মুসা আহমাদ। পিতার রেখে যাওয়া ডায়েরি যার জীবনের গতি-প্রকৃতি নির্ধারণ করে দেয়। পিতার আদেশ উপদেশ অনুসরণ করতে গিয়ে অল্প বয়সেই যে সত্য-মিথ্যার পার্থক্য বুঝতে শিখে যায়। তার পিতা যেসব প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য এদিক সেদিক ছুটাছুটি করেও কোন সমাধান খুঁজে পায়নি, সেসব প্রশ্নের জবাব আজ মুসার নখদর্পণে!
আজ টগবগে এক তরুণ যুবক মুসা আহমাদ। সে অবিশ্বাসীদের সকল বাধা ভেঙে তছনছ করে ছুটে চলছে অবিরাম। মিথ্যা ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে অপরাজেয় এক যোদ্ধার কাহিনী নিয়ে রচিত গ্রন্থ মিস্টিরিয়াস মুসা।
আব্দুর রহমান –
বর্তমান সময়ে অনেক গল্প উপন্যাসে লক্ষ্য করলে দেখা যায় সেখানে শিক্ষণীয় বিষয়ের চাইতে কুরুচিপূর্ণ বিষয়গুলোকে অধিক পরিমানে সবার দৃষ্টিগোচর করা হচ্ছে। এসব গল্প উপন্যাসে কৌশলে ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছে মিথ্যা ইতিহাস, ইসলাম বিদ্বেষ, অশ্লীলতা সহ নানারকম ইস্যু। কিন্তু গল্প বা উপন্যাসের মাধ্যমেও যে ইসলামের প্রকৃত সৌন্দর্য তুলে ধরা যায় তা হয়তো অনেকেরই অজানা। আর এই অভাবকে কিছুটা হলেও পূর্ণ করতে প্রিয় লেখক আবু আনাস লিখেছেন একটি ভিন্নধর্মী উপন্যাস। যার নাম “মিস্টিরিয়াস মূসা”।
.
সার-সংক্ষেপঃ-
বইয়ের প্রধান চরিত্র মূসা আহমাদ। শৈশবেই তার পিতা মারা যায়। তবে তার পিতা রমিজ মিয়া ছিলেন নাস্তিকতা ও সংশয়বাদে বিশ্বাসী একজন মানুষ। তবে মৃত্যুর পূর্বে পিতা রমিজ মিয়া তার তার পুত্রের জন্য চারটি ডায়েরি রেখে যান। ডায়েরিতে ছিল পুত্রের মহাপুরুষ হয়ে ওঠার জন্য আদেশ, নিষেধ, উপদেশ সহ অনেক কিছু। তবে ডায়েরির সেসব অনুসরণ করে ধীরে ধীরে মূসা আহমাদ হয়ে ওঠেন আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাসী একজন মহাপুরুষ।
এদিকে ৫ম শ্রেণি পড়া অবস্থাতেই পারিবারিক ভাবে বিয়ে হয় মূসা আহমাদ ও জরিনার। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই জরিনার বাবা এই বিয়ে মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানায়। কিছুদিন পরেই জরিনার পরিবার কাউকে কিছু না বলে ঢাকা চলে যায়।
সময়ের কষাঘাতে মাধ্যমিক পাশ করার পর কাকতলীয়ভাবে জরিনা ও মূসা আহমাদ দুজনেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একই ডিপার্টমেন্টে চান্স পায়। একদিন মূসা আহমাদ আচমকা দেখতে পায় জরিনাকে। কিন্তু মূসা আহমাদ জরিনাকে চিনতে পারলেও জরিনা মূসাকে চিনতে পারেনি। কারন ততদিনে মূসা আহমাদ দাড়ি রেখে পাঞ্জাবী পড়ে এক অন্যরকম চেহারায় আবির্ভুত হয়েছেন। এভাবেই এগিয়ে যায় শৈশবে বিবাহিত এক দম্পতির প্রেমকাহিনী।
এদিকে মূসা আহমাদও জীবনের সর্বক্ষেত্রে ইসলাম মেনে চলতে থাকে। ইসলামের দাওয়াত দিতে থাকে আত্নীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব সকলের মাঝে। ইসলাম নিয়ে মানুষের মনে আসা সংশয়গুলোর জবাব দিতে থাকে কখনো বিজ্ঞান, কখনো ধর্ম, আবার কখনো যুক্তি, দর্শন, ও ইতিহাসের আলোকে। যাতে মানুষ পুনরায় ফিরে আসতে পারে একমাত্র পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা ইসলামের দিকে, অন্ধকার ছেড়ে আলোর পথে।
.
বইটি কেন পড়বেন, কি পাবেন?
১। সূরা লাহাবে আল্লাহ তায়ালা আবু লাহাবকে অভিশাপ দিয়েছেন। কোন সৃষ্টিকর্তা কি তার সৃষ্টিকে অভিশাপ দিতে পারেন।
২। রোযার মাঝে কি আসলেই কোন বৈজ্ঞানিক উপকারিতা আছে?
২। আল্লাহর অস্তিত্বের ডিএনএ টেস্ট।
৩। বিজ্ঞানীগণ সাম্প্রতিক যে ব্লাকহোলের ছবি তুলতে সমর্থ হয়েছে সেটা কি আসলেই ব্লাকহোলের ছবি।
৪। এছাড়াও পাঠক বইতে প্রধান চরিত্র মূসা আহমাদের দৈনন্দিন জীবনের মাঝে প্রতিটি ক্ষেত্রে ইসলামী দিকনির্দেশনার অনুসরণ দেখতে পাবেন এবং সেখান থেকে অনেক কিছু শিক্ষা গ্রহণ করতে পারবেন।
.
ব্যক্তিগত অনুভূতি:-
বইটির কভার, প্রচ্ছদ, বাইন্ডিং, ও ভিতরের পাতা মাশাআল্লাহ অনেক সুন্দর। বর্তমান সময়ে যেখানে সবখানে অশ্লীল ও অবৈধ প্রেম কাহিনী সম্বলিত উপন্যাসে ভরপুর সেখানে লেখক আবু আনাস এর ইসলামি ভাবধারা সামনে রেখে উপন্যাস রচনা করা সত্যিই প্রশংসনীয়। লেখক কোনরকম কৃত্রিমতার আশ্রয় না নিয়ে উপন্যাসটিকে সহজ শব্দের মাধ্যমে উপস্থাপন করেছেন। বইয়ের প্রতিটি বাক্যই যেন অভূতপূর্ব ভালোলাগায় সম্মোহিত করে রাখে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত। পড়তে পড়তে একসময় দেখবেন বইটি পড়া শেষ কিন্তু সেই পড়ার রেশ রয়ে যাবে অনেকদিন।
বইটিতে নাস্তিকরা যেমন পাবে তাদের উপস্থাপিত প্রশ্নগুলোর উপযুক্ত জবাব। তেমনি আল্লাহতে বিশ্বাসী মুসলিমদেরও বিশ্বাসের ভিত্তি আরো মজবুত হবে। সকলের জন্যই রয়েছে চিন্তার খোরাক।