ইতিহাসের আয়নায় বর্তমান বিশ্বব্যবস্থা’ বইটি মূলত ওল্ড ওয়ার্ল্ড অর্ডার থেকে নিউ ওয়ার্ল্ড অর্ডারের ইতিহাস নিয়ে রচিত। বইটি পাঠ শেষ হওয়ার পর পাঠক নিজ থেকেই এই প্রশ্নগুলোর জবাব পেয়ে যাবে বর্তমান সময়ে মুসলিমদের কোন পথে অগ্রসর হওয়া উচিৎ? তাদের দাওয়াতের মূল ভিত্তি কী হওয়া জরুরী? তাদের মূল শত্রু কারা? কী তাদের এজেন্ডা ও কর্মপদ্ধতি? লেখক ইতিহাস লেখার মধ্য দিয়ে ইয়াহুদী, খ্রিষ্টান এবং বিশ্বজুড়ে মুসলিমদের বিরুদ্ধে চক্রান্তকারীদের বিশ্বাস ও চিন্তাধারাগুলো অনেক সহজভাবে বর্ণনা করেছেন এবং সেই সাথে সহজ ভাষায় এগুলোর জবাবও লিখেছেন। নিশ্চিতভাবে পশ্চিমাদের ইতিহাস জানা ছাড়াও পশ্চিমাদের বিশ্বাস ও চিন্তাধারা বোঝার জন্য এই বইটি অধ্যয়ন অনেক উপকারী হবে।
.
বর্তমান সময়ে চলমান ফিতনার জোয়ারে ভেসে যাওয়া ঈমান ধরে রাখা বড়ই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। এমন পরিস্থিতে নিজের ঈমান বাঁচানোর জন্য বিশ্বব্যবস্থার ঈমান বিধ্বংসী যাবতীয় বিষয়ে জ্ঞানার্জন করা প্রতিটি মুসলিমের অন্যতম প্রধান ঈমানি দায়িত্ব।
Copyright © 2024 Seanpublication.com
Arafat Shaheen –
আমরা এমন একটা সময়ের স্রোতে এই মুহূর্তে অবস্থান করছি—যখন প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে বিশ্বের সকল কিছু। এই পরিস্থিতিকে মোকাবিলা করার জন্য একজন মুসলিম হিসেবে; সর্বোপরি একজন সচেতন মানুষ হিসেবে পরিবর্তনের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিষয়গুলো নজরে রাখা প্রয়োজন। আমাদের অতীত ইতিহাস স্মরণ রেখে বর্তমান দুনিয়ার সঙ্গে এর নিরবিচ্ছিন্ন যোগসূত্র ধরতে পারাই সামনে এগিয়ে যাওয়ার সোপান বলে বিবেচিত হতে পারে।
বহু বছর ধরে মুসলিম জাতি বিশ্বে শাসন প্রতিষ্ঠা করে রেখেছিল। এরপর ধীরে ধীরে মুসলিমরা অধঃপতনের দিকে এগিয়ে গিয়েছে এবং ক্ষমতার কেন্দ্র থেকে সরে এসেছে বহু দূরে। কীভাবে ইসলমি শাসনব্যবস্থা পরিবর্তিত হয়ে নতুন শাসনব্যবস্থা প্রবর্তিত হলো—এই ইতিহাস জানা না থাকলে আমরা কিছুতেই আগামীর কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করতে সক্ষম হবো না। যখন ‘তসবির দানার মতো’ ফিতনা এসে আচ্ছন্ন করে ফেলবে তখন আমরা যদি এসব বিষয়ে অজ্ঞ থাকি, তাহলে অন্ধকার চোরাবালিতে নিঃশেষ হয়ে যাবো।
ইতিহাসের ছাত্র হলেও পূর্বে এই বিষয়ে একক কোনো বই আমার নজরে আসেনি। ফলে ইতিহাসের সঙ্গে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থার যোগসূত্র স্থাপন করা বেশ কষ্টসাধ্য ছিল। আলহামদুলিল্লাহ! রুহামা পাবলিকেশন এই শূন্যতা পূরণে এগিয়ে এসেছে। আল্লাহ তাদের উত্তম প্রতিদান দিন।
•
‘ইতিহাসের আয়নায় বর্তমান বিশ্বব্যবস্থা’ বইটি মূলত দুই খণ্ডে বিভক্ত। প্রথম খণ্ডের আলোচ্য বিষয়—ওল্ড ওয়ার্ল্ড ওর্ডার। আর দ্বিতীয় খণ্ডের আলোচ্য বিষয়—নিউ ওয়ার্ল্ড ওর্ডার। পরিশিষ্টে নিউ ওয়ার্ল্ড ওর্ডার সম্পর্কে আলোচনা করার পাশাপাশি উত্তরণের পথনির্দেশও করা হয়েছে।
বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় ইহুদিরা পরাশক্তির মূল কেন্দ্রে অবস্থান করছে। বিশ্বব্যাপী যে অরাজকতা ও হিংসার ছড়াছড়ি, তাতে জ্বালানি সরবরাহ করছে তারা। ফলে বর্তমান সময়কে বুঝতে হলে ইহুদি জাতির ইতিহাস জানার কোনো বিকল্প নেই। সঙ্গত কারণেই প্রথম খণ্ডের প্রথম অধ্যায়ে ইহুদিদের সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। দ্বিতীয় অধ্যায়ে এসেছে পশ্চিমা তথা খ্রিস্টবাদের ইতিহাস। ঈশা (আ.)-এর সময় থেকে শুরু করে আধুনিক যুগ পর্যন্ত তাদের নানান ঘটনা আলোচনা করা হয়েছে।
দ্বিতীয় খণ্ডের শুরুতেই আলোচিত হয়েছে—নিউ ওয়ার্ল্ড ওর্ডার তথা আধুনিক বিশ্বব্যবস্থার ক্রমবিকাশ সম্পর্কে। কীভাবে পশ্চিমারা তাদের প্রবর্তিত শাসনব্যবস্থা মানুষের মগজে প্রবেশ করিয়েছে তার ইতিহাস জানা আমাদের জন্য অপরিহার্য। নিউ ওয়ার্ল্ড ওর্ডার-কে সময় অনুযায়ী বিভক্ত করে এর স্বরূপ আমাদের সামনে উন্মোচিত করা হয়েছে। ইসলাম এবং কুফরের মধ্যে যে সংঘাত চলে আসছে ধারাবাহিকভাবে, তার বর্ণনাও রয়েছে।
•
যে কারণে বইটি পড়তে বলবো:
ইতিহাসের এক কঠিন সন্ধিক্ষণে উপনীত হয়েছি আমরা। চারিদিক থেকে আমাদের ওপর চড়াও হয়েছে ইসলামবিদ্বেষীরা; যেন সহজেই ধরাপৃষ্ঠ থেকে মুছে দিতে পারে ইসলামের নামনিশানা। এই কঠিন সময়ে আমাদের ঈমান অথবা কুফর—যেকোনো একটিকে বেছে নিতে হবে। বিভিন্ন কুফরী মতবাদ ও বিশ্বাস এমনভাবে আমাদের ওপর চেপে বসেছে যে—সত্য মিথ্যার প্রভেদ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
এই অবস্থায় আমাদের জন্য জরুরি হলো বর্তমান বিশ্বব্যবস্থাকে সম্যকভাবে উপলব্ধি করা। আমরা যদি পশ্চিমাদের চিন্তাচেতনা সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা রাখতে না পারি, তাহলে তাদের প্রতিরোধ করা কঠিন হয়ে যাবে। আমাদের আজকের প্রজন্ম উপলব্ধি করতে পারে না—কীভাবে নিজেদের সোনালি অতীতকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব। এই বইটি আমাদের ইতিহাসের নানা গলিপথ ঘুরিয়ে বর্তমানের করণীয় সম্পর্কে দিকনির্দেশনা দেবে ইনশাআল্লাহ।
অতি গুরুত্বপূর্ণ এই বইটির অনুবাদ করেছেন ইফতেখার সিফাত। অনুবাদ যথেষ্ট সাবলীল। মাশাআল্লাহ। আমি আশাবাদী—যুগের চাহিদা পূরণে বইটি কার্যকরী পথ প্রদর্শকের ভূমিকা পালন করবে ইনশাআল্লাহ।
nayeem_sharder –
বই- ইতিহাসের আয়নায় বর্তমান বিশ্বব্যবস্থা
আধুনিক বিশ্বব্যবস্থা বুঝতে হলে আমাদের কিছু সময়ের জন্য ফিরে যেতে হবে পুরাতন বিশ্বব্যবস্থার দিকে। অনেক আন্দোলন, সংগ্রাম, বিশ্বাসঘাতকতা আর রক্তের সাগর পারি দিয়েই সৃষ্টি হিউম্যানিজমের খোলসে ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতির ফাঁদ!
বইটি বিশ্বব্যবস্থার অনেক বড় ইতিহাসকে সামনে রেখে রচিত। ইতিহাসের অনেক আলোচিত বিষয়গুলো সুন্দর ধারাবাহিক ভাবে বইতে বর্ণনা করা হয়েছে। তাই বর্ণনার সুবিধার্থে বইটি দুইটি মূল অংশে ভাগ হয়েছে-
১) ওল্ড ওয়াল্ড অর্ডার (পুরাতন বিশ্বব্যবস্থা)
২) নিউ ওয়াল্ড অর্ডার (আধুনিক বিশ্বব্যবস্থা)
এই দু’টো ব্যবস্থাকে লেখক পাঠকের সামনে আয়নার মত করে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। যা আমার কাছে এতোটাই চৎকার লেগেছে যা ভাষায় প্রকাশ করার মত না।
বইটির “ওল্ড ওয়ার্ল্ড অর্ডারে” অংশে বনি ইসরায়েলের (ইহুদিদের) উত্থান ও তাদের সুশৃঙ্খল শাসক হিসাবে জীবন ব্যবস্থা নিয়ে বর্ণনা আছে। পরবর্তিতে তারা ধীরে ধীরে উৎশৃংখল জাতিতে পরিবর্তন হতে থাকে। যার ফলে ইতিহাসে খ্রিস্টানদের দ্বারা ইহুদীরা অগণিত বার গনহত্যার শিকার হয়। রোমান ক্যাথলিকরা (খ্রিস্টানরা) বিশ্বাস করতো ইহুদিরা ইসা (আ.) এর হত্যাকারি। তাই ইহুদিদের অভিশপ্ত মনে করে যখন ইচ্ছা তখন গনহত্যা করতো। যার কোন বিচার বা মানবতা কোনটাই ছিলো না। এরই মধ্যে জন্ম মার্কিন লুথারের। রিফর্মেশন আন্দোলনে ইউরোপরের ইতিহাসে শুরু হয় নতুন মোড়। বদলে যেতে থাকে নির্যাতিত ইহুদিদের ভাগ্যের হিসাব। যেই খ্রিস্টানরা ইহুদিদের চরম শত্রু ভাবতো আজ তারা আপন বন্ধুত্বে আবদ্ধ!! কিন্তু কীভাবে.?? বইতে এরকম অনেক রহস্যের উত্তর মিলবে।
বইয়ের দ্বিতীয় অংশ “নিউ ওয়ার্ল্ড অর্ডার”। ফরাসি বিপ্লব থেকে ১ম বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত একটা দীর্ঘ মেয়াদি গ্রেট গেইমের ছক! এই ছকে ফাঁদে পরে যায় মুসলিম খেলাফত শাসন। হ্রাস পেয়ে যায় ইউরোপে একতরফা পোপতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা। এই সময়টায় বিট্রিশ কীভাবে পুরো বিশ্বকে হাতের তালুকে নিয়ে ফেলেছিলো, বইটিতে তার উত্তর মিলবে।
বিট্রিশ এদিকে জার্মানির কাছে বিশ্বযুদ্ধে বিজয় পেলেও আর্থিক ভাবে চরম আকারে ভেঙ্গে পরে আর আমেরিকার শুরু করে ডলার কারেন্সির একক রাজত্ব। আমেরিকা কীভাবে বিশ্ব রাজনীতির নেতা হয়ে গেলো, সেই রহস্য মিলবে বইটিতে। কিন্তু আবার এদিকে আমেরিকার মত পরাশক্তির বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়ালো আফগান বাহিনি!
লেখক বইটি লিখতে বেশ পরিশ্রম করেছে। অনেক লম্বা লম্বা ইতিহাসকে চমৎকার ভাবে সংক্ষিপ্ত বর্ণনায় নিয়ে এসেছে। খ্রিষ্টপূর্ব ২৫০০ থেকে শুরু করে ২০১১ সাল এবং বর্তমান প্রেক্ষাপট বর্ণনা করা মোটেও মামুলি ব্যপার না। বইয়ের অনেক বড় একটা অংশজুড়ে ইসলামি শাসন পতনের নানা প্রেক্ষাপট তুলে ধরা হয়েছে। বইটিতে কত কত তথ্য আর রহস্যের উত্তর মিলবে তা গুনে বলাও অসম্ভব। আমার জীবনে বেস্ট বইয়ের তালিকায় এই বইটি শীর্ষে থাকবে।