তা:
_____________________________
যে ব্যক্তি নিজের ইতিহাস, উৎপত্তি, সংস্কৃতি জানে না সে একটি গাছের মত যে তার শেকড় চেনে না।
– মার্কাস গারভেয়
আমাদের রয়েছে এক রাজকীয় ইতিহাস। আর এই ইতিহাস বর্তমান প্রজন্মের আত্মবিশ্বাস আরো বাড়িয়ে দিবে। জানিয়ে দিবে মুসলিম শ্রেষ্ঠ জাতি। হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনতে আমাদের করণীয় কী তাও জানতে পারব এই বই পাঠের মাধ্যমে।
আমরা বুঝতে পারব আমাদেরকে দাবায়ে রাখার জন্যই ভীরু, কাপুরুষেরা আমাদের কাছ থেকে আমাদের ইতিহাস ছিনিয়ে নিয়েছিল। আর আমাদেরকে ঠেলে দিয়েছে সেই ইতিহাস থেকে শত আলোকবর্ষ দূরে।
.
▫️যবনিকাপাত:
_____________________
ইতিহাস কখনোই মস্তিষ্কের উপর কোন বোঝা নয়, বরং আত্মার দীপ্তি রুপ।
– লর্ড এক্টন
নিজের শেকড় চিনে নিতে, মুসলিমের সোনালি অতীতে ফিরে যেতে চাইলে সংগ্রহ করে পড়ে নিন “সিন্ধু থেকে বঙ্গ” বইটি।
বইটি আমাদের জন্য আলোর মশাল। যে মশাল দ্বারা আমরা ফিরে যেতে পারবো আমাদের অতীতে। সাহস জোগাতে পারব আমাদের পূর্ব পুরুষদের অদম্য সাহস থেকে। আবারও সেই ইতিহাস পুনরুদ্ধার করার জন্য নিজেদের প্রস্তুত করতে পারব।
Shahidul Islam –
বই রিভিউ : সিন্ধু থেকে বঙ্গ
ইতিহাসকে বলা হয় অতীতের আয়না। যেই আয়না দ্বারা অবলোকন করা যায় শত-হাজার বছর পূর্বের অপূর্ব সুন্দর দিনগুলো, ঘুরে বেড়ানো যায় শত শত বছর পূর্বের অলিগলিতে। এইজন্য প্রত্যেকের সঠিক ইতিহাস জানার কোন বিকল্প নেই। আমাদের সেই ইতিহাস জানার আগ্রহ, আকাঙ্ক্ষা পূরণে এগিয়ে এসেছে চেতনা প্রকাশন – Chetona Prokashon ।
চেতনা থেকে প্রকাশিত ‘সিন্ধু থেকে বঙ্গ’ বইটি আমাদের নিয়ে যাবে বাংলার সোনালী অতীতের কাছে, পরিচয় করিয়ে দিবে অজানা অচেনা অনেক গল্প-ঘটানার সাথে। কিভাবে বাংলায় ইসলামের আগমন ঘটলো, প্রচার-প্রসার হলো আর কিভাবেই বা এত বিশাল সংখ্যক জনগোষ্ঠী ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে প্রবেশ করলো; ইত্যাদি এমনসব প্রশ্নের যথাযথ উত্তর বইটিতে পাওয়া যাবে ইনশাআল্লাহ।
মুহাম্মদ বিন কাসিম, ইখতিয়ার উদ্দিন মুহম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজি, মুহাম্মাদ ঘুরী, সুলতান কুতুবুদ্দিন আইবেক, সুলতান মাহমুদ গজনভীসহ হাজার বছরের পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস লিপিবদ্ধ হয়েছে বইটিতে। বইটি আলহামদুলিল্লাহ দুই খন্ডে প্রকাশিত হয়েছে। প্রথম খন্ডে শিকরের ইতিহাস, ইসলাম প্রচারে ওলী-আউলিয়ার অবদান, বঙ্গে ইসলাম প্রচার, ভারতবর্ষে মুসলিম শাসনের সূচনা, মুসলিমদের সিন্ধু বিজয়, দিল্লির তুর্কি সাম্রাজ্য ইত্যাদি বিষয় আলোচিত হয়েছে। দ্বিতীয় খন্ডে মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা, হুমায়ুন ও শেরশাহ, সম্রাট আকবর, মুজাদ্দিদে আলফে সানী রহ. সহ গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা স্থান পেয়েছে। এককথায় বাংলায় হাজার বছরের মুসলিম শাসনের পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস জানার জন্য বইটি হবে আপনার অমূল্য সম্পদ ইনশাআল্লাহ।
আল্লাহ বইয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট সবাইকে উত্তম প্রতিদান দিন, দ্বীনের জন্য কবুল করুন। বিশেষ করে লেখক মাওলানা মানযুর আহমাদকে (হাফি.) নেক হায়াত দান করুন এবং তাঁর ইলম-আমলে বারাকাহ দিন।
এক নজরে বই পরিচিতি :
নাম : সিন্ধু থেকে বঙ্গ’
লেখক : মানযুর আহমাদ হাফি.
প্রকাশক : চেতনা প্রকাশন
পৃষ্ঠা সংখ্যা : ১১০০
মুদ্রিত মূল্য : ১৮০০ (৫৫% ছাড়ে প্রি অর্ডার মূল্য ৮০০)
বাঁধাই : হার্ডকভার।
নাফিসা ইয়াসমিন –
ইতিহাস কোন স্তব্ধ অতীত নয় বরং ইতিহাস চির-মুখর, ধারাবাহিক এক জীবন প্রবাহ। যুগ-যুগান্তর ধরে মানব-সভ্যতার চলমান জীবনধারাই ইতিহাস। সেই চক্রতীর্থের পথে পথে ছড়িয়ে আছে কত শত ভাঙা-গড়ার ইতিহাসের অর্ধলুপ্ত অবশেষ। কত রক্ত-রঞ্জিত দৃশ্যপটের পরিবর্তন।কত উত্থান-পতন, কত চেষ্টার তরঙ্গ, কত সামাজিক বিবর্তন।
যুগ-যুগান্তরব্যাপী সভ্যতার ক্রম-বিবর্তনের ধারায় অতিবাহিত হয়ে আমরা উপনীত হয়েছি এই একবিংশ শতাব্দীতে।
এই শতাব্দীর প্রাঙ্গনে দাঁড়িয়ে আমাদের মনে প্রশ্ন জাগে যে, সর্বশেষ ওহীর জন্মভূমি আরব ভুখন্ড থেকে লক্ষ্য কোটি মাইল দূরে অবস্থিত আর্য-অনার্য ,শক ,হুন ,রাজপুত অমুসলিম জাতির মিলনক্ষেত্র ভারতীয় উপমহাদেশে কিভাবে মুসলিম আধিপত্য বিস্তার লাভ করেছে।
বিশেষ করে পূর্ব বাংলা এবং অল্প বিস্তর পশ্চিম বাংলা মুসলিম জনসমাবেশের প্রাণকেন্দ্র কিভাবে হয়ে উঠলো?
ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যেখানে মুসলিম জনসংখ্যার আধিক্য কখনো পঁচিশ শতাংশের অধিক হয়নি সেখানে মুসলিম শাসকেরা ভারতীয় উপমহাদেশ শাসন করেছে প্রায় ৮০০ বছর।
আরো আশ্চর্যের বিষয়,প্রিয় নবীজির সাহাবীরা(রাঃ) এই ভুখন্ডে এসে দলে দলে ইসলামের আলো প্রচার করেছিলেন এমন তথ্যও পরিবেশিত হয়নি।
তবুও জাতির বিচারে বাঙালি মুসলিম বর্তমান আরবের পরে দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম জনগোষ্ঠী।
আমরা কি কখনো অনুসন্ধিৎসু হয়েছি নিজদের শিকড়ের সন্ধানে কিংবা ভারতীয় ভুখন্ডে কেমন ভাবে আমাদের পূর্বপুরুষদের আগমনে ইসলামের ঊষাকাল থেকে যাত্রা শুরু হয়েছিল সেই ইতিহাসের বিবরণী?
এই সমস্ত আদ্যোপান্ত শিকড়ের ইতিহাস জানাতে এবং মুমিন হৃদয়ের চিরন্তন এই সম্পর্কিত কৌতূহলের জবাবের উত্তর দিতে চেতনা প্রকাশনার এক অনবদ্য প্রয়াস সিন্ধু থেকে বঙ্গ (১-২ খন্ড) গ্রন্থটি।বইটির লেখক মনযূর আহমাদ।
📚রিভিউ পর্যালোচনা
———————————-
চেতনা প্রকাশনা থেকে প্রকাশিত বইটির থেকে উপলব্ধি করা যায়, যে বইটির সূচিপত্র এর ভিতরের বিষয়বস্তু সম্পর্কিত দর্পণ।
🍂সূচিপত্র থেকে এক ঝলক 🍂
—– ——– ——- —– —– ——
📙বইটির প্রথম খণ্ডে আলোচিত হয়েছে সর্বমোট ২১টি অধ্যায়ে যার প্রথম অধ্যায়ে লেখক পাঠককে নিয়ে যাবেন ‘শিকড়ের ইতিহাসে’ যেখানে আলোচিত হয়েছে ইব্রাহীম (আঃ) -এর মুনাজাত, এরপর ঈসা (আঃ) এর খোশখবর, ইহুদি ও বনি ইসরাইল এরপরে ধারাবাহিক পর্যায়ক্রমে উঠে এসেছে মালাবারে ইসলাম, ভারতের গোড়ার কথা এবং প্রাচীন শিক্ষা ব্যবস্থা, ইসলাম প্রচারে ওলি আউলিয়ার অবদান, বঙ্গে ইসলাম প্রচার,বাংলায় মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠতা একটি ঐতিহাসিক বিশ্লেষণ , ভারতে মুসলিম শাসনের সূচনা ও অবদান, গজনি বংশ, ঘুর বংশ, দিল্লির তুর্কি সাম্রাজ্য, খিলজী বংশ, তুঘলক বংশ, লোদী বংশ, তৈমুরের ভারত আক্রমণ, আঞ্চলিক স্বাধীন রাজ্যসমূহের উত্থান এবং সর্বশেষ দিল্লির সুলতানদের শাসন, সমাজ ও সাংস্কৃতিক ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে সমাপ্ত হয়েছে।
📙 দ্বিতীয় খণ্ড সন্নিবেশিত হয়েছে ২০ টি অধ্যায়ে যেখানে তিনি পাঠককে নিয়ে গেছেন মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা এবং গৌরবান্বিত ইতিহাসের আয়নায়। যার সূচনা হয়েছিলো বাবরের শাসনকাল দিয়ে এবং পর্যায়ক্রমে উঠে এসেছে হুমায়ুন ও শের শাহ, আকবরের বঙ্গ বিজয়, সম্রাট শাজাহানের চাকচিক্যময় শাসনকাল, শাসক আওরঙ্গজেবের শাসনকাল এবং মুঘল সাম্রাজ্যের পতনের বহুমুখী কারন বিশ্লেষণ, মুঘল আমলে হিন্দু-মুসলিম সম্পর্ক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয়, অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক পরিবেশের চিত্র সবিস্তার তুলে ধরা হয়েছে। মুঘল আমলের সামাজিক অর্থনৈতিক অবস্থা, হিন্দু মুসলিম সম্পর্ক, শিক্ষা সাহিত্য ইত্যাদি চিত্রায়িত হয়েছে। সর্বশেষ আলোচনার বিষয় ভারতবর্ষের সভ্যতা নির্মাণে ইসলামের অবদান।
বইটি পাঠের প্রয়োজনীয়তা ও বিশেষত্ব(শর্ট পিডিএফ এর আলোকে পাঠ্য অভিমত)
——————————————————————————–
ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাস লিপিবদ্ধ হয়েছে অমুসলিমদের হাত ধরে। আমরা যে ইতিহাস পাঠ করি তাতে ভারতবর্ষে ইসলামের উত্থান ও তার বিস্তার, মুসলিমদের অবদান চিত্রায়িত হয়না বললেই চলে।
মুসলিম শাসকদের ইতিহাস আলোচিত হলেও তাদের দেখানো হয় স্বৈরাচারী অত্যাচারি খলনায়ক হিসাবে।
যেখানে মুসলিম বিরোধী শক্তি বুদ্ধিবৃত্তিক আগ্রাসনের কৌশল হিসাবে ইতিহাসের পাতা থেকে ইসলামের ইতিহাসকে বিবর্ণ করে দিতে সদা তৎপর সেখানে দাঁড়িয়ে আমরা বিস্মৃত রয়েছি আমাদের পূর্বসূরীদের আগমনী ইতিহাস, বঙ্গে ইসলামের শিকড়ের বিস্তার সম্পর্কে।
সুতরাং এই প্রান্তিক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে চেতনা প্রকাশনার “সিন্ধু ও বঙ্গ” বইটি সত্য উন্মচনের একটি নিবেদিত প্রয়াস হতে চলেছে অবশ্যই।
ইসলামের শুরুর দিকের ইতিহাসের পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা এসেছে তেমনি এসেছে মুসলিম শাসনের ভাঙনের ইতিহাস, এখানে বঙ্গে ইসলাম প্রচার,বাংলায় মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠতা একটি ঐতিহাসিক বিশ্লেষণ।
শর্ট পিডিএফ ও সূচিপত্র থেকে উপলব্ধি করি, বইটি ভারত ভুখন্ডে মুসলিম জাতির ইতিহাসের দর্পণে অঙ্কিত একটি অমূল্য রতন যেটা সংগ্রহ করে রাখা অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়েছে আমার কাছে।
শর্ট পিডিএফ পড়ে উদগ্রীব হয়ে আছি সমগ্র বইটি পড়ার জন্য।নিজের আত্মপরিচয় জানতে, শিকড়ের সন্ধানের টানে পাড়ি দিতে ইচ্ছে করছে বইটির গভীরে।
এত সুন্দর অথেনটিক রেফারেন্স প্রাঞ্জল উপস্থাপন, ও তথ্যবহুল , শিকড়ের ইতিহাস সমন্বিত বইটিকে একটা আলাদা মাত্রা এনে দেয়।
কেন পড়বেন(বইটির গুরুত্ব)
—————————————-
⬛বিশ্বসভ্যতা নির্মাণের একচ্ছত্র দাবিদার পশ্চিমারা। সেই দাবিকে ফোকাস করে তাদের হাতে নির্মিত ইতিহাসে একপাক্ষিক ভাষ্যের জয়জয়কার।
শুধু পশ্চিমারা নয়, মুসলিম বিরোধী উপমহাদেশীয় শাসকদের আগ্রাসী মনোভাবে খুব সচেতনভাবে তারা এড়িয়ে গেছে ভারতবর্ষে মুসলমানদের অবদান। তবে তারা ইতিহাসের লম্বা একটি সময়কে যতই এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করুক না কেন, ইতিহাস কখনোই নীরব ছিল না।
⬛এর বিপরীতে আমাদের যদি ভারতীয় সভ্যতা বিনির্মাণে ইসলাম ও মুসলমানদের অবদান ও বঙ্গে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠতা সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকে, তাহলে আমরা নিজ আত্ম পরিচয়ের গৌরবে অমলিন হতে পারবো।
⬛সেই সাথে মুসলমানদের সম্পর্কে যে ধরনের সহিংস অত্যাচারি বর্বর ভাবমূর্তির ইতিহাসের মিথ্যা বিকৃতি তুলে ধরা হয়, তার বিরুদ্ধে একটি মোক্ষম জবাব দিতে সক্ষম হব।
বিশেষ ভাবে অস্তিত্বের দাবিতে তরুণ প্রজন্ম সহ সমগ্র মুসলমানের জন্য বইটি অপরিহার্য হতে চলেছে ইন শা আল্লাহ।
কালের ঘূর্ণাবর্তে মুসলিম শাসকদের পালাবদলের ইতিহাস কেমন ছিলো, মুসলিম শাসনকাল বর্তমান পরিস্থিতিতে কতটা ইসলামের ছাপ রাখতে পেরেছে?এগুলো কি ছিল ইসলামি শাসনব্যবস্থা? উপমহাদেশে এবং এই বাংলায় এত মুসলিম কীভাবে শিকড় গেঁথেছে কী তার উৎস, কী তার ইতিহাস সবকিছুর উত্তর মিলবে “সিন্ধু থেকে বঙ্গ” বইটির অন্দরমহলে ইন শা আল্লাহ।
📚একনজরে বই পরিচিতি
বই : সিন্ধু থেকে বঙ্গ (১-২ খন্ড)
লেখক : মনযূর আহমাদ
প্রকাশক :চেতনা প্রকাশন
বাইন্ডিং :হার্ডকভার
পৃষ্ঠা সংখ্যা :১১০০
প্রচ্ছদ মূল্য : ১৮০০ ৳