শিশুদের আখলাক বা চরিত্র গঠনে প্রয়োজন উত্তম তরবিয়ত। কেননা উত্তম তরবিয়তের মাধ্যমেই উত্তম আখলাক গড়ে উঠতে পারে। উত্তম আখলাক শিখে একটি শিশু বাচ্চা সুন্দরভাবে মিষ্টি ভাষায় নরম স্বরে কথা বলতে শিখবে, কাউকে গালি দেবে না, দান-সদাকা করতে শিখবে, অন্যের দুঃখে দুঃখী হবে, অন্যকে আনন্দ দেবে, হিতৈষী হবে, সবর করতে শিখবে, সততা শিখবে, স্পষ্টভাষী হবে, শান্তভাব অর্জন করবে, লজ্জাশীলতা শিখবে, বীরত্ব নিয়ে বড় হবে, বিনয়ী হবে, ধীরস্থিরতা শিখবে, দৃঢ়তা অর্জন করবে, ন্যায়বিচার শিখবে, হিকমাহ ও সুধারণা পোষণ করবে, সহযোগিতাম সহনশীলতা, সময়ানুবর্তিতা ও সমবেদনাবোধ হাসিল করবে। রসিকতা, ভদ্রতা, ভাবগাম্ভীর্যতা, মহানুভবতা ও ওয়াদা পূরনে থাকবে অগ্রগামী। অল্পেতুষ্টি, কর্মোদ্যম, ইহসান, আমানত, জবানের হেফাযত, তাওবাহ গোপনীয়তা রক্ষা ও ক্ষমা করে দেওয়া হবে তার দৈনন্দিন জীবনের পথ চলার অবলম্বন।
তাই, শিশুদের চরিত্র গঠনের সোপান হিসেবে আযান প্রকাশনীর এবারের আয়োজন বই –
“শিশুদের আখলাক”
সিরিয়ান লেখক, গবেষক, ইমাম ও খতিব – ইয়াজিন আল-গানিম রচিত, ভাই সালমান মাসরুর এর অনুবাদে বইটি হয়ে উঠেছে শিক্ষণীয় ও প্রাণবন্ত।
আমরা বিশ্বাস করি এই বইটি পড়ে শিশুরা সুন্দর আখলাক গড়ার পাথেয় পাবে। নবীজির (সাঃ) আদর্শে ন্যায়, আদল ও ইনসাফ করতে শিখবে। প্রশ্নোত্তরে লেখা এই বইটি থেকে প্রতিটি শিশু আখিরাতের পাথেয় কুড়ানোর সবরকমের উপায় খুঁজে পাবে ইন শা আল্লাহ!
Amit Hasan –
■ বই রিভিউ- প্রশ্নোত্তরে শিশুদের আখলাক(শিশুতোষ)
■ প্রাককথন-
আখলাক তথা স্বভাব বা চরিত্র বা ব্যবহার একটি মানবীয় গুণ। প্রতিটি বস্তুর যেমন ভালো-মন্দ থাকে ঠিক তেমনি মানব চরিত্রের ও ভালো মন্দ দিক বিদ্যমান। মুসলিম হিসেবে আমাদের উচিত ভালো চরিত্রে গুণান্বিত হওয়া এবং মন্দ সর্বদাই পরিতাজ্য। শিশুরা অনুকরণপ্রিয়। ছোট থেকে তারা যা দেখবে ও শিখবে তাই তারা বড় হয়ে নিজেদের মধ্যে ধারণ করবে। কথায় আছে, মানুষের চরিত্রই তার বংশের পরিচয়। তাই শিশুদের সৎ চরিত্রের সাথে গড়ে তুলতে পিতা-মাতার গুরুত্ব হবে অপরিহার্য। এই সৎ চরিত্র আবার অনেক গুলো মানবীয় গুণের সমষ্টি। শিশুদেরকে কোন কোন গুণে গুণান্বিত করলে সৎ চরিত্র তথা উওম আখলাকের অধিকারী হবে এবং কোন গুণগুলো পরিহার করা উচিত সেগুলোই প্রশ্নোত্তরে তুলে ধরা হয়েছে আলোচ্য বই “প্রশ্নোত্তরে শিশুদের আখলাক” এ।
■ বইটিতে যা যা আছে-
একটি শিশুর উওম চরিত্র অর্জন করতে যে গুণ গুলো তার মধ্যে ধারণ করা প্রয়োজন যেমন- ইহসান, আমানত, সততা ,পারস্পরিক সহযোগিতা, হায়া বা লজ্জা, রহমত বা দয়া, ভালোবাসা, বিনয়, বীরত্ব ইত্যাদি। এই গুণগুলোর প্রকারভেদ বা ধরন, এই গুণ গুলোর বিপরীত গুণ যা শিশুকে মন্দ আচরণে প্রভাবিত করতে পারে যেমন- হিংসা, অহংকার, গিবত, পরনিন্দা, ঠাট্টা বিদ্রুপ, গোয়েন্দাগিরি, অলসতা, রাগ, অপচয় ও কার্পণ্য, ভীরুতা ইত্যাদি এগুলোর ধরন ও প্রকারভেদ এবং উওম চরিত্রের গুরুত্বসহ ৩০ টি প্রশ্নোত্তরের আলোকে বইটি সাজানো হয়েছে।
■ পাঠ পরবর্তী পর্যালোচনা-
বইটি শিশুদের জন্য হওয়ায় তাদের আকৃষ্ট করতে বাহারী ডিজাইনের আর্ট পেপার ব্যবহার করা হয়েছে। যা যেকোনো শিশুকে আর্কষণ করবে এবং প্রতিটি পাঠের আলোচনা সংক্ষেপে হওয়ায় সহজেই আখলাক সংক্রান্ত বিষয়গুলো জানতে পারবে। তাদের মাঝে বিরক্ত কাজ করবে না। প্রতিটি পাঠের আলোচনাই কুরআন ও হাদিস কেন্দ্রিক এবং সেগুলোর যথাযথ রেফারেন্স উল্লেখ করা হয়েছে।
■ বইটির প্রয়োজনীয়তা-
বইটি প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। বইটি পাঠের মাধ্যমে বইটির আলোচ্য উওম গুণ গুলো যদি একটি শিশু ছোট থেকেই শিক্ষা লাভ করে তাহলে সে উওম চরিত্রের অধিকারী হতে পারবে। পাশাপাশি মন্দ গুণ গুলো জানার মাধ্যমে সে সেগুলোকে পরিত্যাগ করে চলতে পারবে ইনশাআল্লাহ।
■ বইটি কাদের জন্য-
বইটি মূলত শিশুদের জন্য। বইটি মূলত শিশুদের জন্য হলেও বড়রাও বইটি পাঠের মাধ্যমে তাদের আখলাককে ঝালিয়ে নিতে পারবেন ইনশাআল্লাহ।
■ বই বৃত্তান্ত-
▪বই: প্রশ্নোত্তরে শিশুদের আখলাক(শিশুতোষ)
▪মূল: ইয়াজিন আল-গানিম
▪ভাষান্তর: সালমান মাসরুর
▪কভার: পেপার ব্যাক
▪পৃষ্ঠা সংখ্যা: ৬০ পৃষ্ঠা
▪পৃষ্ঠা ধরণ: আর্ট পেপার রঙিন গ্লোসি পেপারে বাহারী ডিজাইন।
▪ প্রচ্ছদ মূল্য: ২২০৳
নাফিসা ইয়াসমিন –
প্রিয় নবীজি রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
“মিযানের পাল্লায় সবচেয়ে ভারী হবে উত্তম চরিত্র।”
(সুনানে আবু দাউদ)
হাশরের ময়দানে সেই ভয়াবহ দিনে বান্দার নাজাতের কারণ হতে পারে তার সুরভিত চরিত্র ও উত্তম আখলাক। সুবহানাল্লাহ।
বিশ্বায়নের যুগে যান্ত্রিক সভ্যতার যাঁতাকলে ফেলে আমরা যেন আগামী প্রজন্মের শুভ্র মুকুলদের বিনষ্ট না করে ফেলি।
কারণ কোমল ফুলের মত শিশুরা হয় অনুকরণ প্রিয়, তাদের প্রাথমিক পাঠ শুরু হয় পিতা মাতার অনুকরণে। মৃত্তিকা তুল্য কোমল, নিষ্কলুষ ও পঙ্কিলতামুক্ত এই শিশু অন্তরগুলোতে যদি ইমান,আকিদা, নববী আদর্শ ও আখলাকেরবীজ বপন করে দেওয়া হয় শৈশবেই তারা কখনো ঝড়ে পড়বেনা আচমকা দমকা হাওয়ায়।
আগামী প্রজন্মের আলোকবর্তিকা দের উত্তম আখলাক গড়ার উদ্দেশ্যে আযান প্রকাশনীর তরফ থেকে নব উদ্যোগ ‘ প্রশ্নোত্তরে শিশুদের আখলাক আলোচ্য বইটি। বইটি মূলত একটি অনুবাদ গ্রন্থ। শিশুদের জন্য রচিত মূল বইটি লিখেছেন সিরিয়ান লেখক ও গবেষক ইয়াজিন আল গানিম। বইটি বাংলা ভাষায় অনুবাদ করেছেন সালমান মাসরুর।
রিভিউ সমাচার
————————-
বইটির মূল বিষয়বস্তু আলোচিত হয়েছে আকর্ষণীয় ৩০টি শিরোনামের অন্তর্ভুক্ত অধ্যায়ে।
চমকপ্রদ শিরোনামে বিভিন্ন প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে শিশুদের আখলাক সম্পর্কিত বিষয় আলোচিত হয়েছে সাবলীল ভাষায়।
সূচিপত্র থেকে একঝলক
———————————————
আলোচ্য বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে- ইহসান, আমানত, সততা , ধৈর্য, পারস্পরিক সহায়তা, হিংসা, পরনিন্দা, বিনয়, ভীরুতা ও সাহস,বীরত্ব , ধৈর্য্য কী এবং এর প্রকারভেদ,অধৈর্য-অস্থীরতার ধরন, ভালোবাসা চরিত্রের প্রকার কী কী , প্রফুল্লতা, হিংসা, ঠাট্টা-বিদ্রুপ, অহংকারের প্রকার, হারাম ধোঁকা,অলসতা,রাগের প্রকার আলোচনা, অপচয় ও কার্পণ্য,এমন কিছু উপকরণ যা একজন মুসলিমকে উত্তম চরিত্রের হতে সাহায্য করে ইত্যাদি আরো অসংখ্য তাৎপর্যপূর্ণ আলোচনা উঠে এসেছে।
.
বইটির বিশেষত্ব ও প্রয়োজনীয়তা
————————————————-
⬛বইটির প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো শিশু মনস্তাত্ত্বিক ব্যাপারটিকে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথেই বিবেচিত করা হয়েছে যার প্রভাব ফুটে উঠেছে বইটির পাতায় পাতায়।
⬛দুর্ভেদ্য শব্দ সযত্নে এড়িয়ে অত্যন্ত সাবলীল প্রাঞ্জল ভাষায় আকর্ষণীয় শিরোনামে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা উঠে এসেছে।
প্রতিটি আলোচনাই প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে করা হয়েছেযার ফলে শিশুদের আখলাকের বিষয়গুলো অনুশীলনের মাধ্যমে পাঠগুলো বুঝতে সহজসাধ্য হবে।
⬛শিশুমনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে তুলতে আলোচ্য বইয়ে চমকপ্রদ প্রচ্ছদ এবং প্রতিটা পৃষ্ঠা সাজানো হয়েছে মনোমুগ্ধকর ছবি ও রং এর আলপনায় মাধ্যমে যা সহজেই শিশুহৃদয়কে আকৃষ্ট করে। সর্বোপরি নান্দনিক উপস্থাপন শিশুমনকে মুগ্ধ করে।
⬛বইটি সময় উপযোগী কারণ মানবতার অবক্ষয়ের দুর্দিনে ইসলামের আলোয় আলোকিত হতে জরুরি চরিত্র গঠন যার সোপান শুরু হতে হবে শিশুকালেই। সুতরাং শৈশব থেকেই নীতি নৈতিকতার পাঠ প্রদান করার উদ্দেশ্যে এই বইটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে আশা রাখা যায়।
কেন পড়বেন
———————
পিতা-মাতার গাফিলতি, নিজ নিজ কর্মব্যস্ততা তাদের সন্তানের প্রতি করে তোলে উদাসীন।
প্রতিটি মানুষ চাই তার নেক সন্তান যার সুখ্যাতি সমাজে ছড়িয়ে পড়ুক, দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণকামী।
একজন মুমিন বিশ্বাসীর কাছে তার সন্তান হতে পারে তার জন্য সাদকায়ে জারিয়া যার পুণ্য প্রতিফল সে কবরে শায়িত অবস্থায় ভোগ করতে পারবে। তাই ইসলামিক দৃষ্টিকোণ দিয়ে দেখলে প্যারেন্টিং অর্থাৎ সন্তান প্রতিপালন খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় কারণ সন্তানেরা আখিরাতে পিতা-মাতার জন্য আলো হবে । তাদের চলার পথ প্রদীপের মতো হবে আলোকিত হবে নবীজির আদর্শে।
শিশুদের মন আয়নার মতো স্বচ্ছ। তাতে কোনো ধুলোর আস্তর পড়েনি, কোনো পঙ্কিলতার ছাপ নেই। তাই ওদের সামনে যা-ই দাঁড়ায়, তার অবিকল প্রতিচ্ছবি এতে ভেসে উঠে।
সন্তানকে দ্বীনের আলোয় আলোকিত করতে ও উত্তম আখলাকে সুরভিত করতে বইটি অপরিহার্য। শিশু মননে আখলাকের পরিচর্যার অঙ্গ হিসেবে নববী আদর্শের দীপ্তিশিখাকে প্রজ্বলিত করা আমাদের ঈমানী দায়িত্ব।
প্রিয় নবীজি রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
“মিযানের পাল্লায় সবচেয়ে ভারী হবে উত্তম চরিত্র।”
(সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং – ৪৭৯৮)
হাশরের ময়দানে সেই ভয়াবহ দিনে বান্দার নাজাতের কারণ হতে পারে তার সুরভিত চরিত্র ও উত্তম আখলাক। সুবহানাল্লাহ।
কত বড় আমল উত্তম আখলাক লালন করা। এই মহামূল্যবান আমলটা মানুষকে জান্নাতের হকদার করবে ইন শা আল্লাহ।
অথচ বিশ্বায়নের যুগে যান্ত্রিক সভ্যতার যাঁতাকলে পড়ে আমরা হারিয়ে ফেলেছি আমাদের মানবিক মূল্যবোধকে।
📚এক নজরে বই পরিচিতি
বইয়ের নাম : প্রশ্নোত্তরে শিশুদের আখলাক
মূল : ইয়াজিন আল-গানিম
বাংলা অনুবাদ : সালমান মাসরুর
কভার : পেপার ব্যাক
পৃষ্ঠা সংখ্যা : ৬০
মুদ্রিত মূল্য : ২২০ টাকা
প্রি-অর্ডার মূল্য : ১৪৩ ৳ (৩৫