জান্নাত একজন প্রকৃত মুমিনের জন্য মহান রবের প্রতিশ্রুত সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ উপহার। উপহার এজন্য যে, কেউ-ই কেবল তার আমলের বিনিময়ে জান্নাতের মতো মূল্যবান বস্তু লাভে সক্ষম হবে না। আল্লাহ অনুগ্রহ করে তার প্রিয়ভাজন বান্দাদের তা উপঢৌকন দেবেন মাত্র। হ্যাঁ, যেকোনো উপঢৌকন পাওয়ার একটা যোগ্যতা অবশ্যই থাকতে হয়, আর তা হচ্ছে যার পক্ষ হতে সেই উপঢৌকন প্রদান করা হবে, তার মন যুগিয়ে চলা, তাকে সর্বদাই খুশি ও সন্তুষ্ট রাখা। সেটা কীভাবে সম্ভব ? তা হচ্ছে যা তিনি পছন্দ করেন, করতে বলেন, তা সম্পাদন করা এবং তার তাবেদারী করা। এক কথায় তার দেওয়া পথনির্দেশিকা মোতাবেক জীবনযাপন করা তথা তাঁর নাযিলকৃত অহী’র ও তার রাসূলের আনুগত্য এবং অনুসরণ। আলোচ্য বইটিতে রসুল (সঃ) এর পথ অনুসরণ করে জান্নাত লাভের পথ সুগম করার নির্দেশিকা বাতলে দেওয়া হয়েছে।
Copyright © 2024 Seanpublication.com
Arafat Shaheen –
চিরস্থায়ী সুখের ঠিকানা জান্নাতে যেতে চায় না এমন মানুষ কি পৃথিবীতে আছে! এর উত্তর হলো—না, নেই। একজন খাঁটি মুমিন—যিনি বিশ্বাস রাখেন মহান আল্লাহ ও তাঁর প্রেরিত রাসূলে, তিনি যেমন জান্নাতের প্রত্যাশা করেন; তেমনিভাবে একজন পাড় নাস্তিক—যার মধ্যে বিশ্বাসের কোনো বালাই নেই, সে-ও মনে মনে জান্নাতের আশা পোষণ করে। কিন্তু সর্বসুখ ও নেয়ামতসমৃদ্ধ জান্নাত তো আর এমনি এমনি পাওয়া সম্ভব নয়! সেজন্য রয়েছে একেবারে আলাদা ও স্বতন্ত্র জীবন পরিচালনা-পদ্ধতি। আল্লাহর পূর্ণ আনুগত্য এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দেখানো পথে চললেই কেবল একজন মানুষ এই অপার নিয়ামত লাভে ধন্য হতে পারে।
ইবনু কাইয়্যিম আল জাওজিয়্যাহ রহ. এই উম্মাহর একজন দরদী মনীষী। তিনি মানুষকে আল্লাহর পথ এবং নবিজির সুন্নাহর দিকে টেনে আনার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন। তিনি অসংখ্য কালজয়ী গ্রন্থের রচয়িতা। হুদহুদ প্রকাশন থেকে প্রকাশ হতে যাওয়া ‘চলো যাই জান্নাতে’ এমনই অসাধারণ একটি গ্রন্থ হবে ইনশাআল্লাহ।
বইয়ের বিষয়বস্তু:
‘চলো যাই জান্নাতে’ বইটির নামের মধ্যেই লুকিয়ে আছে এক অপার্থিব দরদমাখা আহ্বান। জান্নাতে শুধুমাত্র একা গেলেই চলবে না। বরং এখানে সব মুমিনকে নিয়েই যেতে হবে—এই চেতনা তো এখান থেকেই পাওয়া যায়!
পুরো বই ৩০টি শিরোনামের অধীনে বিন্যস্ত হয়েছে। এখানে ইসলামি বিধিবিধানের এমন কিছু বিষয় আলোচিত হয়েছে, যে বিষয়গুলো একজন মুসলিম হিসেবে জানা এবং মেনে চলা প্রয়োজন। শর্ট পিডিএফ পড়ে পুরো বই সম্পর্কে আলোচনা করার সুযোগ নেই। তবে শিরোনামের অধ্যায়গুলো পাঠ করে বইটি সম্পর্কে আগ্রহ জেগে উঠেছে।
যে বিষয়গুলো নিয়ে এখানে আলোচনা এসেছে তার কয়েকটির শিরোনাম হলো— বান্দা মুখাপেক্ষী আর আল্লাহ অমুখাপেক্ষী, বিধান-বিন্যাস, মহা-মূলনীতি, উপকার-অপকার বিধাতার ইচ্ছাধীন, আল্লাহর শোকরিয়া জ্ঞাপন, সব নেয়ামতই আল্লাহর পক্ষ থেকে, আল্লাহর নেয়ামতের ওপর চিন্তাভাবনা করা, জান্নাত-জাহান্নাম : জান্নাতি-জাহান্নামি, জ্ঞান আর কর্মের ভিত্তিতে মানুষের বিন্যাস, পরকাল-যাত্রার ছাউনি।
শিরোনাম দেখে আমরা উপলব্ধি করতে পারা যায়—এখানে আলোচিত বিষয়গুলোর মধ্যে অনেকগুলোই রয়েছে আকিদা-সংশ্লিষ্ট। জান্নাতে যাওয়ার জন্য সবার আগে নিজের বিশ্বাসকে সহিহ করে নেওয়া প্রয়োজন। তারপর সে অনুযায়ী আমল করতে হয়। তাই এই বইয়ে যে বিষয়গুলোর ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
মূল্যায়ন:
‘চলো যাই জান্নাতে’ বইটি যে একটি অসাধারণ বই হতে যাচ্ছে, সেটা আমরা নিশ্চয়ই উপলব্ধি করতে পারছি। বইয়ের বিষয়বস্তু সুন্দরভাবে বিন্যস্ত করার পাশাপাশি এখানে পবিত্র কুরআন এবং সহিহ হাদিসের রেফারেন্স ব্যবহার করা হয়েছে প্রচুর। ফলে বইটির গ্রহণযোগ্যতা বেড়ে গেছে অনেক বেশি।
তবে বইটির প্রচ্ছদ আমার কাছে তেমন যুতসই মনে হয়নি। বর্তমান সময়ে ইসলামি প্রকাশনাগুলো অত্যন্ত উঁচুমানের কাজ করছে প্রচ্ছদ নিয়ে। সেই তুলনায় একে বেশ মামুলি মনে হচ্ছে।
তাছাড়া অনুবাদ আমার কাছে কিছুটা কঠিন মনে হয়েছে। সম্পাদনা করে ভাষাগত দিক দিয়ে আরেকটু উন্নত করা সম্ভব নয়? বিষয়টি হুদহুদ কর্তৃপক্ষ একটু ভেবে দেখবেন আশা করি।
আমি আশা করবো—’চলো যাই জান্নাতে’ বইটি আমাদের জান্নাতের পথে যাত্রায় সহায়ক ভূমিকা পালন করবে ইনশাআল্লাহ।