উত্তম আখলাক একজন মুসলিমের শক্ত হাতিয়ার। পরকালের উত্তম পাথেয়। এজন্য ঈমান ও আমলের সাথে আখলাক শিক্ষা করাটাও গুরুত্বপূর্ণ। আব্দুল্লাহ ইবনু মুবারাক (রহ.) বলতেন, আদব ও শিষ্টাচার দ্বীনের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ। আদব ও শিষ্টাচার শিক্ষা করাটা এজন্য খুবই জরুরী। আব্দুল্লাহ ইবনু মুবারাক ত্রিশ বছর ধরে আদব শিখেছেন আর জ্ঞান চর্চায় সময় দিয়েছেন বিশ বছর। অর্থাৎ ইলম অর্জনের সাথে সাথে আদব – আখলাক শিক্ষা করার গুরুত্ত্ব অনেক বেশী।
বিজ্ঞজনেরা বলেন, আক্বিদা শিক্ষার আগে আখলাক শেখা জরূরী। এ কারণেই সম্ভবত ঈমাম শাফেয়ীদের মা’রা সন্তানদেরকে দ্বীনি ইলম অর্জনের আগে আদব শিক্ষা দিয়েছিলেন। আদব ও আখলাকে সবাইকে ছাড়িয়ে যাওয়া এক সোনালী প্রজন্ম গড়ে তুলেছেন। সেই প্রজন্মের সলেহীন বান্দাদের আদব ও আখলাক নিয়ে মিশরের আলেমে দ্বীন শাইখ ফরীদ আহমাদ একটি কিতাবটি রচনা করেছেন। কিতাবটির নাম দিয়েছেন “মিন আখলাকুস সালাফ।” বাংলা ভাষায় যার নামকরণ করা হয়েছে, “সালাফদের আখলাক।”
এই বইটি পড়লে সালাফদের সোনালী অতীতের সাথে পাঠকবৃন্দ পরিচিত হতে পারবেন। উত্তম আখলাক গঠনে উত্তম নাসীহা হিসেবে এই বইটি কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে বলে আমরা আশা করি। সালাফগণ আল্লাহর সাথে সম্পর্কিত বিষয়গুলোতে কেমন ছিলেন? আত্মশুদ্ধির ক্ষেত্রে কেমন ছিলেন? মুমিনদের সাথে কেমন আচরণ করতেন? গুনাহগারদের ব্যাপারে উনাদের অবস্থান কেমন ছিলো? দুনিয়া ও আখিরাতকে উনারা কীভাবে পরিমাপ করতেন – ইত্যাদি জীবনঘনিষ্ঠ বিষয়গুলো লেখক তুলে এনেছেন কলম ও কাগজের মোহনীয় বর্ণনা ভঙ্গিতে।
আশা করি এই ক্রান্তি লগ্নে উম্মাহ এই বইটি থেকে উপকৃত হতে পারবে৷ উত্তম আখলাকের গুরুত্ব সম্পর্কে সোনালী যুগের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষদের অবস্থান সম্পর্কে জানতে পারবে।
সিরাজাম বিনতে কামাল –
★বই পরিচিতি:
বই: সালাফদের আখলাক
লেখা: শাইখ আহমাদ ফরীদ
অনুবাদ: রাজিব হাসান
শারঈ সম্পাদনা: শাইখ আবদুল্লাহ মাহমুদ
প্রচ্ছদ: মাহমুদুর রহমান
প্রকাশনী: আযান প্রকাশনী
পৃষ্ঠা: ১২০
মূল্য: ১৭৮/-
★প্রাককথন:
অন্ধকারে নিমজ্জিত পুরো পৃথিবী। চারদিকে অন্ধকারের কালো থাবা। অন্যায়-উৎপীড়ণ, অনিয়ম-অবিচার, জুলুম-নির্যাতনের যাতাকলে পিষ্ট সমাজের মানুষ। আল্লাহর দয়া হলো। মুক্তির বার্তা নিয়ে আসলো এক মহামানব, রহমাতুল্লিল আলামীন। প্রতিষ্ঠা করলেন শান্তির ধর্ম ইসলাম। ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে নবীকেও (সাঃ) সহ্য করতে হয়েছে অবর্ণণীয় কষ্ট। নবীকে (সাঃ) তখন সঙ্গ দিয়েছেন সাহাবীগণ।
আমাদের প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন সর্বোত্তম আখলাকের অধিকারী। মহান চরিত্রের অধিকারী প্রিয়নবীকে (সাঃ) সাহাবীগণ পেয়েছিলেন পরশ পাথর হিসেবে। তাঁর পরশে সাহাবীগণ হয়ে ওঠেছিলেন আল্লাহর প্রিয় বান্দা।
সাহাবীদের প্রজন্ম আলোকিত হয়েছিল নবী(সাঃ) এর সাহচর্যে। অতঃপর আরো দুই প্রজন্ম আলোকিত হয়েছিল সেই আলোর রোশনিতে। বর্তমান প্রজন্মে যা অনুপস্থিত।
নবীর (সাঃ) সাহচর্যে ঈমানের বলে বলীয়ান হওয়া, নবীর (সাঃ) আখলাক নিজের জীবনে ধারণ করা সেই সাহাবীদের নিয়ে বই ‘সালাফদের আখলাক’।
★বইটি পড়ে আমরা যা জানতে পারব:
বইটি পড়লে জানতে পারব সাহাবীগণের সোনালি অতীত যা আমাদের অজানা। জানতে পারব সাহাবীগণের উত্তম আখলাক। যা আমাদের উত্তম আখলাক গঠনে নসীহা হিসেবে ভূমিকা রাখতে পারে, ইন শা আল্লাহ!
যে টপিকগুলো মন কেড়েছে:
•বিশুদ্ধ জ্ঞানের পথযাত্রী
•তাওয়াক্কুল
•বাইরেও যেমন ভেতরেও তেমন
•তাকওয়া
•আখিরাতের কাজকে প্রাধান্য দান
•স্বল্প আমলের ভীতি
•গুনাহের ভয়ে নির্জনতা অবলম্বন
•গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা
•আমল নিয়ে গর্ব না করা
•আল্লাহর যিকির ও নবীর (সাঃ) প্রতি দুরুদ ইত্যাদি।
★অবশেষে:
বইয়ের ভাষা খুবই প্রাঞ্জল আর সহজবোধ্য। যারা বই পড়তে বিরক্ত বোধ করে তারাও আগ্রহ নিয়ে বইটা পড়বে বলে আশা করি। সকল বয়সের পাঠকের জন্যই প্রযোজ্য। বইটি পড়লে নতুন অনেক কিছু জানার পাশাপাশি আমরা নিজেরাও সাহাবীদের মত জীবন গঠনে উদ্বুদ্ধ হবো। ইন শা আল্লাহ!
Farzana Ashrafi –
আখলাক মানুষের সব থেকে মূল্যবান সম্পদ। দুনিয়া এবং আখিরাতে সফলতার জন্য উত্তম আখলাক মুমিনের জন্য অপরিহার্য একটি গুনাবলী। হাদীস শরীফে এসেছে, কিয়ামতের দিন মিযানের পাল্লায় সব থেকে ভারি হবে উত্তম আখলাক। পবিত্র কুরআনেরও এক- চতুর্থাংশ জুড়ে রয়েছে আখলাক সম্পর্কিত আয়াত। একজন মুসলিমের জন্য আখলাক এতটাই গুরুত্বপূর্ণ!
মানুষদের মধ্যে সব থেকে উত্তম আখলাকের অধিকারি ছিলেন সাইয়্যেদুল মুরসালীন রাসূলুল্লাহ মুহাম্মাদ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। স্বয়ং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা পাক কুরআনে তাঁর উত্তম চরিত্রের ব্যাপারে সাক্ষ্য দিয়েছেন। তাঁর এই অনুপম চরিত্রের মাধুর্য ছড়িয়ে গিয়েছিল তাঁর সঙ্গী-সাথীদের মাঝেও।
রাসূলের (সা.) সাহচর্যধন্য সাহাবী (রা.) এবং তাঁদের পরবর্তী দুই প্রজন্মকে বলা হয় সালফ আস সালেহীন বা সংক্ষেপে সালাফ , যারা ছিলেন আমাদের উস্মাহর শ্রেষ্ঠ নক্ষত্র। তাঁদের সমতুল্য আমল-ঈমাণ-আখলাকের অধিকারি আর কেউই হতে পারেনি। তাঁরা সর্বকালে, সব সময়ের জন্য আমাদের অনুকরণীয় আদর্শ। আমাদের ‘Real life Hero’।
তো, কেমন ছিল আমাদের সালাফদের আখলাক?
সেটা জানতে পড়তে হবে আযান প্রকাশনীর ‘সালাফদের আখলাক’। মিশরীয় শাইখ আহমদ ফরিদের লেখা ‘মিন আখলাক্কুস সালাফ’ বইটি ‘সালাফদের আখলাক’ নামে অনুবাদ করেছেন রাজিব হাসান।
বইটিতে সালাফদের আখলাক কেমন ছিল তা নিয়ে বিষয় ভিত্তিক আলোচনা করা হয়েছে। বিশেষ করে তাঁদের কথা, আমল এবং চারিত্রিক দিক গুলোকে কুরআন – হাদীসের আলোকে সন্নিবেশ করা হয়েছে যা আমাদের জন্য উত্তম আখলাক গঠন এবং চারিত্রিক ত্রুটি সংশোধনে নাসীহা হিসেবে ভূমিকা পালন করবে, ইনশাআল্লাহ। আর এটাই এই বইয়ের সব থেকে বড় উপযোগীতা।