আমরা হয়ত অনেকেই জানি না, জনপ্রিয় লেখক আরিফ আজাদের তৃতীয় আরেকটি বই এবারের বইমেলায় প্রকাশিত হতে যাচ্ছে। ‘জবাব’। তবে এখানে শুধু আরিফ আজাদের লেখা নয়, বইটিতে বাংলাদেশের প্রথিতযশা যে কয়েকজন লেখক ইসলামের বিরুদ্ধে উত্থাপিত সংশয়মূলক কিছু প্রশ্নের জবাব এবং ইসলামের সত্যতা নিয়ে লিখেছেন, তাদের লেখাও আছেন। তাঁরা হচ্ছেন:
.
ডা. শামসুল আরেফিন শক্তি, মুশফিকুর রহমান মিনার, রাফান আহমেদ, শিহাব আহমেদ তুহিন, আরিফুল ইসলাম, জাকারিয়া মাসুদ, মহিউদ্দিন রূপম, মুরসালিন নিলয়-সহ প্রমুখ।
সম্পাদনা করেছেন: মুফতি তারেকুজ্জামান, মুফতি আবুল হাসানাত কাসিম, উস্তায আব্দুল্লাহ মাহমুদ, জাকিয়া সিদ্দীকি।
Arafat Shaheen –
বই: জবাব
ইসলাম-বিরোধী কিংবা ইসলাম-বিদ্বেষীরা শুরু থেকেই নানামুখী অবান্তর প্রশ্ন করে মুসলিম সমাজকে বিভক্ত ও বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা চালিয়ে আসছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সময়েও তাদের অপতৎপরতা বিদ্যমান ছিল। যুগের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে তাদের আক্রমণের ধারাতেও নতুনত্ব এসেছে এবং আমাদের পূর্বসুরি আলিমগণ যুগের চাহিদা অনুযায়ী তাদের সে-সব প্রশ্নের যথোপযুক্ত জবাব দিয়েছেন। কিন্তু তাদের লক্ষ্য কখনোই ইসলাম সম্পর্কে জানা ছিল না। বরং তারা সব সময় চেয়েছে ইসলামের সুমহান সৌন্দর্যের ওপর আঘাত হেনে এর ভিত্তিকে দুর্বল করে দিতে। মহান আল্লাহ ইসলামের ওপর আসা সকল আঘাতকেই প্রতিহত করেছেন। তিনি সর্বযুগেই একদল একনিষ্ঠ মুসলিমকে পাঠিয়েছেন, যাঁরা ঢাল হয়েছেন প্রতিপক্ষের প্রশ্নবাণের সামনে। আমাদের এই চলমান সময়ও এর ব্যতিক্রম নয়।
•
বই সম্পর্কে:
সমকালীন প্রকাশন থেকে প্রকাশিত ‘জবাব’ বইটি মূলত লিখিত হয়েছে ইসলাম-বিরোধীদের বিভিন্ন প্রশ্নের বুদ্ধিবৃত্তিক উত্তর নিয়ে। একসময় দেশে নাস্তিকদের বেশ আস্ফালন দেখা গিয়েছিল। তারা যে-কোনো একটা ইস্যু পেলেই সেটা ইসলামের বিরুদ্ধে প্রয়োগ করতে অপতৎপরতায় মেতে উঠতো। সাধারণত প্রকাশ্যে ইসলাম-বিরোধিতার যে সকল ঘটনা ঘটে থাকে, তার জবাব আলিমগণ প্রকাশ্যেই দিয়ে থাকেন। কিন্তু এটা ঘটছিল একেবারে পর্দার অন্তরালে; অনলাইন জগতে—যেখানে সে-সময় আলিমদের তেমন পদচারণা ছিল না। কিন্তু অনলাইন জগতে যে সমস্ত মুসলিম তরুণরা সংযুক্ত ছিল, তারা সহজেই নাস্তিকদের চক্রান্তের শিকার হচ্ছিল।
এই সমস্যার সমাধান নিয়ে ভাবতে থাকেন কয়েকজন ঈমানদার মানুষ। তাদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টার ফলে ২০১৮ সালে আলোর মুখ দেখে ‘ইসলাম-বিরোধীদের জবাব—Response To Anti-Islam’ নামের ওয়েবসাইট। এখানে তাদের করা নানান প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন বিশিষ্ট লেখকগণ; যাঁরা দ্বীন এবং দুনিয়া সম্পর্কে বেশ স্বচ্ছ ধারণা রাখেন। সেখান থেকে বাছাইকৃত কিছু লেখা দিয়েই সাজানো হয়েছে এই বই।
ভিন্ন শিরোনামের মোট চব্বিশটি প্রবন্ধ সমৃদ্ধ করেছে বইটিকে। প্রথম লেখাটির শিরোনাম: বিজ্ঞান ও বিশ্বাস—যা আমাদের অজানা। লিখেছেন ডা. রাফান আহমেদ। সাম্প্রতিক সময়ে রাফান আহমেদ নাস্তিকদের জবাবমূলক বেশ কয়েকটি বই লিখে দারুণ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন। এই লেখাটিও তাঁর বুদ্ধিদীপ্ততার স্বাক্ষর বহন করে। বিজ্ঞান সম্পর্কে আমাদের জানাশোনায় প্রবল এক ধাক্কা খাবে এই লেখা পড়লে। লেখাটি পড়ার আগে আমার জানাই ছিল না বিজ্ঞান-দর্শন (Philosophy of science) বলে কোনো বিষয় আছে। তথ্যে ঠাসা লেখাটি নিশ্চয়ই আপনাকে বিজ্ঞান নিয়ে পুনরায় ভাবতে বাধ্য করবে।
•
‘প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ’ লিখে আরিফ আজাদ তরুণদের পড়ার টেবিলে স্থান করে নিয়েছেন। তার লেখা ‘অ্যান আপিল টু কমনসেন্স’ লেখাটিও সুখপাঠ্য। এখানে লেখক বলার চেষ্টা করেছেন—বিজ্ঞানচর্চা কখনোই কাউকে ধর্মবিরোধী করে তোলে না। বাস্তব সত্য কিন্তু এটাই।
আল্লাহর অস্তিত্ব নিয়ে নাস্তিকদের প্রশ্নটা অনেক পুরনো। তারা তো কোনো স্রষ্টার অস্তিত্বই স্বীকার করতে চায় না। মুহাম্মাদ আল বান্না ‘আল্লাহর অস্তিত্ব : কুরআনের আর্গুমেন্ট’ শিরোনামের লেখায় কুরআনে আল্লাহ নিজে এ সম্পর্কে কী বলেছেন তা তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন।
হিউম্যান শব্দের অর্থ মানুষ বা মানবীয় কিছু বুঝলেও পশ্চিমাদের দৃষ্টিতে তা কিন্তু নয়। বরং তারা হিউম্যান বলতে এমন কাউকে বোঝায় যারা তাদের অনুগত হয়ে জীবনযাপন করে; এমনকি তা আল্লাহর ইচ্ছার বিরুদ্ধে হলেও। ডা. শামসুল আরেফীন শক্তি ‘হিউম্যান : মানব না দানব?’ শিরোনামের লেখায় এই বিষয়টি তুলে এনেছেন।
নারী-স্বাধীনতার নাম দিয়ে সারা পৃথিবীতে নারীদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে দাসত্বের শৃঙ্খল। কিন্তু তারা সেটা উপলব্ধি করতেও পারে না। ‘নারী-স্বাধীনতা নাকি দাসত্ব’ শিরোনামে মহিউদ্দিন রূপম বিষয়টিকে দারুণভাবে তুলে এনেছেন।
তরুণ লেখক আরিফুল ইসলাম বর্তমান সময়ে ইতিহাস নিয়ে তথ্যনির্ভর ও বস্তুনিষ্ঠ লেখা উপহার দিচ্ছেন আমাদের। এই ধারাবাহিকতায় তিনি লিখেছেন—আলেকজান্দ্রিয়ার বইগুলো কে পুড়িয়েছেন? নাস্তিকরা এই দোষ হযরত ওমর (রা.)-এর ওপর চাপাতে চায়। কিন্তু ইতিহাসে তার কোনো প্রমাণ নেই—এটাই তিনি দেখিয়েছেন।
এছাড়াও জাকারিয়া মাসুদ, উস্তায মুহাম্মাদ আবদুর রহমান, নাফিস শাহরিয়ার, মুহাম্মাদ মুশফিকুর রহমান মিনার, শিহাব আহমেদ তুহিন, মুহাম্মাদ সাদাত অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে লিখেছেন; যা বেশ চমকপ্রদ এবং আগ্রহ জাগানিয়া। বইয়ের লেখকগণও স্ব স্ব বিষয়ে অভিজ্ঞ এবং তাদের প্রচুর লেখালেখি রয়েছে বিষয়গুলোতে। ফলে বইটি পড়া সকলের জন্য অপরিহার্য হয়ে উঠেছে।
•
ভালোলাগা-মন্দলাগা
বাংলাদেশে ইসলামি ধারার বইয়ের যে নবজাগরণ শুরু হয়েছে সেখানে সমকালীন প্রকাশন একটি উল্লেখযোগ্য নাম। অল্প সময়েই দারুণ কন্টেন্টের কিছু বই বের করে তারা পাঠকের একেবারে হৃদয়ে স্থান করে নিতে সক্ষম হয়েছে।
‘জবাব’ বইটিও এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম নয়। বইয়ের বিষয়বস্তু নিয়ে সামান্য আলোকপাত করেছি। বিজ্ঞ পাঠকগণ নিশ্চয়ই তা থেকেই বইটির গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারবেন। বিষয়বস্তুর সঙ্গে মানানসই করে সাজানো হয়েছে নান্দনিক প্রচ্ছদ। বইয়ের কাগজ, বাঁধাই সবকিছু আশাজাগানিয়া। তবে খারাপ লেগেছে—আমার বইটির কিছু পাতা মিসিং। বাঁধাই করার সময় হয়ত হারিয়ে গেছে। তাই বইয়ের কিছু অংশ পড়ার সুযোগ হয়নি।
এখন এমন এক যুগ চলছে, আপনি যদি ইসলাম মেনে জীবনযাপন করতে চান, তাহলে যেকোনো সময় হতে পারেন প্রশ্নের সম্মুখীন। তাই আপনাকে ইসলাম সম্পর্কে যেমন জানতে হবে, তেমনি তাদের সে-সব প্রশ্নের জবাব দেওয়ার মতো চৌকশও হতে হবে। ইসলাম-বিরোধীদের নানামুখী প্রশ্ন সম্পর্কে সচেতন থাকার জন্য এ ধরনের বই পাঠের কোনো বিকল্প নেই। আমি সচেতন পাঠককে ‘জবাব’ পড়ার জন্য আহ্বান জানাই।