প্রত্যহ ভোর হয়, রাত নামে। জীবন এভাবে বয়ে চলে। আস্তে আস্তে আমরা চলে আসি এর শেষ সীমানায়। জীবন সায়াহ্নে। জীবনের এই আবর্তনে আমরা যে জিনিসটাকে খুব করে ভুলে বসে থাকি, সেটা হলো ‘মৃত্যু’। অথচ, মৃত্যু হলো এক চিরন্তন সত্যের নাম। পৃথিবীতে বিশ্বাসী, অবিশ্বাসী কিংবা আধ-বিশ্বাসী—সকলে এই বিষয়ে মানতে বাধ্য যে, মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী। কিন্তু তবুও; মৃত্যুকে অবশ্যম্ভাবী জানার পরেও আমরা দুনিয়া নিয়েই সদা ব্যস্ত!
.
দুনিয়াকে উপভোগ করার জন্যে, জীবনকে আরও গতিশীল, আরও পরিপাটি করার জন্যে আমাদের কতই না আয়োজন! আমরা জীবনযুদ্ধে লিপ্ত হই দুনিয়ার জন্যেই। আমরা সঞ্চয় করি, জমাই। আমরা আমাদের দুনিয়ার ‘আগামী’ দিনটার জন্যে সম্ভাব্য সকল প্রস্তুতিই নিয়ে থাকি; কিন্তু, আমরা যদি উপলব্ধি করতে পারতাম এই জীবন ঠিক কতটা ক্ষণস্থায়ী, কতটা ভঙ্গুর!
.
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই দুনিয়ার জীবনের বাস্তবতা বোঝাতে গিয়ে সেটাকে ওই অশ্বারোহীর সাথে তুলনা করেছেন যে সফরে বের হয়। মাঝপথে একটি গাছের নিচে খানিকটা জিরিয়ে নেয়, এবং এরপর আবার যাত্রা শুরু করে। তিনি বলেছেন, দুনিয়ার জীবনের বাস্তবতা হলো গাছের নিচে অশ্বারোহীর বিশ্রামের ওই সময়টুকুই কেবল। চিন্তা করা যায় এই দুনিয়ার জীবনের সময়কাল কতটা ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র?
এটাই হলো দুনিয়ার জীবনের বাস্তবতা। মানুষের আসল জীবন হলো পরকাল যেখানে মানুষ অনন্তকাল ধরে থাকবে।
.
আমাদের অগ্রগামী একদল মানুষ পৃথিবীতে এসেছিলেন যারা দুনিয়াটাকে দুনিয়ার মতো করেই দেখেছেন। এটাকে আজীবন স্থায়ী নিবাস কিংবা চিরস্থায়ী কোনো রঙ্গমঞ্চ ভেবে তাঁরা ভুল করেননি। কেমন ছিল তাদের প্রাত্যহিক জীবন? কীভাবে দেখতেন তাঁরা জীবনকে? জীবনের পাঠোদ্ধারে তাঁরা কতটা উদ্গ্রীব ছিলেন? তাদের জীবন থেকে নেওয়া ঘটনা, উক্তি এবং জীবনের ব্যাপারে তাদের সরল স্বীকারোক্তিই হলো যে জীবন মরীচিকা।
.
একদল মানুষ আছে যারা এই দুনিয়াটাকে একটা বোঝা হিসেবে দেখে। আরেকদলের কাছে আখিরাতটাই গৌণ। এই দুই দলের মাঝেও একটি দল আছে যারা দুনিয়াকে ঠিক সেভাবে প্রাধান্য দেয়, যেভাবে দুনিয়াকে প্রাধান্য দেওয়া উচিত। যতটুকু প্রাধান্য দিয়েছিলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। যেভাবে প্রাধান্য দিয়েছিলেন আমাদের সালাফে সালেহিনগণ। প্রান্তিক দুই দলের বাইরে এসে এই দলটা দুনিয়া থেকে সংগ্রহ করে নেয় আখিরাতের রসদ। কুড়িয়ে নেয় পরকালের পাথেয়। সেই সৌভাগ্যবানদের জীবন থেকে টুকরো টুকরো ঘটনা, তাদের কথা, তাদের চলন, তাদের জীবন দিয়েই সাজানো যে জীবন মরিচীকা বইটি।
.
বইটির লেখক শাইখ আব্দুল মালিক আল-কাসিম। আদ-দুনইয়া যিল্লুন যায়িল নামের আরবি বইটি ইংরেজিতে Life is a fading shadow নামে অনুবাদ হয়। বাংলায় বইটির নাম রাখা হয়েছে যে জীবন মরীচিকা। আল্লাহ যেন লেখকের এই কাজটি কবুল করে নেন, আমিন।
Copyright © 2025 Seanpublication.com
Meher Afroz –
📙বুক রিভিউ📕
বই: যে জীবন মরীচিকা
লেখক:শাইখ আব্দুল মালিক আল-কাসিম
ভাষান্তর:আরিফ আবদাল চৌধুরি।
পিপাসাকাতর মানুষটি যখন উত্তপ্ত মরুভূমিতে এদিক- সেদিক হন্যে হয়ে পানি খোঁজ করে, তখন তাঁর চোখে দূরের মরীচিকাকে মনে হয় কোন নদীর অববাহিকা। সে দ্রুত গতিতে সেদিকেই ছুঁটে যায়। কিন্তু আরো সামনে গিয়ে সে উপলুব্ধি করতে পারে সেখানে কোনো নদী নেই। এমনই বার বার মরীচিকাকে পানি ভেবে পেছনে ছুঁটতে ছুঁটতে একসময় তাঁর পরানপাখি ফ্রুৎ করে উড়ে যায়।
এই দুনিয়াটাও ঠিক মরীচিকার মতো দুর্নিবার মোহের হাতছানি।এই হাতছানির ইশারায় প্রলুব্ধ হয়ে একসময় মানুষ ভুলে যায় জীবনের চিরন্তন সত্যকে।ভুলে যায় তাকেও একদিন মরতে হবে। সে ভুলতে বসে তার চোখে যে স্বপ্নগুলো ঝলমল করছে সেগুলো অপূর্ণই থেকে যেতে পারে। তার ইট- কাঠের তৈরি দেয়াল, ফুলের বাগান, স্ত্রী- সন্তানের অটুট বন্ধন সবকিছুই তাঁর জন্য পরিক্ষাসরূপ। এসব সবকিছুই একদিন ফিকে হয়ে যাবে। মুছে যাবে তার জীবন থেকে তবুও মানুষ এ মরীচিকাময় জীবনের পিছু পিছু ছুটে। পৃথিবী নামক গোলক ধাঁধাঁয় আটকে পড়া সেই বিপদগ্রস্ত মানুষকে ফিরিয়ে আনতে মহাসত্যের কিছু বার্তা বহন করছে এ বইটি। এই বইটিতে মূলত দুনিয়াবিমূখ সালফে সালেহীনদের ভাবনাগুলোই সংগ্রহ করা হয়েছে।এই ছোট্ট একটি বই আখিরাত তথা চূড়ান্ত গন্তব্যের পাথেয় যোগাবে, ইনশা আল্লাহ।
বইয়ের কিছু অংশঃ—
‘মৃত্যুর তীর ইতিমধ্যেই প্রত্যেক মানুষের দিকে তাক করা হয়ে গেছে।শুধু অপেক্ষা সেই তীর কখন ছোড়রা হবে।’
পৃষ্ঠা নং—২৪
‘তুমি তোমার হৃদয়কে ততক্ষণ পর্যন্ত পুরোপুরি নিয়ন্ত্রন রাখতে পারবে না,যতক্ষণ না তুমি এমন লোকদের ব্যাপারে অনাগ্রহ দেখাও যারা নিজের জীবনকে উদাসীন ভাবে কাটিয়ে দিয়েছে।’
পৃষ্ঠা নং–২৬
‘যখন দেখি কোনো লোক দুনিয়ার প্রতি আসক্ত কোনো লোকের সাথে বেশি মেলামেশা করছে,তখন বুঝতে পারি,এই দুনিয়াকে সে ভালোবাসে।’
পৃষ্ঠা নং— ২৯
‘দুনিয়ার জীবনে প্রবেশ করা সহজ,কিন্তু তা থেকে বেড় হওয়া কঠিন।’
(সূত্র:ইহইয়াউ উলুমিদ্দীন,খন্ড-৩;পৃ:২২৪)
‘জীবন হলো ঘোড়দৌড় ময়দানের মতো,যেখানে ঘোড়ার খুরের আঘাতে ময়দান ধুলা ভরে গেছে।আর যার কারণে কে আগে যাচ্ছে আর কে পরে যাচ্ছে তা বোঝা কঠিন হয়ে যাচ্ছে।’
পৃষ্ঠানং–৩৭
‘অতিত হলো ‘যা চলে গেছে’; আজ হলো ‘কাজের সময়’ এবং আগামী হলো ‘আশা’।
পৃষ্ঠা নং— ৫৬
পাঠপ্রতিক্রিয়াঃ—
বইটা আমি এ পর্যন্ত তিনচার বার পরেছি। তাছাড়া কারণে অকারণে টেবিলে হাত বাড়িয়ে বইটি থেকে কিছু লাইন পড়ে রেখে দেই।বইটি আমাকে বারংবারই আত্মানিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করেছে। ইহলৌকিক চাহিদাগুলো যখন এক সিড়ি দুই সিড়ি বেঁয়ে আকাশ ছুঁয়ার উপক্রম হত, আকাঙ্খিত কিছু না পেলে খুব কান্না চলে আসতো তখন যুহুদ টাইপের বইগুলো নিয়ে বসতাম (এখনও বসি)। সেসব বইগুলো ভেতর এই বইটারও অনেকটা স্থান রয়েছে। হ্যাঁ, অকোপটে এ কথাটি বলতে পারি- যতবার না বইটা রিডিং পড়েছি ততবার নিজের জীবনের মূল লক্ষ্য সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পেয়েছি।এ কথাটাও সত্য… মাঝে মাঝে আমলে হযবরল হয়ে গেলে বইটা সামনাসামনি থাকলে কেমন যেন অনুশোচনা অনুভব করেছি।
রিভিউ দাতাঃ Meher Afroz
Umme Suraiya –
যে জীবন মরীচিকা
শাইখ আব্দুল মালিক আল-কাসিম
––––––––––––––––––––––
দুনিয়া এক দুর্নিবার মোহের হাতছানি।এই মোহনিয়া হাতছানির ইশারায় প্রলুব্ধ হয়ে মানুষ এক সময় ভুলে যায় জীবনের নির্মোহ ও চিরন্তন সত্য।
মানুষ জানে,একদিন জীবনের সব শৃঙ্খল ভেঙে যাবে। থেমে যাবে সব রঙিন স্বপ্ন। ফিকে হয়ে যাবে জীবনের সব মধুর সম্পর্ক। তবুও মানুষ ভালবাসে মরীচিকাময় এই দুনিয়া।
আল্লাহ বলেন, “এ দুনিয়ায় জীবন উপভোগের বস্তু ছাড়া কিছুই নয়। নিশ্চয় আখিরাত হচ্ছে সেই আবাস -যা চিরকাল স্থায়ী হবে।(৪০;৩৯)
এই বইয়ের শিক্ষা:
——————————
১)মরীচিকাময় জীবনের বাস্তবতা
২)দুনিয়ার জীবনের স্বরূপ
৩)আত্ম নিয়ন্ত্রণ
আমার মতামত :
——————————
এই বইয়ের প্রতিটা পেজ আমাকে মরীচিকাময় জীবনের বাস্তবতা সম্পর্কে বুঝতে সাহায্য করেছে এবং আশা রাখছি , দুনিয়া বিমুখ জীবন যাপনে প্রেরনা যোগাবে 😊
বইয়ের প্রস্থচ্ছেদ এবং পেইজ কলিটি ছিল অসাধারণ সুন্দর। যা আমাকে মুগ্ধ করেছে।
বই সর্ম্পকিত তথ্য :
––––––––––––
নাম:যে জীবন মরীচিকা
লেখক:শাইখ আব্দুল মালিক আল-কাসিম
প্রকাশন :সমকালীন
মূল্য :১৫০ টাকা
উম্মে সুরাইয়া