ডাক দিয়ে যাই তোমায় হে মুসলিম তরুণ

বই: ডাক দিয়ে যাই তোমায় হে মুসলিম তরুণ

একটি সমাজের মূল চালিকাশক্তি হলো এর যুবসমাজ। কোথাও কোনো ভালো কিংবা খারাপ কিছু ঘটে থাকুক না কেন—তার পেছনে থাকে যুবকদের সক্রিয় অংশগ্রহণ। কারণ, তাদের রক্তে থাকে বারুদ; চিন্তায় থাকে সূক্ষ্ম ব্লেডের মতো ধার। তাই তারা যখন নিজেদের চিন্তার বিরুদ্ধে কিছু পায়, তখন সে বাঁধা ভেঙে চুরমার করে ফেলে। এজন্য তরুণ বয়সেই একজন মানুষকে সঠিক পথে পরিচালিত করা খুবই প্রয়োজন। ইসলাম এ ব্যাপারে দিয়েছে পরিপূর্ণ দিকনির্দেশনা। কিন্তু আফসোসের বিষয়—আমাদের সমাজে এর কোনো বাস্তবায়ন দেখতে পাই না।

একজন মুসলিম হিসেবে সব সময়ই চাওয়া থাকে দুনিয়াতে সার্বিক কল্যাণ এবং আখিরাতে মহাসাফল্য আমাদের পদচুম্বন করুক। এ দুটি সফলতা লাভ করতে হলে পাড়ি দিতে হয় কিছু বন্ধুর পথ; অতিক্রম করতে হয় সময়ের কঠিন পুলসিরাত। তাই তরুণ বয়সে যদি সঠিক দিকনির্দেশনা না পাওয়া যায়, তাহলে ধ্বংসের অতল গহ্বরে হারিয়ে যেতে পারে যে-কেউ। বিশ্বব্যাপী মুসলিম তরুণদের হতাশাজনক পরিস্থিতি দেখতে পেয়ে এ ব্যাপারে সঠিক পথ প্রদর্শনের জন্য এগিয়ে এসেছেন সিরিয়ার হিমস শহরে জন্ম নেওয়া বিখ্যাত দায়ি ড. হাসসান শামসি পাশা। পেশায় একজন ডাক্তার হয়েও তিনি ভুলে যাননি মানুষকে শেকড়ের কাছে ফেরানোর প্রচেষ্টা। তরুণদের দিকনির্দেশনামূলক ‘ডাক দিয়ে যাই তেমায় হে মুসলিম যুবক’ বইটি বাংলা ভাষায় প্রকাশ করতে যাচ্ছে জনপ্রিয় প্রকাশনা-প্রতিষ্ঠান রুহামা পাবলিকেশন। ইনশাআল্লাহ এটি এই জাতির যুবকদের জন্য দারুণ কার্যকরী একটি বই হতে যাচ্ছে।

•
যা যা থাকছে বইয়ে:
৩১২ পৃষ্ঠার বইটি মোট ২৫টি অধ্যায়ে বিভক্ত। প্রত্যেক অধ্যায়ে ওই বিষয়সংশ্লিষ্ট আরও অনেকগুলো টপিক নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। স্বল্প পরিসরে বইটি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার সুযোগ নেই। আমি পাঠকের সামনে কয়েকটি অধ্যায়ের শিরোনাম দিচ্ছি। আশা করি বিদগ্ধ পাঠকগণ এতেই বইটির মূল বিষয়বস্তু সম্পর্কে ধারণা পাবেন। কয়েকটি অধ্যায় হলো—কয়েকজন আদর্শ যুবকের কালজয়ী অবস্থান, যুবকদের অহেতুক কর্মকাণ্ড, তোমার সময়কে হত্যা কোরো না, একজন উপকারী বন্ধু খোঁজো, প্রেম-ভালোবাসা সম্পর্কে জরুরি উপদেশ, উপযুক্ত স্ত্রী নির্বাচন করো, যুবসমাজ কেন পথচ্যূত হচ্ছে?, জিনা-ব্যাভিচারের কাছেও যেও না, অ্যালকোহল থেকে সাবধান!, ইমান সম্পর্কে উপদেশ…

আপনি যদি আমাদের চলমান সময় ও সমাজ সম্পর্কে সার্বিক খোঁজখবর রাখেন, তাহলে অবশ্যই বর্তমানের সংকটগুলোর বিষয়ে ওয়াকিবহাল আছেন। এখন বইয়ের বিষয়বস্তুর দিকে নজর দিলেই বুঝতে পারবেন, ঠিক এই সমস্যাগুলো নিয়েই বইটিতে আলোকপাত করা হয়েছে। একজন তরুণ হিসেবে আমি নিজেও সমস্যাগুলো হৃদয়ের গভীর থেকে উপলব্ধি করি। আমারও মনে হয়, এসবের একটা সমাধান হওয়া প্রয়োজন। একটি দেশের তরুণসমাজ এভাবে ধ্বংসের চোরাবালিতে হারিয়ে যেতে পারে না! উসতাজ হাসসান শামসি পাশা এমনভাবে তার বইটি লিখেছেন, পড়তে গিয়ে মনে হবে—আপনি যেন তার সামনেই বসে রয়েছেন! ফলে নিজের সংকটগুলো উপলব্ধি করতে পারবেন এবং আমি আশা করি, আপনি নিজেকে সংশোধন করতে সচেষ্ট হবেন।

•
যে কারণে পড়া জরুরি:
আপনি যদি একজন তরুণ হয়ে থাকেন, তাহলে বইটি আপনার জন্য। আবার আপনি যদি একজন অভিভাবক হয়ে থাকেন, তাহলেও বইটি আপনারই জন্য। কারণ, কীভাবে আপনার সন্তান মনস্তাত্ত্বিকভাবে অন্যের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে বিপদগামী হচ্ছে এবং কীভাবে তাকে এই বিপদ থেকে আপনি ফেরাবেন সেটি জানার জন্য বইটি পাঠ করা অত্যন্ত জরুরি।

ড. হাসসান শামসি পাশা অতন্ত দরদ দিয়ে পবিত্র কুরআন এবং হাদিসের অনেক ঘটনা সামনে এনে আমাদের সঠিক পথের সন্ধান দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। একজন সফল দায়ির বৈশিষ্ট্যই তো এটা! ফলে মনে হবে, আপনি যেন তার ক্লাসরুমে বসে সরাসরি পাঠগ্রহণ করছেন!

এই সমাজ ও সময় দ্রুত পরিবর্তিত হয়ে যাচ্ছে। এই শেষ জামানায় মানুষ খুব সহজেই নিত্যনতুন ফিতনায় জড়িয়ে পড়ছে। এখনই সময় সচেতন হওয়ার এবং ধ্বংসের দ্বারপ্রান্ত থেকে ফিরে আসার। এই বইটি যুবক ভাইদের সেই ফিরে আসার পথটিই দেখাবে ইনশাআল্লাহ।

বইয়ের শুরুতেই লেখক বেশ দীর্ঘ পরিসরে অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি ভূমিকা লিখেছেন। আমি মনে করি—এই ভূমিকাটিই বইয়ের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ। ভূমিকা পাঠের পর সহজেই একজন পাঠক এর গভীরে প্রবেশ করতে চাইবেন।

•
শেষকথা:
রুহামা পাবলিকেশন-এর অনুবাদের মান বরাবরই প্রশংসাযোগ্য। এই বইটিও তার ব্যতিক্রম নয়। আবু আব্দুল্লাহ আহমাদ খুবই ভালো অনুবাদ করেছেন। পড়তে গিয়ে মনে হয়েছে—যেন অনুবাদ নয়, কোনো মৌলিক বই পড়ছি!
বইয়ের পৃষ্ঠাগুলোর পাশে যে উজ্জ্বল রংটি ব্যবহার করা হয়েছে, তা আমার কাছে তেমন যুতসই বলে মনে হয়নি; কেমন যেন চোখে লাগছে। রুহামা’র অন্য কোনো বইয়ে এই বিষয়টি নজরে পড়েনি।
প্রচ্ছদ বরাবরের মতোই বিষয়বস্তুর সঙ্গে মানানসই; ভালোলাগার মতো।

আল্লাহ যেন ‘ডাক দিয়ে যাই তোমায় হে মুসলিম তরুণ’ বইটিকে বাংলাভাষী মুসলিম জনগোষ্ঠীর জন্য উপকারী হিসেবে কবুল করে নেন। আমিন।

■ বই রিভিউ- ডাক দিয়ে যাই তোমায় হে মুসলিম তরুণ

■ শুরুর কথা-

তরুণরা হলো নতুন জাতি গঠনের কারিগর। তাদের হাত ধরেই আজকের এই ঘুমন্ত মুসলিম উম্মাহ জেগে উঠবে এই প্রত্যাশা সবার। অথচ এই তরুণরাই আজ ঝিমিয়ে পড়েছে। বাতিল শক্তির আগ্রাসনে তারা ইসলাম থেকে বিচ্যুত হচ্ছে। কুরআন সুন্নাহর আলোকে তারা তাদের জীবনকে রঙিন না করে বাতিল শক্তির নানা লাইফস্টাইল ধারণের মাধ্যমে জীবনটাকে কালো বিষাদময় করে তুলছে। যার প্রভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে ব্যক্তিজীবন থেকে সমাজ জীবনে। এর মূল কারণ বাতিল শক্তির বিভিন্ন উপকরণের সহজলভ্যতা এবং অভিভাবকদের অবহেলা। এরই জরুরত হিসেবে খ্যাতিমান লেখক ও দায়ি ড. হাসনান শামসি পাশা তরুণদেরকে ইসলামের সুমিষ্ট ও সুন্দর পথের দিকে আহ্বান করে রচিত করেছেন অনবদ্য এক গ্রন্থ যার বাংলা অনুবাদ “ডাক দিয়ে যাই তোমায় হে মুসলিম তরুণ”

■ বইটিতে যা যা আছে-

বইটি ২৫ টি অধ্যায়ে বিন্যস্ত। প্রতিটি অধ্যায় আবার সুনির্দিষ্ট পরিচ্ছদে সাজানো। বইটিতে তুলে ধরা হয়েছে কয়েকজন যুবকের কালজয়ী অবস্থান এবং তা থেকে আমাদের শিক্ষা লাভ করার প্রয়াস, বর্তমান সময়ে যুবকরা যেসকল অপ্রয়োজনীয় কাজে জর্জরিত তার বাস্তবতা এবং এসকল কর্মকান্ড থেকে বের হয়ে আসার সবক। সময়ের গুরুত্ব, সময়কে কাজে লাগানোর বাস্তব চিত্র, কিভাবে জীবনের প্রতিটি মিনিটকে উপকারী কাজে ব্যয় করা যায় তার ইসলামিক নির্দেশনা। অন্তবর্তীকালীন সময় কাটানোর ব্যাপারে নির্দেশনা, নিষ্ঠবান ও উপকারি বন্ধু নির্বাচনের গুরুত্ব, খারাপ সঙ্গ পরিত্যাগের অপরিহার্যতা, প্রেম ভালোবাসা সম্পর্কে জরুরি দশটি উপদেশ ও উপযুক্ত স্ত্রী নির্বাচনে ছয়টি উপদেশ, স্ত্রীকে সুখে রাখার সবক। আজকের যুবসমাজ কেন পথচ্যুত হচ্ছে তার নয়টি কারণ। যৌন বহির্ভূত আচরণের কুফল, সমকামিতা ও হস্তমৈথুন বিষয়ক আলোচনা এবং এগুলো থেকে বের হয়ে আসার উপায়। অ্যালকোহল, সব ধরনের অনুভূতিনাশক পদার্থ, মাদকদ্রব্য ও ধূমপান বিষয়ক অধ্যায়েগুলোতে এসকল দ্রব্যের অপকারিতা, মাদকাসক্তি থেকে পিতা-মাতা কীভাবে ছেলেকে রক্ষা করবেন তার নসীহত, এগুলো পরিহার করার উপদেশ বাতলে দেয়া হয়েছে। তওবা করতে আগ্রহী যুবকদের উদ্দেশে নসিহত প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া ইমান সম্পর্কে ১২ টি উপদেশ ও আত্মশুদ্ধি ও পরিবর্তন অধ্যায়ে আত্মশুদ্ধিতার পরিচয় এর উপকারিতা এটি অর্জনে আমাদের করণীয়সমূহ আলোকপাত করা হয়েছে। দুনিয়াবিমুখতার স্বরূপ তুলে ধরা হয়েছে। চরমপন্হিদের উদ্দেশে তিনটি নসিহত তুলে ধরা হয়েছে। মাতা পিতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব ও কর্তব্য। সমাজের মানুষের প্রতি আমাদের আটটি আচরণের স্বরূপ বর্ণনা করা হয়েছে। ধর্ম নিয়ে ইসলামের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান তুলে ধরা হয়েছে। কাজের গুরুত্বের প্রতি অবলোকন করা হয়েছে। বর্তমান প্রজন্মের পড়ার প্রতি অবজ্ঞা, পূর্ববর্তী মনীষীদের জীবনী অধ্যয়নে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। আরবি ভাষার অনন্য বৈশিষ্ট্য এর গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। যে বিষয়গুলো যুবকদের সংশয়ে ফেলে এগুলো থেকে পরিত্রাণের উপায় সম্পর্কিত নসীহত প্রদান করা হয়েছে।

■ পাঠ পরবর্তী পর্যালোচনা-

বইটি তরুণদের জন্য একটি গাইডলাইন স্বরূপ। যার প্রতিটি পাতা যথাযথ রেফারেন্স সহিত কুরআন-হাদিস ও সালাফ-সালেহীনদের অমিয় বাণীর আলোকে সুমিষ্টতা পূর্ণ উপদেশমালায় পরিপূর্ণ। বইটির অনুবাদ যথেষ্ট সহজ সরল ও প্রাঞ্জল মনে হয়েছে। বইটির প্রতিটি শব্দচয়ন ও পৃষ্ঠা বিন্যাস যেকোনো তরুণকে আকৃষ্ট করবে নববী আদর্শ জীবনে প্রতিষ্ঠিত করতে ইনশাআল্লাহ।

■ বইটি পাঠে যা যা জানা যাবে-

১। কৈশোর ও যৌবনের উর্বর দিনগুলোতে কিভাবে কল্যাণ ও সাফল্যের সোনা ফলাতে হয়।

২। কৈশোর ও যৌবনের প্রতিটি সংশয় ও প্রশ্নের চমৎকার জবাব।