মক্কার মানুষগুলো তখনও চিনতে পারেনি তাদের সত্য ইলাহকে। আইয়ামে জাহিলিয়ার সর্বনিম্ন স্তরে নিমজ্জিত ছিল গোটা কাবা প্রাঙ্গণ। শিরকের মত ঘৃণিত কাজটি ছিল তাদের নিত্যদিনের উপাসনা ও আরাধনার উপায়। লাত-মানাত-উজ্জাকে যারা লাভ ক্ষতির বাটখারা মনে করে দিনাতিপাত করত। মানবতার উপস্থিতি তখন ছিল ডুমুরের ফুল। অধঃপতনের অতল গহবরে তলিয়ে যাওয়া সমাজটিতে নারীরা ছিল অপমানিত, নিগৃহীত, নিষ্পেষিত। সম্পদশালী মানুষের হাতে ছিল সহায় সম্বলহীন মানুষের উপর নিরংকুশ কর্তৃত্ব। অন্ধকারে নিমজ্জিত থাকা মানুষগুলো যেমন চিনত না তাদের রবকে, ঠিক তেমনি জানত না জীবন গড়ার উপায়ন্তর। সমাজের সর্বত্র আনাগোনা ছিল শিরক, জুলুম, অত্যাচার, ভোগবিলাস আর হাস্যরসের মত ধ্বংসাত্মক সব পাপাচার।
ঘুণে ধরা সমাজের সংস্কারকল্পে, বিভীষিকাময় সমাজে দিন বদলের জোয়ার বইয়ে দিতে প্রয়োজন ছিল একজন সংস্কারকের। প্রয়োজন ছিল এক সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীর। প্রয়োজন ছিল এমন একজন মানু্ষের যে আনতে পারে এক আমূল-পরিবর্তন, করতে পারে শিরকের শিকড়ের মূল উৎপাটন। নষ্ট স্রোতে ডুবতে থাকা অসহায় মানুষগুলোকে দেখাতে পারে বেঁচে থাকার এক অন্যন্য উপায়। অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে যাওয়া সমাজটির আকাশে আনতে পারে এক উজ্জ্বল হাসিমাখা সূর্য। যে সূর্যের আলোয় হারিয়ে যায় অন্যায়, অবিচার, জুলুম, অত্যাচার।
মহান আল্লাহ তার বান্দাদের প্রতি ইহসান করলেন। দুনিয়াবাসীর জন্য রহমত হিসেবে প্রেরণ করলেন এমন একজন মানুষকে যাকে সবাই রাহমাতুল্লিল আলামিন বলে জানে। যার আগমনে মক্কার প্রাণহীন জমিনের বুকে ছুয়ে গেল এক রঙিন রোদের ঘনঘটা। যার পদচারণায় মরুভূমির বালুকণায় মিশে গেল শিরকের স্তম্ভ। বিলীন হয়ে গেল হানাহানি, মারামারি, মিছেমিছি যতসব দম্ভ। ঐশী আলোয় আলোকিত মানুষটির একচ্ছত্র আধিপত্যে মক্কা নগরীর আলো ছড়িয়ে পড়ল চারিদিকে। সে আলো মদিনায় গিয়ে পেল পূর্ণরূপ।
রহমতের সুশীতল ছায়াতলে আহবান ও তলোয়ারের ঝংকারে প্রতিষ্ঠিত হল দ্বীন ইসলাম। সুদীপ্ত সেই আলো
ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ল দুনিয়া জুড়ে। শত মানুষের বুকে জায়গা করে নিল একটি ঐতিহাসিক নাম – “মুহাম্মাদ” (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)।
শত মানুষের বুকপিঞ্জর থেকে যার জন্য ভালোবাসার ফোয়ারা উদ্বেলিত হয়। যার প্রেমে উম্মাহ মাতোয়ারা হয়। কখনও সলাতে, কখনও দু’আয়, কখনওবা নাশীদ, কখনও আবার কালিমাখা কাগজের পাতায় পাতায় ভেসে উঠে তার ঐশী আলোয় উদ্ভাসিত জীবনচরিত। ইতিহাসের পাতায় যার নামটি অগণিত অসংখ্যবার লিপিবদ্ধ হয়, বিভিন্ন উপমায়, বিভিন্ন মাত্রায়। তার জীবনী নিয়ে রচিত হয় কতশত বই-পুস্তক, কিতাবাদি, কতশত জানা অজানা গ্রন্থ, সীরাহ।
এই পূণ্যময় কাজের ধারাবাহিকতায় আযান প্রকাশনী হাতে নিয়েছে সেই মহামানবটির জীবনী নিয়ে সংকলিত এক অনবদ্য সীরাহ। মাওলানা মাহফুজ মুসলেহ রচিত এই সীরাহটি কোন গতানুগতিক সীরাহ নয়। বরং এর রয়েছে আলাদা স্বাদ, আলাদা রূপ, আলাদা বৈশিষ্ট্য। মহামানবের জীবনকে তিনি বেধে ফেলেছেন বিশেষ কিছু ছকে। বিশ্বস্ত ও বিখ্যাত সব সীরাহ গ্রন্থ থেকে সহয়তা নিয়ে তিনি রচনা করেছেন অনবদ্য সীরাহ “এক নজরে নবীজি” (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। আশা করি এই উম্মাহ উপকৃত হবে ইন শা আল্লাহ! ওয়ামা তাওফিকি ইল্লা বিল্লাহ!
Muhammad Tamimul Ihsan –
||বুক রিভিউ||
▪︎ সীরাতে রাসূল (সা.),এই পৃথিবীতে কুরআনের পরই সর্বোত্তম জিনিসটি হচ্ছে সীরাতে রাসূল (সা.)। কুরআনের আদর্শ রাসূল (সা.) কীভাবে পালন করেছেন তা হুবহু বর্ণনা করা আছে সীরাতে রাসূল (সা.)-এ। ফিতনার এই যুগে আমাদের বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন হলো,রবের কালাম কুরআন আর রাসূল (সা.)-র সুন্নাহ তথা রাসূলের জীবনাদর্শ। তবে রাসূলের এই জীবনাদর্শ আমাদের জীবনে প্রয়োগ করতে হলে তার পুরো জীবনী আমাদের অবগত হওয়া প্রয়োজন। ব্যক্তিজীবন থেকে শুরু করে ঘরের জীবন, ঘরের জীবন থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় জীবন,সব কিছু সম্পর্কে আদ্যোপান্ত অবগত থাকা দরকার আমাদের। কারণ রাসূল (সা.)-র জীবন আমাদের বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করার জন্য প্রয়োজন এটা জানা। তারপরও হাজার ব্যস্ততা, হাজার কাজের মধ্যে আমাদের সম্ভব হয়ে ওঠে না রাসূলের সীরাহ পড়া। আবার অনেক বইয়ের প্রস্থ দেখেই অপ্রয়োজনীয় মনে করে রেখে দেয় রাসূলের সীরাহ। তাই সকল কর্মব্যস্ত মানুষের হৃদয়ে নববী নূর পৌঁছে দিতে এবং রাসূলের জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সবটা মাথায় রাখার নিমিত্তেই মাওলানা মাহফুজ সালেহ কর্তৃক রচিত “এক নজরে সীরাহ” গ্রন্থটি প্রকাশ করেছে আযান প্রকাশনী।
▪︎ মাওলানা মাহফুজ মুসলেহ রচিত এই সীরাহটি কোন গতানুগতিক সীরাহ নয়। বরং এর রয়েছে আলাদা স্বাদ, আলাদা রূপ, আলাদা বৈশিষ্ট্য। মহামানবের জীবনকে তিনি বেধে ফেলেছেন বিশেষ কিছু ছকে। বিশ্বস্ত ও বিখ্যাত সব সীরাহ গ্রন্থ থেকে সহায়তা নিয়ে তিনি রচনা করেছেন অনবদ্য সীরাহ “এক নজরে নবীজি” (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)।
▪︎ বইটিতে রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পুরো জীবনীকে মূলত সংক্ষেপে নিয়ে আসা হয়েছে। যার ফলে কর্মব্যস্ত পাঠক অতি সহজেই রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পুরো জীবনী খুব সহজেই নখদর্পনে নিয়ে আসতে পারবে।
এছাড়াও রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পুরো জীবনীকে বইটির মধ্যে নবুয়তের পূর্ব মাক্কী জীবন,নবুয়ত পরবর্তী মাক্কী জীবন,মাদানী জীবন,এক নজরে রাসূল ﷺ -র অবয়ব এবং একনজরে রাসূল ﷺ -সম্পৃক্ত বিষয়সমূহ এই পাঁচ ভাগে ভাগ করে খুবই চমৎকারভাবে তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়াও রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন জিনিস সহজে মাথায় রাখার জন্য চার্ট আকারে দেওয়া হয়েছে। যার ফলে পাঠক খুব সহজেই পুরো জীবনীটিকে অায়ত্ত করে নিতে পারবেন।
▪︎ বইটি কারা পড়বেন…?? যারা অনেক সময় কর্মব্যস্ততার কারণে রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনী পুরোটা পড়ে উঠতে পারেননি কিন্তু হৃদয়ে রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নূর প্রবেশ করাতে চান তাদের জন্যই মূলত এই বইটি।এছাড়াও বইটি তারাই পড়বেন-
•যারা সীরাতের তালিবুল ইলম।
•যারা নিয়মিত সীরাতকে মনে রাখতে চায়।
•সীরাত প্রতিযোগিতায় যারা বিজয়ী হতে চায়।
•বিভিন্ন সভা-সেমিনারে সীরাতের সূত্রগুলো যারা উল্লেখ করতে চান।
▪︎ ব্যক্তিগত অনুভূতি : রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পুরো জীবনী আগে বিস্তারিত পড়ার কারণে এই বইয়ের প্রায় সবকিছুই জানাটা স্বাভাবিক ছিলো,তবে এই বইটি মূলত বিস্তারিত সব বইয়ের রিমাইন্ডার হিসেবে কাজ করেছে। আগের সীরাত সংশ্লিষ্ট যত বই পড়া হয়েছে প্রায় সব বইগুলোরই মূল তথ্যগুলো এই বইয়ে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।এছাড়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ যেটা বইয়ের মধ্যে হয়েছে, অনেক বড় বড় সীরাতের বইয়ের রেফারেন্স এর মধ্যে কোট করে দেওয়া হয়েছে।যার কারণে বড় বড় যেসব সীরাতের কিতাব পড়া হয়েছে তার রেফারেন্সটাও ধরে রাখা সোজা হচ্ছে।
▪︎ সর্বোপরি বইটি এক কথায় অসাধারণ। সীরাতকে যারা মনে রাখতে চান, হৃদয়ে ধারণ করতে চান তাদের জন্য বইটি অনেক উপকারী হয়ে থাকবে বলে আশা করে থাকি।
▪︎ ব্যক্তিগত রেটিং: ৪/৫
মাআসসালাম………….!!