চরিত্রের সোপান’ বইটি কেনো পড়বেন?
🌺 জীবনের সাথে প্রাণের যে সম্পর্ক, মানুষের সাথে চরিত্রের অনুরূপ সম্পর্ক। ইবাদত-বন্দেগীর পরে চরিত্র মানুষের একমাত্র অপরিহার্য সম্বল; যার পরশে সে উভয় জাহানেই একটি সমৃদ্ধ ও গৌরবময় জীবন গড়তে পারে। চরিত্রের কাছে পার্থিব সম্পদ ও বিত্ত অতি নগণ্য। প্রাচুর্যের বিনিময়ে চরিত্রকে কেনা যায় না। মানুষের সৌন্দর্য বর্ধনে চরিত্রের মত দামী অলংকার আর নেই। পক্ষান্তরে চরিত্র শূন্য মানুষগুলো হয়ে ওঠে সমাজের অমানুষ। সুন্দর এই পৃথিবীকে অশান্ত করে তোলে তারা। তাদের উপস্থিতি অন্যের জন্য অস্বস্তি বয়ে আনে।
সেই চরিত্রের সংজ্ঞা, প্রকারভেদ এবং তা অর্জন ও বর্জনের সঠিক ও সহজসাধ্য পদ্ধতি জানতে পড়তে হবে ‘চরিত্রের সোপান’ বইটি।
🌺 আমরা সবাই মনেপ্রাণে আল্লাহকে ভয় করি ও তাঁর অসীম শ্রদ্ধা হৃদয়ে লালন করি। তবুও আমরা গুনাহ ছাড়তে পারিনা কেনো? কেনো আমরা বারংবার পাপাচারে লিপ্ত হই? কারন আমরা খোদাভীরুতার যথার্থ পদ্ধতি জানিনা। যা আছে ‘চরিত্রের সোপান বইটিতে।
🌺 কে না আল্লাহর রহমতের প্রত্যাশা করে! আমরা সার্বক্ষণ তাঁর রহমতের চাদরে জড়িয়ে থাকতে চাই। তবে কি কাঙ্খিত সেই রহমতের আঁচলে ঠাঁই পাই আমরা? ‘চরিত্রের সোপান’ বইটি পড়লে জানতে পারবো আল্লাহর রহমতের প্রত্যাশী হওয়ার সঠিক পন্থা ও তাঁর সাথে বন্ধন গড়ার প্রীতিময় নির্দেশনা।
🌺 ইবাদতের সময় আমাদের প্রায় সকলের মাঝে এই ওয়াসওয়াসা আসে যে, আমার এই ইবাদত দ্বারা লৌকিকতা হচ্ছে না তো? আমার ইবাদতে শিরকের গন্ধ ঢুকছে না তো? তাই উদগ্রীব হয়ে পড়ি, কী করলে আমার ইবাদত লৌকিকতা ও শিরক মুক্ত থাকবে? এগুলোর সবিস্তর ব্যাখ্যা পাওয়া যাবে বইটিতে।
🌺 সবাই নামাযে একাগ্রতা নিয়ে আসতে চায়। কুরআন তেলাওয়াতে গভীর মনোযোগী হতে চায়। ইবাদতের অমিয় স্বাদ আস্বাদন করতে চায়। কিন্তু ব্যর্থ হয়ে যায় পুনরাবৃত্তি করে। যার সুষম সমাধান রয়েছে এই বইটিতে।
🌺 সুন্নাহ নিজেই দাওয়াহ। কেউ পরিপূর্ণরূপে সুন্নাহ অনুযায়ী চলবে এবং আশপাশের লোকজন তার থেকে দাওয়াত গ্রহণ করবে; যা মৌখিক দাওয়াতের চেয়ে অধিক ফলপ্রসূ। সেই সুন্নাতের বিষয়গুলো মোহনীয় ভঙ্গিতে বর্ণনা করা হয়েছে বইটিতে।
বইটিতে আরও রয়েছে,
🌸 মন্দ চরিত্রের যথোপযুক্ত উপশম।
🌸মন্দ চরিত্র বর্জনে অল্পবয়স্ক ও প্রাপ্তবয়সীদের প্রতিষেধক।
🌸 লৌকিকতা, আত্মম্ভরিতা ও অহমিকার মাঝে সাবলীল পার্থক্য।
🌸 বিনয়ের মাঝে অহংকার কীভাবে আসে?
🌸 অকারণে রাগ ও তার প্রতিকারে কার্যকরী ধ্যান।
🌸 কু-দৃষ্টি, চোখের খেয়ানত ও সৌন্দর্য-পূজারীর সক্রিয় প্রতিকার।
🌸 জিহ্বার বিশটি ক্ষতি কী কী?
🌸 রিয়া তথা লৌকিকতার যথার্থ পরিশোধন।
🌸 রুক্ষ চরিত্র ও কঠোর মনোভাবের মহৌষধ কী?
🌸 মিথ্যা, গালমন্দ, কু-ধারণা ও খেয়ানত সহ প্রয়োজনীয় চরিত্রগুলোর যথাযথ ব্যাখ্যা ও উপযুক্ত দীক্ষা।
আশা করি বইটি আমাদের সবার হৃদয়ে ‘আখলাকে হাসানা’র দ্যূতি ছড়াবে। উত্তম চরিত্র গঠনে উত্তম বন্ধুর পরিচয় দেবে এবং মনের ভিতর ও বাহিরকে আলোকিত করে তুলবে সুন্দর চরিত্রের দীপ্তিময় প্রভায়।
Ruponti Shahrin –
চরিত্রের সোপান
শাহ হাকিম আখতার রাহি.
অনুবাদক : আবদুল্লাহ আল মামুন
আত্মশুদ্ধির জন্য চাই চরিত্রের উন্নয়ন। চরিত্রের উন্নয়নই পারে আত্মন্নয়নকে ত্বরান্বিত করতে। কিন্তু উত্তম চরিত্রের যেমন প্রকারভেদ রয়েছে, তেমনি রয়েছে ধাপ। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উত্তম চরিত্র গঠনের জন্য আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন। আত্মশুদ্ধির জন্য আখলাকের গুরুত্ব অপরিসীম। তেমনি অসচ্চরিত্রের স্তর রয়েছে। যে ধাপে ধাপে অসতর্কতার কারণে নিম্ন স্তরে বান্দাকে টেনে নিয়ে যায়। যার ফলাফল জাহান্নাম।
অথচ এই আত্মশুদ্ধি ও চরিত্র গঠন সম্পর্কে আমরা বেখবর ও উদাসীন।
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন সর্বকালের সর্বযুগের বিশ্বমানবতার জন্য অনুসরণীয় ও অনুকরণীয় উত্তম চারিত্রিক আদর্শের একমাত্র মডেল। যেখানে হাদিস থেকে পাওয়া যায় বিশ্বনবী নিজেই তাঁর চরিত্রের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, اِنَّمَا بُعِثْتُ لِاُتَمِّمَ مَكَارِمَ الْاَخْلَاقِ ‘আমি তো প্রেরিত হয়েছি উত্তম চরিত্রের পরিপূর্ণতা বিধানের জন্য।’ (কানযুল উম্মাল)
আর আল্লাহ তাআলা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের চরিত্রের আদর্শ ও মর্যাদা দিতে গিয়ে কুরআনুল কারীমে বলেন, اِنَّكَ لَعَلي خُلُقٍ عَظِيْمٍ ‘নিশ্চয় আপনি মহান চরিত্রের অধিকারী’। (সুরা ক্বালাম : আয়াত ৪)
বইয়ের বিষয়বস্তুঃ
সকল মুমিন মুসলমানই আল্লাহর রহমতের প্রত্যাশী। কিন্তু মানুষ মাত্রই গুনাহগার। সর্বদা গুনাহের সাগরে নিমজ্জিত মানুষ আত্মন্নয়ন তখনই করতে পারে যখন তার ভেতরে খোদাভীরুতা কাজ করে। আল্লাহ তায়ালা আমাকে সবসময় দেখছেন, শুনছেন এই অনুভুতিই আত্মশুদ্ধির সোপান। আর এই সোপান চরিত্রের সোপান। এই সিঁড়ির শেষ ধাপ জান্নাতুল ফিরদাউস।
হাদিসে এসেছে ”যদি তোমার লজ্জা না থাকে, তাহলে তুমি যা ইচ্ছে তাই কর।” [সহীহ বুখারী হাঃ-৩৪৮৪]
আর তাই লজ্জাশীলতা চরিত্র গঠনের অন্যতম উপাদান। সেই সাথে আল্লাহর দরবারে নিজের পরিশুদ্ধির জন্য সবসময় দুয়া ও মুনাজাত করা, ইখলাস তথা বিশুদ্ধ নিয়তে শুকরিয়া আদায় করা, ধৈর্যধারণ করা, মুরাকাবা বা অন্তরে আল্লাহর ধ্যান-জ্ঞান অর্জন করার মাধ্যমে খালেস দিলে আল্লাহর সাথে বন্ধন দৃঢ় করার মধ্য দিয়ে বান্দার চরিত্র সুন্দর হয়।
সুন্দর চরিত্র সুবাসিত ফুলের ন্যায়। ওয়াদা পালন, নামাজে মনোযোগী হওয়া, কুরআন তিলাওয়াতে মননিবেশ, ছোট ও বড়দের সাথে উত্তম ব্যবহার ও সকল কাজের মাধ্যমে চারিদিকে তার সুবাস ছড়ায়। আল্লাহর বিধান সমর্থনের পর, তাতে সন্তুষ্টি ও নিজেকে সোপর্দ করে প্রার্থনায় রত বান্দা নিজেকে খুঁজে পায় শান্তির আশ্রয়স্থলে। কারণ, আল্লাহর স্মরণ দ্বারাই অন্তরসমূহ প্রশান্ত হয়।” [ আল-কুরআন ১৩ঃ২৮ ]
বইটিতে আরও রয়েছে,
*মন্দ চরিত্রের যথোপযুক্ত উপশম।
*মন্দ চরিত্র বর্জনে অল্পবয়স্ক ও প্রাপ্তবয়সীদের প্রতিষেধক।
*লৌকিকতা, আত্মম্ভরিতা ও অহমিকার মাঝে সাবলীল পার্থক্য।
*বিনয়ের মাঝে অহংকার।
*লোভ ও পার্থিব মোহের প্রতিকার।
*অকারণে রাগ ও তার প্রতিকারে কার্যকরী ধ্যান।
*কু-দৃষ্টি, চোখের খেয়ানত ও সৌন্দর্য-পূজারীর সক্রিয় প্রতিকার।
*জিহ্বার বিশটি ক্ষতি কী কী?
*রিয়া তথা লৌকিকতার যথার্থ পরিশোধন।
*রুক্ষ চরিত্র ও কঠোর মনোভাবের মহৌষধ কী?
*মিথ্যা, গালমন্দ, কু-ধারণা ও খেয়ানত সহ প্রয়োজনীয় চরিত্রগুলোর যথাযথ ব্যাখ্যা ও উপযুক্ত দীক্ষা।
পাঠ পর্যালোচনাঃ
সার্বিক দিক বিবেচনা করলে, আত্মশুদ্ধির জন্য বইটি একটি মিনি গাইড। সুচীপত্র থেকেই আপনি একটি চেকলিস্ট তৈরি করতে পারবেন। অল্পবয়সী ও প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য বইটি একটি প্রেসক্রিপশন ও প্রতিষেধক। চরিত্র সুন্দর করতে গিয়ে আমরা রিয়া বা লোক দেখানো ভালো কাজে পড়ে যাই। এতে আত্মন্নয়ের বিপরীতে নিজের অহমিকাই প্রদর্শন করে ফেলি। শিরক ও রিয়া থেকে মুক্তি লাভের জন্য অনেক টিপস পাবেন। যেগুলো জীবনে কাজে লাগাতে পারলে জীবন সুন্দর। পরনিন্দা ও মিথ্যা বলার মাঝে এক ধরনের পৈশাচিক আনন্দ কাজ করে। আবার নিজেকে ভালো মনে করার দরুণ অন্যকে কটাক্ষ ও গালমন্দ করার প্রবণতাও এসে ভিড় করে। অন্যের দোষত্রুটিও ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখতে পারেন না অনেকেই। এসব থেকে নিমেষেই পরিত্রাণ পেতে দারুণ মেডিসিন। আমানত ও অঙ্গীকার রক্ষা করার মত গুরুদায়িত্বও সামাল দিতে চাই সাজেশন। বইটি রুক্ষ চরিত্র ও কঠোর মনোভাবের মানুষের জন্য ভালো ট্রিটমেন্ট।
তাই বলে, উন্নত চরিত্রের অধিকারীর জন্য কি আমরা এমন বই সাজেস্ট করবো না? অবশ্যই করবো। তাকে তার ভালো কাজের জন্য জান্নাতুল ফিরদাউসের কথা স্মরণ করাতে, ভালো কাজে উৎসাহিত করতে, মনোবল দৃঢ় করতে ও অন্যকেও ভালো কাজে সহযোগিতা করতে চাই ‘চরিত্রের সোপান’-এর মত বই।
ছোটখাট বানান বিভ্রাট ছাড়া তেমন কোনো প্রমাদ চোখে পড়েনি। হাকিমুল উম্মত থানভি রাহিমাহুল্লাহর একটি গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দ্বারা ইতি টানা হয়েছে, যার অনুবাদের ভাষা সহজ ও প্রাঞ্জল।
আশা করি বইটি আমাদের সবার হৃদয়ে ‘আখলাকে হাসানা’র দ্যূতি ছড়াবে। উত্তম চরিত্র গঠনে উত্তম বন্ধুর পরিচয় দেবে এবং মনের ভিতর ও বাহিরকে আলোকিত করে তুলবে সুন্দর চরিত্রের দীপ্তিময় প্রভায়।