দু’আ একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাহ। রাসূল ( ﷺ) ইরশাদ করেন,“দু’আ মূল ইবাদাহ”। [আবূ দাঊদ, তিরমিযী] দু’আ হলো মহান আল্লাহর নিকট কোনকিছু চাওয়া বা প্রার্থণা করা। যিনি আমাদের সুন্দরতম অবয়বে সৃষ্টি করেছেন, পরীক্ষার নিমিত্তে দুনিয়ায় প্রেরণ করেছেন, কৃত গুনাহ মাফের জন্য কিংবা যে কোন প্রকারের সাহায্য-সহযোগিতার জন্য দু’আ শিখিয়ে দিয়েছেন। যুগে যুগে মানবতার মুক্তির দূত নাবী রাসূলগণ যে কোন প্রয়োজনে স্বীয় রবের কাছে দু’আ করতেন। যে কোন মুহুর্তে, যে কোন প্রয়োজনে আল্লাহর কাছে কোনকিছু চাইতে দ্বিধাবোধ করতেন না।
সাহাবাগণ দু’আ করতেন, চাইতেন, আল্লাহর কাছে বেশী বেশী ফিক্বির জারি রাখতেন। যে কোন সিদ্ধান্ত নিতে দু’আ, যেকোন বিপদ-আপদে দু’আ, যে কোন সমস্যায় দু’আ, সুখের সময়ও দু’আ। দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ কামনায় দু’আ। তাদের যাবতীয় ফরিয়াদ ছিল আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার কাছে, শুধুমাত্র তারই কাছে। রদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা ‘আনহুম ওয়া আজমাঈন।
আমাদের বর্তমান প্রেক্ষাপট খানিকটা ভিন্ন। অল্প কিছু মানুষ ছাড়া উম্মতের বড় একটা অংশ দু’আর দেখানো পথ থেকে অনেক দূরে। উম্মতের এই বড় অংশটা আবার কয়েক ভাগে বিভক্ত। একভাগ দু’আ করেনা বা করতে চায় না, একভাগ স্বীয় রব্বকে ভুলে সৃষ্টিকূলের কাছে মাথা ঠুকে, আর আরেকভাগ দু’আ করতে চাইলেও আত্ন-বিশ্বাস আর তাওয়াক্কুলের অভাবে কিংবা পদ্ধতি না জানার কারণে নিজে দু’আ করা থেকে মাহরুম থাকে।
আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেন, “সবচাইতে হতভাগা হল সেই ব্যাক্তি যে দু’আ করে না”[সহিহ আল জামি’]
আমাদের কোনকিছুর প্রয়োজন হলে কিংবা কোন সমস্যায় পড়লে সর্বপ্রথমে আমরা সৃর্ষ্টির কাছে ধরনা দেই। যখন একে একে সবগুলো দরজা বন্ধ হয়ে যায়, ঠিক তখন আল্লাহর দিকে ফিরে এসে ফিক্বির জারী করি। অনেক সময় দু’আর হালই ছেড়ে দেই, দু’আ করতেই চাই না, হতাশায় ভুগি।
সকল প্রয়োজনে সর্বাগ্রে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার কাছে সাহায্য চাওয়ার মানুষের বড্ড অভাব। সর্বশক্তিমান আল্লাহ্কে বাদ দিয়ে দুর্বল সৃষ্টিকূলের দিকে ধাবিত হওয়া মানুষের সংখ্যাই বেশী। অথচ তিনিই আল্লাহ্ যিনি আমাদের দু’আ কবুল করার ওয়াদা দিয়েছেন। বেশী বেশী দু’আ করতে বলেছেন। প্রতিটি বিষয়ে হউক তা ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র, হউক বৃহদাকার একমাত্র আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলাকেই সর্বদা ডাকতে হবে আমাদের, তার কাছেই চাইতে হবে সবকিছু। কোন কিছুর জন্য যে কোন পরিস্থিতিতে দু’আ করলে আল্লাহ রব্বুল ইজ্জত খুশি হন।
শাইত্বন আমাদের প্রতিনিয়ত ধোঁকা দেয়। আমাদের বিশ্বাসের খুঁটিতে নাড়া দেয়। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা কী আমার দু’আ কবুল করবেন? তিনি কী শুনবেন আমার মত এই নগন্য-জঘন্য এক সাধারণ মানুষের কথা? কত মানুষই তো দু’আ করে, তাদের দু’আ কী কবুল হয় ? তাদের তো কোন পরিবর্তন, পরিবর্ধন হয় না? এতদিন ধরে আল্লাহকে ডাকছি তবুও কোন ফল পাই না – নানা-রকমের শাইত্বনিক ওয়াস-ওয়াসা আমাদের প্রশ্নবিদ্ধ করে প্রতিনিয়ত। এটাই মুলতঃ শাইত্বনের ধোঁকা। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার দয়া ও রহমত থেকে নিরাশ করার হাতছানি, কানাকানি, পেরেশানী ইত্যাদি শাইত্বনই করে থাকে। কেননা আল্লাহকে ডাকলে, আল্লাহকে স্মরণ করলে, আল্লাহর উপর ভরসা করলে সবচেয়ে বড় ক্ষতি তো তারই। একদম সহজ সমীকরণ।
আমাদের আশেপাশের সাধারণ, অতি সাধারণ মানুষেরা জানে না কিভাবে দু’আ করতে হয়। কিভাবে ডাকলে আল্লাহ্ শুনেন, দু’আ কবুল করেন। অন্যদিকে অনেক মানুষ আছে যারা আল্লাহকে ডেকে সাড়া পেয়েছে, জীবনের মোড় ঘুরে গেছে, চরম হতাশা ও বিপদের মুহুর্তে এক আল্লাহ্র উপর তাওয়াক্কুল করে ফল পেয়েছে – এরকম মানুষের গল্প ভুড়িভুড়ি। সাধারণ মানুষের দু’আ কবুলের বিভিন্ন ঘটনার সম্ভার নিয়ে আমাদের এবারের আয়োজন বই “দু’আ কবুলের গল্পগুলো”
Meher Afroz –
📙বুক রিভিউ📗
বইঃ দুআ কবুলের গল্পগুলো
লেখকঃ রাজিব হাসান
প্রকাশনঃ আযান পাবলিকেশন
বান্দা যখন তাঁর রব’কে আন্তরিকতার সাথে ডাকে তাঁর রব অবশ্যই সাড়া দেন। আর একজন মুসলিম তাঁর চাওয়া পাওয়া তাঁর রবের কাছেই বলবে।যেমন আমরা পাঁচ ওয়াক্ত সালাতে সুরা ফাতিহাতেই বলে থাকি, ‘ শুধু তোমার ইবাদাত করি, শুধু তোমার কাছেই সাহায্য চাই’। হাদীস শরীফে দু’আর ব্যাপারে রাসূল (সাঃ) বলেছেন-
“দুআ-ই হলো ইবাদতের মগজ”।
কিন্তু অনেক সময় দেখা যায় আমরা আমাদের চাওয়া, বিপদাপদ, দুঃখের কথা রবের কাছে না বলে নিজের ভাগ্যকে দোষারুপ করতে থাকি। মানুষের কাছে অভিযোগ করি। আল্লাহর কাছে দু’আ করার পরও আত্নবিশ্বাসের অভাবে অন্য মাধ্যম খুঁজতে থাকি। হাদিসে আছে— “সবচাইতে হতভাগা হল সেই ব্যক্তি যে দু’আ করে না।” আরেক হাদীসে রাসূল (সাঃ) বলেছেন- “যে ব্যক্তি চায় বিপদাপদে আল্লাহ তার দুআ কবুল করুন,সে যেন তার সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের সময়েও আল্লাহর নিকট বেশি বেশি দুআ করে।”
“দু’আ কবুলের গল্পগুলো” বইটি হলো কিছু মানুষের জীবনে ঘটে যাওয়া প্রমাণ যা একজন মানুষকে দু’আ করে আল্লাহর উপর নীর্ভরশীল হতে শিখাবে। মূলত এটি একটি অনুবাদ গ্রন্থ। বইটিকে সাজানো হয়েছে সমসাময়িক কিছু সত্য ঘটনা নিয়ে। যা নির্ভরযোগ্য কিছু ওয়েবসাইট ও ইউটিউবের ইসলামিক লেকচারারদের থেকে নেওয়া।
প্রতিটি গল্প বা ঘটনাই হৃদয়কে স্পর্শ করে যাবার মত।
প্রতিটা গল্প পড়ার পরই আপনার মুখ থেকে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে নিস্তৃঃত হবে সুবহানাল্লাহু তা’লার কাছে শুকরিয়া আদায়ের তাসবীহ। প্রতিটি পাতায় পাতায় আপনি প্রমাণ পাবেন আল্লাহ যে বান্দার ডাকে সাড়া দেন তার সত্যতা। হতাশাপূর্ণ ও দুঃখ ভারাক্রান্ত না হয়ে রবের নিকট দু’আ করতে থাকার শক্তি পাবেন।ইন শা আল্লাহ।