Copyright © 2024 Seanpublication.com
ফিরে এসো নীড়ে (হার্ডকভার)
- লেখক : মুহাম্মাদ শফিকুল ইসলাম, সাইয়্যিদা ফাতিমা বিনতে খলীল
- পাবলিকেশন : রাহনুমা প্রকাশনী
- বিষয় : অনুপ্রেরণা মোটিভেশন আত্ম-উন্নয়ন আত্মশুদ্ধি, সকল প্রকাশক
Author : সাইয়্যিদা ফাতিমা বিনতে খলীল
Translator : মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম
Publisher : রাহনুমা প্রকাশনী
Category : অনুপ্রেরণা; আত্ম-উন্নয়ন
৳440 ৳264
You Save TK. 176 (40%)
ফিরে এসো নীড়ে (হার্ডকভার)
Share This Book:
ক্যাশ অন ডেলিভারী
৭ দিনের মধ্যে রিটার্ন
ডেলিভারী চার্জ ৬০ টাকা থেকে শুরু
Author
Reviews (1)
1 review for ফিরে এসো নীড়ে (হার্ডকভার)
Add a review Cancel reply
Din Muhammad Sheikh –
▪ প্রাককথন :
কবি নজরুল বলেছিলেন :
বিশ্বে যা-কিছু মহান সৃষ্টি চির-কল্যাণকর,
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।
নজরুলের মতো অনেক কবি-সাহিত্যিকই নারীর গুরুত্ব বোঝাতে, নারীকে মর্যাদা দিতে, নারীকে মহিমান্বিত করতে নিজেদের কলম চালিয়েছেন, লিখেছেন পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা।
আমাদের সমাজে নারীরা প্রকৃতই অবহেলিত। আর তাই নিজেদের অধিকার আদায়ে তারা নিজেরাই অথবা কিছু স্বার্থান্বেষী পুরুষ প্রতিষ্ঠা করছে ‘নারী অধিকার আন্দোলন’ নামে নানান সংগঠন। দিনশেষে এসব সংগঠন নারীর অধিকার তো ফিরিয়ে দিতে পারছেই না, বরঞ্চ কেড়ে নিচ্ছে তাদের সতীত্ব-সম্ভ্রম। কেনো হয় এমনটা?
মূলত ইসলামকে ছেড়ে ভালো থাকা যায় না। ইসলামই সমাধান, ইসলামই শান্তি। ইসলামই বুঝিয়েছে নারীর যথাযথ গুরুত্ব, ইসলামই দিয়েছে তাকে যথার্থ মর্যাদা। এর পাশাপাশি নারীর দায়িত্ব-কর্তব্য নিয়েও ইসলাম আলোচনা করেছে সবিস্তারে। নারীর দায়িত্ব ও মর্যাদার ব্যাপারে অন্য যেকোনো সভ্যতা বা যেকোনো ধর্মের সাথে ইসলাম অতুলনীয়। ইসলাম নারীকে যা দিয়েছে, তার ছিটেফোঁটাও দিতে পারেনি অন্যান্য সভ্যতা বা যেকোনো ধর্ম।
অন্যান্য ধর্মে নারীকে কতটুকু মর্যাদা দেওয়া হয়েছে? ইসলামে নারীর মর্যাদা কতটুকু? স্ত্রী হিসেবে, মা হিসেবে, সর্বোপরি একজন নারী হিসেবে নারীর দায়িত্ব কী? এ ব্যাপারে ইসলামের নির্দেশনা কী? এ সবকিছু এক মলাটে পেতে চাইলে আপনাকে যে বইটি পড়তে আমি পরামর্শ দিবো, তা হচ্ছে : ফিরে এসো নীড়ে। আজ এ বইটি নিয়েই দু’চারটে কথা বলবো ইনশাআল্লাহ।
___________________________________
▪ একনজরে ‘ফিরে এসো নীড়ে’ :
◾ বই : ফিরে এসো নীড়ে
◾ লেখক : সাইয়্যিদা ফাতিমা বিনতে খলীল
◾ অনুবাদক : মাওলানা শফিকুল ইসলাম
◾ প্রকাশনী : রাহনুমা প্রকাশনী
◾ প্রকাশকাল : প্রথম প্রকাশ – ফেব্রুয়ারি, ২০১৭
◾ পৃষ্ঠা সংখ্যা : ৩৫২
◾ প্রচ্ছদ মূল্য : ৪০০/-
___________________________________
▪ আলোচ্য বিষয় :
বইটিতে বিভিন্ন সভ্যতা এবং ধর্মে নারীর মর্যাদা উঠে এসেছে, স্পষ্ট করা হয়েছে ইসলামে নারীর মর্যাদা ও অবস্থানকে। ইতিহাসে মুসলিম নারীর অনন্য দৃষ্টান্তও তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়াও দাম্পত্যজীবনে নারীর দায়িত্ব এবং অধিকার, মা হিসেবে নারীর করণীয়, দাওয়াতের ময়দানে নারীর কর্তব্য ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো সহজ ও সাবলীল ভাষায় আলোচনা করা হয়েছে বইটিতে।
▪ যা আছে বইটিতে :
মোট ১৬টি অধ্যায়ে সাজানো হয়েছে বইটিকে।
প্রথম অধ্যায়ের নামকরণ করা হয়েছে ‘ইতিহাসে নারী : মর্যাদা ও অবস্থান’। এতে উঠে এসেছে প্রাচীন দুই প্রতাপশালী সভ্যতা গ্রিক ও রোমান সভ্যতায় নারীর অবস্থান। এছাড়াও হিন্দু, ইহুদি এবং খ্রিস্টান ধর্মে ও প্রাক-ইসলামি আরবে নারীর মর্যাদা ও অবস্থান নিয়েও সংক্ষিপ্ত আলোচনা উপস্থাপন করা হয়েছে।
‘ইসলামে নারী : মর্যাদা ও অবস্থান’ শিরোনামে সাজানো হয়েছে দ্বিতীয় অধ্যায়টিকে। নারী অধিকারহীনা নয়। ইসলাম নারীকে দিয়েছে অধিকারে পূর্ণ আলোকোদ্ভাসিত এক জীবনবিধান। নারীর রয়েছে বেঁচে থাকার অধিকার, স্বত্বাধিকার, বিবাহপ্রস্তাব গ্রহণ ও প্রত্যাখ্যানের অধিকার, শিক্ষার্জনের অধিকার। দালিলিকভাবে এ অধিকারগুলোর বর্ণনা এসেছে এ অধ্যায়ে।
তৃতীয় অধ্যায়ে আলোচনা করা হয়েছে ‘ইতিহাসে মুসলিম নারীর অনন্য দৃষ্টান্ত’ নিয়ে। হযরত আয়েশা (রা:), সাফিয়া বিনতে আব্দুল মুত্তালিব (রা:), রাফীদা আনসারিয়া (রা:), আসমা বিনতে আবু বকর (রা:), হযরত আতিয়া (রা:) দের অসাধারণ প্রতিভার চিত্র অঙ্কিত হয়েছে এ অধ্যায়টিতে।
চতুর্থ অধ্যায়ের শিরোনাম – ‘নর ও নারী : একে অপরের পরিপূরক’
শিরোনামেই এক প্রকার রোমান্টিকতা রয়েছে। তাই না? চতুর্থ অধ্যায়ে আলোচনা করা হয়েছে বিবাহব্যবস্থা এবং এর উদ্দেশ্য, বিবাহের হুকুম-আহকাম নিয়ে। হিজাব শরিয়াহ সম্মত হওয়ার কী কী শর্ত রয়েছে, তাও উল্লেখ করা হয়েছে এ অধ্যায়ে। এছাড়া একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েও দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে এখানে – বিবাহপূর্ব প্রেম এবং তা থেকে বাঁচার উপায়।
দাম্পত্যজীবনে কলহ আজ যেনো নিত্যকার কর্ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিবাহবন্ধনের মতো দৃঢ় বন্ধন আজ হয়ে গিয়েছে ঠুনকো। ডিভোর্স হয়ে গিয়েছে পান্তাভাত। এর থেকে বাঁচার উপায় কী? উপায় একটাই – স্বামীর উচিত স্ত্রীর হক আদায় করা, স্ত্রীর উচিত নিজ দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন হওয়া। পঞ্চম এবং ষষ্ঠ অধ্যায়ে ঠিক এ বিষয়েই আলোকপাত করা হয়েছে। ‘দাম্পত্যজীবন : নারীর কর্তব্য’ শিরোনামে পঞ্চম অধ্যায়ে বর্ণনা করা হয়েছে একজন উত্তম স্ত্রীর গুণাবলি। ‘দাম্পত্যজীবন : নারীর অধিকার’ শিরোনামে ষষ্ঠ অধ্যায়ে এসেছে স্ত্রীর প্রতি স্বামীর দায়িত্বের বর্ণনা। এ দু’টি অধ্যায়কে আলাদা পুস্তিকা আকারেও প্রকাশ করা যেতে পারে। বেশ জরুরি এ অধ্যায় দু’টি।
সপ্তম এবং অষ্টম অধ্যায়ে লেখিকা মা হিসেবে নারীর দায়িত্বকে স্মরণ করে দিয়েছেন। পাশাপাশি দিয়েছেন সন্তান লালনপালনের বেশ কিছু ফলপ্রসূ টিপস। এছাড়া নবম অধ্যায়েও সন্তান লালনপালনের কিছু সফল পদ্ধতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
বয়ঃসন্ধিকাল ও তারুণ্যে সন্তানের কোন বিষয়গুলোতে বিশেষ নজর দিতে হবে, তা উল্লেখ করা হয়েছে বইটির পরবর্তী অধ্যায়ে। মিডিয়া কীভাবে আমাদের সন্তানদের গ্রাস করে নেয়, তা বর্ণনা করা হয়েছে বইটির একাদশ অধ্যায়ে।
সপ্তম থেকে একাদশ অধ্যায়কে আলাদা পুস্তিকায় রূপ দিলে নিঃসন্দেহে প্যারেন্টিংয়ের ওপর অসাধারণ একটি হ্যান্ডনোট হয়ে যাবে।
দ্বাদশ অধ্যায় – ‘দাওয়াতের ময়দানে নারী’। আচ্ছা, নারীরা কি কেবল ঘরই সামলাবে? তাদের কি আর কোনো দায়িত্ব নেই? নিজে ইসলাম মেনে চলার পাশাপাশি ইসলামের সুমহান বাণী ছড়িয়ে দেওয়ার দায়িত্ব থেকে কি তারা মুক্ত? না, কখনো না। দাওয়াতের ময়দানেও নারীর রয়েছে এক গুরুদায়িত্ব। এ অধ্যায়টিতে খুব চমৎকারভাবে লেখিকা দাওয়াতের কলা-কৌশল নিয়ে আলোচনা করেছেন, যা নারী-পুরুষ উভয়ের জন্যই সমান গুরুত্বপূর্ণ।
বর্তমানে তো দাওয়াতি সংগঠনের অভাব নেই। অগণিত ওয়াজ-মাহফিল হচ্ছে প্রতিবছর, প্রকাশিত হচ্ছে হাজার হাজার ইসলামি বই। কই, তবুও তো খুব একটা ইতিবাচক ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে না! কারণ কী? ভুলটা কোথায়? এর সমাধানই বা কী? এ বিষয়গুলো জানতে আপনাকে পড়তে হবে বইয়ের ত্রয়োদশ অধ্যায়টি – নারী এবং দাওয়াহ : আধুনিক অঙ্গন।
একাধিক স্ত্রী গ্রহণ, নারীর উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পত্তি লাভ, বাল্যবিবাহ, আত্মীয় বিবাহ, তালাক, নারীর কর্ম, জন্মনিয়ন্ত্রণ – এ বিষয়গুলো সমাজে বেশ আলোচিত, একইসাথে সমালোচিত। এ ব্যাপারে ইসলাম কী বলে? ইসলামের বিধান কী? সংক্ষেপে এবং দলিলের আলোকে খুব সুন্দরভাবে এ বিষয়গুলো উপস্থাপিত হয়েছে বইটির চতুর্দশ অধ্যায়ে।
বইটির প্রায় শেষের দিকে চলে এসেছি আমরা। পঞ্চদশ অধ্যায়ের শিরোনাম – ‘ফিরে এসো নীড়ে’। আজ মুসলিম নারীর এত অধঃপতন কেনো, পশ্চিমারা কীভাবে মুসলিম নারীর গায়ে মরণকামড় বসিয়েছে, মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধে কীভাবে তারা আমাদের নারীদের পরাজিত করেছে, কীভাবে তারা নারীর শ্লীল সত্ত্বায় অশ্লীলতার কাদা লেপ্টে দিয়েছে – এ বিষয়গুলো চিত্রিত হয়েছে এ অধ্যায়ে। অধ্যায়ের শেষে লেখিকা নারীদেরকে আপন ঠিকানায় ফিরে আসতে আহবান জানিয়েছেন।
যেমন, লেখিকা একজায়গায় বলেছেন,
“প্রাচ্যের নারীদের বলি, তোমরা ঘরে ফিরে এসো। আবার সেই পরিবার রচনা করো। ঘরে ঘরে দূর্গ গড়ে তোলো। তোমাদের চলা লেগে পশ্চিমা পদলেহীরা মুখ থুবড়ে পড়ুক।”
ষোড়শ অধ্যায় – ‘আমাদের প্রত্যাশা’। বইয়ের শেষ অধ্যায় এটি। এ দীর্ঘ আলোচনা শেষে লেখিকার প্রত্যাশা কী, তিনি কী স্বপ্ন দেখেন, এ বিষয়ে কলম ধরা হয়েছে শেষ অধ্যায়টিতে। লেখিকার ভাষাতেই তাঁর প্রত্যাশা তুলে ধরছি।
“আমরা এমন একটি সমাজ চাই, যার মূল ভিত্তি হলো – আল্লাহর জন্য ভ্রাতৃত্ব এবং ভালোবাসা।”
“আমরা এমন একটি সমাজ চাই, যা সুন্দর-সুনির্মল চরিত্রমাধুরী এবং সুউচ্চ সুমহান মূল্যবোধে ভাস্বর। ”
“আমরা একটি পবিত্র ও সভ্য সমাজ প্রত্যাশা করি। যেখানে অপরাধপ্রবণতা নেই। লাম্পট্য ও চরিত্রহীনতা নেই।”
“আমরা একটি ইসলামি সমাজ চাই। যেখানে পুরুষ একজন বিশ্বস্ত জীবনসঙ্গী। যার ভালোবাসা স্ত্রীকে ছুঁয়ে থাকে সর্বক্ষণ।”
▪ কেন পড়বেন বইটি :
– অন্যান্য সভ্যতা এবং ধর্মকে ছাপিয়ে ইসলাম নারীকে কতটুকু মর্যাদা দিয়েছে, তা কি আপনি জানতে চান?
– বিবাহের হুকুম আহকাম জানা কি আপনার প্রয়োজন?
– হারাম রিলেশন থেকে কীভাবে হেফাজতে থাকবেন, তা কি আপনার জানা দরকার?
– দাম্পত্যজীবনে নারীর দায়িত্ব কী, তাঁর অধিকারই বা কতটুকু?
– সন্তান লালনের কলা-কৌশল জানা প্রয়োজন কি?
– সন্তান প্রতিপালনে অনেক মা-ই ব্যর্থ হন। কারণ কী এ ব্যর্থতার? জানতে চান?
– দাওয়াতি কাজের পদ্ধতি জানতে কি আপনি আগ্রহী?
– নারী কেন্দ্রিক কিছু আলোচিত বিষয়ে ইসলামের নির্দেশনা জানতে চান?
তাহলে বইটি আপনাকে পড়তে হবে।
▪ ভালো লাগা-মন্দ লাগা :
• যা ভালো লেগেছে :
– নজরকাড়া প্রচ্ছদ
– হার্ড কভার
– পৃষ্ঠার উন্নতমান
– দলিল-আদিল্লায় পরিপূর্ণ
– অল্প কথায় অধিক ভাব প্রকাশিত
– ফন্টের উপযুক্ত সাইজের ব্যবহার
– সাবলীল অনুবাদ
এছাড়াও মোটাদাগে যে বিষয়টি খুব ভালো লেগেছে – শিরোনাম-উপশিরোনামের মাধ্যমে আলোচ্য বিষয়কে সাবলীল ও বোধগম্য করে তোলা।
• যা মন্দ লাগার মতো :
মন্দ লাগার মতো তেমন খুঁত নেই বইটিতে। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে লেখক-পরিচিতিহীন বই পড়ে কেমন যেনো অতৃপ্ত রয়ে যাই। বিশেষত আমাদের কাছে জনপ্রিয় বা পরিচিত না হলে বইয়ের শুরুতে, শেষে বা অন্তত ফ্ল্যাপে লেখক সম্পর্কে দু’চার কথা লেখা আবশ্যক মনে করি। সে দৃষ্টিকোণ থেকে লেখিকা সাইয়্যিদা ফাতিমা বিনতে খলীল সম্পর্কে পাঠকদের কিছুটা ধারণা দেওয়া উচিত ছিল রাহনুমার।
▪ শেষকথন :
পরিশেষে আপনাকে অনুরোধ করবো, বইটি আপনি নিজে পড়ুন। আপনার স্ত্রীকে উপহার দিন। বই থেকে অর্জিত শিক্ষা বাস্তবে রূপায়িত করুন। ইনশাআল্লাহ বেশ উপকৃত হবেন। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন।