ফিলিস্তিন একজন সালাহুদ্দীন আইয়ুবীর অপেক্ষায়

ফিলিস্তিন: একজন সালাহুদ্দীনের অপেক্ষায়

ফিলিস্তিন শব্দটা শুনলেই আমাদের বুকের মধ্যে একটা অন্যরকম আন্দোলন শুরু হয়। আমরা আবেগের একটা জোয়ারে ভেসে যাই। এই ফিলিস্তিনের সঙ্গে আমাদের মুসলিম জাতির তো আবেগেরই সম্পর্ক!
যুগে যুগে মহান আল্লাহ অসংখ্য নবী-রাসুল পাঠিয়েছেন এই অঞ্চলে। এখানে রয়েছে মুসলিম জাতির প্রথম কিবলা বায়তুল মুকাদ্দাস এবং এই জায়গা থেকেই পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ হযরত রাসূলে আকরাম সা. মহান আল্লাহর সান্নিধ্যে গমন করেছিলেন। ফলে মুসলিম জাতি বায়তুল মুকাদ্দাস কিংবা ফিলিস্তিনকে অত্যন্ত মর্যাদার চোখে দেখে থাকে। কিন্তু ১৯৪৭ সাল থেকে এই পবিত্র ভূখণ্ডে জোর করে আসন গেড়ে বসেছে জায়নবাদী ইহুদীরা। ফলে যুগ যুগ ধরে নির্যাতিত হচ্ছে এই অঞ্চলের মুসলিম জনগোষ্ঠী।

লেখক সম্পর্কে:
ড. নুর আলম খলিল আল-আমিনী লেখক হিসেবে আমার কাছে একেবারেই নতুন। আমি লেখকের নাম ইতোপূর্বে কখনও শুনিনি। বেধকরি বাংলাভাষী পাঠকের কাছেও তিনি সেভাবে পরিচিত নন। রাহনুমা প্রকাশনী চমৎকার এই বইটি অনুবাদের মাধ্যমে তাঁকে আমাদের কাছে পরিচিত করিয়ে দিয়েছে।
ভারতের বিহারের মোজাফফরপুর জেলায় ১৯৫২ সালে জন্মগ্রহণ করেন নুর আলম খলিল আল-আমিনী। তাঁর পিতার নাম হাফেজ খলিল। তাঁর পরিবার হযরত আবু বরক রাযি. এর বংশধর বলে আমরা জানতে পারি। ১৯৬৮ সালে তিনি ভারতবর্ষের বিখ্যাত মাদরাসা দারুল উলুম দেওবন্দে পড়াশোনা শুরু করেন। এরপর তিনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে জ্ঞান অর্জন করেছেন। তিনি বেশ কয়েকটি পুস্তকের রচয়িতা যেগুলো দারুণ পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছে।

বই সম্পর্কে:
শিরোনাম দেখে বুঝতে বাকি থাকে না যে, বইটি ফিলিস্তিন নিয়ে রচিত। বইটিতে ফিলিস্তিনের ইতিহাস পাওয়ার পাশাপাশি আমরা কিছুটা হলেও ইহুদী জাতির ইতিহাস জানতে পারি। বইটিতে লেখক প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে শুরু করে মহানবী সা. এর যুগ পর্যন্ত ফিলিস্তিন আর ইহুদীদের ইতিহাস তুলে ধরেছেন। তারপর থেকে উত্তর আধুনিক যুগ পর্যন্ত ফিলিস্তিনের ইতিহাস সাবলীল ভাষায় বর্ণনা করা হয়েছে।

আলোচনার সুবিধার্থে সমগ্র বইয়ে অসংখ্য ছোট ছোট অধ্যায় সংযুক্ত করা হয়েছে। এতে লেখকের পাশাপাশি পাঠকদেরও পাঠ করতে সুবিধা হয়েছে। ইতিহাসের আলেকে ইহুদী-ফিলিস্তিন সম্পর্ক, ইসলামের আবির্ভাবের আগে আরব উপদ্বীপের ইহুদীরা, মুসলিম স্পেনে ইহুদী সম্প্রদায়, উসমানী সাম্রাজ্যে ইহুদী সম্প্রদায় – এভাবে আলোচনা শুরু করে একেবারে বর্তমান সময় পর্যন্ত ইহুদী এবং ফিলিস্তিনের ইতিহাস লেখক আমাদের সবিস্তারে জানিয়ে যান।

বর্তমান সময়ে ফিলিস্তিন সংকট যেকোনো সময়ের চেয়ে সংকটময় হয়ে উঠেছে। প্রতিদিনই নতুন নতুন এলাকা জোর করে ছিনিয়ে নিচ্ছে ইসরায়েল। এবং তাদের মদদ যুগিয়ে যাচ্ছে পশ্চিমা শক্তিগুলো। তাদের পেছনে এতবড় শক্তিশালী দেশগুলো থাকা সত্ত্বেও ফিলিস্তিনি মুক্তিসংগ্রাম কিন্তু থেমে নেই। মাঝেমধ্যেই নারী-শিশুসহ ফিলিস্তিনের জনসাধারণ ক্রোধে ফেটে পড়ছে ইসরায়েলের ওপর। এবং তারা মনেপ্রাণে তাদের জন্য সালাহুদ্দীন আইয়ূবী মতো একজন নেতাকে খুঁজে ফিরছে; যিনি দীর্ঘদিন ধরে অবরুদ্ধ থাকা জেরুজালেমকে দখলদার খ্রিষ্টানদের হাত থেকে মুক্ত করেছিলেন।

বইটি আমাদের এমন সব তথ্য পরিবেশন করে যাতে আমরা ফিলিস্তিন নিয়ে নতুনকরে ভাবতে বাধ্য হই। আমাদের মুসলিম উম্মাহ আজ ফিলিস্তিনে নির্যাতিত হওয়া ভাইদের কথা ভুলে গিয়েছে। এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। বইটি আমাদের সেইসব মানুষের কথা মনে করিয়ে দেবে, যারা যুগের পর যুগ ধরে ফিলিস্তিনকে দখলমুক্ত করে যাওয়ার জন্য বিরামহীন লড়ে যাচ্ছে। আল্লাহ লেখকের এই মেহনত কবুল করুন।

বইটি পড়তে পারেন সকলে। আশা করছি ফিলিস্তিন নিয়ে ভাবনার জগতে একটা নাড়া দিয়ে যাবে।