১.
ইসলামিক জীবনে ঈমানের পরেই সালাতের স্থান। ঈমান আনয়নের সাথে সাথে একজন ব্যক্তির ওপর যে জিনিশটা ‘ফরজ’ তথা ‘অবশ্য কর্তব্য’ হয়ে যায়, তা হলো সালাত। ইসলামের রুকনগুলোর মধ্যে সালাতের স্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সালাত হচ্ছে একজন মুমিনের জীবনে সফলতার চাবিকাঠি। সালাতের মাধ্যমেই বান্দা আল্লাহর সামনে হাজির হয়। নতজানু হয়। নুইয়ে পড়ে। সিজদাবনত হয়। এই সালাতের মাধ্যমেই বান্দা আল্লাহর কাছে সোপর্দ করে তার চাওয়া-পাওয়ার খতিয়ান, সুখ-দুঃখের তালিকা এবং ঈমান-আমলের হিসাব। কিন্তু, আমরা অধিকাংশই সালাতের আসল রহস্য এবং আসল মাহাত্ম্য থেকে বঞ্চিত। এর কারণ, শয়তানের নানামুখী প্রবঞ্চনার ফাঁদে পড়ে আমরা আমাদের সালাতে মনোযোগ ধরে রাখতে পারি না। সালাতে দাঁড়ালেই যেন আমাদের মন বিশ্ব-ভ্রমণে বের হয়ে পড়ে। দুনিয়াবি নানান রকম জিনিশ, সম্পর্ক আর কাজের কথা মনে করিয়ে দিয়ে শয়তান আমাদের আল্লাহর পরম অনুগ্রহ লাভ থেকে দূরে রাখে। ফলত, আমরা সালাতে দাঁড়িয়ে ওঠা-বসা করে শারীরিক ব্যায়ামটুকু সেরে উঠি বটে, কিন্তু সেটা আমাদের আমলনামায় কোনো সাওয়াব বৃদ্ধি করে না; বরং গুনাহের পাল্লাকে ভারী করে।
২.
খুশূ-খুযূ বইটি ইমাম ইবনুল কায়্যিম রাহিমাহুল্লাহর আসরারুস সালাত গ্রন্থের অনুবাদ। ইংরেজিতে Inner Dimension Of Prayer। বাংলায় অনুবাদ করেছেন মাসউদুর রহমান। খুব সংক্ষিপ্ত একটি গ্রন্থ। সংক্ষিপ্ত কলেবরের এই বইটি অত্যন্ত চমৎকার। তথ্যের বিশাল সন্নিবেশ হয়তোবা নেই; কিন্তু উপমার আদলে মানুষের মনস্তাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যগুলোকে ইবনুল কায়্যিম রাহিমাহুল্লাহ এমনভাবে বিশ্লেষণ করেছেন, অবাক না হয়ে উপায় নেই।
এই বইটি সালাত শিক্ষার বই নয়। এটি সালাতে মনোযোগ ধরে রাখার উপায় নিয়ে লিখিত বই। আমরা যারা সালাতে অমনোযোগী, যাদের মন সালাতে দাঁড়ালেই বিশ্বভ্রমণে বেরিয়ে পড়ে, তাদের সেই অবাধ্য মনকে কীভাবে শুদ্ধ করা যায়, কীভাবে আমরা আমাদের সালাতগুলোকে করে তুলতে পারি মাধুর্যমণ্ডিত? কীভাবে সালাতের মাধ্যমে আমরা লাভ করতে পারি আল্লাহর নৈকট্য? এই গ্রন্থে সেই উপায়গুলো সুন্দর সুন্দর উপমায় সাজিয়েছেন ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম রাহিমাহুল্লাহ।
আব্দুর রহমান –
ইসলামের একটি অন্যতম ইবাদত হলো নামায। ঈমানের পরই নামাযের স্থান। কিন্তু অন্যতম এই ইবাদত করতে গেলেই মনের মাঝে এমন সব কল্পনা মাথায় আসে যা নামায পরবর্তী অন্য সময় আসে না। কিন্তু এভাবে তো নামাযের পরিপূর্ণ হক আদায় হয় না। নামাযে পরিপূর্ণতা পেতে হলে একাগ্রচিত্তে ও আল্লাহর ভয়ে নামাজ আদায় করা উচিত। কেননা আল কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন- “অবশ্যই মু‘মিনরা সফল হয়েছে যারা নিজেদের সলাতে বিনয়ী”
[ সূরা মু‘মিনূন,আয়াত : ০১-০২]
তাইতো সালাতে একাগ্রতা নিয়ে এই সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে অন্যতম একটি বই হলো ইমাম ইবনুল কাইয়িম রচিত ” আসরারুস সলাহ” । বইটি অনুবাদ করেছেন অভিজ্ঞ অনুবাদক মাসউদুর রহমান। বাংলায় নাম দেয়া হয়েছে “খুশু-খুজু”।
,
➤ সার-সংক্ষেপঃ-
৮৪ পৃষ্ঠা ব্যাপী বিস্তৃত বইয়ের শুরুতে বইয়ের লেখক ইমাম ইবনুল কাইয়িম রহিমাহুল্লাহর জন্ম, পরিচয়, শিক্ষাজীবন সহ বেশকিছু তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
এরপর লেখক বইটি চারটি অধ্যায়ে বিভক্ত করে আলোচনা করেছেন। যথা-
*প্রথম অধ্যায়ঃ-
এ অধ্যায়ে আলোচনা করা হয়েছে আল্লাহু আকবার বলা থেকে সালাম ফিরানো,প্রতিটা জিনিসই যে একেকটা ইবাদাত সে সম্পর্কে। আল্লাহু আকবার পড়া, সানা পড়া, আউযুবিল্লাহ পড়া, সুরা ফাতিহা পাঠ, রুকু, সিজদা, তাশাহহুদ পাঠ সহ নামাজের প্রত্যেকটি ইবাদত কে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। সেই সাথে তুলে আনা হয়েছে এগুলোর অন্তর্নিহিত তাৎপর্য।
*দ্বিতীয় অধ্যায়ঃ-
এ অধ্যায়ে সালাতে মনোযোগের তিনটি ধাপ, সালাতের প্রতিটি কর্মে মনোযোগ বাড়ানোর উপায় ও খুশু-খুজুর উপকারিতা ইত্যাদি সম্পর্কে।
*তৃতীয় অধ্যায়ঃ-
সালাত ও গান বাজনার মধ্যে পার্থক্য।
*চতুর্থ অধ্যায়:-
এই অধ্যায়ে সাহাবিগণ ও পরবর্তীদের রুচিবোধ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
*পঞ্চম অধ্যায়:-
এ অধ্যায়ে গান-বাজনার সূক্ষ্ম বিষয় ও ক্ষতিকর দিকগুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। পাশাপাশি অন্তরের প্রকারভেদ নিয়েও আলোচনা স্থান পেয়েছে।
.
➤ বইটি কেন পড়বেনঃ-
বইটি যদি আপনি পড়েন তাহলে কিভাবে নামাযকে আরো মাধুর্যমন্ডিত ও তৃপ্তিদায়ক করে তোলা যায় তা জানতে পারবেন। নামাজের উপকারীতা ও মজা এবং কোন কোন প্রতিবন্ধতার কারণে আপনি নামাজ আদায় করতে বা মনোযোগী হতে পারছেন না তা বুঝতে পারবেন, ইনশাআল্লাহ।
.
➤ ব্যক্তিগত অনূভুতিঃ-
“খুশু-খুজু” বইটি পড়ার পর এটি সবসময় সংগ্রহে রাখার মত একটি বই বলে মনে হয়েছে। নামাজে মনোযোগ ধরে রাখতে বইয়ের কথাগুলো বেশ সহায়ক। সবশেষে এত সুন্দর একটি বই পাঠকের হাতে পৌঁছে দেয়ার জন্য প্রকাশনী, লেখক, অনুবাদক সহ সকলের জন্য রইল অসংখ্য দুয়া ও শুভকামনা।
Muhammad Tamimul Ihsan –
||বুক রিভিউ||
সালাত। মানুষকে যতসব অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে।যা মুমিনের জন্য গুনাহের ক্ষেত্রে ঢালস্বরুপ।কিন্তু আমাদের অনেকেরই সালাতে দাঁড়ালে উথালপাতাল হয়ে ওঠে মন।নানা চিন্তায় বিভিন্ন ভাবনায় আবদ্ধ হয় মনোযোগের সমস্ত আয়োজন।আমরা সালাতে দাঁড়ালেই ভীষণ ব্যস্ত হয়ে পড়ি।সালাতে বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে পারি না।সালাফদের জীবনকাহিনী হাজারটা পড়েও হতে পারি না তাদের মতো।হয়ে যায় তাদের মতো।তাই বৃক্ষের সন্জীবনী শক্তি এবং জমির উর্বরতার মতো প্রয়োজন পর্যাপ্ত প্রাণশক্তি।আর প্রাণশক্তি উজ্জীবন এবং উর্বরা করার নিবেদন নিয়েই রচিত বই “খুশু-খুযূ”
মূলত বইটি ইমাম ইবনুল কায়্যিম (রাহি.)রচিত এক অনবদ্য গ্রন্থ “আসরারুস সলাহ” এর অনুবাদ।অনুবাদকের মতে,”লেখক তার মহামূল্যবান এই বইয়ে সালাতের সেই নিগূঢ় রহস্য, সুগভীর মর্ম, লক্ষ্য -উদ্দেশ্য সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।বাস্তবেও তাই,লেখক তার মহামূল্যবান এই গ্রন্থে তুলে এনেছেন সেইসব মণিমুক্তা যা গ্রহণ করলে নিশ্চিতভাবে না হলেও খুশু-খুযূর সহিত সালাত আদায় করা সম্ভব হয়ে থাকবে।
বইটিতে এছাড়াও আলোচনা করা হয়েছে, আমাদের সালাত কীভাবে প্রাণবন্ত করে আল্লাহর সামনে উপস্থাপন করা যায়…???সেই পদ্ধতিই বারবার বিভিন্নভাবে, হরেক রকমের বর্ণনার মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে।তাই বইটি অন্যান্য উপন্যাসের মতো “ধরলাম,পড়লাম আর রেখে দিলাম”টাইপের বই না।বরং নিয়মিত চর্চা ও অনুশীলন যোগ্য একটা বই।
আর লেখক সম্পর্কে বলতে গেলে,যিনি লিখেছেন ইমাম ইবনুল কায়্যিম (রাহি.) তিনি উম্মাহর একজন নক্ষত্র পুরুষ ছিলেন।ইমাম ইবনে তাইমিয়্যা(রাহি.) ছিলেন তার অনেক কাছের উস্তায।তাইমিয়্যা রাহি. ও তাকে পছন্দ করে থাকতেন।এছাড়াও অনেক বড় বড় শাইখ ওনার ইলমের প্রজ্ঞা সম্পর্কে আলোচনা করেছেন।হাফিজ ইবনু কাসির,হাফিয ইবনু রজব,ইমাম শাওকী ও ইমাম সুয়ূতীর (রাহি.)-র মতো প্রখ্যাত শাইখরা ওনার ইলম,তাসাউফ বা আত্মশুদ্ধি ও ইবাদাতের ব্যাপারে অনেক সুন্দর সুন্দর মন্তব্য করেছেন।
ব্যক্তিগতভাবে যদি বলে থাকি,বলতেই হবে যে,বইটি সালাতে নিজেকে মনোযোগী করে তোলার ব্যাপারে ভীষণ কাজে দিয়েছে।ইমাম ইবনুল কায়্যিম(রাহি.)-র বইগুলো ইসলামী সাহিত্যের এক একটি সম্পদ। এই বইটিও সেরুপ পরিচয়ই বহন করে থাকে।দু-একটি ফিকহি মতপার্থক্য এই বইয়ের লেখাগুলোর সাথে আমার সাথে থাকতে পারে। কিন্তু সামগ্রিক দৃষ্টিতে বইটি অসাধারণ।
দিনশেষে শুধু এতটুকুনই বলবো,তরুণ,বুড়ো সবার জরুরী এই বইটি পড়া।বিশেষ করে যারা খুশু-খুযূর সহিত সালাত আদায় করতে অক্ষম।বইটি পড়লে বুঝা যাবে, সালাত কি জিনিস আর কতটা অমূল্য সম্পদ।
ব্যক্তিগত রেটিং:৪.৫/৫
মাআসসালাম……..!!
■ এক নজরে “খুশূ-খুযূ” বইটি :
বই : খুশূ-খুযূ
লেখক : ইবনুল কাইয়্যুম (রাহি.)
প্রকাশক : সমকালীম প্রকাশন
বইয়ের বিষয়বস্তু : সালাত সংক্রান্ত
Meher Afroz –
📘বুক রিভিউ📗
বইঃ খুশূ- খুযূ
লেখকঃ ইমাম ইবনুল কায়্যিম রাহিমাহুল্লাহ
আমাদের সালাতগুলো কেমন যেন প্রাণহীন ব্যায়ামের মত উঠ-বসে পরিণত হয়েছে। সালাতে দাঁড়ালেই দুনিয়াবী সকল ভাবনা মনে এসে নাড়া দেয়।অথচ, সালাতে কী বলছি, কেন বলছি, তাশাহুদ- দরুদ শরীফে কী পড়ছি, সেটাই আমরা জানি না।আমরা শুধু জানি নামাজ পড়তে হয় তাই মন্ত্রের মত সূরা/ দু’আ গুলো
পড়ে যাচ্ছি। অথচ, এই সেই সালাত যা হবে জান্নাতের চাবিকাঠি। অবহেলিত এই ফরজ ইবাদতে উম্মাহর মনঃদৈহিক প্রাণবন্ততা ফিরিয়ে আনতে সমকালীন প্রকাশনের ক্ষুদ্র প্রচেষ্টার ফসল এই ‘খুশূ- খুযূ’ বইটি।
কোন কোন কারণে সালাতে আমরা মনোযোগ ঠিক রাখতে পারিনা এবং কিভাবে / কোন উপায় আমরা বিনয়াবনত হয়ে সালাত কায়েম করতে পারবো সে-ই সব বিষয়েই বইটিতে আলোচনা করা হয়েছে।
বই থেকে কিছু অংশঃ—
‘ মিউজিক এবং গানের প্রতি আকর্ষণ যত তীব্র হয়, সালাত [এবং কুরআনের] প্রতি ভালোবাসা ততই দুর্বল হয়ে পড়ে।’
পৃষ্ঠা নং—২০
‘সালাত আল্লাহর পক্ষ থেকে মু’মিন জন্য উপহার।’
পৃষ্ঠা নং—২১.
‘সালাতের রহস্য ও মূল হলো আল্লাহর দিকে মনোযোগী হওয়া।’
পৃষ্ঠা নং—২৭.
‘সালাতের সর্বোত্তম রুকন হলো সিজদা।’
পৃষ্ঠা নং—৫২.
পাঠ্যানুভূতিঃ—
সমকালীন প্রকাশন থেকে প্রথম কেনা বইটি ছিলো এই ‘খুশূ-খুযূ’। আলহামদুলিল্লাহ। বইটি তখন যেমন গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছিলো, বর্তমানে যেন আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ বেড়েছে।
অনুবাদকের কথাটা যৌক্তিক বলে আজ মনে হচ্ছে।তিনি বলেছিলেন যে, ‘বইটা ধরলাম, পড়লাম, রেখে দিলাম’ এমন টাইপের বই নয়’।’ আসলেই বইটা বার বার পড়া উচিৎ। যখনই সালাতের খুশূ-খুযু নষ্ট হয়ে যায় তখনই বইটা পড়ে সালাতের লক্ষ্য জেনে নিজেকে মোটিভেট করা উচিৎ।
আমার অনেক টাকা থাকলে আমি এক কপি করে অমনোযোগী নামাজীদের গিফট করতাম।ইন শা আল্লাহ গিফট করার ইচ্ছেও আছে।
রিভিউ দাতাঃ Meher Afroz
Meherunnesha Khatun –
আল্লাহ আমাদের সৃষ্টি করেছেন তাঁর ইবাদতের জন্য, আনুগত্যের জন্য। সালাতের মাধ্যমেই আমরা আল্লাহর আরও প্রিয় হতে পারি, মুক্বররবিনদের অন্তর্ভুক্ত হতে পারি। আর সালাতের চাবি হলো ওজু কিন্তু সালাতের প্রাণ ‘খুশু’ (বিনয়)। ‘খুশু’র মধ্য দিয়েই সালাতের সফলতা। একজন মুমিন যখন ‘খুশু-খুযু’ -এর সাথে সালাত আদায় করেন তখন সালাত তাঁর জন্য হয়ে যায় হৃদয় প্রশান্তকারী। অপরদিকে খুশুহীন সালাত তো নিষ্প্রাণ দেহের সমতুল্য।
অথচ বর্তমান মুসলিম সমাজে কে কোন নিয়মে সালাত আদায় করে, কোন মাযহাব অনুসরণ করে, মহিলারা পুরুষদের নিয়মে নাকি মহিলাদের আলাদা নিয়মে সালাত আদায় করবে ইত্যাদি বিষয় নিয়ে হাজারও মাসায়েল, বাকবিতণ্ডা পরিলক্ষিত হলেও ‘সালাত খুশুর সহিত আদায় করা’ নিয়ে তেমন মাথাব্যথা নেই বর্তমান অধিকাংশ মুসলিমদের। আবার যেসব বান্দা চেষ্টাও করেন যে নামাজ বিনয় ও মনোযোগের সাথে আদায় করবেন, তাঁদের মনও তখন শয়তানের ওয়াসওয়াসায় দুনিয়ার বিভিন্ন কাজে বিক্ষিপ্ত হয় অনবরত। ফলে তাঁরা সালাতে খুশু ধরে রাখতে পারেন না। তাই এইসমস্ত বিষয় মাথায় রেখে লেখক ইবনুল কাইয়্যিম জাওযিয়্যাহ (রহঃ) সালাতে খুশুর গুরুত্ব, কীভাবে সালাতে বিনয় ও মনোযোগ ধরে রাখা যায় ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা করে একটি বই লেখেন। বাঙালি পাঠকের সুবিধার্থে আলোচ্য বইটি অনুবাদ করেছে ‘সমকালীন প্রকাশন’। বইটির নাম ‘খুশু-খুযু’।
◾ বইটির বিষয়বস্তু :-
————————
বইটির আলোচ্য বিষয় ৫টি অধ্যায়ে সন্নিবেশিত হয়েছে। আলোচ্য বইটিতে মুমিন বান্দা যাতে সালাত কে হৃদয়ঙ্গম করতে পারে তার সুস্পষ্ট ধারণা দেওয়া হয়েছে। সালাতের নিগুঢ় রহস্য, সুগভীর মর্ম, লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ইত্যাদি পাঁচটি পৃথক অধ্যায়ে সন্নিবেশিত হয়েছে।
▪প্রথম অধ্যায়ে লেখক হারাম কাজগুলো আমাদের ক্বলবকে কীভাবে রুক্ষ-শুষ্ক-মৃতপ্রায় করে দেয়, কীভাবে আমরা রবের কাছ থেকে সরে যাই বহুদূরে ইত্যাদি বিষয় নিয়ে লেখক হৃদয়ছোঁয়া বর্ননা দিয়েছেন।
▪ বইটির দ্বিতীয় অধ্যায়ে আছে সালাতে মনোযোগের ধারনা, সালাতে খুশূ-খু্যূর উপকারিতা, সালাতের প্রতিটা কর্মে মনোযোগ বাড়ানোর উপায়, সালাতের বিভিন্ন উপকারিতা, সালাতে মনোযোগী না হওয়ার শাস্তি ইত্যাদি।
▪ তৃতীয় অধ্যায়ে হালাল ও হারামের বিপরীতমুখীতা আলোচিত হয়েছে। অর্থাৎ রবের সামনে দন্ডায়মান হওয়ার স্বাদ আর গানের মঞ্চে দাঁড়ানোর স্বাদ কখনোই এক হতে পারেনা তা সুন্দর ভাবে বর্ণিত আছে এই অধ্যায়ে।
▪ চতুর্থ অধ্যায়ে “শয়তানের আনুগত্য ও রহমানের আনুগত্যের সুখ যে সম্পূর্ণ বিপরীত একটা বিষয়”- তা নিয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। আল্লাহ তা’আলা সুস্থ রুচিবোধ থেকে অসুস্থ রুচিবোধকে আলাদা করেছেন। এই অধ্যায়ে সাহাবী-তাবেঈদের শুদ্ধতম রুচিবোধের কথা রয়েছে।
▪ বইটির পঞ্চম তথা শেষ অধ্যায়ে বলা হয়েছে শয়তানের প্রতি আনুগত্যই আমাদেরকে রবের কাছ থেকে দূরে নিয়ে যায়। আর গান হচ্ছে অন্তরের মদ, যা অন্তরে শয়তানের কুপ্রভাব ছড়িয়ে দেয়। অর্থাৎ গান-বাজনার ক্ষতিকর দিকগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে এই অধ্যায়ে।
◾বইটির বিশেষত্ব :-
————————
◑ ভীষণ সহজ, সরল, সাবলীল অনুবাদ। সব ধরনের পাঠকই বুঝতে সক্ষম হবেন।
◑ আলোচ্য বইয়ের কিছু কিছু পৃষ্ঠায় মূল কিতাবের (আরবী, উর্দুর) সেই শব্দটাই ব্যবহার করা আছে। কিন্তু পাঠকের সুবিধার্থে অনুবাদক সেই শব্দের পাশাপাশি সেটার বাংলা অর্থ নোট কিংবা প্রথম বন্ধনীর মধ্যে লিখে দিয়েছেন। এতে পাঠক নতুন কিছু পরিভাষা সম্পর্কেও অবগত হবেন।
◑ বইটি কুরআন, হাদীসের রেফারেন্স এবং সালাফদের উক্তিতে সুন্দর, পরিপাটি শব্দভাণ্ডারে সজ্জিত করা হয়েছে।
◑ ‘সালাতে খুশু-খুযুর গুরুত্ব যে কতটা’ – তা এই বইটি পড়লে পাঠক সহজেই অনুধাবন করতে পারবেন।
◑ আলোচ্য বইটিতে সালাতের প্রতিটি ধাপ তাক্ববীর (আল্লাহু আকবার) থেকে শুরু করে সালাম ফেরানো প্রতিটার বাংলা অর্থ জানার পাশাপাশি একজন পাঠক খুব সহজেই অনুধাবন করবেন যে সালাতের প্রতিটি ধাপই একেকটা ইবাদাত, যা পাঠকের সালাতে মনোযোগী হওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি সহায়ক হবে।
◑ হামদ এর মর্ম, রসূল (সঃ) এর উপর দরূদ পড়ার রহস্য, আজানের সুন্নতসমূহ, ওজু, রুকু, সিজদাহ ইত্যাদিতে পড়ার জন্য বিভিন্ন ফজিলতপূর্ন দুয়াও বর্ণিত আছে আলোচ্য বইটিতে।
◑ বক্ষ্যমাণ বইটিতে সালাতের বিভিন্ন ধরনের পুরষ্কার বাতলে দেওয়ার পাশাপাশি কীভাবে মহান রবের আরও নিকটবর্তী হওয়া যায় সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা আছে।
◑ গান বাজনার ফিতনা, অকার্যকারিতা ও ক্ষতিকর দিক তুলে ধরে হৃদয় প্রশান্তিকারক হিসাবে সালাতকে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে খুব দক্ষতার সাথে।
◾ বইটি কাদের জন্য এবং কেন :-
————————————–
◑ যেসমস্ত মানুষ মুসলিম পরিবারে জন্ম নিয়েও নামাজ সম্পর্কে উদাসীন তাঁদের এই বইটি পড়া উচিত। তাহলে তাঁরা নামাজ না পড়ার শাস্তির পাশাপাশি নামাজের অধিক ফজিলত সম্পর্কেও অবগত হবেন।
◑ সালাতে বিশ্ব জাহানের প্রতিপালক আল্লাহ’র সামনে দাঁড়িয়ে যেসব বান্দার মন অবাধ্য হয়ে গায়রুল্লাহর চিন্তায় মগ্ন থাকে, তাঁদের জন্য এই বইটি সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
◑ যাঁরা ভীষণ পরিমানে মিউজিক অ্যাডিক্টেড, গান-বাজনাতে বুঁদ হয়ে থাকেন, চাইলেও এই হারাম থেকে বেঁচে থাকতে পারছেন না তাদের জন্য এই বইটি ভীষণ উপকারি।
◑ সর্বোপরি প্রতিটি মুসলিমের এই বইটা অবশ্যই অবশ্যই একবার পড়া উচিত।
◾ পাঠ্যানুভূতি :-
———————
বইটির নাম পড়ে প্রথম ভেবেছিলাম, “বইয়ের নাম কিনা ‘খুশু-খুযু’….!” এ আবার কেমন নাম! কিন্তু পড়ার পর জেনেছিলাম ‘খুশু-খুযু’ অর্থ বিনয়াবনত হওয়া। বইটি পড়ে খুব ভালো ভাবেই অনুধাবন করতে পেরেছিলাম – হৃদয়কে পরিপূর্ণ খুশু-খুযু সহকারে মহান রবের সামনে দাঁড়িয়ে রুকু ও সিজদাবনত হওয়াকেই প্রকৃত সালাত বলে। বইটির সবচেয়ে বড়ো উপকারিতা হলো ইমানের নিরাপত্তা তথা জাহান্নাম থেকে মুক্তির উপায় জানার পাশাপাশি একজন পাঠক আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহ তথা জান্নাত লাভের পথ সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা পাবেন। তাই অনেক ধন্যবাদ সমকালীন প্রকাশনকে এমন একটি বই মলাটবদ্ধ করার জন্য। এক বৈঠকেই বইটি শেষ হয়ে গেছে। বইটি পড়ার পর সালাতে আরও মনোযোগ এবং একাগ্রতা ফিরে পেয়েছিলাম। জীবনে প্রথম সিজদাহ দেওয়ার মতো সেই অনাবিল প্রশান্তিমাখা অনুভূতি আবারও ফিরে পেয়েছিলাম বহুবছর পর। আলহামদুলিল্লাহ। বইটি মাস্টারপিস, সময়োপযোগী, অবশ্যপাঠ্য, অসাধারণ একটি বই। প্রত্যেকের সংগ্রহে অবশ্যই থাকা উচিত।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেছেন, “ওই সকল মুমিনরা সফল, যারা তাদের সালাতে বিনয়াবনত।”
(সূরাঃ- মুমিনুনঃ ১-২)
◾ বই পরিচিতি :-
———————
বই :- খুশু-খুযু
লেখক :- ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম জাওযিয়্যাহ (রহঃ)
অনুবাদক :- মাসউদুর রহমান
প্রকাশক :- সমকালীন প্রকাশন
প্রচ্ছদ মূল্য :- ১২৫ টাকা
পৃষ্ঠা সংখ্যা :- ৮৬
বাইন্ডিং :- পেপারব্যাক