fbpx
নবি জীবনের গল্প
নবি জীবনের গল্প

নবি জীবনের গল্প

লেখক : আরিফ আজাদ
প্রকাশনী : সমকালীন প্রকাশন
বিষয় : সীরাতে রাসূল (সা.)
পৃষ্ঠা : 144, কভার : পেপার ব্যাক

176

You Save TK. 45 (20%)

নবি জীবনের গল্প

Share This Book:

ক্যাশ অন ডেলিভারী

৭ দিনের মধ্যে রিটার্ন

ডেলিভারী চার্জ ৬০ টাকা থেকে শুরু

Description

আরিফ আজাদের নতুন বই ‘নবি জীবনের গল্প’। প্রিয় নবিকে ভিন্নভাবে দেখার দূরবীক্ষণ যন্ত্র। সীরাতের বাঁকে বাঁকে ছড়িয়ে থাকা নববি মণিমুক্তো। নবি জীবনের প্রতিটি পঙ্‌ক্তি বাঙ্‌ময় হয়ে আছে নানা ঘটনা-মাধুর্যে। বড় অমূল্য সেই মুহূর্তগুলো। আরিফ আজাদ এই বইতে সেই মুহূর্তগুলো এঁকেছেন কলমের কালিতে। গল্পে গল্পে তিনি দেখিয়েছেন প্রিয় নবি কেমন ছিলেন ঘরে-বাইরে, মসজিদে-মজলিসে, মদীনার অলিতে গলিতে, সাহাবিদের ঘরদোরে, শক্ত চাটাইয়ে, কেমন সময় কাটতো প্রিয়তমা স্ত্রীদের সাথে কিংবা নিশি জাগরণে রবের সামনে ঠায় দাঁড়িয়ে থেকে।
.
পাঠক এই বইতে আবিষ্কার করবেন এমন একজন ব্যক্তিকে, যিনি ছিলেন মানুষ, আবার একই সাথে আল্লাহর দূত। সৃষ্টির সেরা হয়েও যার জীবনটা কাটতো অতি সাধারণভাবে, তবে ছিল মনুষ্যের সেরা রূপ। নবিকুলের শিরোমণিকে আসুন আমরাও নতুন করে জানি।

Author

Author

আরিফ আজাদ

Reviews (4)

4 reviews for নবি জীবনের গল্প

  1. সাওদা সিদ্দিকা নূর

    ◾প্রারম্ভিক কথন:

    তামিস্রার ধুম্রকুহেলী উচ্ছন্ন করে চৌদ্দ শ’ বছর পূর্বে আলোর মশাল নিয়ে আবির্ভাব হয়েছিল এক মহামানবের।

    তপ্ত মরুর বুকে পাপাচারের নগ্নোৎসবে মত্ত এক জাতির ভেতর তিনি জ্বালিয়েছিলেন মহাসত্যের অনির্বাণ শিখা। সেই শিখার আলোয় শুধু আরবের প্রতিটা অলিগলি নয়, আলোকিত হয়েছিল সমগ্র জাহান। তাঁর আনিত সত্য দ্বীনের মহাউৎসবে রঙিন হয়েছিল কৃতদাস থেকে রাজা। তিনি তাঁর সত্য পয়গামের আলোকচ্ছটায় আলোকিত করেছিলেন ইতিহাসের সকল গতিপথ। ঢেলে সাজিয়েছিলেন পৃথিবীর সকল গল্পমালা, সকল জীবন। তিনি মুহাম্মাদ (সা.)। এক আলোর ফেরিওয়ালা। সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক তাঁর ওপর।

    শয্যা কী সিংহাসন, এই মানুষটির জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত প্রতিটি পদার্পণ, প্রতিটি কর্ম, জীবনের প্রতিটি অলিগলি আতশকাচের ন্যায় নিরীক্ষণ হয়েছে শতাব্দীর পর শতাব্দী। তাঁর জীবনের প্রতিটা দিক গবেষণা করে লেখা হয়েছে অগনিত শাস্ত্র।

    আর এই মহামানবের আলোকউজ্জ্বল জীবনের খণ্ডিত অংশ গল্পের আদলে লিপিবদ্ধ করেছেন, লেখক আরিফ আজাদ। সোনার মানুষের সোনা রাঙা জীবনকে গল্পের আদলে সাজানোর জন্যই বোধহয় বইয়ের নাম দিয়েছেন ‘নবি-জীবনের গল্প’।
    .
    .
    ◾যেভাবে সাজানো হয়েছে বইটি:

    নবি (সা.) জীবনের ২১টি টুকরো ঘটনা গল্পের আদলে ঢেলে সাজানো হয়েছে এই বইয়ে। নবি (সা.) জীবনের এই মহামূল্যবান খণ্ডিত অংশগুলো আমাদের যেমন নবিজির (সা.) জীবনের গুরুত্বপূর্ণ কিছু ঘটনার সাথে পরিচয় করিয়ে দিবে, সেই সাথে পরিচয় করিয়ে দিবে কিছু অবহেলিত সুন্নাহর সাথে।

    লেখক প্রতিটি ঘটনার সারাংশ থেকে পাঠগুলোর নামকরণ করেছন। নবি (সা.) জীবনের এই ২১টি ঘটনা পাঠক হৃদয়কে সিক্ত করে তুলবে নববী ভালোবাসার স্রোতে। নতুন করে শিখিয়ে যাবে জীবনের কিছু করণীয় বর্জনীয়।
    .
    .
    ◾পাঠ অভ্যন্তরের প্রিয় কিছু আলোচনা:

    বইয়ের প্রথম অধ্যায় ‘এইসব ভালোবাসা মিছে নয়’-এ এক অবহেলিত সাহাবির (রা.) প্রতি নবিজির (সা.) আকাশচুম্বী ভালোবাসার সংমিশ্রণ ঘটেছে। আমি নিশ্চিত, পাঠক এই ঘটনা পড়ার সময় হাউমাউ করে কাঁদবে।

    ‘সংসারের স্বরলিপি’ অধ্যায়টা আমার সবথেকে প্রিয় অধ্যায় ছিল। নবিজি (সা.) স্ত্রীদের নিকট ছিলেন প্রেমময়ী স্বামী। স্ত্রীদের মন-মর্জি বুঝতে তাঁর কোনো বেগ পেতে হতো না। তেমনি এক অভিমানী স্ত্রী আয়িশা (রা.)-এর সাথে নবিজির (সা.) দাম্পত্য জীবনের মিষ্টি কিছু মুহূর্তকে বন্দী করা হয়েছে এই অধ্যায়ে।

    ‘সংসারের স্বরলিপি’ অধ্যায়ের কিছু পরে আসে ‘সম্ভাবনার খোঁজে’। একটা প্রবাদ আছে। ‘যেখানে দেখো ছাই, উড়াইয়া দেখো তাই। পাইলেও পাইতে পারো অমূল্য রতন।’ এই প্রবাদের এক সুমহান নজির পাওয়া যায় এই পাঠে।

    ‘তিনি এক অনুপম স্বামী’ অধ্যায় পড়ে তো হাপুস নয়নে কেঁদেছি। স্ত্রীর মৃত্যুর অনেক বছর পরও নিবিজির (সা.) কাছে তাঁর প্রিয়তমা স্ত্রীর ক্ষুদ্রতম জিনিসগুলো কতটা প্রিয় ছিল তারই এক অনন্য ঘটনা এখানে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।

    এভাবে একের পর এক ঘটনার ঘনঘটা বেড়ে চলে৷ এবং সর্বশেষে ‘ফাতিমার জন্য ভালোবাসা’-র কথা বলে লেখক বইয়ের ইতি টানেন। সন্তানদের দুনিয়াবি সুখের থেকে আখিরাতের আরাম-আয়েশকে বেশি গুরুত্ব দিতেন নবিজি (সা.)। সন্তানদের হাতে তুলে দিতেন অনন্ত জীবনে সুখী হওয়ার মাপকাঠি। এমনই এক ঘটনার দৃষ্টান্ত রয়েছে এই পাঠে।

    বইয়ের প্রতিটি ঘটনার দিকে নজর দিলেই বোঝা যাবে, লেখক নবি-জীবনের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ও সুন্দর ঘটনাগুলো বেছে বেছে তুলে এনেছেন।
    .
    .
    ◾পাঠ অভিমত:

    নবিজির (সা.) জীবনের প্রতিটি অংশ নিয়ে গবেষণা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কেউ তার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলো গল্পের আদলে সাজিয়েছে কিনা, আমার জানা নেই। আমার জানায় ভুলও হতে পারে। তবে এই
    টুকরো ঘটনাগুলো লিপিবদ্ধ করে লেখক আরিফ আজাদ সময়ের সবচেয়ে উপযোগী একটা কাজ করেছেন। যারা সিরাতের নতুন পাঠক, কিংবা সিরাত সম্পর্কে কিছুই জানে না তাদের জন্য বইটা খুবই প্রয়োজনীয়। কারণ লেখকের হৃদয় ছোঁয়া কলমের আঁচড় পাঠকের মনক বিগলিত করে তুলবে। সিরাত পাঠে মানুষকে আকৃষ্ট করবে।

    বইটিতে আমি একটা বিশেষ জিনিস লক্ষ্য করেছি। লেখক কেবল সুন্দর শব্দমালার গাঁথুনিতে সিরাতের টুকরো ঘটনাগুলো বন্দি করেননি। লেখক ঘটনাগুলো থেকে ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে কী শিক্ষা পাওয়া যায়, তা খুব সুচারু রূপে গল্পের ভেতর উপস্থাপন করেছেন। তাই বইিকে যদি শুধু সিরাতের টুকরো ঘটনার গল্প বলে অভিহিত করি, তবে কিছুটা ভুল হবে। তাই বইটিকে এক কথায় বলা যায়, ‘সিরাতের টুকরো ঘটনার দর্পণে আদর্শ জীবন গঠন’।

    বাজারে যেসকল সিরাতের বই পাওয়া যায়, সেখানে লেখক কেবল সিরাতের গতানুগতিক ঘটনাগুলোই উল্লেখ করে থাকেন। কিন্তু সিরাতে নববী থেকে আমাদের যে শিক্ষা, কুরআনের যে বাস্তব প্রয়োগ, সেটা কখনো দেখানো হয় না। সে ক্ষেত্রে লেখক তার অসাধারণ চিন্তাশৈলী দ্বারা আমাদের জীবনে সিরাতে নববীর শিক্ষাগুলো তুলে ধরেছেন। এক্ষেত্রে লেখকের চিন্তাশক্তির প্রশংসা করতে হয়।

    বই পড়ে আরো একটা বিষয় নজর এসেছে। সেটা হচ্ছে লেখক আরিফ আজাদের সাহিত্য জ্ঞান তুখোড়, নিখুঁত ও অনন্য। লেখকের আবেগি ভাষার ব্যবহার প্রতিটি পাঠককে কাঁদাতে বাধ্য করবে। লেখকের কলমের জোর শুধু অবিশ্বাসীদের দাঁত ভাঙা জবাবের ক্ষেত্রে নিবদ্ধ নয়, লেখকের কলম সাহিত্যের সবক’টি দরজা মাড়িয়ে গিয়েছে।

    আমরা নিজেদের মুসলিম হিশেবে দাবি করি। অথচ কাজে কর্মে সিরাতে নববীর কোনো প্রতিফলন ঘটে না। সহজ ও ছোটো ছোটো সুন্নাহগুলোকে আমরা চাইলেই নিজেদের ভেতর ধারণ করতে পারি, কিন্তু আমরা সে বিষয়ে খুবই বেখেয়াল। তাদের জন্য এই বইয়ের প্রতিটি পাঠ হবে এক্সক্লুসিভ। লেখক খুব সুক্ষ্ম ভাবে সমাজের অবহেলিত সুন্নাহগুলো সিরাতের দর্পণে এই বইয়ে তুলে ধরেছেন। যা সত্যই প্রশংসনীয়।

    তাছাড়া কোনো মন গড়া দূর্বল ঘটনা বর্ণনা করে লেখক সিরাতে নববীকে প্রশ্নবিদ্ধ করেননি। অথেনটিক হাদিসের ভেতর থেকে বেছে বেছে ঘটনাগুলো সাজিয়েছেন। তাই এই টুকরো ঘটনাগুলোর ব্যাপারে কোনো সংশয় নেই।

    এরপর সম্পাদকের ঈগল দৃষ্টি বইকে করেছে নির্ভুল। জেনারেল মাধ্যমে পড়াশোনা করে সিরাতে নববীতে যে লেখকের একচ্ছত্র আধিপত্য রয়েছে, সেটাও একটা বিশেষ গুন। এখানে সাধারণ মুসলিমদের জন্য বড় একটা শিক্ষা লুকিয়ে আছে।
    .
    .
    ◾বিশেষ ভালোলাগা:

    প্রতিবাদ তো কম হয় না। মাঠে, ঘাটে, নেটে হ্যাশট্যাগ আর তুমুল সমালোচনার ঝড় আমরা সব সময়ই দেখি। কিন্তু এগুলো কয়দিন আমাদের মাঝে থাকে? একদিন, দুইদিন, একমাস, দুইমাস? এরপর সেগুলো আবার নতুন ট্রেন্ডের স্রোতে ভেসে যায়।

    আমার প্রাণ প্রিয় নবিকে (সা.)-কে নিয়ে ফ্রান্স সরকার যে ধৃষ্টতা দেখিয়েছিল, তার প্রতিবাদও আমরা কম করিনি। কিন্তু এই প্রতিবাদে কয়জন কলম তুলেছে? আমি কারো অবদান তুচ্ছ করছি না। যারা ফেইসবুকে একটা হ্যাশট্যাগও দিয়েছে, তাদেরও আমি নবি (সা.) প্রেমী মনে করি। কিন্তু যে ফ্রান্স আমাদের নবিজির (সা.) থেকে দুরে সরিয়ে দিতে চেয়েছিল, সেই প্রতিবাদে কেউ সিরাত লিখেছে কিনা জানি না। শুধু সিরাত নয়, সিরাত থেকে বেছে বেছে এমন কিছু ঘটনা সাজিয়েছে কিনা, যা পড়লে শুধু নবিজির (সা.) প্রতি ভালোবাসা বাড়বে।

    বছর, যুগ, শতাব্দী চলে যাবে। সব প্রতিবাদ মিইয়ে যাবে একদিন। কিন্তু এই কলমের প্রতিবাদ আজীবন থাকবে। যতদিন এই বইটি মানুষ পড়বে, ততদিন তারা জানতে পারবে, ফ্রান্স আমার নবিকে (সা.) নিয়ে কটুক্তি করেছিল। তখন ফ্রান্সের প্রতি আকাশ সমান ঘৃণা আর আমার নবিজির (সা.) প্রতি আকাশ সমান ভালোবাসা সৃষ্টি হবে। লেখকের এই সুদুরপ্রসারি দৃষ্টিকোণ যেন সবসময় বিদ্যমান থাকে সেই দু’আ করব।
    .
    .
    ◾বিশেষ মন্তব্য:

    খুব গুরুতর বিশষ মন্তব্য করার জন্য লেখক বইয়ে কোনো ফাঁক ফোঁকর রাখেননি।

    বইটি আমার মত সাহিত্য প্রেমির জন্য অত্যন্ত উপযোগী। কারণ বইয়ে সাহিত্যের সর্বোচ্চ প্রয়োগ ঘটেছে। কিন্তু যারা সাধারণ মানুষ, তাদের বইটি পড়তে কষ্ট হবে। কারণ লেখক বইয়ে সাহিত্যের সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে গিয়ে এই সাধারণ পাঠকদের জন্য কঠিন করে তুলেছেন। অর্থাৎ যেকোনো মহলের লোক বইটি স্বাচ্ছন্দ্যে পড়তে পারবে না।

    এরপর সিরাতে নববী পড়তে বসলে তৃপ্তির রেখা পূর্ণ না হলে ভালো লাগে না। বইটিতে মাত্র ২১টি ঘটনা এবং অনেকগুলো ঘটনাই অনেক ছোটো। লেখকের নিকট থেকে আরো প্রত্যাশা ছিল। যদি আরো কিছু টুকরো সিরাত থাকত, তবে তৃপ্তির রেশটা বেশ ভালো হতো।

    সিরাতে নববীর গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সম্মেলনে তেমন কোনো বই লেখা হয়নি। তাই লেখকের নিকট থেকে এই বইয়ের সিক্যুয়াল চাই এবং সেই সিক্যুয়ালে অনেক ঘটনার সন্নিবেশ ঘটবে সেই আশা রাখি।
    .
    .
    ◾বইটি কেন পড়তে হবে?

    সিরাতে নববীর প্রতিটি পাতা, প্রতিটি অক্ষর জানা আমাদের ইমানি দায়িত্ব। ইসলামী জীবনব্যবস্থার সর্বোচ্চ ও সর্বোৎকৃষ্ট প্রয়োগ ঘটেছে সিরাতে নববীতে। তাই সিরাত শুধু নবিজির (সা.) জীবনী জানার জন্য নয়, নিজেদের ইমানের পূর্ণতার প্রাপ্তির জন্য জানতে হবে।

    তাছাড়া কুরআনের স্পষ্ট ব্যাখ্যা পাওয়া যায় সিরাতে নববীতে। তাই কুরআনের নির্যাস নিজের মধ্যে ধারণ করতে হলে অবশ্যই সিরাতে নববী জানতে হবে। আবার, বর্তমান অসুস্থ পৃথিবীর জন্য সিরাত হচ্ছে ভেজালহীন ভেষজ। যা গ্রহণের মাধ্যমেই পৃথিবীতে মানবিকতার স্ফুরণ হবে। সত্য ও সুন্দরে উদ্ভাসিত জীবন পানে এগিয়ে আসবে মানবকূল। তাই বর্তমান পৃথিবীর প্রেক্ষাপটে সিরাতে বিকল্প কিছু নেই। তাই অবশ্যই বইটি পড়া উচিত।

    তাছাড়া গতানুগতিক বইয়ের বাইরে এই বইটি। সিরাতের প্রাথমিক পাঠকরা খুব ইন্টারেস্ট নিয়েই পড়তে পারবে।
    .
    .
    ◾যবনিকা:

    আমার যাবার বেলা হলো। তবে যাওয়ার আগে এটা প্রত্যাশা করি, বইটি পড়ে মানুষ সিরাতে নববীর দপর্ণের নিজের জীবন গড়ার চেষ্টা করবে। নিজেকে উদ্ভাসিত করবে সত্য ও সুন্দরের নূরানী আলোতে। জীবন সাজাবে নবিজির (সা.) কর্মে। জীবন ও কর্মে ফুটে উঠবে নবিজির (সা.) ভালবাসার প্রতিচ্ছবি। জীবনের ক্ষয়িষ্ণু ক্যানভাস রঙিন করবে সত্য ধর্মের রঙে।
    .
    .
    ◾এক নজরে বইটি:

    ▪️বইয়ের নাম: নবি-জীবনের গল্প
    ▪️লেখক: আরিফ আজাদ
    ▪️প্রকাশনায়: সমকালীন প্রকাশন
    ▪️পৃষ্ঠা: ১৩৯
    ▪️মূল্য: ২২১ টাকা

  2. Arafat Shaheen

    বই: নবি জীবনের গল্প
    লেখক: আরিফ আজাদ

    ‘মহান খোদা যাকে পাঠালেন
    রহমত করে জীবন বাঁকে
    তাঁর মতো আর কেউ কি এমন
    মানুষ গড়ার স্বপ্ন আঁকে!’

    —ইবনে হাজার আসকালানি রহ.
    অনুবাদ: সাদিক ফারহান

    পৃথিবীর সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ হলেন নবিজি (সা.)। তাঁর পবিত্র জীবনীর প্রতিটি ঘটনাই আমাদের আন্দোলিত করে। তাঁর অনুপম জীবনদর্শন আমাদের অনুপ্রাণিত করে নতুনভাবে। মহান আল্লাহ তাঁকে জগতের জন্য রহমতস্বরূপ প্রেরণ করেছেন এবং আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন সর্বাত্মকভাবে অনুসরণ করার। নবিজির জীবনীকে নানান দৃষ্টিকোণ থেকে পাঠ করার মাধ্যমে আমরা তাঁর জীবনদর্শন ও আদর্শকে অনুসরণ করতে পারি।

    ‘নবি-জীবনের গল্প’ এ বছরের বইমেলায় সমকালীন প্রকাশন থেকে বের হয়েছে। লেখক হলেন বর্তমান সময়ের তুমুল জনপ্রিয় প্রতিভা আরিফ আজাদ।  রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর পবিত্র জীবনীর কয়েকটি টুকরো ঘটনা নিয়ে গল্পের আদলে রচিত বইটি বেশ সুখপাঠ্য। এমনিতেই সিরাত-গ্রন্থের প্রতি আলাদা একটা টান থাকায় বইটি পড়তে বেশি আগ্রহ অনুভব করেছি।


    ‘নবি-জীবনের গল্প’ গতানুগতিক কোনো সিরাত-গ্রন্থ নয়। বরং নবিজির জীবনের খণ্ড খণ্ড কিছু অংশ অনুপম ভাষাশৈলীর মাধ্যমে পাঠকের সামনে হাজির করার প্রয়াস। এই বইয়ে যতটা না রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর জীবনের ঘটনাকে উপস্থাপন করা হয়েছে, তারচেয়ে বেশি দক্ষতা দেখা গিয়েছে ভাষার প্রয়োগে।

    আরিফ আজাদের অন্যান্য বই নিয়ে যতটা আলোচনা চোখে পড়েছে ‘নবি-জীবনের গল্প’ নিয়ে ততটা চোখে পড়েনি। হয়ত এখানে ধারালো যুক্তির মাধ্যমে প্রতিপক্ষকে কুপোকাত করার কোনো কৌশল শেখানো হয়নি বলে! কিন্তু একটা বিষয় মনে রাখা দরকার—নবিজির জীবন নিয়ে লেখা খুবই কষ্টের কাজ। অসীম ধৈর্য এবং গভীরভাবে সিরাত অধ্যয়ন ছাড়া কাজটি করা মোটেই সহজ নয়। বাস্তবে কাজ করতে এসে বিষয়টি আমি দারুণভাবে উপলব্ধি করেছি।

    বাংলা ভাষায় মৌলিক সিরাত-গ্রন্থ রচনায় আমাদের পারদর্শিতা খুব বেশি নয়। সাম্প্রতিক সময়ে অবশ্য তরুণদের মধ্যে সিরাতচর্চা আমাদের বেশ আশাবাদী করে তোলে। সেই ধারাবাহিকতায় যে সকল সিরাত-গ্রন্থ রচিত হয়েছে, আরিফ আজাদের ‘নবি-জীবনের গল্প’ সেখানে স্থান করে নেবে নিঃসন্দেহে।


    আকর্ষণীয় প্রচ্ছদের বইটিতে মোট একুশটি অধ্যায় রয়েছে। আলাদা আলাদা শিরোনামের এই অধ্যায়গুলোতে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর জীবনের একুশটি ঘটনা স্থান পেয়েছে। তবে ঘটনাগুলো বর্ণনার ক্ষেত্রে লেখক সময়ের ধারাবাহিকতা রক্ষা করেননি। এটা করলে হয়ত ভালোই হতো।

    শিরোনামগুলো অনেকটা গল্পের মতো। কারণ, লেখাগুলোর শুরু গল্পের আদলেই হয়েছে। সবচেয়ে ভালোলাগার বিষয় হলো—প্রতিটি লেখার শেষে আমাদের শিক্ষণীয় বিষয়টা দারুণভাবে তুলে ধরা হয়েছে। আমার কাছে এটি বেশ দারুণ ও সময়োপযোগী বলে মনে হয়েছে।

    বইয়ে ভাষার ব্যবহার বেশ আকর্ষণীয়। আরিফ আজাদের ভাষা এমনিতেই সহজ-সরল ও রসাত্মক; দীর্ঘক্ষণ পাঠককে ধরে রাখার মতো। এই বইও তার ব্যতিক্রম নয়।

    যে-সকল সিরাতপ্রেমী প্রাথমিক পর্যায়ের পাঠক, তাদের জন্য বইটি বিশেষ উপযোগী হবে।


    নবুয়্যত প্রাপ্তির পর থেকে আজ পর্যন্ত ইসলাম ও রাসূল-বিদ্বেষীরা তাঁর সুমহান মর্যাদাকে কলুষিত করার জন্য কম চেষ্টা করেনি। কিন্তু মহান আল্লাহ তাআ’লা যাঁর মর্যাদাকে সর্বোচ্চ পরিমাণে বৃদ্ধি করে দিয়েছেন, তাঁর সম্মানে সামান্যতম আঁচড় লাগাতেও তারা সক্ষম হবে না।

    ‘নবি-জীবনের গল্প’ রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর মর্যাদাকে আরেকবার আমাদের সামনে উদ্ভাসিত করে তোলে। সাহাবিদের সঙ্গে তাঁর আচরণ, পরিবারের সঙ্গে তাঁর কোমল ব্যবহার, শত্রুর প্রতি তাঁর দরদ আমাদের আপ্লুত করে। আমরা অবাক হয়ে একজন মহামানবের সম্মুখে এসে দাঁড়াই।

  3. কামরুননাহার মীম

    সমগ্র বিশ্বজাতির জন্য যাকে পাঠানো হয়েছিল রহমত রুপে তিনিই রহমাতুল্লিল আলামীন মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তিনি ছিলেন গুণের আঁধার যাকে উদ্দেশ্য করে আল্লাহ বলেছেন, “নিশ্চয়ই তুমি সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী।” তাঁর জীবনের আঁকেবাঁকে রয়েছে হাজারো ঘটনা আর এতে রয়েছে আমাদের জন্য শিক্ষা। জগতের শ্রেষ্ঠ মহামানবকে কেবল মুখে ভালোবাসি বলেই ক্ষান্ত হই আমরা। যাপিত জীবনের চলার পথে আমাদের ভালোবাসার নমুনা বড্ড বেমানান আজ। কাউকে ভালোবাসলে আমরা তার পদানুসরণ করি, তার ভালোবাসা পাওয়ার নেশায় তার জীবনের আনাচে-কানাচে ঘুরে বেড়াই। আদৌ কি আমাদের হৃদয়ের ছোট্ট কুটিরে সেই মহামানবের জন্য রয়েছে গভীর ভালোবাসা? নাকি পুরোটাই মেকিতে পরিপূর্ণ আর মুখেই সীমাবদ্ধ?

    “নবি-জীবনের গল্প” নামটিতেই যেনো বইয়ের পরিচয়টা বেশ চমৎকারভাবে ফুটে উঠেছে। জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে যার অবদান ছিল অবিস্মরণীয় সেই রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জীবনকে ঘিরেই এই বই। অন্ধকারচ্ছন্ন ভূবনের জাহেলিয়াতের অবসান ঘটাতে আলোকবর্তিকা হিশেবে এই পৃথিবীতে আগমন ঘটেছিলো মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের। একত্ববাদের বানী প্রচার করতে করতে যিনি পদে পদে হয়েছিলেন অত্যাচারিত; কিন্তু জীবন সংগ্রামে তবুও কখনো হননি পিছুপা। সংসার থেকে শুরু করে সমাজ অব্দি প্রতিটি প্রান্তে যিনি রেখে গিয়েছেন তার আদর্শ, তিনিই উসওয়াতুল লিল আ’লামীন মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।

    বক্ষমান বইটিতে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবনের নানা ঘটনার বর্ণনা গল্পের মাঝে চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। ২১টি চমৎকার শিরোনামে বইটিকে বেশ আকর্ষণীয় করে সাজানো হয়েছে। নবি-জীবনের নানা ঘটনার মাঝে ২১টি ঘটনাকে গল্পাকারে সাজিয়ে পাঠক-মনে আলোড়ন তৈরি করেছেন লেখক। ছোট্ট এই বইটিতে কখনো সাহাবীদের প্রতি নবিজির নিঃস্বার্থ ভালোবাসার চিত্র, কখনো এক আদর্শ নেতার চিত্র, কখনো একজন আদর্শ স্বামীর ভূমিকা, কখনো শত্রুর তীরের বিরুদ্ধে ফিরিয়ে দেওয়া ভালোবাসার এক অপূর্ব চিত্রায়ন তুলে ধরা হয়েছে। কখনো নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে চিনেছি নেতৃত্বের গুণে বলিষ্ঠ এক নায়ক হিসেবে, কখনোবা হাজারো দুশমনের বিরুদ্ধে একত্ববাদের সাক্ষ্যে অটল এক মানুষকে, মানবের প্রতি এক প্রেমিক পুরুষকে, নিরহংকারী রুপে এক শ্রেষ্ঠ মহামানবকে, সংসারের প্রতি দায়িত্বশীল এক পুরুষকে। প্রতিটি বর্ণনায় চমৎকার লিখনশৈলীর নজির পাওয়া যায়। বইটিতে নেই কোনো লম্বাচওড়া ঘটনা, নেই কোনো অতিরঞ্জন। অত্যন্ত চমৎকার শিরোনাম, অসাধারণ শব্দচয়ন আর গল্পে গল্পে শিক্ষা দেওয়ার থিমটা বইটির গ্রহণযোগ্যতা বাড়িয়ে দেয় অনেকগুণে। মূল শিক্ষাকে পাঠকের মাঝে আকর্ষণীয়ভাবে তুলে ধরতে বইটির জুড়ি নেই।

    প্রশ্ন হতে পারে, সীরাত সম্পর্কিত এত বইয়ের মাঝে এই বই কেন পড়ব? এই বই কোনো সীরাত গ্রন্থ নয়- এই বই নবী জীবনের প্রতি ঝুঁকে পড়ার প্রথম স্টেজ মাত্র। বিশাল মোটা বই দেখেই তো পাঠক সীরাত পড়তে অনাগ্রহী হয়ে যায়, পড়ার সময়ই আর তাদের হয়ে উঠেনা। সাধারণ মানুষের মাঝে নবী জীবনের শিক্ষাকে পৌঁছে দিতে এই বইটি অন্যতম এক ভূমিকা রাখবে ইন শা আল্লাহ। গল্পে গল্পে নবী জীবনের চিত্রায়ণের মাধ্যমে বিগিনারদের মাঝে নবী প্রীতি ছড়িয়ে দেওয়ার একটা মোক্ষম অস্ত্র এই বই। ইন শা আল্লাহ হয়তো এই বইয়ের নেশায় বিভোর হয়ে পাঠক নতুন করে নবী জীবন নিয়ে ভাবতে শুরু করবে। আর গল্প অধিকাংশ মানুষেরই প্রিয় তাই শুরুটা গল্প দিয়ে করলে মন্দ হয়না। সাইজে ছোট, চমৎকার ঘটনা, গল্পের চমৎকার বর্ণনা, তথ্যবহুলতা, সাহিত্যরসে পরিপূর্ণতা বইটির গ্রহণযোগ্যতা সাধারণ পাঠকের মাঝে বাড়িয়ে দেয়।

    আজকের ইয়াং জেনারেশন যতটা হিমু-রুপার গল্পে বিভোর ততটা কিন্তু ইসলামের প্রতি আগ্রহী নয়। আমি মনে করি, এই বই গল্প প্রেমিকদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে পারলে কিছুটা হলেও যুবকসমাজ তার প্রকৃত আদর্শের দিকে ঝুঁকবে। নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে, আমি বলব যুবসমাজের মাঝে বইটি ছড়িয়ে দিলে যিনা-ব্যভিচারের দিকে না ঝুঁকে তার আল্লাহ রাসুলের পথের দিকে ঝুঁকবে ইন শা আল্লাহ। তবে তার অর্থ এটা নয় যে, কেবল তাদের জন্যই এই বই। সাবলীলতা, প্রয়োজনীয়তা আর আকর্ষণীয়তা বিচারে বইটি সকল শ্রেণির মানুষের জন্য সুখপাঠ্য হবে বলে আমি আশা রাখি।

    গল্পের মাঝে হারিয়ে যাওয়ার স্বভাবটা আমাদের প্রায় সবারই। আর সেই গল্প যদি রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনের হয় তবে তো কোনো কথাই নেই। বইটির সূচিটা যে রেশ ধরে শুরু করেছিলাম ঠিক একই রেশ বইয়ের শেষ পাতা অব্দি ছিল। বইয়ের প্রতিটি অধ্যায় পড়তে গিয়ে কিছু না কিছু নতুনভাবে শিখেছি। হয়তো লেখকের শব্দচয়ন নয়তো রাসুলের জীবনের শিক্ষাকে ধারণ করা। আবারও বলছি, যদি আপনি জীবনে কখনো সীরাত না পড়ে থাকেন বা বিদ্যালয়ের সেই ইসলাম শিক্ষা বইয়ের গন্ডিতে সীমাবদ্ধই থেকে যান আজীবন তবুও এই বইটি পড়ে দেখবেন একবার ইন শা আল্লাহ। নবি জীবনের পাঠগুলো ধারণ করে নবি-প্রেমে উজ্জীবিত হোক এই ভূবন এই কামনা রইলো।

    একুশটি গল্প নিতান্তই অল্প। নবি-জীবনের আরও অনেক অনেক ঘটনা রয়েছে যা এই বইয়ে তুলে ধরা যেতে পারতো কিংবা হয়তো এখনো সামনে এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে লেখক ভিন্নরকম কিছু উপহার দিতে পারেন ইন শা আল্লাহ।

    এক নজরে বই বৃত্তান্ত–

    বইয়ের নাম: নবি-জীবনের গল্প
    লেখক: আরিফ আজাদ
    প্রকাশনায়: সমকালীন প্রকাশন
    পৃষ্ঠা: ১৩৯
    মূল্য: ২২১ টাকা

  4. নাফিসা ইয়াসমিন

    🍂
    প্রাক কথন
    ——————
    হলুদ সরষে ফুলের মতো রোদ উঠে পৃথিবীর প্রাচীন শহরটাতে। শ্বাসরুদ্ধকর লু হাওয়া হাহাকার করে মরু বিয়াবানে। গোঁড়ামিতে আচ্ছন্ন শহরের মানুষগুলো বর্বর ও জালেম। শহরের মধ্যেমণি রবের পবিত্র ঘরে আঙিনায় বসে পূজার আসন। ধুলোর আস্তর জমেছে ইব্রাহিম আলাইহিস সালামের ধর্মে।

    এ সমস্ত মুখ ও পাপের ছোঁয়া বাঁচিয়ে শহরের জঞ্জালে বড় হতে থাকে একটি পবিত্র প্রাণ। তার নাম মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। এতিম মোহাম্মদ (সা.) যখন কৈশোর-যৌবন পেরিয়ে উপনীত হন সঠিক বয়সে, তখনি একদিন ঘটে এক আশ্চর্য ঘটনা। হেরাগুহায় নেমে আসেন আল্লাহর ফেরেশতা। প্রভুর পক্ষ থেকে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু সাল্লাম কে দেওয়া হয় মহাদায়িত্ব। শুরু হয় বদলে যাওয়া ও বদলের ইতিহাস।

    তমসাপূর্ণ, বিশ্রী-অন্ধকার সমাজে আবির্ভূত হয়ে সম্পূর্ণ অন্ধকার সমূলে উচ্ছেদ করে প্রতিষ্ঠা করেন সত্য ত‌ওহিদের আলো ।
    সেই মানুষের হাত ধরে পাল্টে গিয়েছিল সমগ্র পৃথিবীর ইতিহাস। সভ্যতা পেয়েছিল নতুন এক মাত্রা। সেই মানুষের হাত ধরে পৃথিবীতে আবার নেমে এলো হিদায়েতের ফাল্গুধারা।

    সেই মহামানবের নাম মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
    পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষটির আলোকোজ্জ্বল জীবনের টুকরো টুকরো অংশকে নিয়ে বর্তমান জেনারেশনের জনপ্রিয় কথাশিল্পী আরিফ আজাদ গল্পের আদলে সাজিয়েছেন ‘নবি-জীবনের গল্প’ যা প্রকাশ পেয়েছে সমকালীন প্রকাশনা থেকে।

    রিভিউ কথন
    ——————–
    বক্ষ্যমাণ গ্রন্থটি গতানুগতিক কোনো সীরাতগ্রন্থ নয় । এখানে গৎবাঁধা স্টাইলে নবীজির জীবনের বর্ণনা দেয়া হয়নি বরং নবীজির জীবনের বিভিন্ন দিক , নানান ঘটনাসমূহ গল্পের ছন্দে সুন্দর, সহজবোধ্য, সুখপাঠ্য এবং হৃদয়গ্রাহী করে তুলে ধরা হয়েছে পাঠকের সামনে প্রিয় লেখক আরিফ আজাদ।
    এই মহামানবের আলোকিত জীবনের খন্ড খন্ড অংশকে বিভিন্ন আকর্ষণীয় শিরোনামে ২১টি গল্পের ছকে সুবিন্যস্ত করা হয়েছে। নবী-জীবনের টুকরো টুকরো অংশগুলো লেখকের ভাষাশৈলির দক্ষতায় হয়ে উঠেছে হৃদয়গ্রাহী। ব‌ইটিতে প্রিয় নবীজির (সাঃ) এর জীবনের প্রতিচ্ছবি যেমন ফুটে উঠেছে তেমনভাবে লেখক স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন কিছু বিস্মৃত সুন্নাহকে।

    প্রথম অধ্যায় শুরু হয়েছে “এই ভালোবাসা মিছে নয়” গল্প দিয়ে যেখানে নবীজির ভালোবাসা প্রকাশ পেয়েছে তাঁর এক প্রিয় সাহাবী জুলাইবিব রাযিয়াল্লাহু আনহুর প্রতি যিনি ছিলেন সবার কাছে অবহেলিত কিন্তু নবীজির কাছে ছিলেন অত্যন্ত প্রিয়।

    ব‌ইটি শেষ হয়েছে ফাতিমার জন্য ভালোবাসা” গল্পের মাধ্যমে যেখানে ফুটে উঠেছে একজন মহামান্য পিতার ভালোবাসা তাঁর সন্তানের‌ জন্য।পিতা হিসেবে প্রিয় নবী কেমন ছিলেন, সন্তানদের প্রতি তাঁর নির্দেশিকা, গাইডলাইন কিংবা তাঁর গভীর সন্তান স্নেহের প্রতিচ্ছবি অঙ্কিত হয়েছে।

    এছাড়াও হৃদয়ে গভীর দাগ টানে “তিনি এক অনুপম স্বামী” অধ্যায়টি যেখানে তাঁর প্রিয়তমা উম্মুল মুমিনিন খাদিজা রাঃ এর প্রতি সুগভীর ভালোবাসা মাখানো পবিত্র প্রেম দেখে।
    তাঁর প্রিয়তমার মৃত্যুর পরেও তাঁর অকৃত্রিম ভালোবাসার উপমা পাঠক হৃদয়কে সিক্ত করে।প্রিয় নবীজি স্মৃতিকাতর হয়ে পড়তেন তাঁর প্রিয় অর্ধাঙ্গিনীর স্মরণে।

    “সংসারের স্বরলিপি” অধ্যায়ে লিপিবদ্ধ হয়েছে উম্মুল মুমিনিনদের(রাঃ) প্রতি নবিজি সাঃ এর সৎ ও একনিষ্ঠ ভালোবাসা।চিত্রাঙ্কিত হয়েছে তাঁর অনুপম চরিত্রের প্রেমময় দিকটি তেমনি তেমনি উম্মুল মুমিনিন আয়িশা (রা.)-এর সাথে নবিজির (সা.) বন্ধূত্বপূর্ণ আচরণ, মিষ্টি মধুর দাম্পত্য জীবনের একটুকরো।

    এছাড়াও “ভৃত্যের সাথে আলাপন” অধ্যায়ে প্রিয় নবীজির মহানুভবতা, বিনম্র আচরণ এবং “কাবার চাবি” গল্পে তাঁর দূরদর্শীতা ও বিচক্ষণতা পাঠক হৃদয়কে মুগ্ধ করে। প্রতিটা গল্প মুগ্ধতার পরশ বুলিয়ে দেয় হৃদয়তরীতে।

    পাঠ্যানুভূতি
    ——————-
    ব‌ইটি গৎবাঁধা স্টাইলের সীরাতগ্রন্থ নয় কিন্তু নবী জীবনের এক টুকরো প্রতিচ্ছবি যা পরতে পরতে মুগ্ধতা ব‌ইয়ে নিয়ে আসে। প্রিয় নবীজির (সাঃ ) এর জীবনের গল্প পড়ে যেমন নীরবে অশ্রু ঝড়ে তেমনি গভীর প্রভাব রাখে মহামানবের আলোকিত উপাখ্যান।
    লেখকের সুনিপুণ রচনাশৈলী ও চমৎকার শব্দবিন্যাস পাঠক হৃদয়কে চুম্বকের মত নিবন্ধন করে রাখে ব‌ইয়ের পাতায়।

    ব‌ইটির গুরুত্ব ও কেন পড়বেন
    ———————————————-
    📙ফ্রান্সে প্রিয় নবীজির ব্যাঙ্গচিত্র অঙ্কন নিয়ে কেঁপে উঠেছিলো তামাম মুসলিম দুনিয়া।প্রাকটিসিং মুসলমান থেকে শুরু করে সাধারণ মুসলিম সকলের অন্তর দগ্ধ হয়েছিলো ফ্রান্স সরকারের ধৃষ্টতায়।
    কিন্তু একজন সাধারণ নাম সর্বস্ব মুসলিম কতটুকু জ্ঞান রাখে তার প্রিয় রাসূল সম্পর্কে। প্রিয় নবীজিকে ভালোবাসতে গেলে জানতে হবে তাঁর আলোকিত জীবন, গায়ে মাখতে হবে ঐশী জীবনের সেই আলোকচ্ছটা।তবেই হয়ে উঠবে একজন সত্যিকারের রাসূল প্রেমিক।
    প্রতিবাদ স্বরূপ হ্যাশট্যাগের ট্রেন্ড চলেছিল বেশ কিছুদিন কিন্তু এই ধৃষ্টতার বিরুদ্ধে কলম ধরতে সমকালীন প্রকাশনা বেছে নিয়েছে সীরাত রচনার অঙ্গন।
    প্রান্তিক সময়ে রাসূলের জীবনগাথা থেকে টুকরো টুকরো আলো সাজিয়ে পাঠক হৃদয়ে নবী প্রেমের ঝড় তোলে আলোচ্য ব‌ইটি।
    প্রতিটা প্রচ্ছদ, হৃদয়গ্রাহী লেখা হৃদয়কে রাসূলের ভালোবাসায় উদ্বেলিত করে অনায়সে।

    📙যে মানুষটা চোদ্দশো বছর পূর্বে আমাদের মত অধম উম্মতের সাথে সাক্ষাত লাভের জন্য ছিলেন ব্যাকুল।
    যাঁর জাগতিক চিন্তা ছিলো শুধু তাঁর উম্মতকে ঘিরে
    শুধু আমাদের মাগফিরাতের উদ্দেশ্য জন্য যে মানুষটা ব্যাকুল হৃদয়ে কাঁদতেন মহান রাব্বুল আলামীনের কাছে সেই প্রিয় মানুষটাকে কি না ভালোবেসে থাকা যায়?
    হাশরের ভয়াবহ দিনে যখন সমস্ত নবী রাসূল নিজ নিজ চিন্তায় ব্যাকুল থাকবে কিন্তু যে মানুষটার আজহারি থাকবে শুধু তাঁর প্রিয় উম্মতকে ঘিরে, সেই মানুষটার সম্পর্কে আমরা কতটুকু জানি?
    প্রিয় মানুষটি সম্পর্কে জানতে ও তাঁর ঐশী আলোয় আলোকিত হতে সীরাতের বিকল্প কিছু নেই।

    📙তবে মৌলিক সীরাত গ্রন্থের যেমন গুরুত্ব অপরিসীম তেমনি তাঁর জীবনের টুকরো টুকরো গল্প সমৃদ্ধ ব‌ই মুমিন হৃদয়কে সহজে আলোকিত করতে সক্ষম কারণ কলেবর বেশি দীর্ঘ না হ‌ওয়াই অধ্যায়ন ও পাঠ্য নির্যাস অনুধাবন করা সহজসাধ্য ।প্রিয় নবিজির জীবনীকে নানান দৃষ্টিকোণ থেকে পাঠ করার মাধ্যমে আমরা তাঁর জীবনদর্শন ও আদর্শকে অনুসরণ করতে পারি।

    পরিশেষে
    —————-
    যে মহানবীর পদচারণায় সিক্ত হয়েছে বিশ্বসভ্যতা, ধরনীতল আলোকিত হয়েছে তৌহিদের আভায়। সত্য ও ন্যায় এর ওপর যিনি ছিলেন অবিচল।সেই মহামানবের জীবনের প্রতিটা অধ্যায় আদম সন্তানের জন্য অনুসরণীয়।
    নবী জীবনের পাঠ্য , পাঠক হৃদয়পটে নববী ভালোবাসার‌ ঝড় তোলে । আমাদের জীবনের প্রতিটা পদক্ষেপে নববী আদর্শের প্রতিচ্ছবি সফলতা বহন করে আনবে ইহকালীন ও পরকালীন সফলতার সোপান।
    একজন সীরাত প্রেমিক পাঠকের হৃদয়ের তৃষ্ণা নিবারণ করতে সক্ষম আলোচ্য ব‌ইটি।

    📚এক নজরে বই পরিচিতি
    ———————————–
    বই: নবি-জীবনের গল্প
    লেখক: আরিফ আজাদ
    প্রকাশনা: সমকালীন প্রকাশন
    পৃষ্ঠা: ১৩৯
    মূল্য: ২২১ টাকা

Add a review

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Shopping cart
Sign in

No account yet?

ধন্যবাদ, আপনার প্রি-অর্ডারটি গ্রহণ করা হয়েছে।

আপনার যে কোন প্রশ্ন অথবা অর্ডারে কোন পরিবর্তনের জন্য ০১৮৪৪২১৮৯৪৪ নাম্বারে কল করুন ।