নবিজির জীবনী আমাদের কাছে উন্মুক্ত বই। সেখান থেকে পৃষ্ঠা উলটিয়ে যা ইচ্ছে আমরা পড়তে পারি, শিখতে পারি। প্রতিটি অধ্যায় মণি-মুক্তোয় ভরপুর।
পৃথিবীর সকল সেলিব্রেটি অন্তত কিছু না কিছু ‘একান্ত ব্যক্তিগত’ বলে গোপন করে। কিন্তু দেখুন না আমাদের নবিজিকে; সবকিছুই তিনি উন্মুক্ত করেছেন উম্মতের জন্য। নবিজির বহির্জীবন নিয়ে বলেছেন সাহাবিগণ, ঘরের জীবন নিয়ে বলেছেন উম্মুল মুমিনিন। তাঁরা নবিজির জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপ অনুসরণ করেছেন এবং সেগুলো দুনিয়াবাসীর সামনে তুলে ধরেছেন।
কোনো কোনো ক্ষেত্রে আমাদের বাবা-মা কিংবা শিক্ষকের চেয়েও নবিজিকে বেশি জানি। অনেক ক্ষেত্রেই আমরা নিজেদের চেয়েও নবিজিকে বেশি উপলব্ধি করতে পারি এবং ভালোবাসি। আমাদের ধ্যান-জ্ঞান এবং আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু ‘উসওয়াতুন হাসানা’ প্রিয় নবিজি।
‘মাআল মুস্তফা’ গ্রন্থে আমরা নবিজিকে আরেকবার জীবনের সাথে মিলিয়ে নেবো, তাঁর জীবন থেকে পাথেয় কুড়িয়ে নেবো ইনশাআল্লাহ।
Muhammad Tamimul Ihsan –
#বুক_রিভিউ_কনটেষ্ট
||বুক রিভিউ-৯||
রাসূল (সা.)-র সীরাহ আমাদের কাছে এক অমূল্যবান সম্পদ।যার দ্বারা আমরা খুঁজে পাই পথের দিশাহ।আর রাসূল (সা.)-র জীবনও আমাদের কাছে একটা উন্মুক্ত বইয়ের মত। আমরা চাইলেই সেখান থেকে কিছু গ্রহণ করতে পারি, পড়তে পারি আবার শিখতেও পারি।তবে অধিকাংশ সীরাত গ্রন্থেই রাসূল (সা.)-র ধারাবাহিক জীবনী শুধু উল্লেখ থাকে কিন্তু হাতে ধরিয়ে বুঝিয়ে দেওয়া হয়না যে কোথায় কাজে লাগাবো আমাদের পঠিত সীরাহ।তাই আরবের মাজলুম আলেম ড.সালমান আল আওদা (হাফি.) রাসূল(সা.)-র জীবনের সাথে আমাদের জীবনকে মিলিয়ে নেওয়ার জন্য লিখেছেন “মাআল মুস্তফা” গ্রন্থটি।বাংলায় অনুবাদ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী মুখ ফারুক আজম ভাই।প্রকাশ করেছে গার্ডিয়ান প্রকাশনী।
বইটিতে মূলত রাসূল (সা.)-র গতানুগতিক সীরাহ উল্লেখ না করে কিছু আদর্শগত দিক উল্লেখ করা হয়েছে।যাতে রাসূল (সা.)-র জীবনের সাথে আমাদের জীবনকে আমরা মিলিয়ে নিতে পারি।মোটকথা রাসূল (সা.)-র মতো মহাবিপ্লবী ও সমাজসংস্কারকের জীবনের টুকরো টুকরো ঘটনা আর শিক্ষা নিয়েই রচিত হয়েছে “মাআল মুস্তফা” বইটি। শুধু যে রাসূল (সা.)-র জীবনীই এর মধ্যে আছে তা নয়,আছে ফিলিস্তিন, ইসলামি দল ও মুসলিম শাসকদের নিয়ে লেখকের একগুচ্ছ মহামূল্যবান কথা।এছাড়াও মুসলিম স্কলারদের চিন্তার সীমাবদ্ধতার কারণ এবং অনেক ক্ষেত্রে একমুখী দৃষ্টিভঙ্গির পিছনে দায়ী কে..?এসব বিষয় নিয়েও সমাধান খোঁজ করা হয়েছে বইটিতে।
বইটিকে ভাগ করা হয়েছে ছোট ছোট করে মোট ৪১টি অধ্যায়ে।এর মধ্যে রাসূল (সা.)-র জীবনী যেমন টুকরো টুকরো করে উল্লেখ আছে তেমনিভাবে সাথে সাথে সেই অধ্যায় সংশ্লিষ্ট শিক্ষাও উল্লেখ আছে।বইটিতে রাসূল (সা.)-র জীবনী ধারাবাহিক ভাবে আদ্যোপান্ত সিরিয়াল করে করা হয়নি।সোজা কথায় যদি বলতে হয়,বাজারের অন্যান্য সীরাহ গ্রন্থের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা এই সীরাহ গ্রন্থটি। তবে বইটি থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা যাবে অন্যান্য অনেক গ্রন্থ থেকে অনেকাংশে বেশি।
বইটি কারা পড়বেন..??যারা সীরাতে রাসূলের আলোয় নিজেকে আলোকিত এবং উদ্ভাসিত করতে চান,শুধু রাসূল (সা.)-র জীবনের ঘটনাগুলো পড়ে মাথায়ই ধরে রাখতে চান না সেটা কাজে বাস্তবায়ন করে দেখাতে চান তাদের জন্যই “মাআল মুস্তফা” বা রাসূলের সান্নিধ্যে বইটি। নিজের লাইফ,ক্যারিয়ার,নানা সংকট,সমাজের নানা টানাপোড়ন,সমগ্র বিশ্বের বিভিন্ন সমস্যার সুষ্ঠু ও সঠিক সমাধান যারা পেতে চান তাদের জন্যই বইটি।
ব্যক্তিগত অনুভূতি :বইটি পড়ার সময় নিজের লাইফের সাথে রাসূল (সা.)-র জীবনকে মিলানোর চেষ্টা করেছি।তিনি কী ছিলেন আর আমি কি….??এতটুকুই মিলাবার চেষ্টা করেছি।এছাড়াও বইটির অনুবাদ বেশ ভালো এবং সাবলীল। দু-একজায়গায় কিছু সমস্যা ছাড়া তেমন কোনো সমস্যা বইটিতে খুঁজে পাইনি।
দিনশেষে শুধু এতটুকুই বলবো, বইটি সবার পড়া উচিৎ। গতানুগতিক সীরাহর চেয়ে অনেক কাজে দিবে এই সীরাহ গ্রন্থটি।
ব্যক্তিগত রেটিং:৪/৫
মাআসসালাম………!!
■ এক নজরে “মাআল মুস্তফা” বইটি :
বই : মাআল মুস্তফা
লেখক : ড.সালমান আল আওদা
প্রকাশক : গার্ডিয়ান পাবলিকেশন
বইয়ের বিষয়বস্তু : রাসূল সা. এর সিরাত