আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন তার ইবাদতের জন্য। তার তাওহিদের স্বীকারোক্তির জন্য। কিন্তু আমরা আল্লাহ তাআলার ইবাদত ভুলে গুনাহ করে বসি। শয়তানের ধোঁকায় পড়ে তার আনুগত্য করি। আল্লাহর অবাধ্যতা করি। আল্লাহর অবাধ্যতা করলে, গুনাহ করলে অন্তরের মাঝে কালো দাগ পড়ে যায়। কালো দাগ পড়তে পড়তে অন্তর এমন হয়ে যায় যে ভাল কাজের খেয়াল অন্তরে আসেই না। আসলেও খারাপের ভীড়ে একটি ভালকাজ করার হিম্মতও হয় না অন্তরে।
সমাজে পাপাচার এতোটাই বেড়ে গিয়েছে যে, গুনাহ নিয়ে বললেও খুব চিন্তা ভাবনা করে বলতে হয়। গুনাহের ব্যাপারে উম্মতের আলেমগণ সতর্ক করেছেন যুগে যুগে। লিখেছেন অনেক পুস্তক ও পুস্তিকা। বয়ান ও বক্তৃতায় উম্মতকে সতর্ক করেছেন গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার ব্যাপারে। তেমনি একজন মহান ব্যক্তি হলেন আল্লামা ইবনুল কাইয়িম আল জাওযিয়্যাহ রহিমাহুল্লাহ। উম্মতের ব্যাপারে বড়ই চিন্তিত ছিলেন। তাই তো তার কিতাবের মধ্যে উম্মতদরদির নিশান মিলে। রহিমাহুল্লাহর গুরুত্বপূর্ণ একটি রচনা হল
الجواب الكافي لمن سأل عن الدواء الشافي “আল জাওয়াবুল কাফী লিমান সাআলা আনিদ দাওয়ায়িশ শাফী” অথবা الداء والدواء
“আদ দাউ ওয়াদ দাওয়াউ”। রহিমাহুল্লাহ কিতাবটির মাঝে উম্মতের আভ্যন্তরীন রোগ তথা অন্তরের রোগ ও তার প্রতিকার বর্ণনা করে দিয়েছেন। ইবনুল কাইয়িম রহিমাহুল্লাহ তার যুগে লিপিবদ্ধ করে গিয়েছেন কিতাবখানা সেই সময়কার অবস্থার প্রেক্ষাপটে। কিন্তু সেটি আজকের দিনেও যেন নির্দেশ করছে। কেমন যেন তিনি বর্তমানের জন্যই বলছেন। কথাগুলো যেন আমাদের সময়ে আমাদেরকে খেতাব করে বলা হচ্ছে।
আলোচিত কিতাব ‘আদদাউ ওয়াদদাওয়া’ বা আলজাওয়াবুল কাফী এর মাঝে গুনাহের আলামত বা প্রভাব সমূহ নিয়ে আলোকপাত করেছেন। এবং গুনাহের কারণে কী কী ক্ষতি হয় তাও উল্লেখ করেছেন। পাশাপাশি গুনাহ থেকে উত্তরণের পথও বাতলে দিয়েছেন।
Copyright © 2024 Seanpublication.com
সিরাজাম বিনতে কামাল –
🔸গুনাহ থেকে ফিরে আসুন:
_______________________
মনে হয়, আমাদের শুভাকাঙ্ক্ষী কেউ একজন আবেগতাড়িত হয়ে আমাদের ডেকে বলছেন গুনাহ থেকে ফিরে আসুন। হ্যাঁ, ঠিক এরকমই একটি বই “গুনাহ থেকে ফিরে আসুন”। লিখেছেন আল্লামা ইবনুল কায়্যিম আল জাওযিয়্যাহ রহ.। অনুবাদ করেছেন মুহিবুল্লাহ খন্দকার। প্রকাশনায় আয়ান প্রকাশন।
________________________________________________
বই পাঠ্যানুভূতি:
__________________
🔸বই থেকে নতুন জানলাম, গুনাহর সাধারণ উদ্রেককারী বস্তু তিনটি।
১.নারী, ২. ধন-সম্পদ, ৩. জায়গা-জমি।
প্রথমেই নারী লেখাটা দেখেই একটু কুঁচকে গিয়েছিলাম। যেহেতু আমি নিজেও একজন নারী। টপিকটা পড়া শুরু আগেই মনে মনে বলছিলাম, আমি যেন এমন নারী না হয় যার জন্য ফিতনার সৃষ্টি হবে। বা কেউ গুনাহতে পতিত হবে।
🔸 দ্বিতীয়ত, একটি গুরুত্বপূর্ণ টপিক পেয়েছি যার শিরোনাম “গুনাহ পরিত্যাগ করতে ইচ্ছুককে শয়তান যেভাবে ওয়াসওয়াসা দেয়”।
একদমই বাস্তবসম্মত কথাগুলো ফুটে উঠেছে এই টপিকে। গুনাহকে গুনাহ মনে না হওয়া। গুনাহর পক্ষে ঠুনকো দলিল দেখানো। বা অন্যদের কটাক্ষ করে বলা, দেখেছি কতই নামাজী, হাজী, ইবাদতকারী! কী ফায়দা দিয়েছে এদের এই ইবাদত, তার চেয়ে আমিই ভালো আছি।
🔸“লজ্জা শরম না থাকা গুনাহে লিপ্ত হওয়ার বিশেষ কারণ”- এই টপিকটি সবার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলার অপেক্ষা রাখে না। কারণ, লজ্জাহীনতা আমাদের সমাজে মহামারীর মতো ছড়িয়ে আছে। আর সেই থেকে জন্ম নিচ্ছে নানা ধরণের অবর্ণনীয় লোমহর্ষক ঘটনা।
লজ্জা না থাকলে যা মনে চায় তাই করা যায়। আর মন চায় তাই করে ফেলা মানেই গুনাহয় পতিত হওয়া। ইটস অ্যা বেস্ট রিমাইন্ডার ফর মি।
🔸“অন্তরের মূল বিষয়” নামক শিরোনামে আবারও লজ্জাহীনতা আর লজ্জাশীলতার কথা দেখে অবাক হই নি। বরং অনুধাবন করতে পেরেছি, সকল কল্যাণকাজের মূল লজ্জা। আর লজ্জা শেষ হয়ে যাওয়া মানে সর্বপ্রকার কল্যাণ কাজ শেষ হয়ে যাওয়া।
🔸“গুনাহে পতিত হওয়ার কারণসমূহ” পেয়েছি
১. প্রবৃত্তির অনুসরণ ২. মূর্খতা ৪.খারাপ বন্ধু ও সহপাঠী ৫. দীর্ঘ হায়াত আশা করা ৬. অবসরতা ৭. নজরসহ আরো কিছু টপিক যেখানে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে গুনাহের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছানোর বাস্তব কথাগুলোই ফুটে উঠেছে।
🔸 শেষ টপিক এবং মোস্ট ইর্ম্পট্যান্ট যে শিরোনাম “গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার উপায়”। পুরো বইটা না পড়লেও এই অংশটুকু অবশ্যপাঠ্য বলব আমি। কারণ, এই অংশটুকু আমাদের গাইডলাইন হিসেবে কাজ করবে। ইন শা আল্লাহ! গুনাহ থেকে দূরে থাকার অন্যান্য পন্থার মধ্যে একদমই নতুন জেনেছি নফসের মুহাসাবা বা হিসাবনিকাশ।
১/ আমলের পূর্বে মুহাসাবা ২/ আমলের পরে মুহাসাবা।
🔸উপসংহার:
____________
❝তোমরা নিজেদের হিসাবনিকাশ করে নাও, তোমাদেরকে হিসাবনিকাশ করার পূর্বে। তোমরা নিজেদের পরিমাপ করে নাও, তোমাদেরকে পরিমাপ করার পূর্বে। তাহলে আগামীকাল তোমার হিসাব লওয়া সহজ হবে, আজ তুমি নিজের মুহাসাবা করার কারণে।❞ [উমর বিন খাত্তাব রা:]
বইটিতে গুনাহের আলামত, গুনাহে পতিত হওয়ার কারণ, গুনাহে লিপ্ত থাকায় ক্ষতি, গুনাহ থেকে মুক্তির পথ আদ্যোপান্ত আলোচনা করা হয়েছে। যে কোন সচেতন মুসলিম বইটি সংগ্রহে রাখতে পারেন। ইনশাআল্লাহ! বইটি রিমাইন্ডার হিসেবে কাজ করবে।
____________________________________
বই: গুনাহ থেকে ফিরে আসুন
মূল: আল্লামা ইবনুল কায়্যিম আল জাওযিয়্যাহ রহ.
তাখরিজ: মাওলানা তাহের নাক্কাশ পাকিস্তানি
অনুবাদ: মুহিবুল্লাহ খন্দকার
প্রকাশনায়: আয়ান
পৃষ্ঠা সংখ্যা: ১৫৮
মূল্য: ২৬০/-
নাফিসা ইয়াসমিন –
প্রাক কথন
——————
গুনাহ নামক অন্তরের ব্যাধি এবং শয়তানের ধোঁকা সম্পর্কে মানুষকে অবহিত করতে মহান রাব্বুল আলামীন দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন জীবন বিধান। মানুষকে সচেতন করতে যুগে যুগে নবী রাসূলদের আগমন ঘটেছে।
সেই নবী রাসূলদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে সালাফায়ে রাশেদীন, আলিম ওলামারা কলম ধরেছেন গুনাহের ভয়াবহতা এবং এর থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে মানুষকে অবহিত করতে।
পূর্ববর্তী মানুষ গুনাহ থেকে নিজেদের হেফাজত করতে সদা তৎপর ছিলেন। কিন্তু বর্তমান জমানায় মানুষ নির্লজ্জ ভাবে গুনাহের প্রচার ও প্রসার করে থাকে।
প্রকাশ্যে গুনাহের সমুদ্রে ভাসতে ভাসতে অন্তর এমনভাবে কালিমালিপ্ত হয়ে গেছে যার ফলে গুনাহ করার পর অন্তরে কোন রকম অনুশোচনার উদয় হয়না। রবের নাফরমানী কোমলতা সরিয়ে হৃদয়কে করেছে শুষ্ক ও কঠিন।
গুনাহের জাঁতাকলে পড়ে আমরা হারিয়ে জাহান্নামের অতল গহ্বরে। আর কতদিন এইভাবে নফসের আগুনে ইহকাল-পরকাল বিনষ্ট করবো আমরা?
অনেক হয়েছে বেখেয়ালিপনা চলাফেরা, এবার সময় এসেছে রবের পথে প্রত্যাবর্তনের।
এই প্রত্যাবর্তনের পথে চলার জন্য আমাদের সহায়ক হিসাবে আয়ান প্রকাশন নিয়ে এসেছে চমৎকার একটি সেল্ফ রিমাইন্ডার “গুনাহ থেকে ফিরে আসুন” নামে।
লেখক পরিচিতি
————————
সালাফ ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম আল জাওযিয়্যাহ রহ. ছিলেন অন্তরের রোগ সনাক্তকারী। গুনাহের পথ থেকে মানুষকে “সিরাতুল মুস্তাকিমে” ফিরিয়ে আনতে “আলজাওয়াবুল কাফী লিমান সা’আলা আনিদ দায়ীশ শাফী” নামে দৃষ্টান্তমূলক একটি গ্রন্থ রচনা করেন যা সাম্প্রতিক বাংলা ভাষায় অনূদিত হয়েছে “গুনাহ থেকে ফিরে আসুন” নামে।
বই কথন
—————-
বইয়ের নামকরণ থেকে বিষয়বস্তু সম্পর্কে সম্যক ধারণা করা যায়।ইমাম ইবনুল কায়্যিম (রহ) এর যুগেও ছিল বর্তমান জমানার মত ফিতনা ফ্যাসাদের রাজত্ব। তাই তাঁর লেখনীতে বাস্তব চিত্রের অবলোকন ঘটেছে দারুণভাবে।
অত্যন্ত দক্ষতার সাথে আল কুরআন ও সুন্নাহর দৃষ্টিকোণ থেকে কয়েকটি আকর্ষণীয় শিরোনামে ভিন্ন ভিন্ন পরিচ্ছেদে বইটিতে আলোচিত হয়েছে —
*গুনাহের কারণসমূহ
*গুনাহের আলামত
*গুনাহের ক্ষতি এবং
*গুনাহ থেকে মুক্তির পথ
গুনাহের প্রধান কারণ সম্পর্কে তিনটি বিষয়কে চিহ্নিত করা হয়েছে তা হল-
১.নারী
২. ধন-দৌলত
৩. জায়গা-জমি
গুনাহের প্রবেশদ্বারে একটি গুনাহ কিভাবে আরো কয়েকটি গুনাহের পথ উন্মুক্ত করে দেয়, গুনাহ কিভাবে রিজিককে সংকুচিত করে এবং তার ভয়াবহতা কিভাবে আখেরাত বিনষ্টকারী তার যথার্থ হৃদয়স্পর্শী বর্ণনা ফুটে উঠেছে আল-কুরআনের আলোকে।
কেন পড়বেন?
———————
আদম সন্তান মাত্রই গুনাহগার, তার মধ্যে সেই উত্তম যে অধিক তওবাকারী। মানুষের শুষ্ক অন্তর অনুশোচনায় বিগলিত হবে যখন তার হৃদয়ে আখেরাতের ভয় থাকবে।
গুনাহের ভয়াবহতা দুনিয়া ও আখেরাতকে কিভাবে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেয় সে সম্পর্কে অবগত হলে রবের সম্মুখে জবাবদিহিতার ভয় জাগ্রত হবে যা মানুষকে পুনরায় ফিরিয়ে নিয়ে আসবে একনিষ্ঠ দ্বীনের প্রতি।
নফসের অন্ধকার থেকে প্রত্যাবর্তন করবে সীরাতুল মুস্তাকিমের পথে।
সুতরাং গুনাহ থেকে ফিরে আসার জন্য এবং ফিতনাময় দুনিয়াই ঈমানের দৃঢ়তাকে ধরে রাখতে উক্ত বইটি সেল্ফ রিমাইন্ডার হিসেবে কাজ করবে নিঃসন্দেহে।
পাঠ্য- অনুভূতি
———————-
যুগটা ফিতনার।গুনাহের সাগরে নিমজ্জিত আমরা সকলেই। আদম সন্তান এই ফিতনাময় দুনিয়াই পাপের পঙ্কিলতায় ডুবে গিয়ে ভুলে গেছে পাপ পূণ্যের সীমারেখা। শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে সে এগিয়ে যায় পাপের স্বর্গরাজ্যে।
রবের গোলামির পরিবর্তে নফসের গোলামির শৃঙ্খলে আবদ্ধ মানুষ আজ কুফরির দাসত্বে বন্দী।
পদস্থলনের ভয়ে গুনাহ থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার মরিয়া চেষ্টা করছি প্রতিনিয়ত। ফিতনাময় দুনিয়াই গুনাহ থেকে নিজেদের বাঁচানোর জন্য একটি স্বচ্ছ নির্দেশনার প্রয়োজন। আর এই প্রয়োজনটা পূরণ করেছে “গুনাহ থেকে ফিরে আসুন” বইটি।
হাজার প্রতিকুলতার পরিবেশে গুনাহ এই বইটি বইটি একটি সেল্ফ রিমাইন্ডার। গাফেল অন্তরকে নাড়িয়ে দেয়।অন্তরের কালিমা মুছে সেখানে তাকওয়ার বীজ বপন করার জন্য সহায়ক।
শেষ কথন
—————-
নিঃসন্দেহে বইটি সকল স্তরের মুমিনদের জন্য অপরিহার্য। বইয়ের সহজ সাবলীল অনুবাদ ও ভাষার প্রাঞ্জলতা হৃদয়কে স্পর্শ করবে সহজেই। সিরাতুল মুস্তাকিমের পথে অটুট থাকতে গুনাহ থেকে ফিরে আসার জন্য বইটি হতে পারে আমাদের জন্য একটা আলোকবার্তিকা।
📚একনজরে বই পরিচিতি
————————————–
বইঃ গুনাহ থেকে ফিরে আসুন (গুনাহের আলামত, তার ক্ষতি এবং মুক্তির পথ)
লেখকঃ আল্লামা ইবনুল কাইয়্যিম আল জাওযিয়্যাহ(রহ)
অনুবাদঃ মুহিব্বুল্লাহ খন্দকার
প্রকাশনায়ঃ আয়ান প্রকাশন
বাইন্ডিংঃ পেপারব্যাক
পৃষ্টা সংখ্যাঃ ১৭৬
মূল্যঃ ১৩০