লা-তাহ্‌যান : হতাশ হবেন না

এক নজরে,
বইয়ের নামঃ লা তাহযান ( হতাশ হবেন না)
লেখকঃ শেইখ ড. আয়িদ আল ক্বরনী
অনুবাদকঃ মুফতী মুহাম্মাদ মামুনুর রশীদ

আমরা খুব সহজেই হতাশ হয়ে পড়ি। আর এই হতাশা শয়তান কে মানুষের উপর বিজয়ী হতে সাহায্য করে।হতাশাকে কাটিয়ে কিভাবে আল্লাহর উপর ভরসা করবেন, তার নেয়ামতের উপর সন্তুষ্ট থাকবেন এই বিষয়ের উপর শেইখ ড. আয়িদ আল ক্বরনীর লেখা বিশ্বব্যাপী প্রবল সাড়া জাগানো বই ‘লা তাহযান’ বা ‘হতাশ হবেন না’।
#পাঠ_পর্যালোচনা:
পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষটিও মনে করে যে সুখী নয়।অন্যের ভালো থাকা দেখেও যে অন্তরে সুখ অনুভব করা যায় তা ক’জনে বোঝে।কিন্তু আল্লাহর রহমত কি শুধু ইহলৌকিক সফলতা, ধন-দৌলত প্রাচুর্য? নাকি তারও বাইরে কিছু আছে? হিংসা-বিদ্বেষ, হানাহানি, অন্যায়-অত্যাচার, ব্যর্থতা আর হতাশায় আজ মানব সমাজ জর্জরিত।কিন্তু মানুষ ভেবে দেখে না শান্তির ধর্ম ইসলামের মাঝেই রয়েছে এর চিকিৎসা।
কিতাবটির চমৎকারিত্ব বর্ণনা করতে গিয়ে লেখক বলেন, যা বাংলায় অনুবাদ করলে দাঁড়ায়:
”খচিয়া দিনু তাঁরে মুক্তায়,
হেন্, সে যেন দিনমনি বিনে প্রভা ছড়ায়,
যেন, রজনীকান্ত ব্যতিরেকে ধায়।
তার নয়নযুগল তাই, যেন জাদুময়,
আর কাপুরুষ ধারালো অসিবৎ নির্ভীক হয়।
কতইনা মনোহর আঁখিপল্লব হায় !
কি চমৎকার গ্রীবাদেশ আর রং তার গায়।”
৬০৮ পৃষ্ঠার সুদীর্ঘ বইটিতে ৩৪৭টি অধ্যায়ে কিছু নজরকাড়া আকর্ষণীয় শিরোনাম তুলে ধরছি।
* জীবন যেমন তাকে তেমনই গ্রহণ করুন* তারা কী আল্লাহ প্রদত্ত নেয়ামতের কারণে হিংসা করে * ঘরেই থাকুন * নিন্দা ও সমালোচনার মোকাবিলা করবেন যেভাবে * কারও কৃতজ্ঞতার আশা করবেন না* পরোপকারেই পরম তৃপ্তি * টক লেবু দিয়ে মিষ্টি শরবত তৈরি করে ফেলুন * দুঃসময়ের ফরিয়াদ কে শোনেন* মধু আহরণ করুন। কিন্তু চাক ভাঙ্গাবেন না * প্রতিদান একমাত্র আল্লাহ তা’আলাই দান করেন * নামায… নামায* আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট * গোটা পৃথিবীর বোঝা নিজের ঘাড়ে চাপাবেন না। * জান্নাতের কথা স্মরণ করুন * একটু ভাবুন * মুচকি হাসুন* ব্যথার দান * জ্ঞানের কল্যাণ * এ-ও ভাবুন* মুহাম্মাদ সা. সাহাবায়ে কেরামের সৌভাগ্যের কারণ * অন্যদের দোষারোপ ও তিরস্কারে দুঃখ করবেন না* গরিব হওয়ায় দুঃখ করবেন না * হিংসুকদের সমালোচনায় দুঃখিত হবেন না* রিযিকের অভাবে ঘাবড়াবেন না * অন্যের ব্যক্তিত্বের অনুকরণ করবেন না* কেন আপনি দুঃখ করবেন যখন আপনার ছয়টি জিনিস আছে * কয়েকজন দার্শনিকের উক্তি ও স্বীকারোক্তি * এ প্রশ্নগুলো নিজেকে করুন * অধিকাংশ গুজবই সঠিক হয় না* নম্রতা আপনার অনেক সমস্যার সমাধান করে দিবে* যা চলে গেছে তা আর কখনও ফিরে আসবে না* জীবন তো দুঃখ করার জন্য নয় * পৃথিবীটা এমনই
* অল্পে তুষ্ট থাকুন * যেহেতু আপনি মুসলিম। অতএব হতাশ হবেন না
* সুখের উপকরণ* নির্দিষ্ট সময়ের আগে আপনি মৃত্যুবরণ করবেন না
* সুখী জীবনের দশটি মূলনীতি* শান্তির উপাদান * মাটির বালিশ
* লোভ করে লাভ নেই* আল কুরআন বরকতময় কিতাব* ধৈর্য সম্পর্কে জ্ঞানীদের বাণী* আল্লাহর প্রতি সু-ধারণা নিম্বফল হয় না
* ধৈর্যের ফল মিষ্টি * একটু ভাবুন* সম্পদ নেই বলে দুঃখ করবেন না, কারণ * বই সর্বোত্তম সঙ্গী
#লেখক_পরিচিতিঃ
শেইখ ড. আয়িদ আল ক্বরনীর ১৯৫৯ সালে দক্ষিণ সৌদী আরবের করন জেলার আশ-শুরাইহ নামক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন্। অল্প বয়সেই তিনি পবিত্র কুরআনের হিফজ সম্পন্ন করেন। মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন রিয়াদে। উচ্চতর পড়াশুনা করেন প্রাদেশিক শহর আবহায়। একাডেমিক শিক্ষার পাশাপাশি তাঁর ব্যক্তিগত অধ্যায়নের পরিধি সুবিস্তৃত ও অতুলনীয়।তিনি পর্যন্ত বহু গ্রন্থ রচনা করেছেন। সেগুলোর মধ্যে আত-তাফসীরুল মুয়াসসার, আল-ফিকহুল মুয়াসসার, আশিক, লা তাহযান বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।দাওয়াতের উদ্দেশ্য লেখালেখি, বক্তৃতা-বিবৃতি ও গ্রন্থরচনার পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, টুইটার, গুগলপ্লাস ও ইউটিউব ইত্যাদিতেও সমানভাবে সক্রিয়। তাঁর বক্তৃতার ক্যাসেটের সংখ্যা হাজার ছড়িয়ে গেছে।
#শিক্ষণীয়_বিষয়সমূহ:
১) প্রথম উপলব্ধি হলো কিতাবটি শুধু মুসলিমেরই নয় বরং গোটা মানবজাতির হতাশা দূরীকরণে সাহায্য করবে।
২) ৩৪৭ টি অধ্যায় থেকে ৩৪৭ টি ধারণা পেয়েছি যা আমাকে ইহলৌকিক দুঃচিন্তা থেকে অনেকটাই মুক্তি দিয়েছে।
৩) আল্লাহর অগণিত করুনার কথা বারবার স্মরণ করিয়ে দেয়ার পাশাপাশি কুরআন ও আল্লাহর প্রতি মহব্বত আরো বেড়ে গেছে।
৪) কুরআনের বাণী, রাসূল (সা) শিক্ষা, শিক্ষামূলক রূপক গল্প, কবিতা, বিজ্ঞজনের প্রবাদ সবমিলিয়ে কোথায় যেন সুখ সুখ অনুভূতি আছে বইটিতে।
৫) সবচাইতে ভালো দিক হলো মনোযোগ ধরে রাখতে কোনো পাদটীকা দেননি।তথ্যবহুল না করে শান্তির দিকে এগিয়ে নিতে কোনো বিচ্যুতি ঘটে নি।
৬) আরেকটি সুন্দর দিক হলো দুর্বল বা নির্ভরযোগ্য হাদিসের ক্ষেত্রেও লেখক সচেতন করেছেন।