জাগতিক নিয়মে, সব পাখি নীড়ে ফেরে। ফুল ফোটে, বৃষ্টি নামে এবং নদী তার আপন পথে বাঁক নেয়। কিন্তু, ফেরে না কেবল মানুষ। অহংকার আর অহমিকার দহনে তার বুকের ভেতরে জিইয়ে রাখে পাহাড়সম আগুন। সেই আগুনে ঝলসে যায় সে নিজে এবং ঝলসে দিতে চায় তার চারপাশ। মানুষ বড়ই অকৃতজ্ঞ আর বেপরোয়া। সে তার অস্তিত্বের কার্যকারণ ডিঙিয়ে নিজেকে আমিত্বের আসনে দেখতে চায়। নিজের ক্ষুদ্রাকৃতির প্রতি চূড়ান্ত ভাবলেশহীন হয়ে সে নিজেকে অনন্ত-অসীমে কল্পনা করে বসে। ফলে সে বিচ্যুত হয়। পদস্খলন ঘটে তার। যুগে যুগে যাদের ধ্বংসের পদধ্বনি আমরা শুনতে পাই, তাদের সকলের যেন একই গল্প, একই চিত্রনাট্য—ঔদ্ধত্য, অহংকার আর অনাচার। এক মহাসত্যকে পাশ কাটিয়ে, নিজেকে নিয়ন্ত্রকের আসনে যখনই সে আসীন করতে গেছে, তখনই ধ্বংস অনিবার্য হয়ে নিপতিত হয়েছে তার ওপর।
তবু, কারও কারও গল্পটা অন্যরকম। তবু, কেউ কেউ ফিরে আসে। খুঁজে পায় পথ। খুঁজে নেয় অন্তিম অবসরের অনন্ত আবাসস্থল। ফিরে আসা এমন দুটো পবিত্র আত্মার যাপিত-জীবনের রং-তুলিতে নির্মিত ফেরা-২।
গল্পের ভেতরেও গল্প থাকে, পরিচ্ছেদের ভেতরেও থাকে উপ-পরিচ্ছেদ। ফেরা-২ গল্পটা ভিন্ন। এটা একেবারে ডুবে যাওয়ার গল্প নয়, বরং ডুবতে ডুবতে হঠাৎ মাঝ-সাগরে জাহাজের মাস্তুল পেয়ে যাবার মতোই। এই গল্পটি হারিয়ে যাবার গল্প নয়, বরং নিজেকে নতুনভাবে ফিরে পাবার উপাখ্যান। তাই, এই গল্পটি একটু অন্যরকম।
দুজন হিন্দু বোন, যারা আশৈশব দেব-দেবীর পূজো-অর্চনা করেছে, মণ্ডপে যারা নিবেদন করেছে গভীর অনুরাগের নৈবেদ্য, তারা কোন জাদুকরী মন্ত্রে খুঁজে পেল ইসলাম? মন্দিরের ঘণ্টার শব্দ, পূজো-পার্বনের কীর্তনের সুর যাদের রক্তে মেশা, তারা কেনই-বা মগ্ন হলো মিনার থেকে ধেয়ে আসা আযানের ধ্বনিতে? ‘ফেরা-২’ এমনই এক যাপিত-জীবনের উপাখ্যান, কিংবা মহাকাব্যের চেয়েও বেশি কিছু।
মূল বইটি উর্দু ভাষায় রচিত। লেখিকা বিনতু আদিলের জন্য আমাদের অন্তরের গভীর থেকে শ্রদ্ধা, ভালোবাসা আর দুআ রইল। আর জীবনের নতুন অনুচ্ছেদ যারা শুরু করতে যাচ্ছেন তাদের জীবন রঙিন এবং সুখময় হবে, অনন্ত আখিরাতে রহমানের আরশের সুশীতল ছায়ায় আশ্রিত হয়ে ধন্য হবেন, এই আমাদের প্রত্যাশা। সাথে, এই বইটি এমন হাজারো পথহারা পথিকের জন্য পথ খুঁজে পাওয়ার দিশা হবে, ঘুম ভাঙানোর কারণ হবে, এই কামনা।
Shahriar Ahammed –
বই – ফেরা ২
লেখিকা – বিনতু আদিল
নীড়হারা আর কতকাল কেটে যাবে? আর কতকাল ভবঘুরে হয়ে ভীষণ উদাসীনতায় কেটে যাবে আটপৌরে জীবনের অনাগত স্নিগ্ধ ভোর? কেটে যাবে এই ঝাঁঝালো দুপুর-প্রসন্ন বিকেল-ধূসর গোধূলি-নিথর সন্ধ্যা-নির্জন রাত? আর কত দিন কেটে যাবে ভীষণ অন্ধকারে?
সব পাখি নীড়ে ফেরে, নদী বয়ে যায় আপন ঠিকানায়; ফেরে না কেবল মানুষ! তবুও কেউ কেউ অদম্য সাহসে ফিরে আসে। ফেলে আসে একজীবনের সমস্ত সম্মোহন। সেই ফেলে আসা, ছেড়ে আসা, রেখে আসা দুঃসাহসী দু-বোনের সত্যের পানে নির্নিমিখ ছুটে চলার উপাখ্যান দিয়ে সাজানো হয়েছে ‘ফেরা-২’।
‘ফেরা-২’ একজন মনিকা থেকে আয়িশা আর নীলম থেকে মারইয়াম হয়ে ওঠার জীবন্ত আখ্যান। কতোটা কঠিন ছিল সেই পথ! তবুও হাল ছাড়েনি তারা। প্রতিনিয়ত ঝালিয়ে গেছে নিজের ঈমানকে। সঙ্গে দাওয়াতের কাজও চালিয়েছে।
কৃতজ্ঞ আমার রবের নিকট, সেই সুমহান স্রষ্টার নিকট, যিনি আমাকে এই বোনদের জীবনী পড়ার মাধ্যমে নিজের ঈমানকে ঝালিয়ে নেয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন।
আমাদের রব কতো সহজ সুযোগ দিচ্ছেন ইবাদত করার। আমাদের নামাজের জন্য দাঁড়াতে এতো সতর্কতা অবলম্বন করতে হয় না, শুধু পানি খেয়েও রোযা রাখতে হয় না। তবুও আমরা কেন ডুবে আছি এই দুনিয়ার মোহে? কবে ফিরব নীড়ে? নিজেকে আয়িশা আর মরিয়মের জায়গায় চিন্তা করলে রীতিমতো শিউরে উঠতে হয়।
আল্লাহ যেন আমাদের সবাইকে আশা করি আয়িশার মতো একজন দৃঢ় ঈমানের দা’ঈ হয়ে ওঠার তৌফিক দেন, আমিন।
বইটা কলেবড়ে তেমন বড় নয়। ভাষাও প্রাঞ্জল, কোনো জড়তা নেই। পেপারব্যাক হওয়ায় বহন করতেও সুবিধা। তবে হ্যাঁ দামের ব্যাপারে একটা কথা বলা যেতে পারে। সেইসব ভাই-বোনকে আল্লাহ উত্তম জাযাহ দান করুক, যারা এতো স্বল্পমূল্যে এমন ইমান জাগানিয়া বই আমাদের হাতে তুলে দিয়েছেন। জাযাকাল্লাহু খাইরান।
Meher Afroz –
বইঃ ফেরা-২
লেখেকঃ বিনতু আদিল
প্রকাশনঃ সমকালীন প্রকাশন
রাত্রির শেষ প্রহরে নিয়ম করে ঘুম ভেঙে যায় আয়িশার।দু-চারটা সুরা মুখস্ত হয়েছে সবে।ওটুকু সম্বল করেই আবেগমথিত হৃদয়ে রবের সামনে দাঁড়ায় সে।পার্থিব কোলাহলকে পেছনে ফেলে সে মগ্ন থাকে নিবিড় আলাপনে, সুমহান রবের সাথে।
কেমন করে এ জীবনে এলো আয়িশা? কেনই-বা মারইয়াম তার সঙ্গী হলো? তাদের তো জন্ম হয়েছিল এক হিন্দু পরিবারে।তারা তো বেড়ে উঠেছিল এক ক্ষয়িষ্নু সমাজে- এমন এক সমাজে,যেখানে সব ধর্মের অস্তিত্ব মিলেমিশে একাকার। মুসলিমরা হোলি খেলছে,সাড়ম্বরে অংশ নিচ্ছে বসন্তপূজায়।হিন্দুরাও অভ্যস্ত মুসলিমদের জীবনাচারে। অঙ্গতা আর মূখর্তায় ঘেরা জীবন।কেউ জানে না কোথায় যাচ্ছে,কীসের পিছনে ছুটছে সবাই!
তবুও তো এমন হয়- প্রচন্ড ঝড়ে লন্ডভন্ড অস্থির প্রকৃতিতে প্রাণের জোয়ার আসে।জ্বলে ওঠে জীবনের প্রদীপ।দমকা বাতাসেও সে প্রদীপ নিভিয়ে দিতে পারে না।এমনই দুটি প্রদীপের নাম আয়িশা আর মারইয়াম।কী করে জ্বলে উঠল তারা? সেই বিস্তারিত বিবরণ পাঠক ‘ফেরা-২ বইটি’ পড়তে গিয়ে জানতে পারবেন।ইন শা আল্লাহ।
পাঠ্যানুভূতিঃ—
এই বইটি পড়লেই এক আপার কথা মনে পড়ে যায়। মনে পড়ে যায় আমার দেখা তাঁর অতিত দিনগুলোর কথা।যদিও আইশা- মারইয়ামের মত এতো পরিক্ষার সম্মুখীন হতে হয়নি। তবে, আমার স্ব-চোখে দেখা এত্ত এত্ত সেক্রিফাইস সেই বোনটি করেছিলেন। এই আইশা, মারইয়াম চরিত্রগুলো কোনো রূপ কথা নয়, আমাদের আশেপাশেই এমন ভাইবোন আছেন যারা প্রাণপণ ইসলামের শুধাপান করতে চাইছেন।
আমরা যারা মুসলমান আছি আমাদের উচিৎ, এই দ্বীনে ফিরতে চাওয়া ভাইবোনদের সাহায্য করা। তাছাড়া, আমরা দ্বীনের এতো ফ্যাসিলিটি পেয়েও যারা আমলে অলসতা করছি তাঁদের উচিৎ বইটিতে উল্লেখিত বোনদের ইচ্ছা শক্তিতে অনুপ্রাণিত হয়ে ইবাদাত বন্দেগি বাড়িয়ে দেওয়া। আর, দ্বীনের সত্য প্রচার করা।যেন যে কানগুলো সত্যকথন জানেই না, শোনেইনি তাদের ভেতর যেন ভাবনার উদ্রেক তৈরি হয়।
আরেকটা কথা না বলে পরছিনা! বইটির ৪০ নাম্বার পৃষ্ঠা এবং ৬০ নাম্বার পৃষ্ঠা সত্ত্যি খুব বেশি আবেগঘন মনে হয়েছিলো।
বইটি আপনার আশেপাশে থাকা হিন্দু বান্ধুবি যারা দ্বিধা-দ্বন্দে আছে তাদেরকে গিফট করতে ভুলবেন না।
রিভিউ দাতাঃ Meher Afroz