“তারা কি দেখে না যে, আমি রাত্রি সৃষ্টি করেছি তাদের বিশ্রামের জন্য এবং দিনকে করেছি আলােকময়। নিশ্চয় এতে ঈমানদার সম্প্রদায়ের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে। প্রিয় পাঠক! রাত যখন ঘাের হয়, নিকষ কালাে অন্ধকার যখন ঢেকে নেয় সমগ্র পৃথিবীকে তখন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলার আহবান “কে আছ এমন যে, আমাকে ডাকবে? আমি তার ডাকে সাড়া দিব। কে আছ এমন যে, আমার কাছে চাইবে? আমি তাকে তা দিব। কে আছ এমন যে, আমার কাছে ক্ষমা চাইবে? আমি তাকে ক্ষমা করব। (সহীহ বুখারী: ১১৪৫)
দোআ সব সময়ই করা যায়। তবে নির্জন রাতের নিস্তব্ধ পরিবেশে তাহাজ্জুদের সালাতে আল্লাহর কাছে দোআ করার বিশেষ মর্যাদা রয়েছে।
রাসূলের ভাষ্য:
তাহাজ্জুদ সালাত তােমাদের নিয়মিতভাবে পড়া উচিত, কেননা এটা অতীতকালের সৎকর্মশীলদের পদ্ধতি ছিল এবং স্রষ্টার নৈকট্য লাভের মাধ্যম ছিল। এই অভ্যাস পাপকর্ম থেকে বিরত রাখে, মন্দকর্ম দূর করে আর শারীরিক রােগ-ব্যাধি থেকে রক্ষা করে। (তিরমিজি)
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলা তাঁর বান্দার প্রতি বিভিন্ন সময়ে গাফফার-গফুর, রহমান-রহীম নামের উসিলায় ক্ষমার অদৃশ্য হাত সম্প্রসারিত করেন। বিশেষ করে পবিত্র মাহে রামাদানে। কারণ, এ মাসটি হচ্ছে রহমত ও কুরআন অবতীর্ন হওয়ার মাস, ক্ষমা ও শবে কদরের রজনীর ফজীলতপূর্ণ মাস।
রাসূল সা. বলেন:
“দুর্ভাগা তারা, যারা মাহে রামাদান পেয়েও মাগফিরাত বা ক্ষমা লাভ করতে পারল না।”
পবিত্র মাহে রামাদানের শুরুতে আল্লাহ তাআলা জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেন, জান্নাতের দরজা খুলে দেন এবং শয়তানকে শিকলবদ্ধ করে রাখেন। তাই শয়তানের কুমন্ত্রনা থেকে বেঁচে থাকা সহজ হয়। নেক কাজে অগ্রগামী হতে পারে। বান্দা যখন উপবাস থেকে দিবসের শেষ প্রহরে উপনীত হয় তখন তার মাঝে বয়ে যায় অনাবিল সুখ-শান্তি। কেননা সে সিয়াম সাধনার মাধ্যমে প্রভুর সন্তুষ্টি অর্জন করেছে।
হাদিস শরিফে বিতর সালাত পড়ার কয়েকটি পদ্ধতি আমরা দেখতে পাই। সেগুলাের আলােকে বিভিন্ন মাজহাবে একাধিক পন্থায় বিতর সালাত আদায়ের পদ্ধতি পরিলক্ষিতি হয় এবং তারাবী সালাতের সংখ্যা নিয়েও আমাদের সমাজে দেখা যায় তুমুল বিতর্ক-মতানৈক্য।
প্রিয় পাঠক! আর উপরােল্লিখিত এই সকল বিষয়ে কুরআন ও সুন্নাহর মাধ্যমে বিশদভাবে উল্লেখ করে মানুষের হৃদয়ে লালিত অসার মতানৈক্য নিরসন করে ইসলামের সঠিক জ্ঞান-ভাবনা মুসলিম উম্মাহর হৃদয়ে গেঁথে দেয়ার জন্য দলীল-প্রমাণ দিয়ে উত্থাপন করেছেন আরবের বিশিষ্ট দাঈ, গবেষক, কলামিষ্ট সাইদ ইবনে ওহাফ আল কাহতানী রহ.
সিরাজাম বিনতে কামাল –
★প্রাককথন:
ধীরেধীরে নিশিথ গাঢ় হচ্ছে। থেমে যাচ্ছে চারিদিকের কোলাহল। জোসনায় প্লাবিত এ’ধরণীতে বইতে শুরু করছে মৃদুমন্দ হাওয়া। হাস্যোজ্জ্বল চাঁদটা ঢেকে যাচ্ছে মেঘের চাদরে। পুরো ধরণী ছেয়ে যায় আঁধারে। খানিকক্ষণ পর মেঘ কেটে গেলে আবার হেসে ওঠে স্রষ্টার এ’সৃষ্টিজগত।
কেউ কেউ অপেক্ষা করে কখন ঘুমরাজ্যে পাড়ি দিবে পুরো ধরণী। আর সে মিষ্টি মধুর প্রেমালাপে মত্ত হবার সুযোগ পাবে। কিংবা ডুব দেবে নিষিদ্ধতার নীল পাথারে।
অপরদিকে কেউ কেউ অপেক্ষা করছে কখন থামবে পৃথিবীর কোলাহল! নফস নামক ফণীকে দাবিয়ে রাখার প্রচেষ্টায় কখনো জয়ী হলে, কখনো হয় বিজিত। সাহায্য চায় শ্রেষ্ঠ সাহায্যকারীর নিকট। তিনিই সকল পাপ মুছে পুণ্যের চাদরে মুড়িয়ে দিতে পারেন। তাইতো, তারা গভীর নিশীথে ভক্তি ও সমীহের ভারে মাথা নুইয়ে দেয় রাজাধিরাজ মহান রব্বুল আলামিনের কাছে। তারা স্বপ্ন দেখে তাদের অশ্রুর প্রতিটি বিন্দুতে একদিন হাসির ঝিলিক ফুটে উঠবে।
আমাদের দেশে শতশত বছর ধরে বিতর পড়ার নিয়ম যখন সহীহ সুন্নাহর সাথে সাংঘর্ষিক হয়, তখন অনেকেই চিন্তিত হয়ে পড়েন। আবার ইবাদাতের মৌসুম রামাদানেও তারাবিহর সালাত নিয়ে শাখাগত দ্বন্ধ-সংঘাত লেগে থাকে। কিন্তু কুরআন, সুন্নাহই আমাদের একমাত্র সত্যের মাপকাঠি। কুরআন-সুন্নাহর আলোকে আমরা পেতে পারি চূড়ান্ত সমাধান।
★বইকথন:
আরবের প্রখ্যাত শাইখ ড. সাঈদ ইবনে ওয়াহাফ আল কাহতানী’র ‘কিয়ামুল লাইল’ পুস্তিকাটির ভাষান্তরিক রূপ ‘রাতের আঁধারে প্রভুর সান্নিধ্যে।’ অনুবাদ করেছেন, আব্দুল আহাদ তাওহীদ।
বইয়ের সূচিপত্রে দৃষ্টিপাত করলে দেখা যায়, বইটিতে তিনটি পরিচ্ছেদে পর্যায়ক্রমে তাহাজ্জুদ সালাত, তারাবিহর সালাত, বিতির সালাত নিয়ে কুরআন-সুন্নাহর আলোকে যাবতীয় আলোচনা করা হয়েছে।
ঈমাম শাফেয়ী রাহিমাহুল্লাহু তাহাজ্জুদ সম্পর্কে বলেছেন,’তাহাজ্জুদ সালাতের দু’আর মূল্য হলো এমন যেনো, একটি তীর সফলভাবে লক্ষ্য ভেদ করেছে। মহানবী (সা:) বলেছেন,’ ফরজ সালাতের পর সর্বোত্তম ইবাদাত হচ্ছে তাহাজ্জুদ সালাত।’
তাহাজ্জুদ সালাতের প্রতি মহানবী (সা:) এতই দায়িত্ববান ছিলেন যে তাঁর মুবারকময় পা ফুলে যেতো।
বইটিতে স্পষ্ট ভাবে আলোচিত হয়েছে, তাহাজ্জুদ সালাতের মাহাত্ম্য, তাৎপর্য, রাত্রি জাগরণের ফযীলত, আদায় করার শ্রেষ্ঠ সময়, আদায়ের আদবসমূহ।
উল্লেখ আছে, তারাবিহ সালাতের গুরুত্ব, বিধি-বিধান, শ্রেষ্ঠত্ব, ফযীলত, রাকাআত সংখ্যা, জামায়াতে আদায় করার বৈধতা।
অবশেষে, বিতর সালাতের গুরুত্ব, আদায় করার সময়, আদায়ের নিয়ম, রাকাআত সংখ্যা, কেরাত পড়ার নিয়ম, দু’আ কুনুত পড়ার নিয়ম।
অর্থাৎ রাতের তিন সালাত নিয়ে কুরআন আর সুন্নাহর আলোকে মুসলমানদের জন্য একটা পূর্ণাঙ্গ গাইডলাইন হবে এই বই। ইন শা আল্লাহ!
★উপসংহার:
বইয়ের সূচিপত্রে দৃষ্টি দিলে রাতের সালাতে আগ্রহী যেকোনো মুসলিম/মুসলিমাহ-ই বইটা পড়ার আগ্রহবোধ করবে। সালাত নিয়ে অনেক বই-ই প্রকাশিত হয়েছে আগে। তবে আমার মনে হচ্ছে, শুধুমাত্র রাতের সালাতগুলো নিয়ে সামগ্রিক আলোচনা সমৃদ্ধ বই এটিই প্রথম।
কুরআন আর সুন্নাহর আলোকে আলোচিত ফযীলতগুলো যেকোনো পুণ্যাগ্রহী ব্যক্তির মনেই রাতের সালাতের ব্যাপারে তৃষ্ণা জন্মাবে। আর সমগ্র নিয়মকানুন জানার মাধ্যমে আমরাও পুণ্যবানদের তালিকায় স্থান করে নিতে পারবো। ইন শা আল্লাহ!
★লেখক পরিচিত:
শাইখ ড. সাঈদ ইবনে ওয়াহাফ আল কাহাতানী। তিনি ১৯৫১ সালে মক্কার আল-আরীনে জন্মগ্রহণ করেন। ১৪০৪ হিজরিতে তিনি ‘কুল্লিয়াত উসূলিদ দ্বীন’ বিষয়ে শিক্ষাজীবনের সমাপ্তি ঘটান। ১৪১৯ হিজরিতে তিনি ‘ফিকহুদ দাওয়াহ ফি সাহিলিল ইমামিল বুখারী’ বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। তাঁর লিখিত কিতাবের সংখ্যা ৮০। উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ‘হিসনুল মুসলিম।’ ১ই অক্টোবর ২০১৮ তিনি আল্লাহর প্রিয় হয়ে যান।
★ এক দৃষ্টিতে বইটি:
নাম: রাতের আঁধারে প্রভুর সান্নিধ্যে
মূল: ড. সাঈদ ইবনে ওয়াহাফ আল- কাহাতানী(রহ.)
অনুবাদ: আব্দুল আহাদ তাওহীদ
প্রকাশনী: আয়ান
পৃষ্ঠাসংখ্যা: ১৪৪
মূল্য:২৫০/-