কলকাতার বিশিষ্ট লেখক, বাংলাভাষার অনন্য অমর গদ্যশিল্পী আবদুল আযীয আল আমানের বিশেষ রচনা, সীরাত-বিষয়ক ছয়টি বই আল্লাহর অশেষ রাহমাতে প্রকাশিত হতে যাচ্ছে। আজ থেকে চার বছর আগে বইকেন্দ্র পাবলিকেশন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল মূলত এই ছয়টি বই প্রকাশেরই বিশেষ স্বপ্ন নিয়ে। সে হিসেবে, বলা চলে, আল্লাহর অশেষ দয়ায় বইকেন্দ্র পাবলিকেশন তার প্রথম স্বপ্ন স্পর্শ করার তাওফীকপ্রাপ্ত হয়েছে। আলহামদু লিল্লাহ!
আমান ছিলেন বহুমাত্রিক একজন লেখক। গল্প-কবিতা-উপন্যাস রচনার পাশাপাশি তিনি ছিলেন একজন নজরুল গবেষক, সাহিত্যপত্রিকা সম্পাদক এবং প্রকাশকও। তাকে নিয়ে বলার মতো কথা অনেক। তবে বইয়ের ভূমিকার ভূমিকায় অত কথা বলা সঙ্গত নয় হয়তো; তাই এখানে জরুরী এক-দুটি কথা আমাকে বলতে হবে, আর এটুকু তারই ভূমিকা।
আমানের এই বইগুলোর বাংলাদেশী সংস্করণে প্রথম প্রসঙ্গটি বানান বিষয়ে। এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ প্রসঙ্গ। যে কারণে প্রতিটি বইয়ে প্রকাশকের কথা না থাকলেও কলকাতার সংস্করণ উপলক্ষে হরফ পাবলিকেশনের প্রকাশক, লেখক-পুত্র মুনীর ভাইয়ার লিখিত ভূমিকাটি রাখা হয়েছে। কলকাতায় মুসলিম-অনুসঙ্গে ব্যবহৃত শব্দগুলোর যে বিকৃতি ঘটানো হয়, আমান ছিলেন এর বিরদ্ধে। তিনি চাইতেন—বাংলায় আগত আরবী-ফারসী-উরদু শব্দগুলো যেন যথাসম্ভব শুদ্ধ উচ্চারণ লেখা হয়। এ-কল্পে তিনি একটি ভাষারীতিও প্রণয়ন করেছিলেন বলে জানা যায়। ১৯৬৯ থেকে ১৯৯৪ পর্যন্ত প্রকাশিত তার সীরাত সিরিজের এই বইগুলোতে তাই বানান পাওয়া যায় দু তিন রকমের। কারণ, এগুলো নিয়ে তিনি ব্যাপক পর্যালোচনা করছিলেন। তার ভেতরে হতে থাকা পরিবর্তনগুলো ক্রমশ প্রকাশিত হচ্ছিল তার ধারাবাহিক প্রকাশিত বইগুলোতে।
আমানের পরলোকগমনের দীর্ঘদিন পর মুনীর বিন আবদুল আযীয চাইলেন আমানের লেখাগুলো নতুন করে প্রকাশ করতে। এর জন্য তিনি কয়েকটি কাজ হাতে নিলেন—
১. সবগুলো লেখা খুঁজে বের করা (কিছু লেখা গ্রন্থাকারে অপ্রকাশিতও ছিল)
২. এগুলোর মূল সূত্র (হাদীস, বা সীরাতের ঘটনা) খুঁজে বের করা;
৩. বইগুলোর বানান নতুন করে লেখকের শেষ ইচ্ছে অনুযায়ী সমন্বয় করা;
এই কাজগুলো সামনে রেখেই সবগুলো বই তিনি নতুন করে সাজালেন। যার কিছু বর্ণনা সেখানে তিনি দিয়েছেন। তো, ‘বানান’-প্রশ্নে আমরাও বিব্রত ছিলাম; কারণ, যেই বানানগুলো কলকাতায় বিকৃত হচ্ছে, তার সবগুলো বাংলাদেশে হয় না। যেমন, ‘নামায’কে এখানে ‘নমাজ’ লেখা হয় না। এখানে ‘মুহাম্মাদ’কে ‘মহম্মদ’ লেখা হয় না। তাহলে আমরা এই বইয়ের বানান কীভাবে রাখবো।
অনেক চিন্তা-ভাবনা ও আলোচনার পর আমানের বানান-নিরীক্ষাকে আমরা একটি ‘ভাষিক প্রতিবাদী আন্দোলন’ হিসেবে চিহ্নিত করি। এবং এই আন্দোলনকে ‘স্বীকৃতি’ ও সমর্থন দেওয়ার প্রয়োজন অনুভব করি। এই প্রয়োজন সামনে রেখে বানান নিয়ে আমরাও কিছু কাজ করি।
আরবী-উরদু-ফারসী থেকে আগত শব্দগুলোর বানান-বিষয়ে আমানের নির্দিষ্ট নির্দেশনা পেলেও বাংলা ক্রিয়াপদের বানানে আমরা কিছু সমস্যায় পড়েছিলাম। যেমন কিছু বানানে—‘করলো/করল, দিলো/দিল, ছিলো/ছিল’ ইত্যাদি দুটি রূপই পাচ্ছিলাম। এছাড়া ‘হলো, হয়তো, হতো, কারও, কোনো, কোন্-সহ এ ধরনের অন্যান্য শব্দগুলোর বানান-নির্দেশনা স্পষ্ট ছিল না। দু রকম বানানই ছিল বইগুলোতে। ফলে বানান নিয়ে আমাদের এমন একটি নিয়ম অনুসরণ করতে হয়—যা একই সাথে উল্লিখিত আন্দোলনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয় আবার বইয়ে থাকা বানানজনিত সমস্যার সমাধানও হয়। আমাদের সাধ্যে থাকা চেষ্টা আমরা করেছি। আশা করি, এই চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
বইয়ে আরেকটি কাজ করা হয়েছে। বইগুলোর প্রতিটির ভূমিকা লেখা হয়েছে।
Copyright © 2024 Seanpublication.com
Reviews
There are no reviews yet.