মানবেতিহাসের সবচে আলোড়ন সৃষ্টিকারী গ্রন্থ হিসেবে যে কিতাব ভাস্বর হয়ে আছে, তা হলো পবিত্র কুরআনুল কারিম। এটি মুমিনের হিদায়াতের আলোক মিনার। অন্ধকার থেকে আলোর দিকে পথ দেখানো একটি জ্বলন্ত মশাল। যে তার অনুসরণ করে, সে সৎপথপ্রাপ্ত; আর যে তার থেকে মুখ ঘুরিয়ে বিমুখ থাকে, সে অন্ধকারাচ্ছন্ন। এটি এমন এক কিতাব, যার শুরু থেকে শেষ সবটাই কল্যাণকর। কুরআনের ছায়াতলে যে আশ্রয় নেয়, তার মুক্তি সুনিশ্চিত।
মানবজাতি যখন অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল, সেসময় এই কুরআনের আলো দিয়ে আল্লাহর প্রিয় হাবিব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদেরকে আলোর সন্ধান দিয়েছেন। জাহান্নামের সংকীর্ণ গলিপথ থেকে নিয়ে এসেছেন জান্নাতের প্রশস্ত রাস্তায়। মুসলিম উম্মাহ এই কুরআনকে যত দিন আঁকড়ে ধরেছিল, পথ হারায়নি। ভীরুমন হয়নি। পরাজিত হয়নি। হীনমন্যতা তাদের স্পর্শ করেনি। বেইজ্জতি তাদের কাছে ঘেঁষেনি। অপদস্থতা আর লাঞ্ছনা কোনো দিন তাদের পিছু নেয়নি। জিহাদের ময়দানে তারা পিছু হটেনি। শত্রুর মোকাবেলায় বুজদিল হয়নি। যেদিকেই গিয়েছে, সফলতার পুষ্পমাল্য এসে অবস্থান নিয়েছে তাদের গলায়। বিজয়ী জাতি হিসেবে তারা মাথা উঁচু করে বেঁচে ছিল সর্বত্র।
এরপর যখনই এই উস্মাহ কুরআনকে ছেড়ে দিয়েছে, কুরআনের শিক্ষাকে বিস্মৃত হয়েছে, কুরআন থেকে দূরে সরে গিয়েছে, তখন থেকেই অধঃপতন লাঞ্ছনা আর যিল্লতি তাদের সঙ্গী হয়েছে। সেজন্যই নতুন করে আবার হারানো গৌরব ফিরে পেতে হলে উম্মাহকে ছুটে যেতে হবে কুরআনের কাছে। তিলাওয়াতের পাশাপাশি আল্লাহপ্রদত্ত নির্দেশনাগুলো জানতে হবে, সেগুলো নিয়ে ভাবতে হবে।
বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের অগ্রদূত শাইখুল হিন্দ মাহমুদ হাসান রাহিমাহুল্লাহ মাল্টার বন্দিদশা থেকে মুক্তি পাবার পর নিজের উপলব্ধি তুলে ধরে যে কথাগুলো বলেছিলেন, তা অনেকটা এরকম–‘মুসলিম উম্মাহর দুর্দশা নিয়ে আমি বন্দিদশায় অনেক ভেবেছি। আমার কাছে যে কারণটি স্পষ্ট হয়েছে তা হলো, উম্মাহ কুরআন থেকে দূরে সরে গিয়েছে। তাই আজ তারা এত লাঞ্ছিত ও হীন।’
আমাদের সমাজের প্রাত্যহিক চিত্রের দিকে লক্ষ করলে দেখা যায়, অধিকাংশ মানুষই কুরআন পড়তে পারে না। যারা কুরআন পড়তে পারে, তারা আবার কুরআনের অর্থ বোঝে না। যারা কুরআনের অর্থ বোঝে, তারা আবার সেই অর্থের অন্তর্নিহিত মর্ম নিয়ে চিন্তা-ভাবনা ও তাদাব্বুর করে না। অথচ তিলাওয়াতের পাশাপাশি কুরআনের অর্থ বুঝে নেওয়া ও তা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা ছাড়া কুরআনের হক পুরোপুরি আদায় কখনো সম্ভব নয়। বিষয়টি কুরআনের আয়াত, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদিস এবং সালাফে সালেহিনের বক্তব্য থেকে স্পষ্টভাবে বুঝে আসে।
মূলত কুরআনের অর্থ বোঝা এবং তা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করার প্রতি মানুষকে উৎসাহিত করা, কুরআন বোঝার দ্বারা কী ধরনের উপকার লাভ হয় সেই বিষয়ে ধারণা দেওয়া ইত্যাদি বিষয়কে সামনে রেখেই ধারাবাহিক রচনা কুরআন বোঝার মজা। বাইশটি লেখার মলাটবদ্ধ রূপ এ বইটি।
Shahriar Ahammed –
📚 বই নিয়ে আলোচনা 📚
বই – কুরআন বোঝার মজা
লেখক – আব্দুল্লাহ আল মাসউদ
কুরআন বোঝার মজা। নামটাই আসলে বলে দেয় বইটা কী নিয়ে। তাই, বইয়ের বিষয়বস্তু নিয়ে ব্যাখ্যা দেয়া অপ্রয়োজনীয়।
বইটির মাধ্যমে লেখক সাধারণ মানুষদের মধ্যে তাদাব্বুরের আগ্রহ তৈরি করার চেষ্টা করেছেন। কেননা, যখনই আমরা কুরআনকে বুঝতে পারব, তখনই আমাদের সামনে অনেক বিষয় স্পষ্ট হয়ে যাবে। সৃষ্টিকর্তা, মানবজীবন, ইসলাম বহু কিছু। আর এগুলো বোঝার জন্য কুরআনের চেয়ে ভালো কোনো বই হয় না।
এছাড়া কুরআন বোঝার মাধ্যমে আমরা নিজেদের আত্মিক উন্নতি ঘটাতেও সক্ষম হব। একজন উত্তম বান্দা হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলতে পারব।
বইটির আরেকটি চমৎকার দিক হলো, লেখক মাদ্রাসা পড়ুয়া হলেও তিনি এমন কিছু উদাহরণগুলোর মাধ্যমে কুরআনের আয়াতগুলো ব্যাখ্যা করেছেন, যা সবার জন্যই সহজে বোধগম্য। এই বিষয়টা আমার বেশ ভালো লেগেছে। কারণ, অনেকের লেখার মাঝেই দেখা যায় তিনি যে স্থানের তিনি সেই প্রেক্ষাপটেই লেখার চেষ্টা করেন, যার ফলে সব ধরনের পাঠক তার লেখা সমানভাবে বুঝতে পারে না। কিন্তু লেখক চমৎকারভাবে এই পরীক্ষায় উৎরে গেছেন।
লেখকের লেখনীর প্রশংসা করতে হয়। বইটি পড়ার সময় এক মূহুর্তের জন্যও আমি বিরক্ত বোধ করিনি। কুরআন নিয়ে লেখার জন্য তো এমন লেখকই চাই। আল্লাহ ওনার কলমের শান বাড়িয়ে দিন এবং প্রকাশনীকেও এমন একটি বই প্রকাশের জন্য বারাকাহ দান করুন, আমিন।
পরবর্তীতে লেখকের আরো বই পড়ার ইচ্ছা আছে। সবাইকে বইটি পড়ার অনুরোধ করব।
Meher Afroz –
📕বুক রিভিউ📗
বইঃ কুরআন বোঝার মজা
লেখকঃ আবদুল্লাহ আল মাসউদ
এখনকার মুসলিম সমাজে এমন অনেকে আছেন যারা গ্র্যাজুয়েট কম্প্লিড করেছেন অথচ কুরআন শুদ্ধভাবে পড়তে পারে না। যারাও পারেন তাঁদের ভেতর বেশির ভাগই কুরআন খুলে কিছুক্ষণ গুনগুন করে পড়ে গিলাফে পুরে বুকসেল্ফে তুলে রাখেন। এ যেন এক মন্ত্রের বই! পাঠক তিলাওয়াত করেন, ‘ওয়াইলুলিলকুল্লি হুমাঝাতিল লুমাঝাহ’ অথচ, কুরআন হাতে রেখেই বন্ধুদের সাথে গিবত করা শুরু করে দেয়। আফসোস! এই যে মানুষের এতো নৈতিক অবক্ষয়, এতো সামাজিক বিশৃঙ্খলা। এসব কিছুর পেছনে দ্বায়ী ‘উম্মাহ আর কুরআনের’ মাঝে সম্পর্কের বিচ্যুতি।
এই আল- কুরআনের অর্থ বোঝা এবং তা নিয়ে চিন্তা ভাবনা করার প্রতি মানুষকে উৎসাহি করা, এ কুরআন বোঝার ফলে কী ধরনের উপকার লাভ হয় সেই বিষয়ে ধারণা দেওয়া সহ বিভিন্ন বিষয়কে সামনে রেখে লেখক. আবদুল্লাহ আল মাসউদ বাইশটি লেখার সমন্বয়ে একটি সিরিজ লেখেন। যে সিরিজটার নাম দেন ‘কুরআন বোঝার মজা’। বর্তমানে সেই সিরিজটি ‘সমপর্ণ প্রকাশন’ বই আকারে পাঠকদের হাতে তুলে দিয়েছেন। আলহামদুলিল্লাহ।
বই থেকে কিছু অংশঃ—
‘ কুরআন না বোঝা মানে হৃদয়ের দরজা তালাবদ্ধ হওয়া।যেই দরজা দিয়ে কখনও কল্যাণ- চিন্তার আগমন ঘটবে না।’
পৃষ্ঠা নং—১৪
‘ বহু লোককেই তো দেখি সারা জীবন বহুবার কুরআন খতম করেছেন।কিন্তু কই, তারা তো মানুষের কাতারে আসতে পারেনি!’
পৃষ্ঠা নং—১৫
‘ চিন্তা- ভাবনা সহ কুরআনের একটি আয়াত তিলাওয়াত করা চিন্তা ভাবনা ছাড়াই এক খতম কুরআন তিলাওয়াতের চেয়ে অধিক উত্তম।’
পৃষ্ঠা নং— ১৬-১৭.
‘যখনই বান্দা গুনাহে জড়িয়ে পড়ে,
তিনি তার অন্তরকে অন্ধকারাচ্ছন্ন করে দেন।’
পৃষ্ঠানং— ১৯
পাঠ্যানুভূতিঃ—
লেখক যখন কুরআন বোঝে পড়ার একটা মজার দিক বলছিলেন যে, ‘কুরআন পড়তে নিয়ে আপনি হঠাৎ হঠাৎ দেখবেন এমন কিছু কথার সম্মুখীন হচ্ছেন যেন এগুলো আপনাকে বলা হচ্ছে।কিংবা যেন আপনার অবস্থাটাই আয়াতে তুলে ধরা হয়েছে।’ তখন মনে হলো, আরে ঠিকই তো! এমনটা আমার সাথে অনেকবার ঘটেছে।
আর বারংবারই আমার কাছে মনে হয়েছে এটা কুরআনের অলৌকিক কোনো বৈশিষ্ট্য। আলহামদুলিল্লাহ।
এই বইটা পড়ারপর পাঠককে ব্যাকুল করে দেবে কুরআন বুঝে পড়ার অভিযানে নামতে। আমি নিজে তার স্বাক্ষী। কারণ, বইটির ২৪ পৃষ্ঠা অব্দি পড়ার পর পর আমি অস্থিরতা অনুভব করেছি কুরআনের বাংলা অনুবাদ পড়তে।সাথে সাথে ওজু করে কুরআনের মুজাম্মিল সূরাটি বাংলা অনুবাদ সহ পড়েছিলাম।আলহামদুলিল্লাহ! বইটি পাঠককে কুরআনের প্রতি বিশেষ রকম টান অনুভব করাতে বাধ্য।ইন শা আল্লাহ।
লেখকের বর্ণনা ভঙ্গি, জীবন থেকে টেনে আনা সাবলিল উদাহরণগুলো আসলেই চমকপ্রদ। প্রতিটি লেখার ভেতরই নতুনত্বের ছোঁয়া পেয়েছি। ব্যাকারণিক কোনো ভুল চোখে পড়েনি। প্রচ্ছদ, পৃষ্ঠাসজ্জা সবই সুন্দর ছিলো। তবে, এমন ভালো মানের একটি বইয়ের প্রচার-প্রসার খুবই কম। কারণ, বইটি পড়ার পর বার বার মনে হচ্ছিলো কেনো আগে বইটির সন্ধান পাইনি। তারপর মনে হলো— ভালো জিনিস কষ্ট করে খুঁজে নিতে হয়।
রিভিউ দাতাঃ Meher Afroz