জীবন পরিক্রমায় কখনো আমাদের বেছে নিতে হয় শিক্ষকতাকে। বুঝে নিতে হয়, আগামী দিনের মানব কলিকে মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার দায়িত্বকে। একেবারে সুশোভিত ও প্রাজ্ঞ করে তাদের ‘আদর্শ মুসলিম’ হিসেবে তৈরি করার কর্তব্যও অর্পিত হয়ে যায় তখন। যেন তারা জীবনের পিচ্ছিল পথে ভুলে না যায় কিংবা হারিয়ে না ফেলে তাদের সমৃদ্ধ আত্মপরিচয়। তাদের অর্পিত কর্তব্য ও সুমহান দায়িত্ব। এজন্য জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে একজন শিক্ষককে হতে হয় আদর্শ দরদি পিতা ও অভিজ্ঞ চিকিৎসকের স্থলে।
কীভাবে একজন আদর্শ শিক্ষক হবেন বইটিতে খুবই হৃদয়গ্রাহী ও উন্নত আঙ্গিকে একথাগুলোই সাবলীল করে বলা হয়েছে। যেন একজন শিক্ষক কর্মস্থলে প্রবেশের পূর্বে নিজেকে গড়ে নিতে পারেন বিশুদ্ধরূপে। ছাত্রদের সামনে নিজেকে প্রকাশ করতে পারেন ভিন্ন আঙ্গিকে। বইয়ের আলোচিত কথাগুলো শুধু ধর্মীয় শিক্ষকদের জন্য নয়; বরং হয়ে উঠেছে সকল অঙ্গনে সকল শিক্ষকের জন্য সমানভাবে।
Ruponti Shahrin –
কীভাবে হবেন একজন আদর্শ শিক্ষক
লেখক : কারী সিদ্দিক আহমাদ
প্রকাশনী : মাকতাবাতুল হাসান
শিক্ষকতা যাদের কাছে শুধু পেশাই নয়,
ঈমানী দায়িত্ব এবং ইবাদাতও বটে।
শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড। কোনো জাতিকে পরাস্ত করতে তাদের মধ্যে যেমন অশ্লীলতা ছড়িয়ে দিলেই যথেষ্ট। তেমনি কোনো জাতিতে ক্ষমতায় আসার পর সে জাতিকে গন্ডমূর্খ করে রাখাও এক আজব চক্রান্ত। ফিরাউনের উপদেষ্টা হামানও এমন এক বুদ্ধি এঁটেছিল। সে ঘটনা আরেকদিন বলবো।
আমরা শুধু আদর্শ ছাত্রছাত্রী গঠনেই উঠে পড়ে লেগেছি। কিন্তু কয়জন আমরা আদর্শ শিক্ষক হতে চেয়েছি? কয়জন? আমাদের মধ্যে নৈতিক গুণাবলি থাকলেও শিক্ষকতা পেশার দায়িত্ব গ্রহণের জন্যও কিছু নিয়ম নীতি রয়েছে।
আপনি যদি সত্যিই বিবেকবান, নৈকট্যপূর্ণ, সহনশীল ও আদর্শ শিক্ষক হতে আগ্রহী হন তো বলি, বইটি পড়ে আপনি বিস্তারিত জানতে পারবেন। অনেক আলেমের ব্যক্তিগত ও বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে পরামর্শ ও নিয়মাবলি আলোচনা করা হয়েছে।
১)ভালোবাসাপূর্ণ হতে হবে, স্নেহ-মমতা বহাল রাখতে হবে ও সহনশীল হতে হবে।
২) পাঠদানে নিয়ত বিশুদ্ধ হতে হবে।
৩) কারো অনুগ্রহের দাস হওয়া চলবে না।
৪) লোভ-লালসা থেকে মুক্ত থাকতে হবে।
৫) এক গ্লাস পানিও না। তবে নিজের কাজ নিজেই করে নিতে হবে।
৬) ছোটদের মন রক্ষার্থে যদি কিছু হাদিয়া নিয়ে থাকো, তাহলে উপযুক্ত সময়ে/অন্যভাবে হাদিয়া দিয়ে দেবে। বরং পরিমাণে বেশি দেবে।
৭) শিক্ষকতা সম্পদ উপার্জনের লক্ষ্য নয়।
৮) কল্যাণ কামনা ও আর্থিক কিংবা অন্য কোনভাবে সাহায্য করতে হবে।
৯) নিজের ভুল স্বীকার করতে হবে, নিয়মমাফিক পড়াতে হবে।
১০) পড়ানোতে কোনো ফাঁকি দেয়া চলবে না।
১১) পড়ার আগে চাই চরিত্রের সংশোধন (ছাত্রের পূর্বে নিজের)।
১২) নম্রতা ও ভদ্রতা অবলম্বন। পাঠদানের বাইরেও সময় দিতে হবে।
১৩) কখনই গায়ে হাত দিয়ে মারা যাবে না। চেহারায় তো নয়ই। এটা অন্যায়।
১৪) শাসন করলেও আদর করে তা পুষিয়ে নিতে হবে।
১৫) তুমি বাঁচাল কিংবা গালি দেয়া যাবে না। সকলের সামনে অপমান করা যাবে না। আলাদা ডেকে আদর করে বোঝাতে হবে।
১৬) চেহারায় রাগ প্রকাশ পেলেও অন্তর থেকে দুয়া করতে হবে। মনে কিছু রাগ রাখা যাবে না।
১৭) নিজের পোশাকের মাঝেও লজ্জাশীলতা থাকা বাঞ্ছনীয়।
১৮) তাদের কাছ থেকেও ভালো কিছু শেখার চেষ্টা করবেন। প্রশংসা করবেন।
১৯) ছাত্রদের সামনে কারো নিন্দা করা যাবে না। অন্য শিক্ষক বা কর্তৃপক্ষের বিপরীতে আলোচনা করা উচিত নয়।
২০) অন্য শিক্ষকদের সম্মান করার শেখাতে হবে।
২১) তাদের কাছ থেকে খেদমত নেয়া যাবে না।
২২) ভুল করলে অভিভাবককে জানাবেন। মা-বাবা হাজার বললেও গায়ে মারবেন না।
২৩) মেধা অনুসারে বুঝিয়ে পড়ান। মুখস্থ করতে সহজ বিষয় দাগিয়ে দিন। অপ্রাসঙ্গিক বিষয় এড়িয়ে যাবেন।
২৪) তাদের সর্বদা খুশি রাখুন ও তাদেরকেই পড়া বোঝাতে বলুন।
২৫) নিজের থেকে উদাহরণ পেশ করুন। নিজেই তাদের চোখে উদাহরণ হয়ে যান।
২৬) ভুল হয়ে গেলে তাদের কাছে ক্ষমা চান।
২৭) পড়া গিলিয়ে দেয়া আপনার দায়িত্ব নয়। আর নির্দিষ্ট ছাত্রছাত্রীর পেছনে লেগে তাঁকে ঠিক করাও উচিত নয়।
২৮) একজনকে দিয়ে আরেকজনকে শাস্তি দেবেন না। এতে তাদের মধ্যে শত্রুতা তৈরি হয়।
২৯) মাত্রাতিরিক্ত পড়াবেন না। ছাত্র ও শিক্ষক দুজনেরই বিশ্রামের প্রয়োজন আছে।
৩০) যে আদেশ মানবে না, তাঁকে আদেশ করবেন না।
এছাড়াও ১০০টির উপরে বিষয় আছে। এগুলো আমার কথা নয়। সব বিশিষ্ট আলেমদের কথা। যাদের ছায়ায় বহু আলেম তৈরি হয়েছেন। জ্ঞানের আলো বিশ্বের কোণায় কোণায় ছড়িয়েছেন।
শিক্ষক কেউ নিজেই হতে পারেন না। শিক্ষাজীবন শেষে যদি আপনার শিক্ষক আপনাকে এই গুরু দায়িত্ব পালন করার উপযুক্ত মনে করেন, তবেই এই পেশায় আসতে পারেন। এটাই হক।
বইটি পড়ার পর একটা আলাদা শান্তি শান্তি ভাব কাজ করছে। কারণ শিক্ষাদান করাটা একটা ইবাদাত। গুরুত্বের সাথে পালন করলে প্রতিটি মুহুর্তই সওয়াব হাসিল করা সম্ভব। তাদেরকে শুধু সন্তানতুল্য দেখলেই হবে না, আপনার নিজেকেও শালীনতা ও লজ্জাশীলতা বজায় রেখেই কাজ করতে হবে। তাদের প্রত্যেক কাজ আপনার জন্য আমানত। সেই সকল কাজের ক্ষেত্রে আমানতদারী থেকে চিন্তা করুন।
সত্যপ্রিয় করে গড়ে তুলুন। আমলের ক্ষেত্রে আপনি নিজে যদি সৎ হন, তাহলে তারা দেখেই অর্ধেক শিখে যাবে। আপনাকেও ভালোবাসবে।