জীবনসঙ্গীর কাছে নিজের গুরুত্ব ধরে রাখার জন্য কী করা যেতে পারে?
জীবনসঙ্গীর কাছে নিজের গুরুত্ব বজায় রাখতে হলে পরস্পরকে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করুন এবং তা নিয়মিত প্রকাশও করুন। ভালো কাজে পরস্পরের সাথে প্রতিযোগিতা করুন। শুধু তার মুখে একটুখানি হাসির ঝলক দেখার জন্য কিছু করুন। শুধু আপনারা দুজনে বুঝবেন এমন একটি ভাষা তৈরি করুন। আমরা আমাদের রুমের টেবিলে একটা নোটবুক রেখে দিতাম। আমরা আমাদের পরস্পরের পছন্দের বিষয়গুলো, অনুভূতিগুলো, বলতে-চাওয়া কথাগুলো সেখানে লিখে রাখতাম। কথাগুলো আমরা সামনা-সামনি বলতে পারতাম না—ব্যাপারটা এমন নয়; কিন্তু অনেক সময় যে কথা মুখে বলা যায় না তা সহজে লিখে প্রকাশ করা যায়। একে অন্যকে ফুল আর চকোলেট উপহার দিন। মনে রাখবেন, পুরুষরাও কিন্তু ফুল পছন্দ করে। দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো, আপনার সঙ্গীর সবকিছুতেই প্রতিক্রিয়া দেখাবেন না। হজম করতে কষ্ট হলে দশটা লম্বা দম নিন। এরপর ভুলে যান। প্রতিক্রিয়া শুধু প্রতিক্রিয়ারই জন্ম দেবে। অবশেষে সেটা চলে যাবে নিয়ন্ত্রণের বাইরে।
.
আমি জানি আপনি গোটা পরিবারকে বিয়ে করেননি। কিন্তু আমাদের মধ্যপ্রাচ্য ও উপমহাদেশীয় সংস্কৃতিতে যৌথ পরিবার ব্যাপক প্রচলিত।
আপনি যদি জীবনের বাকি সময়টাতে স্বামী বা স্ত্রীকে সঠিক পথে রাখার যুদ্ধে ব্যতিব্যস্ত হয়ে কাটাতে না চান, তা হলে নিশ্চিত করুন, আপনি যে পথে আছেন পরিবারটিও সেই পথেই রয়েছে কি না! একই কথা প্রযোজ্য তাদের জীবনধারা, আচার-আচরণ, খাদ্যাভ্যাস—যেসব বিষয়ে তারা বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন ইত্যাদি বিষয়েও।
একদম নিজের মনমতো হতে হবে এমন কোনো কথা নেই; কিন্তু অমিল কতখানি তা খেয়াল রাখতে হবে। কেননা সেটুকু হয় আপনাকে বদলাতে হবে, অথবা মানিয়ে নিতে হবে। মনে রাখবেন, পরিবর্তন সাধন সবসময়ই কষ্টকর, তাই যত কম ভিন্নতা থাকবে আপনি তত বেশি সুখী হবেন।
Faysal Rumon –
আলহামদুলিল্লাহ্, বিয়ে বিষয়ক বেশ কিছু বই আমার পড়া হয়েছে। এর মধ্যে কিছু বই এমন ছিলো যে – লিখাগুলো বাস্তবতা বিবর্জিত ফ্যান্টাসি আর লুতুপুতু টাইপ গল্প! অবশ্যই ঐ বইগুলোতে কিছু ভাল লিখাও ছিল। কিন্তু সব মিলিয়ে যেন আমার রুচির সাথে যায়নি। তাই অতটা ভাল লাগেনি।
আবার কিছু বই আগাগোড়া পুরোটাই খুব ভাল লেগেছে। সেগুলো ছিল গাম্ভীর্যপূর্ণ, বাস্তবিক, ভাষা শৈলী অসাধারণ বলা যায়। সেই বইগুলোর মধ্যে অন্যতম একটা বই হচ্ছে ‘মির্জা ইয়াওয়ার বেইগ’ এর “বিয়ে স্বপ্ন থেকে অষ্টপ্রহর”।
ফাতিমা মৌ ফ্লাভিকা –
বিয়ে এমন এক পবিত্র বন্ধন যার মাধ্যমে দ্বীনের অর্ধেক পূর্ণতা পায়।বিয়ে হলো চরিত্র পবিত্র রাখার দুর্গ।রব্বের সামনে পবিত্র অবস্থায় দাঁড়ানোর এক মোক্ষম হাতিয়ার,এটি জান্নাতি পবিত্র বন্ধন,ভালোবাসার বৈধ পদ্ধতি।জীবনের এই হালাল বন্ধনকে সুদৃঢ় করে রাখার প্রথম পদক্ষেপ হলো সঠিক সঙ্গী নির্বাচন করতে পারা।ফিতনায় ভরপুর এই পৃথিবীতে আজ হালাল বন্ধনকে ব্যয়বহুল,জটিল এবং কঠিন থেকে কঠিনতর করে ফেলেছে। অথচ,ইসলাম বিয়েকে করেছে সহজ এবং হালাল।
.
ইসলামে বিয়ের ক্ষেত্রে শারঈ বিধি-বিধান,বিয়ে পূর্ববতী প্রস্তুতি, বিয়ের ক্ষেত্রে যেসব বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে।মুসলিম বিয়ের রীতিনীতি,বিয়ের যাবতীয় গ্রহণীয়-বর্জনীয় দিক এবং বিয়ে পরবর্তী দিকনির্দেশনা নিয়ে সামগ্রিক আলোচনার সুন্দর এক কম্বিনেশন নিয়ে সাজানো হয়েছে অদ্ভুত সুন্দর এই ছোট্ট বইটি।
.
.
বিয়েকে যাবতীয় হারাম থেকে মুক্ত করে নবীজির সুন্নাহ মোতাবেক সম্পন্ন করার জন্য চমৎকার দিকনির্দেশনা দেওয়া আছে বইটিতে। বিয়ের পরবর্তী সময়েও কীভাবে দাম্পত্য সম্পর্ককে নিত্য নতুন পন্থায় রঙিন করবেন তারজন্যও কিছু টিপস রয়েছে বইয়ে।
ছোট্ট বইটি সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত এক লাইন পড়লেই বই সম্পর্কে সামগ্রিক ধারণা পাওয়া যাবে,“দাম্পত্য জীবনের সুখ শান্তি কেবল স্বামী স্ত্রীর মন-মানসিকতার উপর নিভর করে।দুজনের মধ্যকার সম্পর্ক যত ভালো হবে বৈবাহিক বন্ধন ততই সুদৃঢ় হবে।”
বিয়ের ক্ষেত্রে ছোট ছোট নসীহাগুলো অনেক ভালো লেগেছে আলহামদুলিল্লাহ।বইটির লেখার ধরনটাও ভালো লেগেছে, প্রচ্ছদও মা শা আল্লাহ। ছোট ছোট নসীহাগুলো পয়েন্টের মাধ্যমে তুলে ধরায় বইটি পড়তে আরো ভালো লেগেছে।সম্পাদক, প্রকাশক সংশ্লিষ্ট সবাইকে আল্লাহ উত্তম প্রতিদান দিক।আমীন।
সিয়ান পাবলিকেশনের এই আশাজাগানিয়া অগ্রগতি সামনের দিকে এগিয়ে যাক বিইযনিল্লাহ!
▪ বই বৃত্তান্ত
বই : বিয়ে (স্বপ্ন থেকে অষ্টপ্রহর)
লেখক:মির্জা ইয়াওয়ার বেইগ
ভাষান্তর:আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ
মুদ্রিত মূল্য : ১৩৫টাকা।
প্রকাশনায় :সিয়ান পাবলিকেশন
Tasnim Kamran –
বিয়েঃ স্বপ্ন থেকে অষ্টপ্রহর
ইবনে ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেন, ‘একে অন্যকে ভালোবাসে এমন দুজনের জন্য বিয়ের মতো উত্তম আর কিছু আমি দেখি না।’ (ইবনে মাজাহ, অধ্যায়: বিয়ে, হাদীস নং- ১৮৪৭)
বিয়ে সম্পর্কিত পড়া এটাই আমার প্রথম বই। কিন্তু মাত্র ৬২ পৃষ্ঠার বইটাতে লেখক সত্যিই সুন্দরভাবে জীবনসঙ্গিনীর প্রেমে বারবার পড়ার মন্ত্র সাবলীলভাবে বলেছেন।
আসলে শুধু লাইফ পার্টনার না, লেখক এমন অনেক পয়েন্ট নিয়ে আলোচনা করেছেন যেগুলো পরিবার পরিজন এমনকি বন্ধু-বান্ধবিদের সাথেও প্রয়োগ করা যায় বা করা উচিত।
দাম্পত্য জীবনে সুখী হওয়ার মন্ত্রগুলো লেখক যখন আলোচনা করছিলেন তখন সত্যিই খায়েশ জন্মাচ্ছিল ৩০ বছর পরেও যেন আমি আমার স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে প্রেমে পড়তে পারি।
সুখী দাম্পত্য জীবনে কী কী ভূমিকা রাখে এমন প্রশ্নে লেখক মোটামুটি তিনটি বিষয়ে ফোকাস করতে চেয়েছেন তা হলো-
১- সত্যবাদিতা
২- যত্নবান হওয়া
৩- পারস্পরিক সম্মানবোধ
এছাড়াও অনুরাগ প্রকাশে পাগলামি করা। উপহার দেয়া। শুধু মেয়েরা না, ছেলেরাও যে উপহার পেলে খুশি হয় এবং বরং মেয়েদের তুলনায় বেশি খুশি হয় সেটাও হয়ত অনেকের ভাবনাতেও থাকে না।
বিয়েঃ স্বপ্ন থেকে অষ্টপ্রহর বইতে লেখক মূলত ২০ টি প্রশ্নের উত্তরের উপর আলোচনা করেছেন। এর মধ্যে আরো একটা ইন্টারেস্টিং বিষয় আমার কাছে লেগেছে যে, দুজনার একটা ভাষা তৈরি করে ফেলা।
‘যে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে এ সম্পর্ক তৈরি হয়ে গেছে তাদের আপনি দেখবেন যে, তারা হয়ত কোনো বিষয় নিয়ে মুচকি হেসে যাচ্ছে, কী কারণে তারা দুজন হাসছে তা কেবল তারাই বুঝতে পারে। হয়তো দেখবেন তারা এমন একটা ভাষায় কথা বলছে যা কেবল তারাই বুঝতে পারছে। তাদের কথাগুলো হয়তো অন্যদের কাছে একেবারেই সাধারণ মনে হয়, কিন্তু তা তাদের পরস্পরের হৃদয় ছুঁয়ে যায়। এটা যদি আপনি গড়ে তুলতে পারেন তাহলে ৩০ বছর পরেও দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে প্রেমে পড়বেন বারবার।’
এ বিষয়টা লিখতে গিয়ে লেখকের আরো একটা উক্তিও অবশ্য মনে পড়ে গেল,
‘আমি প্রায়ই বলি, ‘ঝগড়াটে কাউকে বিয়ে করার চেয়ে একটি ঘোড়া কেনা ভালো; ঘোড়াটি অন্তত বিভিন্ন জায়গায় ঘুরিয়ে আনতে পারতো।’ ‘ঝগড়াটে’ একটা উভয়লিঙ্গ শব্দ; নারী বা পুরুষ উভয়ের খেত্রেই প্রযোজ্য।’
আমার কাছে মনে হয়েছে অল্প কলেবরের বইটিতে লেখক অত্যান্ত মূল্যবান আলোচনা করেছেন দাম্পত্য নিয়ে। যদিও আমার মনে হয়েছে দাম্পত্যের বাইরেও অন্যান্য ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গুলোর খেত্রেও বইয়ের নাসিহাগুলো মূল্যবান মুক্তোর মত।
লেখক মির্জা ইয়াওয়ার বেইগের সম্পর্কে বলতে গেলে এটা আমার পড়া তার প্রথম বই। তবে তার প্রথম বই পড়েই আমি মুগ্ধ হয়েছি সত্যি। প্রকাশকের কথা থেকে লেখকের পরিচয় টুকলে বলতে হয়,
‘মির্জা ইয়াওয়ার বেইগের জন্ম প্রাচ্যে। জীবনের বড় একটা অংশ পশ্চিমে কাটিয়েছেন। কর্পোরেট জগতের বহু ডাকাবুকোর গুরু তিনি। ইসলামের আলোয় আলোকিত এ মানুষটি এমন এক চশমা দিয়ে দুনিয়াটাকে দেখেন যার জুঁড়ি নেই। আদর্শিক পা হড়কানো থেকে উদ্ভূত সমস্যাগুলোকে তিনি ঝানু ব্যাবসায়ীর চোখ দিয়ে দেখেন, ব্যবচ্ছেদ করেন। এরপর ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে সমাধান সাধেন।’
এবার আসি প্রকাশনীর কথায়। সিয়ান পাবলিকেশন সম্পর্কে কিছু বলার নেই আসলে। আজ যে এত সুন্দর সুন্দর প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা কনটেন্ট আর নজর কাড়া লুক পৃষ্ঠা বিন্যাস, সুন্দর সাবলীল বানান এবং রুচিশীল শব্দচয়ন ইসলামী প্রকাশনী-বইয়ে আমরা দেখি তার অনেক অবদান সিয়ান পাবলিকেশনের। যার সূচনা হয়েছিল তাদের হাত দিয়েই।
সত্যি বলতে অনুবাদ পড়ার সময় মনেই হয়নি আমি অনুবাদ পড়ছি। আল্লাহ সিয়ানের কাজে আরো বারাকাহ দান করুন। আমার ব্যক্তিগত রেটিং যদি সার্বিকভাবে দেই বইটা সম্পর্কে তাহলে বলতে হবে, সুন্দর প্রচ্ছদ সুন্দর অনুবাদ, অসাধারণ কিছু নসিহা যা বইটা পড়ে শেষ করার পর বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করতে ইচ্ছে করবে। তাই আমার রেটিং- ৯.৪/১০
‘বিয়েঃ স্বপ্ন থেকে অষ্টপ্রহর’ পড়ার পর আমি উপহার লিস্টে বইটা যুক্ত করেছি। আমার পরিবারের সদস্যদেরকেও যারা বিয়ের উপযুক্ত হয়েছে বা বিয়ে করেছে তাদেরও বইটা উপহার দেয়ার নিয়াত করেছি। শুধু তো দাম্পত্য নয় পরিবারের সকলের সাথে সম্পর্কটা পোক্ত করা প্রয়োজন। আমার অনুরোধ থাকবে বইটা ছেলে-মেয়ে সকলের পড়ার এবং উপহার দেয়ার…
– Tasnim Kamran
Din Muhammad Sheikh –
বিয়ে। ছোট্ট একটি শব্দ। অথচ এতে জড়িয়ে আছে কত্ত আবেগ! কত্ত স্বপ্ন! মানবজীবনের অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি অধ্যায় ‘বিয়ে’। বিয়ে-পরবর্তী জীবনটাকে সুখী দেখতে কে না চায়! কে না চায় এ জগতেই জান্নাতি-সুখ পেতে! অথচ যতটা স্বপ্ন দেখি আমরা, ততটা কি প্রস্তুতি নিই? বৈবাহিক জীবন সুখী করবার উপায় নিয়ে ক’জন পড়াশোনা করি আমরা? ভিন্ন দু’টি সত্ত্বাকে একই সরলরেখায় আমৃত্যু সংঘাতহীন সহাবস্থানের জন্য ক’জনই-বা তদবির করি? ফুরসত মেলে কি?
নাহ! তা হয় না। বস্তুবাদী এ সমাজে তা আর হয়ে ওঠে না। পুঁজিবাদী শিক্ষাব্যবস্থার চাপে পড়ে এ সংক্রান্ত জ্ঞানার্জনের ফুরসত আর মেলে না। পরিণতি : পারিবারিক কলহ, পরকীয়া ও বিবাহবিচ্ছেদের দেদার-স্রোত।
ঠিক এ সময়ে, এ ফিতনার কালে দু’টি আত্মাকে একই সুতোয় বেধে একটি সুখী সংসার গড়ে তোলবার জন্য প্রয়োজন এ সংক্রান্ত প্র্যাক্টিক্যাল ও ইসলামি জ্ঞান। সিয়ান পাবলিকেশন থেকে প্রকাশিত মির্জা ইয়াওয়ার বেইগের রচিত ‘বিয়ে : স্বপ্ন থেকে অষ্টপ্রহর’ বইটি আপনাকে এ ক্ষেত্রে বড্ড সাহায্য করবে, ইনশাআল্লাহ।
▪ বইয়ের বিষয়বস্তু :
ছোট্ট এ বইটিতে মূলত আলোচনা করা হয়েছে বিয়ে-পরবর্তী জীবনকে সুখী করবার উপায়-উপকরণ নিয়ে।
▪ যা আছে বইটিতে :
বইটি শুরু হয়েছে ইসলামে বিয়ের গুরুত্ব সংক্রান্ত আলোচনার মধ্য দিয়ে। বিয়ের কুরআনি নির্দেশনা, বিয়ের প্রধান ও প্রথম উদ্দেশ্য উঠে এসেছে এখানে।
বিয়ের আগে পাত্রপাত্রী বাছাইয়ে কী কী বিষয় আমলে নেওয়া দরকার, সেগুলো আলোচিত হয়েছে বইয়ের ‘বিয়ের জন্য প্রয়োজনীয় কিছু বিষয়’ শিরোনামের অধীনে। এখানে উঠে এসেছে, কী কী ক্রাইটেরিয়া সামনে রেখে পাত্রপাত্রী বাছাই করতে হবে, এ ক্ষেত্রে হাদিস কী বলে – এসব বিষয়গুলো। ইন্টারনেটে কারও প্রোফাইল দেখেই বিয়ের প্রস্তাব পাঠানোর ক্ষেত্রে সতর্কবাণীও শোনানো হয়েছে।
এর পরের শিরোনাম ‘বিবাহিত জীবনকে সুখী করার উপায়’। বইয়ের সবচে’ চমকপ্রদ অধ্যায় এটি। এখানে লেখক ২০টি প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। এসব উত্তরের মধ্যে তিনি তুলে এনেছেন সুন্দর দাম্পত্যজীবনের বৈশিষ্ট্য, দাম্পত্যজীবন সুখী করবার সূত্র, অসুখী দাম্পত্যজীবনে সুখের মোড়ক লাগাবার উপায়, দাম্পত্যজীবনের প্রতিক্ষেত্রে বাবা-মা ও শ্বশুর বাড়ির লোকদের জড়ানোর কুফল, সাংসারিক জীবনে পরস্পরকে ছাড় দেবার গুরুত্ব, স্বামী-স্ত্রীর দায়িত্ব ও কর্তব্য, জীবনসঙ্গীর কাছে নিজের গুরুত্ব ধরে রাখবার কৌশল, সুখী সংসার পেতে অর্থকড়ির অপ্রয়োজনীয়তা, দাম্পত্যজীবনের জন্য ক্ষতিকর কাজ ইত্যাদি।
এরপর বইয়ে একটি বিয়ের খুতবার বঙ্গানুবাদ যুক্ত করা হয়েছে। সম্ভবত এটি লেখকেরই। তবে এটি মূল বইয়ের অংশ কি না, নাকি লেখকের দেওয়া কোনো খুতবার সংযুক্তি, তা বোঝা যাচ্ছে না। এখানেও দাম্পত্যজীবন সুখী করবার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ উপায় বর্ণনা করা হয়েছে। এর মধ্য দিয়েই শেষ হয়েছে অমূল্য এ বইটি।
▪ বইটির কিছু চমকপ্রদ বৈশিষ্ট্য :
• টু দ্যা পয়েন্ট আলোচনা। নেই বর্ণনার বাহুল্য। সোজাসাপটা মূল কথা। তবে এতে আলোচ্য বিষয় মোটেও অস্পষ্ট রয়নি, বরং স্পষ্ট প্রতিভাত হয়েছে। এবং এটাকেই আমার কাছে বইটির অন্যতম চমকপ্রদ বৈশিষ্ট্য মনে হয়েছে।
• সরল ও সংক্ষিপ্ত। সংক্ষিপ্ত হওয়াতে পড়তেও সময় লাগবে না তেমন। ব্যস্তদের জন্য বেশ উপকারী। অল্পতেই অধিক কিছু জেনে যাওয়া যাবে, যা ব্যক্তির দাম্পত্যজীবনকে সুখী ও শান্তিময় করবে, ইনশাআল্লাহ।
• প্র্যাক্টিক্যাল আলোচনা। কল্পকাহিনি ও অবাস্তব রোমান্টিকতায় ভরপুর নয় বইটি। এ সংক্রান্ত বইগুলোতে অনেক ক্ষেত্রেই কাল্পনিক এক দুনিয়ার চিত্র অঙ্কিত হয় চরম অবাস্তব রোমান্টিকতায়, যা বাস্তবিকতা থেকে দূরে। এ বইটি তেমন নয়। বাস্তবতাকে সামনে রেখেই আলোচনা করা হয়েছে এতে, ঠিক যেমন ৮০ বছরের দাদু তাঁর জীবনের সমস্ত বাস্তব অভিজ্ঞতা নিংড়ে দিচ্ছেন।
• কুরআন-হাদিসের দলিল-সম্বলিত। প্রয়োজনীয় স্থানে কুরআন-হাদিস থেকেও দলিল উপস্থাপন করা হয়েছে টুকটাক।
• অনুবাদ প্রাঞ্জল। অত্যন্ত প্রাঞ্জল। বেশ সরল ও সহজবোধ্য। আপনার মনেই হবে না, আপনি কোনো অনূদিত বই পড়ছেন। অনুবাদকের মুনশিয়ানার তারিফ করতেই হয়।
• পৃষ্ঠামান অসাধারণ। সিয়ান পাবলিকেশনের ব্যতিক্রমী বৈশিষ্ট্যই এটি – পৃষ্ঠামানে অনন্যতা। বাইন্ডিংও বেশ। বানান-বিভ্রাট বা মুদ্রণপ্রমাদ নজরে পড়েনি বললেই চলে। ( উল্লেখ্য, আমি বানানে খুব বেশি প্রাজ্ঞ নই। তবে যতটুকু জ্ঞানে কুলিয়েছে, বানানে তেমন একটা ত্রুটি পাইনি।)
▪ বইটির প্রয়োজনীয়তা :
পাশ্চাত্যের আগ্রাসী থাবায় আমাদের পরিবার-ব্যবস্থা আজ ভেঙে খান খান হতে চলেছে। এখনও যদি আমরা না জাগি, বস্তুবাদী চমশা না খুলি চোখ থেকে এবং পৃথিবীটাকে না দেখি ইসলামের আলোকে, তবে ধ্বংসের অতলে যেতে খুব বেশি দেরি নেই আমাদের। আর তাই এ সংক্রান্ত বইপুস্তক পাঠ করা অত্যন্ত জরুরি। এ ক্ষেত্রে আলোচ্য বইটি আমাদের জন্য হতে পারে একটি কার্যকরী হ্যান্ডগাইড। এ সংক্রান্ত অনেকগুলো বইয়ের নির্যাস বলা চলে বইটিকে। তাই বইটির প্রয়োজনীয়তা অত্যন্ত।
বাবা পারেন তার সন্তানের হাতে বইটি তুলে দিতে। বন্ধু পারেন বন্ধুর বিয়ের উপহারে বইটি রাখতে। অবিবাহিতরা পারেন বইটির মাধ্যমে বিয়ের আগেই নিজেকে প্রস্তুত করে নিতে। বিবাহিতরা পারেন বইটি পড়ে টুকটাক ভুলগুলো শুধরে নিয়ে নতুনভাবে জীবন শুরু করতে।
▪ মন্তব্য :
বইটি দারুণ। অত্যন্ত দারুণ। তবে কুরআন-হাদিসের দালিল আরো কিছু উল্লেখ করা হলে বোধ করি আরো ভালো লাগতো। আলোচনার ওজন আরো বাড়তো। আসলে বইটির বর্ণণাভঙ্গি অনেকটা এমন, দাদু তার নাতিকে জীবন থেকে নেওয়া উপদেশমালা শোনান যেভাবে – গরগর করে মূল বিষয়কে বলে যাওয়া।
বইয়ের শেষাংশে একটি বিয়ের খুতবা যুক্ত করা হয়েছে। তবে এখানে একটা ধোঁয়াশা রয়ে গেছে আমার মাঝে – এ খুতবাটি কি মূল বইয়ের অংশ? নাকি মূল বইয়ের সাথে যুক্ত পরিশিষ্ট? এটা কি লেখকই যুক্ত করেছেন? নাকি অনুবাদ করার সময় সিয়ান যোগ করেছে?
দামের ক্ষেত্রে সিয়ান আরেকটু কম্প্রোমাইজ করতে পারে কি না, ভেবে দেখবার জন্য তাদের প্রতি অনুরোধ রইলো।
বইটি আমার কাছে ব্যক্তিগতভাবে এতটাই দারুণ লেগেছে যে, এ সংক্রান্ত বই কাউকে সাজেস্ট করতে গেলে সর্বাগ্রে এটাই রাখি।
▪ একনজরে বইটি :
• বই : বিয়ে : স্বপ্ন থেকে অষ্টপ্রহর
• লেখক : মির্জা ইয়াওয়ার বেইগ
• অনুবাদক : আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ
• প্রকাশনী : সিয়ান পাবলিকেশন
• প্রকাশকাল : চতুর্থ মুদ্রণ, ডিসেম্বর, ২০১৭
• পৃষ্ঠা সংখ্যা : ৬২
• প্রচ্ছদ মূল্য : ১৩৫/-
• কাভার : ফ্ল্যাপ ছাড়া পেপারব্যাক
Umme Suraiya –
বই:”বিয়ে”স্বপ্ন থেকে অষ্টপ্রহর
লেখক:মির্জা ইয়াওয়ার বেইগ
প্রকাশনী:সিয়ান
মূল্য :১৩৫ টাকা
——————————————
“বিয়ে” একটি স্বপ্নের নাম।এটা এমন একটা স্বপ্ন যেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে চাই প্রতিটি নর-নারী।যেই স্বপ্নে শুধু কল্পনার রং মিশে থাকে না, মিশে থাকে বাস্তবতার রং।আর এই বাস্তবতার রং এর সাথে নিজেদের প্রচোষ্টায় গড়ে তুলতে হয় একটি সুখী দাম্পত্য জীবন।
এই বইটি একদিকে যেমন পরামর্শ মূলক অপর দিকে তেমন মোটিভেশনালও বটে।বইটির শুরুতেই একটি গুরুত্বপূর্ণ আয়াতের বিশ্লেষণ দিয়ে শুরু করা হয়েছে। এরপর বিয়ের প্রয়োজনীয় কিছু বিষয় এবং বিবাহিত জীবনকে সুখী করার কিছু উপায় আলোচনা করা হয়েছে এবং সর্বশেষে বিবাহের খুৎবা দিয়ে বইটির ইতি টানা হয়েছে। বিয়েকে পার্থিব জীবনের সুখ ও পরিপূর্ণতার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করার ক্ষেত্রে প্রধান বিষয় গুলো এই বইয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
বিয়ের মতো অনবদ্য একটি আর্শীবাদ দুঃসহ অভিশাপে পরিণত হতে পারে যদি বিয়ের আগের ও পরের কাজ গুলো সঠিক ভাবে সম্পূর্ণ করা না হয়।কুরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী সাজানো দাম্পত্য জীবন শুধু স্বামী-স্ত্রী নয় বরং গোটা সমাজের উপর আল্লাহর অনুগ্রহ বয়ে আনে।সুতরাং বিয়েকে অবশ্যই দ্বীনের মধ্যেই প্রাধান্য দেওয়া উচিত।
সবশেষে বলতে চাই বইটির পেইজ কোয়ালিটি, প্রস্থচ্ছেদ এবং আলোচনা ধরন আমার ভীষণ ভালো লেগেছে। লেখক এবং প্রকাশককে রইল অনেক অনেক শুভকামনা।
রিভিউ দাতা :Umme Suraiya
নাজমুস সাদাত –
এই বইটা পড়ে আমার কাছে অনেক ভালো লেগেছে আলহামদুলিল্লাহ। এই বইটা আমার পক্ষ থেকে বিবাহিত-অবিবাহিত, ছেলে-মেয়ে, যুবক-বৃদ্ধ সবার জন্যই “Most Recommend” and “Must Read” একটা বই। আমি ১০০% নিশ্চিত ভাবে বলতে পারি এই বইটা সবার জন্যই উপকারী হবে ইনশাআল্লাহ। এক কথায় অসাধারণ রকম সুন্দর একটা বই এটি। সবারই পড়া উচিত। অসম্ভব রকম সুন্দর একটি বই, মাশাআল্লাহ!