জাহান্নাম। একটি ভয়ংকর জায়গা। একটি দুঃখের কারাগার। কষ্টের অতল দরিয়া। জাহান্নামের আযাব এবং শাস্তির কথা বলে শেষ করা যাবে না। যে দুঃখ-কষ্টের কোনো শেষ নেই। মানুষ কীভাবে এ জাহান্নামকে চিত্রায়িত করবে। কীভাবে কল্পনা কিংবা বর্ণনা করবে জাহান্নামের ইতিবৃত্ত কিংবা আদি-অন্ত।
Copyright © 2024 Seanpublication.com
Meherunnesha Khatun –
জাহান্নাম! নামটা শুনলেই প্রতিটি বিশ্বাসীদের অন্তর ভয়ে কেঁপে ওঠে। এটি এমন এক ভয়ানক জায়গা যা কোনো আদম সন্তানের পক্ষে চিত্রাঙ্কন করা বা কল্পনা করা কিংবা বর্ণনা দেওয়া কস্মিনকালেও সম্ভব নয়। এক তিল পরিমাণও জাহান্নামের ভয়ঙ্কর আযাব কিংবা নিদারূণ পীড়নকর শাস্তি ভোগ করার ক্ষমতাও কোনো প্রাণীকুলের নেই। জাহান্নাম হলো অকৃতজ্ঞ অবিশ্বাসী বান্দাদের জন্য আযাবঘর, উত্তপ্ত লেলিহান শিখা, যে দাবানলের জ্বালানি হবে মানুষ এবং পাথর! এই কষ্টের অতল গহ্বর তথা জাহান্নামের আদ্যপ্রান্ত নিয়েই লেখক ইমাম ইবনু আবিদ দুনিয়া (রহ.) এর রচিত মূলগ্রন্থ ‘সিফাতুন নার’ এর বাংলা অনুবাদ পথিক প্রকাশন থেকে সদ্য প্রকাশিত হয়েছে। বইটির নাম ‘জাহান্নাম : দুঃখের কারাগার’ এবং এটি অনুবাদ করেছেন আম্মার মাহমুদ।
বইটির বিষয়বস্তু :-
————————–
ভয় ও আতঙ্ক মিশ্রিত শিরোনামে ৮ টি অধ্যায়ের সমন্বয়ে রচিত ‘জাহান্নাম : দুঃখের কারাগার’ বইটি। বইয়ের প্রথম অধ্যায়ে জাহান্নাম থেকে আশ্রয় কামনা করে দোওয়া করার কথা, জাহান্নামের দাঁত, দরজা, আগুন, এবং এর গভীরতা বর্ণনা করা আছে। দ্বিতীয় অধ্যায়ে জাহান্নামের পাহাড়, উপত্যকা, দুঃখের সাগর, আগুনের বিশাল বিশাল চাকি, জাহান্নামের ঘর-প্রাসাদ-কূপ সবকিছু সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ভাবে বিশ্লেষণ করা আছে। তৃতীয় অধ্যায়ে জাহান্নামের হাতুড়ি, বেড়ি, আগুনের শিকল, কালো মেঘ, বিশেষ হাতকড়া, উত্তপ্ত গরম পানি এবং অহংকারীদের চূড়ান্ত শাস্তির কথা বর্ণিত আছে। চতুর্থ অধ্যায়ে যাক্কুম ফল, গিসলীন খাদ্য ও বিষাক্ত সাপের বিষ দিয়ে জাহান্নামীদেরকে কিভাবে আপ্যায়ন করা হবে তা বর্ণনা করা আছে। এই অধ্যায়ে আরও আছে স্ফুলিঙ্গ, মশক ভর্তি পানির কথা, মুহল নামক আযাবের বীভৎস রূপ, ‘সদিদ’ এর পরিচয়, গাসকাক কি ও এর ব্যাখ্যা ইত্যাদি।
একই ভাবে বাকি চারটি অধ্যায়ে রয়েছে কাফির, মুনাফিক সহ প্রাণীর চিত্র অঙ্কনকারী কিংবা নবীকে হত্যাকারীর শাস্তি এবং আছে সেই সব চিরস্থায়ী জাহান্নামীদের কথা যাদের আযাব হবে সবথেকে কঠিন এবং কেমন হবে সেই কঠিন আযাব – তার বর্ণনা দেওয়া আছে পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে। আগুনের বাক্স, বিচ্ছুর নখের দৈর্ঘ্যতা, তাদের কর্ণকুহরে বেজে ওঠা বিকট চিৎকারের শব্দ, জাহান্নামীদের গায়ের চামড়া ও তাদের বিভৎস চেহারার পরিচয় সম্বন্ধে সুস্পষ্ট আলোচনা করা আছে। জাহান্নামের ফেরেস্তা, ভিন্ন ভিন্ন পাপ অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন আযাবের বর্ণনা সহ জাহান্নামীদের বিলাপ, কান্নাকাটি ও তাদের চূড়ান্ত পরিণতির কথা বর্ণিত হয়েছে এই বইটিতে।
বইটির বিশেষত্ব :-
—————————
♦ শব্দভাণ্ডার এবং বাক্যাংশ ভীষণ গোছালো, এবং সহজ, সরল, সাবলীল ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে যা পাঠকের বুঝতে কোনো অসুবিধাই হবে না।
♦ জাহান্নামের আযাব সম্পর্কে কমবেশি প্রত্যেক বিশ্বাসীই জানে। কিন্তু এই বইটিতে জাহান্নামের আদ্যোপান্ত লেখা আছে। অর্থাৎ অনেক অজানা জিনিসও পাঠক জানতে পারবেন।
♦ বাজারে জাহান্নাম সম্পর্কে লেখা অনেক বই-ই পাওয়া যায়, যেগুলোর বেশিরভাগই জাল হাদিস এবং বানানো গল্পে ভর্তি। কিন্তু এই বইটি সম্পূর্ণ আলাদা একটি বই। প্রতিটি পাতায় পাতায় কুরআন এবং সহীহ হাদিসের রেফারেন্স দেওয়া আছে। অর্থাৎ বইটি পড়লে একজন পাঠক জাহান্নাম সম্পর্কে যতটুকু জানতে পারবে তার পুরোটাই অথেনটিক।
♦ বইটিতে শুধুমাত্র যে জাহান্নাম সম্পর্কে বিশ্লেষণ করা আছে তা নয়। বরং জাহান্নাম থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করার কিছু দো’য়া ও আমলের কথা বলা আছে যা সহীহ হাদিস থেকে বর্ণিত।
♦ বইয়ের বেশিরভাগ পাতাতেই পাঠকের সুবিধার্থে পৃষ্ঠার নিম্নভাগে কিছু টিকা যুক্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ জাহান্নাম সম্পর্কিত কোনো হাদিস দেওয়া থাকলে নীচে টিকাকরণ হিসেবে সেই হাদিসের বিশ্লেষণ এবং অন্য বর্ণনায় ওই হাদিসটি কিভাবে ব্যাখ্যা করা আছে তা লেখক সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।
বইটি কাদের জন্য এবং কেন পড়বেন :-
——————————————————–
♦ প্রথমেই বলব জাহান্নাম থেকে দূরে থাকতে চাইলে বইটা পড়তে হবে।
♦ বইটিতে জাহান্নামিদের যেসব দোষত্রুটি, গোনাহের বর্ণনা দেওয়া আছে তা থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে চাইলে অর্থাৎ জাহান্নামিদের অন্তর্ভুক্ত হতে না চাইলে বইটি পড়া দরকার।
সর্বপরি, সবারই জাহান্নাম সম্পর্কে অবশ্যই জানা দরকার তাই বইটি একবার হলেও পড়া প্রয়োজন।
♦ তাছাড়া একজন পাঠক যখনই বইটি পড়বেন তখনই তাঁর অন্তরে জাহান্নামের ভয় সৃষ্টি হবে। আর আশা করা যাই তিনি তখন ধীরে ধীরে সব পাপ ছেড়ে দেবেন এবং ইন শা আল্লাহ একদিন তিনি একজন প্র্যাকটিসিং মুসলিমে পরিণত হবেন। জান্নাত পেতে ও জাহান্নাম থেকে বেঁচে থাকতে এবং সারাজীবন দ্বীনের পথে অটুট থাকতে চাইলে এটি হবে ভীষণ সহায়ক একটি বই।
♦ আর যাঁরা হেদায়েত পেয়েছেন অর্থাৎ গোনাহ খুব একটা করেন না তাঁদের জন্যও এই বইটি ভীষণ সহায়ক হবে আল্লাহর আরও নিকটবর্তী হতে। সর্বোপরি সমস্ত মুসলিম, যাঁদের মনে অণু পরিমাণও ইমান আছে এবং নাস্তিক-আস্তিক (প্রয়োজনে অমুসলিমদের হাতেও) এই বইটি পৌঁছে দেওয়া উচিত। আল্লাহ চাইলে এই বই থেকে প্রত্যেকেই উপকৃত হতে পারবেন।
পাঠ্যানুভূতি :-
———————
ছোটোবেলায় ভূতের গল্প পড়ার সময় শুধু ভয়ই পেতাম, গা ছমছম করতো, মনে হতো কেউ আমাকে সর্বক্ষণ পর্যবেক্ষণ করছে। অবচেতন মনে কেমন যেন ভেসে আসতো এক বিকট চিৎকারের আওয়াজ এবং অসহ্যকর পরিবেশ বিরাজ করতো চারপাশ। এই বইটি পড়ার সময় সেই এক অনুভূতি, তবে একটু ভিন্ন। সাংঘাতিক ভয় কাজ করছে জাহান্নামের আযাবের। আর সেই সাথে মিশে আছে আল্লাহর ভয়ে চোখ ফেটে বয়ে পড়া অজস্র অশ্রুকণা। বইটিতে জাহান্নামিদের যে বৈশিষ্ট্য দেওয়া আছে সেগুলো নিজের মধ্যে খুঁজে পেলে তখন আল্লাহর ভয়ে দু’নয়নে মুষলধারে বৃষ্টি ঝরছে অনবরত। জান্নাত পাওয়ার লোভও তখন বহুগুণ বেড়ে যাচ্ছে। বইটি পড়ার সময় জাহান্নামিদের আযাবের বর্ণনা পড়ে দুনিয়ার কষ্ট আর কষ্টই মনে হয়নি। সবর করা তখন অনেক সহজ হয়ে গেছে। আলহামদুলিল্লাহ।
তাই সকলকে বলব এই বইটি নিজ নিজ সংগ্রহে রাখুন। মাঝেমধ্যে পরিবারের সবাইকে নিয়ে এক মজলিসে বইটি পড়ুন। তাতে দ্বীন পালনও যেমন সহজ হবে তেমন পরিবারের মধ্যে ঐক্যতা ও তাগিদও থাকবে একে অপরকে জাহান্নাম থেকে বাঁচার জন্য।
পরিশিষ্ট :-
—————
উমার (রাঃ) বলেন, আমি নবী (সঃ) কে খুতবায় এ কথা বলতে শুনেছি,
“তোমরা বড়ো দু’টি জিনিসকে ভুলে যেও না।”
আমরা জিজ্ঞাসা করলাম– ‘হে আল্লাহর রাসুল, বড় দু’টি জিনিস কি?”
উত্তরে রাসুল (সঃ) বললেন,
“জান্নাত এবং জাহান্নাম।” (বুখারি)
বই পরিচিতি :-
———————-
▪️ বই :- জাহান্নাম : দুঃখের কারাগার
▪️ লেখক : ইমাম ইবনু আবিদ দুনিয়া (রহ.)
▪️ অনুবাদক : আম্মার মাহমুদ
▪️ প্রকাশনী : পথিক প্রকাশন
▪️ পৃষ্ঠা সংখ্যা : ১৬০
▪️ প্রচ্ছদ মূল্য: ৩০০ টাকা
▪️ বাইন্ডিং : হার্ডকভার