আচ্ছা এমন হলে কেমন হয়, এমন একটা বই থাকবে যেখানে কুরআন ও সুন্নাহ থেকে বেছে বেছে শুধু গুনাহ মাপের উপায় গুলো নিয়েই লেখা থাকবে? যারা মনে মনে এমন বই খোঁজেন তাদের জন্যই ‘গুনাহ মাফের উপায়’ বইটি। এই বইতে কুরআন ও গ্রহনযোগ্য হাদীছের আলোকে গুনাহ মাফের আমলগুলো রেফারেন্সসহ আলোচনা করা হয়েছে।
কয়েক বছর আগে মাকতাবাতুস শাহাদাহ থেকে বইটি এলেও দীর্ঘদিন ছাপা ছিল না। লেখকের ইন্তিকালের পর এবং পাঠকদের ব্যাপক চাহিদার কথা মাথায় রেখে পুনরায় বইটি নতুন মোড়কে, আরও উন্নত কাগজে আনল ইয়াকীন পাবলিকেশন।
mahmud03 –
সৃষ্টির উষালগ্ন থেকে অদ্যাবধি নবী-রাসুল ব্যতীত এমন কোনো মানুষ নেই, যারা ঘায়েল হয়ে পা দেননি শয়তানের চিরাচরিত রণকৌশলে। আকারে কিংবা প্রকারে গুনাহের ধরণ ভিন্ন হলেও ‘গুনাহবিহীন জীবন’ লাভ করে নি কেউই। সাঁতার না জানা ব্যক্তি যেমন গভীর সমুদ্রের পানিতে হাবুডুবু খেতে খেতে কেবল খুঁজতে থাকে বেঁচে ফেরার একটি উপায়, তেমনি পাপের সমুদ্রে নিমজ্জিত থাকা আমরাও খুঁজতে থাকি পাপ-পঙ্কিলতা থেকে মুক্ত হয়ে আল্লাহর নিকটবর্তী হওয়ার অবলম্বন।
.
গুনাহের ভারে জর্জরিত এই উম্মাহ কীভাবে গুনাহমুক্ত হয়ে আল্লাহর সামনে দাঁড়াতে পারে সেই ভাবনা থেকেই গুনাহ মাফের উপায়সমূহ নিয়ে একটি বই রচনার সিদ্ধান্ত নেন শাহাদাৎ হুসাইন খান ফয়সাল (রহ.)। অতঃপর, কুরআন-হাদিসের বিস্তারিত দলিলাদি টেনে রচনা করেছেন পূর্ণাঙ্গ একটি বই ‘গুনাহ মাফের উপায়’।
.
‖বিষয়বস্তু‖
বইটিতে মূলত গুনাহ মাফের উপায় এবং আমল সম্পর্কিত বিষয়াদি নির্যাস তুলে ধরা হয়েছে। বইটির আলোচনাগুলোকে সাজানো হয়েছে চারটি অধ্যায়ে।প্রথমাংশে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়েছে আমাদের নিত্যদিনের গুনাহসমূহের সাথে। বলেছেন আমাদের জীবনের গুনাহের কুপ্রভাব নিয়ে এবং কীভাবে তা ধ্বংস করে দিচ্ছে আমাদের ইহকাল ও পরকাল উভয়কেই। অতঃপর লেখকদের কলমে উঠে এসেছে প্রায় ৯০ টির মত গুনাহ মাফের উপায়-আমল। হাদিসের ভান্ডার থেকে তুলে ধরেছেন গুনাহ মাফের দোয়া এবং মাধ্যমগুলো।
.
পাশাপাশি কোন কোন আমল-ইবাদতে গুনাহ মাফ হয় তারও স্বতন্ত্র ব্যাখ্যা। বাদ পড়েনি নিত্যদিনের পঠিত দোয়া এবং কোন কোন সূরা গুনাহের দেউলিয়া থেকে মুক্ত করে, এমনকি কবীরা গুনাহসমূহের তালিকাও। যারা আরবী পড়তে পারেন না তাদের জন্য বইটিতে উল্লিখিত হয়েছে সকল দু‘আর বাংলা উচ্চারণও। রয়েছে উপদেশ গ্রহণকারীদের জন্য উপদেশ এবং উদাসীনদের জন্য জাগরণী বার্তা। একজন গুনাহগার বান্দা কীভাবে তার অশ্রুসিক্ত, অনুতপ্ত মনকে আল্লাহর দিকে ধাবিত করতে পারে সেই সকল উপায়ন্তর বলে দেয়া হয়েছে।
.
‖পাঠ অভিমত‖
বইয়ের নামই মনের মধ্যে আশার আলো জ্বালিয়ে দেয়। প্রতিনিয়ত গুনাহে লিপ্ত হওয়া হচ্ছে আমাদের রোগ। আর এই বইটি হচ্ছে সেই রোগ প্রতিকারের কাগুজে প্রেসক্রিপশন। যতবারই রোগক্রান্ত হবেন ততোবারই এর দ্বারস্থ হতে হবে। এই বইয়ের নিবিড় অধ্যয়ন নির্জীব মনকে সজীব করে অলস হৃদয়কে ভরে দিবে অতুলনীয় উদ্যমে। বইয়ের সন্নিবেশিত মূল্যবান নির্দেশনাসমূহ যেন নিজেকে নিষ্পাপ করার স্তূপীকৃত পাথেয়।
.
গুনাহের সাগরে হাবুডুবু খাওয়া অবস্থায় জাহাজের মত আশ্রয়ের সন্ধান বাতলে দিবে বইটি। উপরন্তু আপনি যখন বইটি কিনবেন তখন এর একটা প্রতিদান মহান আল্লাহ আপনাকে দেবেন, আশা করা যায়। কারণ শুনেছি এই বইটি যেই প্রকাশনী ছাপিয়েছে তারা এর মুনাফার পুরোটাই লেখকের পরিবারকে দিয়ে দেবেন। ব্যপারটা আমার কাছে বেশ ভালো লেগেছে।
.
নিজের গুনাহের কর্দমাক্ত শরীরটাকে অনুশোচনার অশ্রুসাগরে ডুবিয়ে পরিশুদ্ধতার চাদরে নিজেকে আবৃত করতে বইটি সকলের পড়া উচিত।
Umme Suraiya –
গুনাহ মাফের উপায়
শাহদাৎ হুসাইন খান ফয়সাল
——————————————
পানির স্পর্শে লোহায় যেমন জং ধরে, মরিচা পড়ে, গুনাহের ফলেও আমাদের অন্তরে ময়লা জমে আত্মায় বিরাজ করে পঙ্কিলতা। লোহার মরিচা লোহাকে যেমন ভঙ্গুর বানিয়ে দেয় পাপের আস্তরণ ঠিক একই ভাবে আমাদের অন্তরকে করে ফেলে শুষ্ক, শক্ত ও অনুভুতি শূন্য। কাপড়ে ময়লা জমলে আমরা তা ধুয়ে পরিষ্কার করে ফেলি।কিন্তু কাপড় ফেলে দিই না।অথচ গুনাহের বেলায় ঠিক বিপরীতটাই আমরা করে থাকি।
আমরা মনে করি,গুনাহ করে ফেললে আর বুঝি পরিত্রাণ নেই। অথচ আসমানে যিনি আছেন, তিনি রাহমানির রাহিম। অপার দয়ার ভান্ডার সমেত তিনি তাকিয়ে আছেন তার কোন বান্দা তার কাছে ক্ষমা ভিক্ষা করছেন, তার কাছে আশ্রয় চাইছেন, তার কাছে করজোড়ে প্রার্থনা করছেন।তিনি অপেক্ষা করেন অনুতপ্ত হৃদয়ের জন্য, অশ্রু শিক্ত দুটি চোখের জন্য। অতঃপর তিনি তাদের ক্ষমা করেন।
যেসব উপায় অবলম্বন করলে আমাদের অন্তর পরিশুদ্ধ হবে, যে আমল গুলো করলে আমাদের আত্মার কলুষ মুক্ত হবে সেসব নিয়েই রচিত হয়েছে “#গুনাহ_মাফের_উপায় ”
অসাধারণ তথ্যপূর্ণ এবং গভীর জ্ঞান সম্পূর্ণ একটি বই। বইটিকে আমার প্রিয় বই গুলোর তালিকায় রাখলাম
বই সম্পর্কিত তথ্য :
——————————
বই:গুনাহ মাফের উপায়
লেখক :শাহাদাৎ হুসাইন খান ফয়সাল
প্রকাশনী:ইয়াকিন পাবলিকেশন
মূল্য :৩২২ টাকা (মুদ্রিত)
Umme Suraiya