জীবনের ব্যতিব্যস্ততার ফাঁকে নিজের দিকে তাকানোর ফুরসত কই? নিজের হৃদয়ের চেহারাটা দেখার কথা তো বলাই বাহুল্য। কখনো আপন মনের দিকে তাকাতে আমাদের ভয়ই হয়, কখনো কিঞ্চিত তাকিয়েই আঁতকে উঠি। পরিচর্যার অভাবে সেখানে থোকা থোকা বিষবাষ্প! অথচ কত পরিপাটি করে রাখার কথা ছিল আপন হৃদয়কে!
নরসুন্দরেরা একেবারে জটবাঁধা চুলকেও আনকোরা করে দিতে পারে, ওই কারিগরি যে ওদের জানা! দক্ষ মালির হাতে জঙ্গলও পরিণত হয় অনিন্দ্যসুন্দর পুস্পকাননে! প্রতিটি বিষয়ের জন্য আছে নির্ধারিত শিল্পী। প্রতিটি বস্তুর জন্যে থাকে নির্দিষ্ট পরিচর্যাকারী। ড. সালমান আল-আওদাহ তেমনই এক হৃদয়পটের শিল্পী, যার দক্ষতা যুবপ্রজন্মের হৃদয়কে সাজিয়ে দেওয়া-ই মূল লক্ষ্য।
বহুমাত্রিক বইটি আপনারই আপন জায়গা থেকে আপনাকে উন্মোচন করে দেখাবে। পাশে বসা লোকটির চোখে আপনি কেমন? আপনার অজান্তেই-বা আপনি কেমন? হৃদয়ের গুমটবাঁধা একেকটি পর্দার উন্মোচন হবে আপনার নিজ হাতে।
আপনার রাগ, অভিপ্রায়, বিবেচনাবোধ ইত্যাদি সরিয়ে নিলে আপনাকে কেমন দেখাবে? হৃদয়ের একেকটি ইট-বুনন সরিয়ে বা জুতমতো বসিয়ে দিলে কেমন হয়ে উঠবেন আপনি? সেই পাজলের হিসেব নিয়েই বইটি।
লেখক তার নিজের জীবনের প্রতিটি প্রান্ত থেকে আমাদেরকে নিজাত্মা দেখিয়েছেন। খাপে খাপে মিলিয়ে দেখিয়েছেন হৃদয় সাজানোর উপকরণগুলো। খুলে দিয়েছেন আমাদের হৃদয়ের বদ্ধ দুয়ার।
সিরাজাম বিনতে কামাল –
▪️প্রারম্ভিকা:
____________
জীবনের নানা ব্যস্ততার মাঝে নিজের দিকে তাকানোর, নিজেকে নিয়ে ভাবার সুযোগ কোথায়? নিজের হৃদয়ের চেহারা দেখার কথা তো দূর কি বাত। কখনো নিজের দিকে, আপন মনের দিকে তাকাতেই আমাদের ভয় হয়। কখনো নিজের সত্ত্বাটার কথা ভেবে নিজেই আঁতকে উঠি। কারণ, পরিচর্যার অভাবে হৃদকাননে জন্ম নিয়েছে থোকা থোকা বিষবাষ্প। অথচ, কত পরিপাটি থাকার কথা ছিল আপন হৃদয়!
কিন্তু দক্ষ মালির হাতে জঙ্গলও পরিণত হয় পরিপাটি বাগানে। সেখানে ফোটে হরেক ফুল, থাকে প্রজাপতির উড়াউড়ি, পাখির কিচিরমিচির, আসে বসন্ত।
একটা ছেঁড়া কাগজকেও শিল্পী তার তুলির আঁচড়ে রাঙ্গিয়ে দিতে পারে। পুরনো কাপড়েও কেউ কেউ বোনে নকশী কাথা। প্রতিটি বিষয়ের জন্যই আছে নির্ধারিত শিল্পী। প্রতিটি বস্তুর জন্যে থাকে নির্দিষ্ট পরিচর্যাকারী। ড. সালমাল আল-আওদাহ তেমনই একজন শিল্পী। তিনি হৃদয়পটের শিল্পী। যার দক্ষতা যুবপ্রজন্মের হৃদয়কে রাঙ্গিয়ে তোলে।
▪️বই কথন:
____________
বইটি ড. সালমান আল-আওদাহ রচিত “আনা ওয়া আখাওয়াতুহা- রিহলাতুন ফি আসরারিজ জাত” এর দ্বিতীয় অংশের অনুবাদ। গ্রন্থটি কলেবরে বড় হওয়ার কারণে মুহাম্মদ পাবলিকেশন বইটিকে দুই খন্ডে প্রকাশ করেছেন। আর এই গ্রন্থটির প্রথম খন্ড ছিল “কে আমি! নিজের মধ্যে ভ্রমণ।”
বইটিতে মোট ৪২টি পাঠ রয়েছে। বহুমাত্রিক এই বইটি আপন জায়গা থেকে আমাদেরকে উন্মোচন করে দেখাবে। পাশে বসা লোকটির চোখে আমি কেমন? আমার অজান্তেই আমি কেমন? হৃদয়ের গুমোটবাঁধা একেকটি পর্দার উন্মোচন হবে নিজ হাতে।
আমাদের রাগ, অভিমান, অভিপ্রায়, বিবেচনাবোধ ইত্যাদি সরিয়ে নিলে কেমন দেখাবে আমাদেরকে? হৃদয়ের একেকটি ইট-বুনন সরিয়ে বা জুতমত বসিয়ে দিলে কেমন হবো আপনি, আমি? এ-সবকিছুই আমরা জানতে পারবো এই বই পাঠের মাধ্যমে।
▪️বইয়ের উল্লেখযোগ্য কিছু টপিক:
__________________________
🔸 খোলো হৃদয়ের দুয়ার
🔸 ইলহামের জপমালা
🔸 কোনোদিন কি ভালোবেসেছ?
🔸 নিষ্ক্রিয়তা হলো আজাব
🔸 কর্ম মানুষকে রক্ষা করে
🔸 অন্তর্দৃষ্টি
🔸 মুক্তির মূল্য
🔸 সুখ হলো একটি ভাষা
🔸 নিজেকে সম্মান দাও!
🔸 অনুভূতির প্রকাশ
🔸 মৌনতার অভিজ্ঞান
🔸 স্নায়বিক আড়ষ্টতা
🔸 তোমার ইচ্ছাটুকুই যথেষ্ট ইত্যাদি।
▪️উপসংহার:
________________
যে নিজেকে চিনেছে সে প্রশান্তি পেয়েছে। আর প্রশান্তি হলো অস্থিরতাহীন জীবনপ্রকৃতি। যে নিজ সত্তাকে চিনেছে সে আল্লাহকে চিনেছে। সুতরাং নিজ সত্তাকে চিনতে পারা ঈমান অর্জনের সিঁড়ি।
লেখক তার নিজের জীবনের প্রতিটি প্রান্ত থেকে আমাদেরকে নিজাত্মা দেখিয়েছেন। খাপে খাপে মিলিয়ে দেখিয়েছেন হৃদয় সাজানোর উপকরণগুলো। খুলে দিয়েছেন আমাদের হৃদয়ের বদ্ধ দুয়ার।
যদি আপনি সুসজ্জিত হৃদয়ের অধিকারী হতে চান, সুখী হতে চান। সমৃদ্ধ হৃদয়ের অধিকারী হতে চান, যদি চান আপনার সমৃদ্ধ অন্তরের দিকে তাকিয়ে স্রষ্টা হবেন সন্তুষ্ট। এমন এক হৃদয়ের বুনন প্রণালি নিয়ে বইটি জানাবে জীবনযাত্রার মানচিত্র।
▪️লেখক পরিচিতি:
_______________
ড. সালমান আল-আওদাহ সৌদি আরবের আল-ক্বসিম অঞ্চলের বুরাইদাহ শহরের আল-বুসর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি একাধারে আন্তর্জাতিক ইউনিয়ন অব মুসলিম উলামা ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য, ইউরোপীয়ান ফাতওয়া কাউন্সিলের সদস্য, ইসলামি বিশ্বের বেশ কয়েকটি দাতব্য ও শিক্ষা সমিতি ও প্রতিষ্ঠানের সদস্য হিসেবে কাজ করেছেন।
তিনি কয়েকবার গ্রেফতার হয়েছেন। ২০০৭ সালে ‘আমাদের শাসকদের হৃদয় রচনা করতে অনুরোধ’ শিরোনামে একটি টুইট পোস্ট করার পর ওই বছরের ডিসেম্বরে তাকে আবার গ্রেফতার করা হয়। তিনি এখনো কারান্তরীণ আছেন।
তার ৭০ টিরও অধিক গ্রন্থ ইংরেজিসহ বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে।
▪️বই পরিচিতি:
______________
বই: খোলো হৃদয়ের দুয়ার
লেখা: ড. সালমান আল-আওদাজ
ভাষান্তর: মো. সাইদুল মোস্তফা, আহমাদুল্লাহ আল জামি
প্রকাশনী: মুহাম্মদ
পৃষ্ঠা সংখ্যা: ১৯১
মূল্য: ২৭৫/-
Amit Hasan –
■ বই রিভিউ- খোলো হৃদয়ের দুয়ার
দুঃখ-ভালোবাসা, মান-অভিমান এ বৈচিত্র্য পূর্ণ আমাদের হৃদয় আঙিনা। দুদিনের এই অস্থায়ী জীবনে আমরা ছুটে চলি অনন্তর। অন্যদের নিয়ে কেন? নিজেকে নিয়েই যেন আমাদের ভাবার ফুরসত নেই!
কিন্তু আমাদের ও তো একটা হৃদয়ে আছে। সেই হৃদয়ে আমরা আশার বীজ বুনি। নতুন দিনের নতুন ভাবনার স্বপ্ন গাঁথি। কখনও আবার এই হৃদয় অপ্রত্যাশিত আঘাতে ব্যথিত হয়। ব্যথিত হৃদয়ে নতুন আশা নতুন স্বপ্ন গুলো নিভু নিভু করে জ্বলতে থাকে। কখনো বা নিভে যায়…
বক্ষ্যমাণ গ্রন্থটির ৪২ টি ভিন্ন ভিন্ন অধ্যায়ে আছে হৃদয়কে নতুন করে সাজানোর পন্থা। বদ্ধ হৃদয় খোলার সবক। বক্ষ্যমাণ গ্রন্থ “খোলো হৃদয়ের দুয়ার” আমাদের ব্যথিত নিভু নিভু হৃদয়ে নতুন আশার প্রদীপ জ্বালিয়ে নতুন সফলতার পথ দেখাবে নববী আদর্শে ইনশাআল্লাহ।