ঈমান ও বস্তুবাদের সংঘাত এটি সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী রহ.-এর লেখা আস-সিরাউ বাইনাল ঈমানি ওয়াল মাদ্দিয়াত-এর অনুবাদগ্রন্থ। আরবী কিতাবটির উর্দু সংস্করণের নাম মাআরেকায়ে ঈমান ও মাদ্দিয়াত।
সূরা কাহাফের আলোচিত অন্যতম ৪টি বিষয় :
-আসহাবে কাহাফ
-দুই বাগিচার মালিক
-হযরত মুসা ও খিযির আলাইহিমাস সালামের সফর এবং
-বাদশা যুলকারনাইন।
এ চারটি বিষয়কে নির্ভর করে অসাধারণ তাত্ত্বিক ও দার্শনিক আলোচনায় গ্রন্থটি রচনা করেছেন হযরত নদভী রহ.। হযরত নদভী রহ.-এর রচনামাত্রই পাঠকের ঈমানকে জাগিয়ে তোলে। চিন্তা ও চেতনাকে শানিত করে। বিবেক ও বিবেচনাকে আন্দোলিত করে। আমাদের ধারণা, এ গ্রন্থে তাঁর লেখার সেইসব প্রসাদগুণ যেন আরও মাত্রা পেয়েছে।
Copyright © 2024 Seanpublication.com
Halim Abdullah –
রিভিউ
.
বই: ঈমান ও বস্তুবাদের সংঘাত
মূল: সায়্যিদ আবুল হাসান আলি নদভি (রাহ.)
.
আমরা কেন এসেছি দুনিয়াতে?
আমাদের জীবনের চূড়ান্ত লক্ষ্য কী?
দুনিয়ার জীবনে আমাদের করণীয় কী?
এই তিনটি প্রশ্নের উত্তর আল্লাহ তা‘আলা বিশদভাবে জানিয়ে দিয়েছেন সুরা আল কাহাফে। তাই, বলার অপেক্ষা রাখে না—সুরা কাহাফ আমাদের জীবনদর্শনে কতোটা গুরুত্বপূর্ণ! সুরা কাহাফের বিষয়বস্তু, তাদাব্বুর ও শিক্ষা নিয়ে সায়্যিদ আবুল হাসান আলি নদভি (রাহ.) রচনা করেছেন ‘ঈমান ও বস্তুবাদের সংঘাত’ নামক অসাধারণ একটি বই। এই সুরায় ডুব দিয়ে তিনি জীবনঘনিষ্ঠ অনেক শিক্ষা ও জ্ঞানভাণ্ডার তুলে এনেছেন।
.
❖ বইটিতে কী আছে?
বইটিতে সুরা কাহাফে বর্ণিত চারটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। সেগুলো হলো: আসহাবে কাহাফের যুবকদের ঈমানদীপ্ত কাহিনি, দুই বাগিচার মালিকের কাহিনি, মুসা (আ.) ও খিযির (আ.)-এর কাহিনি এবং বাদশাহ জুলকারনাইন ও অসভ্য ইয়াজুজ-মাজুজের কাহিনি।
.
আসহাবে কাহাফের কাহিনি থেকে লেখক যেসব বিষয় তুলে এনেছেন তা হলো—কুরআন-হাদিস ও পূর্ববর্তী আসমানি কিতাবের আলোকে মূল ঘটনার ঐতিহাসিক বাস্তবতা ও বিভিন্ন ইন্টারেস্টিং তথ্য, মুমিনদের চরিত্রের আপোষহীন দিক, আল্লাহর জন্য ত্যাগ স্বীকারের পুরষ্কার এবং আল্লাহর অভাবনীয় সক্ষমতা।
.
দুই বাগিচার মালিকের ঘটনা থেকে স্পষ্ট করা হয়েছে—প্রকৃত ঈমানদারদের ঈমানি জৌলুস, বর্তমান যুগে প্রচলিত বস্তুবাদী দৃষ্টিভঙ্গির শির্ক, ইসলাম ও বস্তুবাদী দর্শনের মাঝে পার্থক্য, আখিরাতের বাস্তবতা ও সত্যতা এবং এ বিষয়ে আধুনিক সভ্যতার দুর্বলতা ইত্যাদি।
.
মুসা-খিযিরের ঘটনা থেকে মানুষের জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা ও বস্তুবাদী চিন্তার অসারতা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
.
সর্বশেষ, বাদশাহ জুলকারনাইন ও ইয়াজুজ মাজুজের ঘটনার কুরআন-সুন্নাহভিত্তিক ঐতিহাসিক বিবরণ, পশ্চিমাদের দাজ্জালি সভ্যতা এবং মুমিনদের দূরদর্শিতা নিয়ে আলোকপাত করা হয়েছে।
.
❖ বইটি কেন পড়া উচিত?
নদভি (রাহ.) প্রতিটি ঘটনা থেকে মানবজাতির, বিশেষত ঈমানদার ব্যক্তিদের জন্য শিক্ষণীয় অনেক দিক তুলে ধরেছেন। প্রতিটি ঘটনাই বর্তমান সময়ে প্রাসঙ্গিক এবং প্রেক্ষাপটও অনেকাংশেই অভিন্ন। লেখক খুব প্রজ্ঞা ও বুদ্ধিমত্তার সাথে বর্তমান সময় ও সেই সময়গুলোর মাঝে মেলবন্ধন তৈরি করেছেন। ঈমান ও বস্তুবাদের মাঝে চলমান চিরন্তন দ্বন্দ্ব, বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় দাজ্জালি প্রভাব, আল্লাহ তা‘আলার একত্ববাদের গুরুত্ব, মানুষের জ্ঞানগত অক্ষমতা ও সীমাবদ্ধতা, প্রতারণাপূর্ণ দুনিয়াবি জীবনের বাস্তবতা ইত্যাদি অনেক বিষয় উঠে এসেছে বইয়ের আলোচনায়।
.
❖ বইটির বিশেষত্ব:
এটি অ্যাকাডেমিক ধাঁচের একটি গবেষণাধর্মী বই, তবে উপস্থাপনা সহজ ও সাবলীল। বর্তমান সময়ের বিশ্বব্যবস্থা ও বিভিন্ন সভ্যতার আলোকে, প্রাচীন ও সাম্প্রতিক তাফসিরগ্রন্থসমূহের সূত্রে, আধুনিক গবেষণা ও বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনকে সামনে রেখে, বাইবেলের দুই টেস্টামেন্টের বিভিন্ন বর্ণনা এবং আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত (মুসলিম-অমুসলিম রচিত) ঐতিহাসিক বিভিন্ন গ্রন্থের রেফারেন্সের মাধ্যমে বইটিকে সমৃদ্ধ করা হয়েছে।
.
❖ বইয়ের নেতিবাচক দিক:
বইতে কিছু কথার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে বিভিন্ন আলোচনায়। হতে পারে, এটি বিষয়বস্তর গুরুত্ব চিন্তা করে করা হয়েছে। এছাড়া, মুহতারাম অনুবাদক জনাব সা’দ আবদুল্লাহ প্রচুর পরিমাণে মূল শব্দের সাথে তার সমার্থক ব্যবহার করেছেন, যা কিছুটা বিরক্তির উদ্রেক ঘটায়। যেমন: তিনি প্রায় স্থানেই এভাবে লিখেছেন—মোলাকাত ও সাক্ষাৎ, উপদেশ ও নসিহত, আখলাক ও চরিত্র, নাজাত ও মুক্তি ইত্যাদি। এভাবে মাঝখানে ‘ও’ দিয়ে দুটো একই অর্থের শব্দকে ভাগ করাটা সুন্দর দেখায় না। যাহোক, এগুলো বড় কোনো সমস্যা নয়।
.
প্রচ্ছদ, কাগজের মান, বাইন্ডিং, পৃষ্ঠাসজ্জা ইত্যাদি নিয়ে কোনো অভিযোগ নেই। অনুবাদও যথেষ্ট ভালো হয়েছে। বইটি আপনারা সংগ্রহ করতে পারেন।