কল্পিত কারাবাস (পেপারব্যাক)

• বই : কল্পিত কারাবাস
• লেখক : মুহাম্মাদ হোসাইন
• প্রকাশনী : শব্দতরু প্রকাশনী
• প্রকাশকাল : জুলাই, ২০২০ ঈসায়ী
• পৃষ্ঠা সংখ্যা : ৭৭
• প্রচ্ছদ মূল্য : ১০৭ টাকা
• কাভার : পেপারব্যাক
• ধরণ : মোটিভেশনাল
_______________________________

▪️ লেখক নিয়ে দু’ কলম :

মুহাম্মাদ হোসাইন। নবীন লেখক। জন্ম আশির দশকের শেষ দিকে। বসবাস ঢাকায়। প্রকাশনা জগতের সাথে জড়িত অনেক দিন হলো – প্রুফ রিডার হিসেবে। প্রসিদ্ধিও পেয়েছেন এ পেশাতে। ইংরেজিতে গ্রাজুয়েশন করা মুহাম্মাদ হোসাইনের পদচারণা এবার লেখালেখির জগতে। তাঁর জন্য এক পবিত্র এবং সম্মানিত জীবনের দোয়া করছি।

▪️ বইয়ের বিষয়বস্তু :

বিজ্ঞানের জয়যাত্রার এ শতাব্দীতে প্রযুক্তির ব্যবহার আমাদের জীবনে যেমন দিয়েছে হাজারো প্রাপ্তির ছোঁয়া, তেমনি কেঁড়ে নিয়েছে আমাদের আন্তরিক প্রশান্তির আবরণ। ইন্টারনেট ব্যবহারের ফলে একদিকে শান্তির ছোঁয়া পেলেও, অন্যদিকে অশান্তির দাবানলও আঘাত হানছে প্রবলভাবে। কিছু কাজে শৃঙ্খলা পাচ্ছি সত্য, তবে বিশৃঙ্খলার উদাহরণ তারচে’ বড় সত্য। বইটিতে মূলত আলোচিত হয়েছে ইন্টারনেট, সোশাল মিডিয়ার বল্গাহীন ব্যবহারের কুফল এবং তা থেকে বেঁচে থাকার সুফল ও উপায়।

▪️ যেভাবে সাজানো হয়েছে বইটি :

বইটি শুরু হয়েছে মাসিক আল কাউসারের সহ-সম্পাদক মাওলানা মুহাম্মাদ যাকারিয়া আব্দুল্লাহ এর সংক্ষিপ্ত অভিমত উল্লেখের মধ্য দিয়ে। এরপর আছে লেখকের ভূমিকা। সূচীপত্র উল্লেখপূর্বক শুরু হয়েছে বইয়ের মূল আলোচনা।

‘অবাক সরলতা’ শিরোনামে বইয়ের আলোচনা শুরু। ইন্টারনেটের সহজলভ্যতার ক্ষতি এবং আমরা কীভাবে ইন্টারনেটে জড়িয়ে পড়েছি, তা নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা উপস্থাপিত হয়েছে বইয়ের এ অংশে।

এরপর যুক্ত হয়েছে ১২টি অণুগল্প। বাস্তবতার ভিত্তিতে কাল্পনিক এ গল্পগুলো আপনার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিবে, ইন্টারনেট কীভাবে আমাদেরকে নিয়ে যাচ্ছে ধ্বংসের অতল গহ্ববরে।

তারপর লেখক তুলে ধরেছেন ইন্টারনেটের অবাধ ব্যবহারের ক্ষতি। বাচ্চাদের মেধা হ্রাস পাওয়া, কর্মসময় নষ্ট হওয়া, অর্থের অপচয় হওয়া ইত্যাদি মারাত্মক ক্ষতিগুলো অংকিত হয়েছে বইয়ের এ অংশে। সংক্ষিপ্ত হলেও বইয়ের এ অংশের আলোচনাটুকু আমাদের জন্য বেশ জরুরি।

স্মার্টফোন ও ইন্টারনেট থেকে নিজেদের দূরে রাখতে পারলে আমরা নানান দিক দিয়ে লাভবান হবো। আমাদের ভেতর আসবে স্থিরতা, ইলম অর্জনের সময় মিলবে, কাজের সময়ও বাড়বে। এছাড়াও আরো নানান দিক দিয়ে উপকৃত হবো ইনশাআল্লাহ। লেখক বইয়ের এ অংশে স্মার্টফোন ও ইন্টারনেট থেকে দূরে থাকার উপকারিতা নিয়ে সংক্ষেপে বাস্তবিক আলোচনা পেশ করেছেন।

এরপর লেখক দিয়েছেন এক প্রেসক্রিপশন, যার ব্যবহারে আমরা ইন্টারনেটের আসক্তি থেকে নিজেদের মুক্ত করতে পারি। এ এক ভয়ংকর আসক্তি। তাই এ আসক্তি থেকে বাঁচার উপায় জানতে বইয়ের এ অংশটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

▪️ বইটির প্রয়োজনীয়তা :

আমার দৃষ্টিতে অত্যন্ত জরুরি একটি বই ‘কল্পিত কারাবাস’। উন্নত প্রযুক্তির এ দুনিয়ায় স্মার্টফোন ও ইন্টারনেটের আগ্রাসী থাবায় ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে আমাদের জীবন-যৌবন। এ থেকে নিজেদের দূরে রাখতে প্রতিজ্ঞ হওয়ার পরেও কেন যেন বের হতে পারি না এ কারাগার থেকে – এ এক কল্পিত কারাবাস। তাই এ কল্পিত কারাবাসের ফাঁদ উন্মোচন করার জন্য , এর ক্ষতিগুলো চিহ্নিত করার জন্য এ বইটি বিশেষভাবে জরুরি। এছাড়াও এ কারাবাস থেকে মুক্ত হওয়ার উপায় জানতে এবং মুক্ত হতে পারার সুফল জানতেও বইটি আপনার প্রয়োজন হবে।

▪️ কাদের জন্য এ বই :

বলতে গেলে, কল্পিত এ কারাগারের বাসিন্দা আমরা সবাই-ই। তাই এ বইটি সবার জন্য – হোক আলেম অথবা আম। বিশেষভাবে তরুণদের জন্য বইটি অবশ্যপাঠ্য। অফিস থেকে ফেরার পথে বইটি সংগ্রহ করে নেটাসক্ত ছেলের হাতে তুলে দেওয়া একজন সচেতন বাবার দায়িত্ব। আলেম সমাজের জন্যেও বইটি কার্যকরী – ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় অনেকেই যে পা পিছলে যাচ্ছেন প্রযুক্তির এ পিচ্ছিল দুনিয়ায়।

▪️ ভালোলাগা-মন্দলাগা :

ভালো একটি বই। ভালোর লাগার মতোই একটি বই। পৃষ্ঠা-মান ভালো, বাঁধাই ভালো, ফ্ল্যাপযুক্ত কাভারটাও বেশ ভালো। বইয়ের নামে রয়েছে বিষয়বস্তুর প্রতিফলন, প্রচ্ছদেও রয়েছে তাই। সুতরাং বইয়ের নাম ও প্রচ্ছদ নিঃসন্দেহে যথার্থ।

তবে বইয়ের আলোচনা আরো বেশি রেফারেন্সভিত্তিক হলে ভালো হতো। বিশেষকরে নেটাসক্তির ক্ষতির দিকগুলো বর্ণনা করার ক্ষেত্রে সাথে যদি বিভিন্ন রিসার্চ পেপার থেকে কোট করা হতো বা সেগুলোর রেফারেন্স উল্লেখ করা হতো, তাহলে বইটির মান আরো অনেক বেড়ে যেত।

বইটির সর্বোচ্চ প্রচার কামনা করছি। আল্লাহ কবুল করুন।