ত্রিশ লক্ষ নারীপুরুষ বন্দী কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে। চলছে অমানুষিক নির্যাতন, ধর্ষণ, গণধর্ষণ। শ্রমদাসত্ব। ভাগ্যক্রমে যারা ক্যাম্পের বাইরে রয়ে গেছে তাদের জন্য গড়ে তোলা হয়েছে এক নিশ্ছিদ্র পুলিশি রাষ্ট্র।
সরকারী লাইসেন্স নিয়ে ঘরের ভেতর ঢুকে পড়েছে হান ‘আত্মীয়’। চলছে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার ধর্ষণ। বন্দীদের ওপর চলছে মেডিকেল এক্সপেরিমেন্ট। জোরপূর্বক গর্ভপাত, অর্গান হারভেস্টিং। মানুষের বিকিকিনি…
নামায নিষিদ্ধ। রোযা নিষিদ্ধ। নিষিদ্ধ দাড়ি, হিজাব, আরবি বর্ণমালা। গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে অগণিত মাসজিদ আর কবরস্থান। ঘোষণা দিয়ে বিকৃত করা হচ্ছে কুরআন।
…না। এটা অতীতের কোনো গল্প না। ভবিষ্যতের কোনো কল্পকাহিনী না। আজকের পৃথিবীর কথা। আমাদের বর্তমানের কথা। বিশ্ববিবেক আর মানবতার নীরবতার প্রাচীরের আড়ালে ভয়াবহ গণহত্যা চালাচ্ছে চীন। পূর্ব তুর্কিস্তানের প্রায় আড়াইকোটি উইঘুর-কাযাখ মুসলিমদের ওপর। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার নাৎসিদের চাইতেও অনেক হিসেবী এই গণহত্যার ঘাতকেরা, অনেক তীব্র এই গণহত্যার মাত্রা। অনেক পরিপাটি চীনের এই আগ্রাসন।
পাঠক, একুশ শতকের সবচেয়ে ভয়াবহ গণহত্যার শিকার নির্যাতিত মানুষদের অশ্রু, রক্ত আর জলের রাজ্যে আপনাকে স্বাগতম। আপনাকে স্বাগতম বিশ্বপাড়ার নতুন রংবাজ চীনের আগ্রাসী নিষ্ঠুরতার এক উপাখ্যানে।
Muhammad Tamimul Ihsan –
||বুক রিভিউ||
পৃথিবীর সবচেয়ে হতভাগ্য,অবহেলিত এক মুসলিম জাতির গল্প এটি।অতীত বা বর্তমানের কোন রুপকথা নয় এটি।একেবারে বাস্তব ধোঁয়া ওঠা গল্প।বিশ্ববিবেক আর মানবতার নীরবতার প্রাচীরের আড়ালে এক গণহত্যার গল্প।এদের দেখার যেন কেউ নেই…..।মুসলিম বিশ্বের নেতাদের সিরিয়া,ইরাক,আফগান,কাশ্মীর নিয়ে ব্যাপক ভাবনা থাকলেও এদের নিয়ে যেন কারো মাথা ব্যথা নেই।অথচ এরাই গত একযুগেরও বেশি সময় ধরে নির্যাতিত জাতির তালিকায় শীর্ষে।
পুরো বইটিতেই আলোচনা করা হয়েছে মুসলিম উইঘুর জাতির উপর চীনাদের অত্যাচার নিয়ে।তাদের উপর চীনাদের অকথ্য ভাষায় নির্যাতন নিয়ে।কীভাবে রিএডুকেশনের নামে চীনারা উইঘুরদের বন্দী করে নিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের হিটলারের নাৎসি বাহিনীর কনস্ট্রাকশন ক্যাম্পের ন্যায় অকথ্য নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে তা নিয়ে।
বইটিতে আরো আলোচনা করা হয়েছে কীভাবে উইঘুরদের উপর চীন চালিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন টপ সিক্রেট মেডিক্যাল এক্সপেরিমেন্ট…।জীবন্ত শরীর থেকে কেটে নিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে কিডনি,লিভার,করনিয়া…..ইত্যাদি।
ঘরের পুরুষদের রিএডুকেশন ক্যাম্পে পাঠিয়ে দিয়ে, ঘরে ঢুকিয়ে দিচ্ছে ১০ লাখ কামোন্মত্ত হান চীনা পশুদের।বাধ্য করছে ঘরের নারীদের এইসব চরিত্রভ্রষ্ট পুরুষদের সাথে এককাথার নিচে শুতে।বিভিন্ন উচ্চশিক্ষিত মানুষকেও শুধু উইঘুর হওয়ার কারণে পাঠিয়ে দিচ্ছে রিএডুকেশন ক্যাম্পে।
চীন যেন জাতিগতভাবে নির্মুল করতে চাচ্ছে আমাদের এই মুসলিম ভাইদের।অনেকেই বিশ্বের সবচেয়ে নিষ্ঠুর কারাগার হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিয়ে থাকেন গুয়েন্তানামোর কারাগারকে।সেই কারাগারকেও যেন হার মানিয়েছে চীনের এইসব কনস্ট্রাকশন বা রিএডুকেশন ক্যাম্প।
প্রিয় পাঠক,একুশ শতকের সবচেয়ে ভয়াবহ গণহত্যার শিকার নির্যাতিত মানুষের অশ্রু,রক্ত আর জনের রাজ্যে আপনাকে স্বাগতম। তবে সাবধান,দুর্বল চিত্তের মানুষের জন্যে এই বইটি নয়।
এভাবেই সম্পাদক Asif Adnan ভাইয়া সতর্ক করে দিয়েছেন দূর্বলচিত্তের পাঠককে।
প্রিয় পাঠক,এবার ব্যক্তিগত কিছু অনুভূতি শেয়ার করি,বইটি যতক্ষণ পড়েছি মনে হয়েছিল যেন নরকে ছিলাম।উইঘুরদের সাথে হান চাইনিজরা যে কি পরিমাণ পাশবিক নির্যাতন করছে তার বিবরণ উঠেছে বইটিতে।যদি আপনি আমার মতো শক্ত হৃদয়ের মানুষ হন,তবে হয়তো রাগে আপনার হাতে মুঠো শক্ত হয়ে যাবে।আর যদি নরম হৃদয়ের মানুষ হন তবে হয়তো কান্নায় আপনার বুক ভেসে যাবে।বইয়ের প্রত্যেকটি পাতা যেন বেদনার বেহালা।বেহালার মতো প্রতিটি পাতা যেন বেদনার সুর বাজিয়ে চলছে।
অনেকেই হয়তো বইটা পড়ে পরবর্তীতে স্বাভাবিক হতে পারবেন না।তারপরও বইটা পড়া উচিত।
নিজের জন্য,নিজেদের জন্য, উম্মাহর জন্য।
মাআসসালাম……!!
■ এক নজরে “কাশগড় কত না অশ্রুজল” বইটি :
বই : কাশগড় কত না অশ্রুজল
লেখক : এনামুল হোসাইন
সম্পাদক : আসিফ আদনান
প্রকাশক : ইলমহাউজ
বইয়ের বিষয়বস্তু : গণহত্যা,নির্যাতন
▪︎ রিভিউয়ার : মুহাম্মাদ তামীমুল ইহসান
ফাতিমা মৌ ফ্লাভিকা –
অনেককেই আফসোস করে বলতে শুনি,এদেশে কেন যে আমার জন্ম হলো?ভালো পড়াশোনা করার পরও ভালো চাকুরী জুটে না।জীবনযাত্রার মান অনুন্নত। মরার দেশ এটা,এদেশে মেধাবীদের কোনো মূল্য নেই!যারা নিজেদের চাকুরী আর ক্যারিয়ার নিয়ে মোটামুটি খুশি তারা আলিশান বাড়িতে শুয়ে শুয়ে স্বপ্ন দেখে অদ্ভুত এক জীবন গড়ার। অবাস্তব জীবন। যে জীবনে দুঃখ নেই, ক্লান্তি নেই, ক্লেশ নেই। এরপর পশুর মতো ছুটে চলে সেই স্বপ্ন পূরণে!
আমরা যখন এই অদ্ভুত জীবন নিয়ে ভাবতে ভাবতে ক্লান্ত ঠিক তখনি,আমাদের ভাই-বোনেরা মার খাচ্ছে কাশ্মীর,উইঘুর, কাযাখ,আরাকান,কাশগড়, ফিলিস্তিন আর মিয়ানমারে। আমাদের মতো এতো বিলাশী জীবন তারা চায়নি শুধু চেয়েছে একটুখানি থাকার জায়গা যেখানে থেকে রব্বের গোলামী করা যাবে ।
.
১.জীবন্ত বন্দীদের শরীর থেকে কেটে নেওয়া হয় কিডনি, লিভার,খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে তুলে ফেলা হয় চোখ। বন্দীরা অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে আকুল আবেদন জানায় ‘আমাকে মেরে ফেলো,প্লিজ আমাকে মেরে ফেলো। ’
২.গুলি খাওয়া মুসলিম বন্দীর শরীর থেকে কিডনি আর লিভার খুলে নিচ্ছি আর ওইদিকে ওর হার্টবিটের শব্দ শুনছি, আহ!নৃশংসতা।
৩.তোরা নামাজ পড়িস মানে তোদেরকে দশ বছর জেলে কাটাতে হবে,তোরা কুরআন পড়িস মানে তোদের আট বছরের জেল।
এটা অতীতের কোনো গল্প না। ভবিষ্যতের কোনো কল্পকাহিনী না। আজকের পৃথিবীর কথা। আমাদের বর্তমানের কথা। বিশ্ববিবেক আর মানবতার নীরবতার প্রাচীরের আড়ালে ভয়াবহ গনহত্যা চালাচ্ছে চীন। পূর্ব তুর্কিস্থানের প্রায় আড়াইকোটি উইঘুর-কাযাখ মুসলিমদের ওপর। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার নাৎসিদের চাইতেও অনেক হিসেবী এই গনহত্যার ঘাতকেরা, অনেক তীব্র এই গনহত্যার মাত্রা। অনেক পরিপাটি চীনের এই আগ্রাসন।
ত্রিশ লক্ষ নারীপুরুষ বন্দী কসেনট্রেশন ক্যাম্পে। চলছে অমানুষিক নির্যাতন, ধর্ষন, গণধর্ষন। শ্রমদাসত্ব। ভাগ্যক্রমে যারা ক্যাম্পের বাইরে রয়ে গেছে তাদের জন্য গড়ে তোলা হয়েছে এক নিশ্ছিদ্র পুলিশি রাষ্ট্র।
সরকারী লাইসেন্স নিয়ে ঘরের ভেতর ঢুকে পড়েছে হান ‘আত্মীয়’। চলছে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার ধর্ষন। বন্দীদের ওপর চলছে মেডিকেল এক্সপেরিমেন্ট। জোরপূর্বক গর্ভপাত, অর্গান হারভেস্টিং। মানুষের বিকিকিনি,নামায নিষিদ্ধ। রোযা নিষিদ্ধ। নিষিদ্ধ দাড়ি,হিজাব, আরবি বর্ণমালা। গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে অগণিত মাসজিদ আর কবরস্থান। ঘোষণা দিয়ে বিকৃত করা হচ্ছে কুরআন।
||উইঘুরদের নির্মম জীবন||
“আমাকে যদি একবার বেছে নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হতো,তাহলে আমি কখনোই উইঘুর হিসেবে জন্ম নিতাম না, আমরা পৃথিবীর সবচেয়ে হতভাগা মানুষ! ”
~সন্তান হারানো উইঘুর যুবক আব্দুল আযীয।
১৯৪৯ সালে চীনারা পূর্ব তুর্কিস্তানকে দখল করে এর নাম ঘোষণা করেছে শিংজিয়াং।২,৪৮,৭০,০০০ মানুষের বসবাস এখানে। চীনা কমিউনিস্টরা এখানে মুসলিমদের নামাজ পড়তে দেয় না। যদি সেখানে কারো ঘরে কুরআন বা কোনো প্রকারের ইসলামিক বই পাওয়া যায় তাহলে নিয়ে যাওয়া হয় কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে। সাধারণ উইঘুরদের জোর করে খাওয়ানো হয় মদ আর শুকরের মাংস। দাঁড়ি আর হিজাব তো নিষিদ্ধই তারপরও যদি কোনো উইঘুর নারী কোমরে বা হাঁটুর নিচে পোশাক নামিয়ে অর্থাৎ শালীনতা বজায় রেখে বাইরে বের হয় তাহলে রাস্তায় সবার সামনেই পুলিশ কর্তৃক কোমড়ের নিচের পোশাকের অংশ কেটে দেওয়া হয়। রামাদানে উইঘুরদের রোজা রাখতে দেয়া হয় না। চীনে ফেইসবুক, হোয়াটসঅ্যাপের বদলে ব্যবহার করতে হয় উইচ্যাট। উইচ্যাটেও কোনো বিদেশি আত্মীয় বা কোনো বিদেশির নাম্বার রাখা একেবারেই নিষিদ্ধ। নিয়মনীতির একটু হেরপের হলেই কিংবা ইসলামের কোনো নিয়মনীতি মানলেই সোজা নিয়ে যাওয়া হয় কন্সেন্ট্রেশন ক্যাম্পে।
||বইটি কেন পড়া উচিত||
আমাদের প্রিয় নবীজি(সা.) বলেছেন পুরো মুসলিম উম্মাহ হলো একটি দেহের মতো,দেহের এক অংশ অসুস্থ হয়ে গেলে যেমন অন্য অংশও অসুস্থ হয়ে পড়ে ঠিক তেমনি পৃথিবীর এক প্রান্তে মুসলিমদের নিযার্তনের শিকার হলে অন্য প্রান্তের মুসলিম ভাইদের হৃদয় কেঁপে উঠবে,চেতনায় কড়া নাড়বে।
কিন্তু হায়!আজ আমাদের ভাইবোনদের বোনদের কাপড় কেটে নিচ্ছে চীনা কুকুররা। রোযা, নামায, হাজ্জ সব নিষিদ্ধ করে দিয়েছে। ঘোষণা দিয়ে কুরআন বিকৃত করছে। গোরস্থান ধুলোয় পরিণত করেছে। পাঁচ হাজার মসজিদ আজ নাস্তিক কমিউনিস্ট শুয়োররা মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়েছে। মসজিদগুলোকে পার্টি হাউস বানাচ্ছে। যেই মিনার থেকে তাওহিদের আহ্বান ভেসে আসত সেখানে কমিউনিস্টের নোংরা পতাকা উড়ছে।এতকিছুর পরেও, এত ধ্বংস, এত মৃত্যু, এত রক্ত, এত অশ্রু দেখেও আমরা চুপ করে আছি। কিছুই বলছি না! সমস্যাটা কী আসলে আমাদের? এতকিছুর পরেও কেন আমাদের শীতল রক্ত গরম হয় না? কেন আমরা সেই নেতাদের মুখ চেয়ে থাকি যাদের কাছে ইসলামের সামান্যতম মূল্য নেই? কেন আমরা সেই সব দরবারি আলিমদের মাথায় তুলে রাখি যারা ‘পেশাদার গিরগিটির’ মতো ক্ষণে ক্ষণে রং বদলে ফেলে? আমরা আর কতকাল ঘুমিয়ে থাকব? আর কতকাল কাপুরুষতাকে হিকমাহ বানিয়ে নিষ্ক্রিয় জীবনযাপন করব?
যারা ব্যথিত হৃদয় দিয়ে মুসলিম উম্মাহর কথা ভাবে আর চোখের পানি ফেলে তাদের জন্যই বইটি।
||বই সম্পর্কে অনুভূতি ||
কত সমান্তরাল আমাদের এই জীবন!নির্ঝঞ্ঝাট!তবুও যেন দিনশেষে নিজেদের দুঃখ কষ্টেই জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যাই।কাশগড় কতনা অশ্রুজল বইটি প্রকাশিত হওয়ার কিছুদিন পরেই সংগ্রহ করেছি।আড়াইশো পৃষ্ঠার এই বইটা পড়তে আমার প্রায় ৩ মাস সময় লাগছে,এক একটা কাহিনী পড়ি আর কয়েকদিন ধরে অর্মৃত হয়ে থাকি।সবগুলো দৃশ্যপট যেন চোখের সামনে দেখতে পাই আর মাথায় আটকে থাকে।ভেতরটা খুব দুমড়ে মুচড়ে যায়।হাজারো প্রশ্ন মাথায় অনুরণন তোলে এভাবে আর কতদিন? সত্যিই কি উম্মাহর সব বীর পুরুষেরা মরে গেছে?শিশুদের উপর চালানো ভয়াবহ আগ্রাসনের কথাগুলো পড়ে যেন ভিতরে ভিতরে মরে যাচ্ছিলাম।বইটি পড়ে বারবার মনে হচ্ছিলো আমিই কি সেই দূর্বল পাঠক?যে ক্ষনে ক্ষনে মুখ চেপে ধরে কেঁদে উঠি।নির্যাতন,গনধর্ষন,গর্ভপাত শব্দগুলো এত্তো ভারী কেন?কান্নার জোয়ার নামে চোখ দিয়ে।নিজের সমান্তরাল জীবনটাকে এখন তুচ্ছ মনে হচ্ছে কারণ,এই জীবনে আমার তাকওয়ার অনেক অভাব।এই শান্ত জীবনে কত জাহিলিয়াতে ডুবে আছি।অথচ আমার ভাইবোনরা ইসলামকে পালন করতে গিয়েই এই ভয়াবহ জীবনের বাসিন্দা হচ্ছে।
দিনশেষে শুধু ভাবি কবে আমাদের এই ভঙ্গুর উম্মাহ একত্রিত হবে?আল্লাহর সাহায্য আসবে আর আমাদের ভাইবোনরা এইসব যাঁতাকল থেকে মুক্ত হবে।আল্লাহর সেই কাঙ্ক্ষিত সাহায্য হয়তো আমাদের সামনেই।অপেক্ষা শুধু সময়ের ইনশাআল্লাহ।
||বইবৃত্তান্ত||
বই:কাশগড়-কতোনা অশ্রুজল
লেখক:মুহাম্মাদ এনামুল হোসাইন
সম্পাদক :আসিফ আদনান
প্রকাশনী:ইলমহাউস পাবলিকেশন
পৃষ্ঠাসংখ্যা:২৬৪
নির্ধারিত মূল্য :২৬০ টাকা
Meher Afroz –
📗বুক রিভিউ📕
বইঃ কাশগড় – কতো- না অশ্রুজল
লেখকঃ মুহাম্মদ এনামুল হোসাইন
সম্পাদকঃ আসিফ আদনান
ধরুন আপনি একজন যুবক, আপনার মতো শত শত যুবককে একটা ঘরে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে উলঙ্গ করে রাখা হয়েছে।মাথা বরাবর বুলেট তাক করা।একটু নড়লেই প্রাণ শেষ। হঠাৎ এক চাইনিয মহিলা এসে আপনাদের গোপ্তাঙ্গে মরিচের গুড়া ঢেলে দিলো… তারপর আপনার অনুভূতি কেমন হবে?
কল্পনা করুন তো, একটা রুমে আপনি সহ আরো অনেক উলঙ্গ পুরুষ এক সাথে দাঁড়িয়ে আছেন। চারিদিকে আপনি সহ আরো অনেক মানুষ। সবার মাথা বরাবর বুলেট তাক করা। সে অবস্থায় আপনারই বিশজন মা/ বোনকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন করছে আরো বিশ জন পুলিশ। অথচ আপনি মৃত্যুর ভয়ে কিছুই বলতে পারছেন না। এমনকি যাদের মুখে শোকের আভা ফুটে উঠছে তাদেরকেও জীবনের বাকি সময়টুকুতে আর কখনো দেখতে পাননি…
কল্পনা করুন, আপনি একজন যুবতী। বিয়ের কথা চলছে। কত শত স্বপ্ন আপনার দু’চোখ ভরা। কিন্তু হুট করে ধরে নিয়ে যাওয়া হলো কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে। মূল লক্ষ্য আপনার ধর্মীয় উদ্রবাদী মনোভাব দমন।আপনার পর্দা করা, সালাত পড়া চলবে না। আপনাকে চাইনিয কার্লচার শিক্ষা দেওয়া হবে।তাই আপনাকে সহ আপনার মত হাজারও মা-মেয়েকে উলঙ্গ করা হয়েছে। মাথায় হাত রেখে উঠ-বস করানো হচ্ছে। এবং তা ক্যামেরা বন্দি হচ্ছে। হঠাৎ ধরে নিয়ে গণর্ধষণ করা হচ্ছে…
আমাদের লাইব্রেরিতে অজস্র বই পরে থাকে আমরা পড়ি না অথচ পূর্ব তুর্কিস্তানের জনগণের হাতে বই দেখা গেলেই জেলে ভরে ফেলা হয়। আর কুরআন পাঠ করা তো উগ্রবাদ এবং সন্ত্রাসবাদ।
তারা শিশুদেরও ছাড় দেয়নি। নিজের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করে ছোট্ট ছোট্ট বাচ্চাদের শেখানো হচ্ছে দেশপ্রেম! যে দেশপ্রেমিক হতে হলে তাকে নিজ ধর্ম, ভাষা সংস্কৃতি সব ছুড়ে ফেলে গ্রহণ করে নিতে হবে চাইনিযদের ভাষা, সংস্কৃতি।সৃষ্টিকর্তাকে বিশ্বাস করা যাবে না, সলাত,সাওম, হজ্জ পালন করা যাবে না।হান চাইনিযের সাথে মদ খেতে হবে।শূকর, বাদর, আরশোলা, তেলাপোকা খেতে হবে।গলা ফাটিয়ে কমিউনিস্ট পার্টির নামে স্লোগান দিতে হবে, প্রেম- যিনা ব্যভিচার করতে হবে।
আট বছরের এক পিচ্ছি মেয়ে তার বাবার জন্য প্রতিক্ষার প্রহর গুণতে গুণতে ঠিকানা বিহীন চিঠি লিখে, “ বাবা, বাবা, তুমি কোথায়? কেন তুমি আমাকে দেখতে আসো না?”
এক হালকা ধূসর পর্দার আড়ালে থাকা উইঘুর এই শিশু গুলোর রাতজাগা চোখের পানির হিসেব কেউ কী কখনো রেখেছে?
হান চাইনিয পুরুষের সাথে জোরপূবর্ক উইঘুর নারীদের বিয়ে দেওয়া হচ্ছে।যেন উইঘুর নারীরা তাদের পূর্ব পরিচয় ভুলে যায়। তাদের বক্ষদেশ থেকে নিকাব- হিজাব ফালিয়ে মডেল বানানো হচ্ছে।ধর্মীয় উগ্রবাদ দমনে সম্মানিত ইমামদের দিয়ে পাবলিক প্লেসে নৃত্যানুষ্ঠান করিয়েছে চীন কমিউনিস্ট। ২৮ হাজার ইমাম, আলিম, দাঈ, তালিবুল ইলম বন্দী / নিখোঁজ অথবা নিহত হয়েছে হান চাইনিযদের হাতে। এমনকি রেহাই পায়নি ‘ আদর্শ নাগরিক’ বলে পরিচিত উইঘুররাও!
জ্বী! এমনটাই হচ্ছে পূর্ব তুর্কিস্তানের আমার মুসলিম মা- বোনদের সাথে। প্রায় ত্রিশ লক্ষের অধিক মুসলমান আজ বন্দী হান চাইনিদের কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার নাৎসিদের চাইতেও অনেক হিসেবী এই গণহত্যা।আরো পরিপাটি এ-ই চীনের আগ্রাসন। লেখক একটার পর একটা নির্যাতনের বর্ণনা দিতে দিতে হঠাৎ নিজেই বলেছেন,‘ ইসলামের বিরুদ্ধে চীন এতগুলো ফ্রন্ট খুলেছে, কোনটা ছেড়ে যে কোনটা আগে বলব সেটাই বুঝে উঠতে পারছি না! ইসলামের বিরুদ্ধে অলআউট যুদ্ধে নেমেছে চীন!’। তবুও বিশ্ব নিশ্চুপ! চীনারা কতটা ইসলাম বিদ্বেষী তার তীব্রতা অনুভব করার জন্য হলেও তাকাতে হবে এই বইটির প্রতিটি পাতায়।
পাঠানুভূতিঃ—
এই বইটা যখন বাজারে আসে।তখনই আমার উইঘুর মুসলমানদের সম্পর্কে প্রথম শোনা। এর আগে কখনো শুনি নি। আহ! কতো কান জানে না ঐ মুসলমানের নির্মমতার দিবা- রজনীগুলোর কথা।
তাই, সকল পাঠককে কাকুতিমিনতি করে বলবো, প্লিজ বইটা পড়ুন! বইয়ের ভেতর রেফারেন্সগুলোর লিংকগুলো ভালো করে সার্চ করে পড়ুন। ভিডিওগুলো দেখুন। টাকার অযুহাত দেখিয়ে বইটি না কিনে নিজেকে ধোঁকা দেবেন না। দৈনিক পাঁচ টাকা করে জমিয়ে হলেও কিনুন। পড়ুয়া বন্ধুর কাছ থেকে ধার করে পড়ুন। যেভাবে / যেকোনো ভাবে সম্ভব।নিজেকে তাদের অবস্থানে বসিয়ে তাদের অবস্থা অনুভব করতে চেষ্টা করুন। এবং যারা এ বিষয়টা সম্পর্কে জানেন তারা তাদের সহপাঠীদের/ স্টাফদের সাথে কথার মাঝে উইঘুর মুসলিমদের করুণ অবস্থা সম্পর্কে কথা উঠান। এছাড়া যা করার যথা সাধ্য আছে তা করুন। তবুও বিষয়টা স্কিপ করে যাবেন না। ইতিহাস পুনরাবৃত্তি হয়। তাই-ই হতে যাচ্ছে, উইঘুরদের পরে হয়তবা আমাদের পালা।
রিভিউদাতাঃ Meher Afroz