সর্বশেষ নবী মুহাম্মাদ সা. : হৃদয়ের বাদশাহ গ্রন্থটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুপম আদর্শময় জীবনের বিস্তারিত উপখ্যান।
যুদ্ধ-বিগ্রহের বাইরে সমাজের একজন সক্রিয় সদস্য হিসেবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ভূমিকা ও উদ্দেশ্যকে এখানে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। উল্লেখ্য তার জীবদ্দশায় যতগুলো যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে, তেষট্টি বছরে সেগুলোর ব্যাপ্তি দুমাসেরও বেশি নয়।
এ গ্রন্থে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনের ক্রমধারার প্রতিই কেবল দৃষ্টি নিবদ্ধ করা হয়নি, বরং সাহাবায়ে কেরাম, পরিবার ও নিকটস্থ সদস্যদের দৃষ্টিতে তার চরিত্র, আচরণ ও গুণাবলীর প্রতি সবিশেষ দৃষ্টি নিবদ্ধ করা হয়েছে।
একদিকে গ্রন্থটিতে একজন আদর্শ স্বামী, স্নেহময় পিতা এবং বিশ্বস্ত বন্ধুর অন্তরঙ্গ চিত্র তুলে ধরা হয়েছে, অন্যদিকে একজন সাহসী যোদ্ধা ও সামরিক বিশেষজ্ঞের নাটকীয় অভিযান বর্ণনা করা হয়েছে। সমাজে অন্যায়-অত্যাচার ও দাসত্বের মোকাবেলা থেকে শুরু করে মানুষের অধিকার ও স্বাধীনতা রক্ষায় রণক্ষেত্রে সংগ্রাম—এ গ্রন্থে এমন এক জীবনী তুলে ধরা হয়েছে যা একইসঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ, চিত্তাকর্ষক এবং উদ্দীপক।
এ গ্রন্থটি পাঠককে প্রচন্ড আবেগ ও গভীর নিমগ্নতায় সময় ও স্থানের বাধা অতিক্রম করে শতাব্দি পুরোনো আরব উপত্যকায় নিয়ে যাবে এবং অবাক বিস্ময় ও আনন্দে তাদের নতুন তথ্য আবিষ্কার ও অনুসন্ধানের সুযোগ করে দিবে।
Copyright © 2024 Seanpublication.com
আব্দুর রহমান –
আমরা সচরাচর রাসূল (স:) এর যেসব জীবনী পড়ি তাতে থরে থরে সাজানো থাকে তথ্যের স্তুপ অথবা কোন জীবনীতে সাহিত্যের দৃষ্টিকোণ থেকে অতি বাড়াবাড়ি করা হয়। আবার যেসব জীবনীতে বেশি পরিমানে তথ্য থাকে তাতে ঘটনাগুলোর বিশ্লেষণ করা থাকেনা। কিন্তু “সুলতান অব হার্টস” গ্রন্থটি লেখক এ দুইয়ের মাঝামাঝি থেকে লিখেছেন। এই কিতাবের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য হলো এখানে লেখক নবীজির জীবনীকে তথ্যের স্তুপ না বানিয়ে সাহিত্যিক ভাবধারা অক্ষুণ্ণ রেখে ঘটনা গুলো বিশ্লেষণ করেছেন। চমৎকার ভাষাশৈলী ও উপমার ব্যবহার পাঠককে ধরে রাখবে বইয়ের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত। বইটি লিখেছেন রশীদ হাইলামায ও ফাতিহ হারাপশী।
লেখক পরিচিতি
রশীদ হাইলামায। যিনি একাধারে একজন লেখক, গবেষক, ও সম্পাদক। ইস্তাম্বুলের কায়নাক প্রকাশনা গ্রুপের প্রধান সম্পাদক।
পক্ষান্তরে ফাতিহ হারাপশী জন্মেছেন তুরস্কের ইস্তাম্বুলে। তিনি ইস্তাম্বুলে অবস্থিত মারমারা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রাজুয়েশন এবং ফিলাডেলফিয়ার টেম্পল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করেন।
বিশিষ্ট অনুবাদক মুহাম্মদ আদম আলী কতৃক বাংলায় অনুবাদের পর বইটির নাম হয়েছে “মুহাম্মদ (সা:) হৃদয়ের বাদশা”।
,
▶সার-সংক্ষেপ:-
“মুহাম্মদ (সা:) হৃদয়ের বাদশা” প্রথম খন্ড বইটি লেখক ৪৬ পর্বে ভাগ করেছেন। প্রতিটি পর্বকে আনার বিভিন্ন অনুচ্ছেদে বিভক্ত করেছেন। যাতে পড়তে গিয়ে পাঠকের ক্লান্তিবোধ হবে না ।
বইতে রাসূল (স:) এর জীবনের ঘটনাগুলো জন্ম থেকে শুরু না করে বরং ইবরাহিম (আ:) এর সময়কাল থেকে শুরু করেছেন। ইবরাহিম ও ইসমাইল (আ:) ঘটনাসমূহ ও ইব্রাহিম (আ:) থেকে রাসূল (স:) পর্যন্ত বংশধারা বর্ণিত হয়েছে। এরপর লেখক আবরাহার হাতি বাহিনীর ঘটনা বর্ণনায় এনেছেন। যা রাসূল (স) এর জন্মের মাত্র ৫০ দিন পূর্বে সংঘটিত হয়েছিল।
রাসূল (স:) এর জন্মের সময় ঘটে যেতে থাকে নানারকম আশ্চর্যজনক ঘটনা। মা আমিনার কোলে জন্ম হওয়ার পর বিবি হালিমা রাসূল (স:) কে লালন পালন করার জন্য তার গৃহে নিয়ে আসেন। সেখানে বিবি হালিমা রাসুল (স:) কে ছয় বছর যাবৎ পালন করেছিলেন। ছোট অবস্থাতেই রাসূল (স:) এর মাতা আমিনা ইন্তেকাল করেন। তার পিতা আব্দুল্লাহ তো ইন্তেকাল করেছেন রাসূল (স:) এর জন্মের পূর্বেই। এরপর রাসূল (স:) এর অভিভাবকত্ব তার দাদা আব্দুল মুত্তালিব গ্রহন করেন। দাদা আব্দুল মুত্তালিবের মৃত্যুর পর তার দায়িত্ব গ্রহণ করেন আবু তালিব।
ব্যবসা বানিজ্যের মাধ্যমে রাসূল (স:) দিনযাপন করতেন । খাদিজা (রা:) নামক এক ধর্নাঢ্য মহিলার সাথে রাসূল (স:) এর বিয়ে হয়।
হেরা গুহায় সর্বপ্রথম ওহী নিয়ে আসেন ফেরেশতা জিবরাঈল। শুরু হয় নবুয়তের সূচনা। ধীরে ধীরে রাসূল (স:) ইসলামের প্রচার প্রচারণা শুরু করেন। ইসলাম প্রচারের কারনে রাসূল (স:) সাহাবীদের নিয়ে বেশকিছু দিন যাবত শিয়াবে আবি তালিবে অবরুদ্ধ জীবনযাবন করেন।
মুসলমানদের উপর চলতে থাকে শারীরিক ও মানুষিক সবরকম নির্যাতন। এরপর আবিসিনিয়াতে হিজরত এবং মিরাজের বিস্তারিত বর্ণনা প্রদানের মাধ্যমে ১ম খন্ড শেষ করা হয়েছে।
,
▶ব্যক্তিগত অনূভুতি:-
ব্যক্তিগত অনূভুতি যদি বলতে হয় তাহলে বলবো বইটি এককথায় অসাধারন। বইয়ের প্রতিটি পাতায় রয়েছে লেখকগণের কঠোর পরিশ্রমের ছোয়া। সঠিক শব্দচয়ন, মজবুত ও পাকাপোক্ত শব্দের গাঁথুনি বইটিকে নিয়ে গেছে এক অনন্য উচ্চতায়। বইয়ের প্রতিটি বাক্যই যে অভূতপূর্ব ভালোলাগায় সম্মোহিত করে রাখবে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত। বইটি পড়তে গিয়ে পাঠক কোথাও বিরক্তবোধ করবেন না। নিজের অজান্তেই হারিয়ে যাবেন সীরাতের অজানা ভুবনে। মনে হবে, নতুন করে জানছেন রাসূল (স:) কে
বইটি পড়ার পর পাঠক আরো বুঝতে পারবেন রাসূলের দুনিয়ার জীবন কেমন ছিল। জানতে পারবেন রাসূল (স:) এর আচার আচরণ ও কর্মপন্থা সম্পর্কে। যা আমাদের জন্য অনুসরণীয়।
বইটি পড়ার সময় পাঠক রাসূল (স:) এর দুনিয়ার জীবনের দূ:খ কষ্টের কথা ভেবে যেকোনো পাঠক কাঁদবেন। চক্ষুদ্বয় অশ্রুসিক্ত হয়ে গড়িয়ে পড়বে অশ্রুফোটা । কল্পনায় ভেসে উঠবে রাসূল (স:) এর সেই সময়ের ইমানদীপ্ত মুহুর্তগুলো।
এমন খুব কম বই আছে যার প্রতিটি বাক্য ভালো লাগার, প্রতিটি পাতায় মিশে থাকে জ্ঞানের ছোয়া ও শিক্ষণীয় মেসেজ ” মুহাম্মদ হৃদয়ের বাদশা ” বইটি তার মধ্যে অন্যতম। সত্যি তো রাসূল (স:) এর দুনিয়াবী জীবনের থেকে শিক্ষনীয় তো আর কিছু নেই । রাসূল (স:) এমন একজন মানুষ যাকে অনুসরণ করলে দুনিয়ার জীবন পরিচালনা করলে সুখ ও শান্তির পথে চলা সম্ভব।
সব মিলিয়ে বইটি খুবই ভালো এবং উপকারী। তাই সকল পাঠকের প্রতি অনুরোধ বইটি একবার হলেও পড়ুন আর জীবনকে রাঙিয়ে তুলুন রাসূল (স:) এর জীবন ও আদর্শের আলোকে।
.
▶শেষ কথাঃ-
সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, তাঁর পরিবারবর্গ ও সাহাবায়ে-কেরামের উপর। বর্তমান সমাজের প্রেক্ষাপট অনুযায়ী রাসূল (স:) এর এত সুন্দর একটি সীরাত বই পাঠকের হাতে পৌছে দেয়ার জন্য লেখক,অনুবাদক,প্রকাশক, সহ বইয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে আল্লাহ উত্তম প্রতিদান দিন। সেই সাথে দোয়া করি আল্লাহ যেন এই বইয়ের মাধ্যমে পাঠকসমাজকে সর্বাধিক উপকৃত হওয়ার তাওফিক দান করেন।