এই দ্বীন পালন যেন উত্তপ্ত মরুভূমিতে একাকি পথ চলা, তৃষ্ণায় কাতর হয়ে ছুটে চলা, থমকে যাওয়া, মাটিতে গড়িয়ে পড়া, শীতল পানিতে ডুকা মেটানো, কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেওয়া গাছের ছায়ায়। উস্কোখুস্ক চুল, ধুলোমাখা পা, জরাজীর্ণ জামা অবশেষে এই দৌড় প্রতিযোগিতার শেষ প্রান্তে পৌঁছা। যার পরের কদম থেকেই আল্লাহ আযযা ওয়া যাল আমাদের দিয়েছেন অনন্ত সুখের প্রতিশ্রুতি। তাই সেই জীবনের স্বপ্ন অন্তরে বুনে নিন, যে জীবন আল্লাহর জন্য বাঁচে। যে জীবন ঘাস ফড়িঙ কিংবা জোনাকি পোকার মতো বন্দি নয়। যে জীবন অনেকের ভিড়ে পরাজিত, অধঃপতিত মানসিকতার নয়। যে জীবন এক বিঘত বুকে বিশাল আকাশ ধারণ করে বাঁচে। যেদিন বুক এফোড় ওফোঁড় করে বেরিয়ে যাবে শত্রুর আঘাত, মাটিতে গড়িয়ে পড়বে প্রথম রক্তবিন্দু, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা দেখিয়ে দেবেন জান্নাতে আমাদের ঘর, সেদিন—সেদিন হয়তো আকাশের ওপারের ঐ জীবনের জন্য কিছু সঞ্চয় হলো।
Copyright © 2024 Seanpublication.com
ফাতিমা মৌ ফ্লাভিকা –
||বই পর্যালোচনা ||
সেক্যুলার এই সমাজে জীবনের দর্শন, মাপকাঠি, সফলতার সংজ্ঞা যে ধাঁচে গড়ে উঠেছে ছোটবেলা থেকে শুরু করে আমরা সফলতাকে সে আঙ্গিকেই খুঁজি, সেটাকে ঘিরেই স্বপ্ন সাজাই। ভোগ, সম্পদ, শিক্ষার ডিগ্রি,সামাজিক স্ট্যাটাস এসব অসুস্থ প্রতিযোগিতার বেড়াজালে আটকে ভুলে যাই জীবনের উদ্দেশ্য, রবের আনুগত্য। ‘মানুষ কী বলবে’, ‘সমাজের আর দশজন কী করছে’ এই বেঁধে দেয়া নিয়মের চক্রে উদভ্রান্তের মতো ঘূর্ণন করাই আজ আমাদের জীবন।এই জীবন এতোই ঠুনকো যে, সামান্য জিপিএ, এডমিশনে চান্স না পেয়ে কিংবা চাকুরির বরখাস্ত মেনে নিতে না পেরে অনেকেই বেছে নেয় আত্মঘাতির পথ,বেছে নেয় আত্মহননের পথ!চারপাশের গতিশীল জীবনের সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার অসুস্থ প্রতিযোগিতায় নেমে আখিরাতের চূড়ান্ত পরীক্ষার কথা ভুলেই দিব্যি চলছে আমাদের এই জীবন!
এমন উদভ্রান্ত জীবন আর সমাজের চিত্র তুলে ধরে প্রত্যাহিক জীবন থেকে নেওয়া কিছু চিরসত্য ঘটনার আলোকে রিমাইন্ডারমূলক বই ‘যে জীবন ফঙিয়ের যে জীবন জোনাকির ‘!
||যা নিয়ে এই বই||
গৎবাঁধা জীবনের বেড়াজালে কঠিনভাবে আবদ্ধ হয়ে আছে আমাদের জীবন! ক্যারিয়ার,উচ্চ শিক্ষা, সম্পদ অর্জন, ভোগ-বিলাসিতার মধ্যেই দেওয়া হয়েছে সুখের সজ্ঞা! অসুস্থ এই সমাজের খপ্পরে পড়ে শেষ পর্যন্ত দুনিয়ামুখী মানুষগুলো ঘাসফড়িং আর জোনাকির মতো বন্দী হয়ে কাটিয়ে দেয় মাটির পৃথিবীর এই ছোট্ট জীবন!
বইটিতে দুনিয়ার এই চাকচিক্য জিনিসগুলোর ঘোর চক্র সম্পর্কে রিমাইন্ডারমূলক সচেতনতা নিয়ে কিছু কথামালা রচিত হয়েছে।দুনিয়াকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে,কিভাবে সাহাবীদের মতো করে জীবনের অর্থ খুঁজে নিতে হয় এই বইটা আমাদেরকে তাই শেখাবে।লেখকের আশেপাশের জগত থেকে নেয়া কিছু উপমা বৃত্তের বাইরে গিয়ে কিছুটা হলেও চিন্তা ভাবনা করতে শেখাবে । ভাবনা-চিন্তাহীন জীবনে কিছুটা ভাবনার মোহনায় বসিয়ে দেওয়ার অদ্ভুত সুন্দর এক বই!
||বইটি কেন পড়বেন ||
লেখক একজন জেনারেল পড়ুয়া মানুষ হওয়ার সেক্যুলার শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে পরিজ্ঞাত।তাই জেনারেল পড়ুয়া ভাইবোনদের জন্য এই বইটি পড়া আমি একান্ত জরুরী মনে করি,গৎবাঁধা জীবনের বাহিরে জগৎপাতা যে সুন্দর জীবন রয়েছে সেই জীবন নিয়ে ভাবানোর অসাধারণ এক বই এটি।ভাবনার চোখকে ৩৬০ ডিগ্রি এঙ্গেল এ ঘুরিয়ে দিয়ে জীবন খুঁজে ফিরবে সাহাবিদের মতো আকাঁ ফুলের মতো সুন্দর জান্নাতী জীবনের সোপান। সুতরাং, দু-চোখে জান্নাতী জীবনের স্বপ্ন আঁকতে চাইলে বইটি পড়ার ক্ষেত্রে ২য় বার ভাবার কোনো সুযোগ নেই।
||আমার পাঠ্যনুভূতি||
আমাকে যদি জীবনগঠনমূল বইয়ের লেখকদের নাম জিজ্ঞেস করা হয় টপ লিষ্টে সাজিদ ভাইয়ের নামটা অবশ্যই বলবো।উনার সম্পাদিত আরো কয়েকটা বই পড়েছি,সবচেয়ে ভালো লাগে উনার বইগুলোতে অনেক তথ্যবহুল আলোচনা দেওয়া হয়,আমি পড়ি আর মুগ্ধ হয়ে ভাবি!আল্লাহ উনাকে অনেক বারাকাহ্ দান করুক, আমীন।
এই বইটা সম্পর্কে বুকমার্ক পাবলিকেশন আর ‘যে জীবন ফড়িং যে জীবন জোনাকির ‘নামক পেইজে অনেক লেখা পড়েছি আর মুগ্ধ হয়েছি।খুব ইচ্ছে ছিল বইটা প্রকাশিত হলেই কিনবো,অবশেষে কিনে পড়ে ফেললাম, আলহামদুলিল্লাহ।প্রতিটি অধ্যায়ের শেষে লেখকের হৃদয় নিংড়ানো দুআগুলো অন্তরে প্রভাব ফেলার মতো।দুআগুলো পড়তে গিয়ে খেই হারিয়ে ফেলেছি। বইয়ের প্রচ্ছদটাও তো মা শা আল্লাহ।আমার মতো ক্ষুদে পাঠকের জ্ঞান সীমাবদ্ধতা দূর করার জন্য এমন বই আরো দরকার।
বই:যে জীবন ফড়িঙের যে জীবন জোনাকির
লেখক:সাজিদ ইসলাম
মূল্য :২৫০ টাকা
বুকমার্ক পাবলিকেশন
M. Hasan Sifat –
দ্বীনে প্রত্যাবর্তনের শুরুর দিকে ফেসবুকে হাতেগোনা অল্পকিছু ভাইদের লেখা একদম অন্তরে গিয়ে লাগতো । এই বইটারও কিছু কিছু লেখা ফেসবুকে ছিল তখন । খুঁজে খুঁজে সব পড়ে ফেলতাম । একটার পর একটা । যখন বইটি পড়ছিলাম, দ্বীনে প্রত্যাবর্তনের সময়কার দিনগুলোর কথা মনে পড়ে গিয়েছিল । নস্টালজিক হয়ে পড়ছিলাম । সেসময় এই লেখাগুলো কতো আবেগের সাথে নিয়ে নিতাম । সেই লেখাগুলোই এখন মলাটবন্দী হয়ে এসেছে– “যে জীবন ফড়িঙের যে জীবন জোনাকির” নামে ।
–
যে কথাতে ‘নূর’ থাকে সেকথাগুলোই কেবল খুব সহজে অন্তরে গিয়ে দাগ কাটে । এ বইয়ের প্রতিটা কথায় ‘নূর’ ছিল বলে মনে হয়েছে । প্রচন্ডভাবে প্রভাবিত করেছে আমায় । পুরোনো কথাগুলো নতুন করে আবার ভাবিয়েছে । প্রতিটা কথা অন্তরে গিয়ে লেগেছে । যেন জানালা খুলে নীল আকাশ দেখার মতো । যে আকাশের বিস্তৃতি জান্নাত পর্যন্ত । সেই জান্নাত, যে জান্নাতে দুঃখ নেই, কষ্ট নেই, মন খারাপও নেই ।
–
“বইটা কাদের জন্য লেখা?” – এই প্রশ্নের নির্দিষ্ট উত্তর লেখক দিতে পারেন নি । পাঠক হিসেবে আমিও এর উত্তর খুঁজতে গিয়েছিলাম । ব্যর্থ হয়ে ফিরে এসেছি । তবে মোটামুটি এই সিদ্ধান্তে এসেছি যে, এই বইটা সবচেয়ে জরুরী জেনারেল পড়ুয়াদের জন্য । স্কুল-কলেজ-ইউনিভার্সিটি পড়ুয়াদের জন্য । সাজিদ ভাই যেহেতু জেনারেল থেকে উঠে এসেছেন, তাই তিনি জেনারেলদের মনস্তাত্ত্বিক দিকটা খুব ভালোভাবেই ধরতে পেরেছেন । সেভাবেই আলোচনা করেছেন । যেন আমাদেরই রোজকার দৃশ্যগুলোই তুলে ধরেছেন বইয়ের পাতায় ।
আবার কখনো মনে হয়েছে, দুনিয়ার পিছনে ছুটতে ছুটতে ক্লান্ত হয়ে পড়া পথিকের জন্য । মোহের জগতে সাময়িক ফ্যান্টাসিতে যারা ডুবে আছে তাদের জন্য । সস্তা বিনোদন, মুভি, গান, প্রেম-ভালোবাসার সস্তা গল্প-উপন্যাসে ডুবে থাকা এলিট শ্রেণিদের জন্য ।
–
সেক্যুলার শিক্ষাব্যবস্থা আমাদেরকে জীবনের আসল উদ্দেশ্য থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছে । দুনিয়াকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে, কিভাবে সাহাবীদের মতো করে জীবনের অর্থ খুঁজে নিতে হয় এই বইটা আমাদেরকে তাই শেখাবে । লেখকের আশেপাশের জগত থেকে নেয়া কিছু উপমা বৃত্তের বাইরে গিয়ে কিছুটা হলেও চিন্তা ভাবনা করতে শেখাবে । ভাবনা-চিন্তাহীন জীবনে কিছুটা হলেও ভাবনার খোরাক এনে দেবে ।
–
প্রতিটি অধ্যায়ের শেষে লেখকের হৃদয় নিংড়ানো দুআগুলো অন্তরে প্রভাব ফেলার মতো । দুআগুলো পড়তে গিয়ে খেই হারিয়ে ফেলেছি ।
নোট করে নিয়েছি যেন উঠতে-বসতে-চলতে-ফিরতে এই সুন্দর দুআগুলো আরশের রবের কাছে করতে পারি ।
–
সূচিপত্রের সাজসজ্জা ভাল লাগেনি । এলোমেলো লেগেছে । প্রচ্ছদ খুবই সুন্দর, চোখ জুড়ানো সুন্দর । যতোবার বইটা পড়তে গিয়ে বইটার প্রচ্ছদের দিকে তাকিয়েছি ততবারই মুগ্ধ হয়েছি । আমি কয়েকজনকে জানি, যারা কিনা এই বইটার বিষয়বস্তু না জেনে কেবল প্রচ্ছদ দেখেই বইটা কিনতে আগ্রহী হয়েছে ।
–
বইয়ের শুরুতে লেখক একটি ইচ্ছেপত্র লিখেছেন, সেটুকু পড়ে শুরুতেই আমি খেই হারিয়ে ফেলেছি । সেটুকু পড়ার পর আমারো একটা ইচ্ছে জেগেছে । হৃদয় গহীনে সে ইচ্ছেটা পুষে রেখেছি ।
–
পরিশেষে,
আপনার হতাশাগ্রস্থ ছোট-ভাইবোনদেরকে বইটা উপহার দিন । যারা জীবনের মানে খুঁজে পাচ্ছে না, বেঁচে থাকাটা যাদের কাছে অর্থহীন মনে হচ্ছে, তাদেরকে দিন । বাস্তবতাটা বুঝতে শিখবে ৷ পৃথিবীটাকে অনেক সুন্দর মনে হবে । কেবল আল্লাহর জন্যই বাঁচতে ইচ্ছে করবে ।
–
–
বই— “যে জীবন ফড়িঙের যে জীবন জোনাকির”
প্রকাশনী— বুকমার্ক পাবলিকেশন ।
nayeem_sharder –
বই- যে জীবন ফড়িঙের যে জীবন জোনাকির
বইয়ের নাম দেখে প্রথমে মনে হয়েছিলো, বইটা কিশোরদের জন্য লেখা। কিন্তু বইটা পড়ার পরে মনে হলো, কিছু কথা কিশোরদের মাথায় হাত বুলিয়ে জীবনাদর্শের লক্ষ্য দেখিয়ে দিচ্ছে। আবার কিছু প্রবন্ধ ভাবিয়ে তুলতে পারে মধ্যবয়স্ক কোন যাত্রীকে।
প্রতিটা প্রবন্ধ খুব ছোট ছোট। বেশ চমৎকার উপস্থাপন। আত্মশুদ্ধির কিছু তৃষ্ণা অবশ্যই মিটবে বইটিতে। জীবন কি শুধু ফড়িঙের মত উড়িয়ে দিবো.? আর ক্ষনিকের জন্য জোনাকির মত জ্বলে উঠেই শেষ হয়ে যাবো.? যদি এই প্রশ্নটুকুর উত্তর জানা না থাকে তাহলে বইটি আপনার জন্য।
আমরা একটা অসুস্থ প্রতিযোগীতায় পরে গেছি। যেখানে অস্থায়ী জীবনের সাফল্য নিয়ে মাতামাতি কিন্তু স্থায়ী জীবনের কথা স্বরণ করিয়ে দেওয়ার লোক দুস্পাপ্য! লেখক চেষ্টা করেছে সেই শূন্যতা পূরণ করার। বইয়ের প্রতি গল্পই জীবন ঘনিষ্ঠ। কোথাও না কোথাও নিজের সাথে মিলে যাবেই।