জীবনটা কেমন যেন! ঘড়ির কাঁটার সাথে ছন্দ মিলিয়ে টিকটিক শব্দে কেটে যায় একজীবনের রঙিন সব বসন্ত। সময়ের পথ-পরিক্রমায় বাঁধা আছে আমাদের জন্ম আর মৃত্যু। সেই জন্ম আর মৃত্যুর মাঝামাঝি সময়ের যে সমষ্টি, তার নামই জীবন! কিন্তু সেই জীবনটা বড্ড অদ্ভুতুড়ে! এই জীবনে আমাদের চোখ মেলে দেখা হয় না সুবহে সাদিকের প্রথম প্রহর। ভোরের পবিত্র হাওয়া গায়ে লাগিয়ে, জীবনের সমস্ত ক্লান্তিকে ঝেড়ে ফেলে আমাদের ছুটে আসা হয় না মিনার থেকে ধেয়ে আসা আহ্বান পানে, যেখান থেকে ভেসে আসে কল্যাণের ডাক। কোনো এক অদ্ভুত কারণে, আমরা যেন ডুবে আছি অবাধ্যতার এক অতল গহ্বরে, যেখানে পৌঁছায় না আলো, ভোরের স্নিগ্ধ কিরণ পায় না যার নাগাল।
তবে কি একটা জীবন ঠিক এভাবেই কেটে যাবে? অন্ধকারের করাল গ্রাসে একটা জীবন কুরে কুরে হবে নিঃশেষ? জীবনের যে মহান উদ্দেশ্য, অনন্ত অবসরের জন্য যে মহাপ্রস্তুতি নিতে আমাদের আগমন, জীবন কি সেই অধ্যায় থেকে বিচ্যুত হবে?
জীবনের সঠিক গতিপথ ভুলে, একটা জীবন যে বিভ্রান্তিতে বিভোর হয়ে আছে, হৃদয়াকাশ থেকে বিভ্রান্তির সেই কালোমেঘ সরিয়ে, জীবনকে তার কক্ষপথে ফেরাতে লেখক আরিফ আজাদের নতুন এবং ভিন্নধর্মী প্রয়াসের নাম ‘বেলা ফুরাবার আগে’।
‘বেলা ফুরাবার আগে’-তে লেখক তার অভিজ্ঞতার ঝুলি থেকে আমাদের জন্য এমন কিছু বিষয় তুলে এনেছেন, যা আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের জন্য একান্তভাবে অপরিহার্য। আমাদের ভুলে থাকা মন, ডুবে থাকা হৃদয় আর বুঁদ হয়ে থাকা অন্তরকে তিনি নতুন করে জাগাবার চেষ্টা করেছেন। হৃদয়ের কোণে, সম্ভাবনার যে সুপ্ত আগুন আমরা লুকিয়ে রাখি, সেই আগুনকে জ্বালানোর জন্যে ‘সলতে’ দরকার। আর সলতে সরবরাহের কাজটা লেখক আরিফ আজাদ যুঁতসইভাবে করার চেষ্টা করেছেন এই বইটিতে।
বইটির মূল কেন্দ্রে আছে আমাদের যুবকশ্রেণি। তবে, লেখকের ভাষায়, বইটি একইসাথে সকল শ্রেণির মানুষের জন্যও। জীবনে বারংবার হতাশ হয়ে পড়া, আপতিত দুঃখ-কষ্টগুলোতে খেই হারিয়ে ফেলা, নিজের নফসের সাথে সংগ্রাম, কিংবা জীবনকে ঢেলে সাজানোর পদ্ধতি, এককথায় সমস্তকিছুর ‘বাণ্ডেল’ বলা যাবে এই বইটিকে। যারা দ্বীন থেকে দূরে, অবাধ্যতা আর অসংলগ্নতায় যাদের একটা জীবন অবলীলায় কেটে যাচ্ছে, ‘বেলা ফুরাবার আগে’ কীভাবে নিজেকে আবিষ্কার করতে হবে, তা নিয়েই এই আয়োজন।
সাওদা সিদ্দিকা নূর –
‘বেলা ফুরাবার আগে
আজ তবে ফেরা হোক নীড়ে…’
নীড়ের ফেরার জন্য লেখক আরিফ আজাদের কী নিবিড় ডাক! এই ডাক তো উপেক্ষা করার মত নয়। তাই তো ‘বেলা ফুরাবার আগে’ বইটিতে লেখকের এই নীড়ে ফেরার আকুতি ভরা ডাক শুনে নীড়ে ফিরছে হাজারো পাখিরা।
বইটি নিয়ে আজ একটু খোশগল্প করতে চাই, তবে খোশগল্পের পূর্বে এমনই এক নীড়ে ফেরা পাখির গল্প বলি। গল্পটা শুনলেই বোঝা যাবে বইটি কতটা কার্যকর।
সে আমার অতি আদরের এক ছাত্রী। ছাত্রী ভালো হলেও আচার-আচরণ যে খুব ভালো এটা বলা যায় না। কথায় কথায় রাগ, আর মুখে মুখে তর্ক তার মজ্জাগত। দুরন্তপনার জন্য আমি কেন, স্কুলের স্যাররা পর্যন্ত অস্থির ছিল। স্কুলের স্যারের সামনে বই ছুড়ে ফেলে বাড়ি আসার রেকর্ডও আছে তার।
কিন্তু এমন কী হলো যে আমার এই দস্যি ছাত্রী আজ পুরোদস্তুর ভদ্র ও বিনয়ী? যে ছাত্রী স্কুলের মঞ্চ কাঁপিয়ে অভিনয় করে এসেছে, সে এখন আগাগোড়া পর্দায় আবৃত। কিন্তু তার এমন কী হলো যে সে এত বদলে গেল?
আমার ছাত্রীর প্রত্যাবর্তনের প্রথম ধাক্কা লেগেছিল এই ‘বেলা ফুরাবার আগে’ বইটি পড়ে। তার পরিবর্তনের কিঞ্চিৎ আশা বুকে রেখে বইটা আমিই দিয়েছিলাম। তারপরের ঘটনা নিজের চোখে দেখেছি। দুরন্তপনা আর ছেলেমানুষি ভরা একরোখা এই মেয়েটা এখন শান্ত, সভ্য ও বিনয়ী। তার এই কাঁচা মস্তিষ্ক এখন অন্যরকম সফলতার মূলমন্ত্র শিখে ফেলেছে। ঝগড়াটে আর উগ্র মেয়েটা এখন আমার কাছে কেঁদে কেঁদে বলে, ‘ আপু এই ইমান নিয়ে কি জান্নাতে যেতে পারব?’
শুধুই আমার ছাত্রী না। আমার যে বান্ধবী আমাকে একদিন বলেছিল, ‘আমার দু’আ করতে ইচ্ছা করে না। আমার ভেতর থেকে দু’আ আসে না’, সেই বান্ধবী বইটা পড়ে আমাকে বলেছিল, ‘আমি আজ দু’আ করেছি। অনেক ভালো লেগেছে। বইটার কথা অনুযায়ী জীবন চালালে জীবনটা বদলে যাবে।’
আমি মাত্র দু’জনকে বইটি পড়তে দিয়েছি। দু’জনের নিকট থেকেই আশাজাগানিয়া ফিডব্যাক পেয়েছি। একজন লেখক হিসেবে আরিফ আজাদ যে কতটা সফল, তার বইটা যে কতটা কার্যকর, তা এই নীড়ে ফেরা গল্পগুলো পড়লেই বোঝা যায়।
কিন্তু যে বই নিয়ে আমি এত হৈ চৈ করছি, যে বইকে এত প্রশংসায় ভাসাচ্ছি, সেই বইটিকে পরিচিত না করাতে পারলে আমার মনটা যে শান্ত হবে না। তাই একটু বই পরিচিতি বলছি।
▪️বইয়ের নাম: বেলা ফুরাবার আগে
▪️লেখক: আরিফ আজাদ
▪️প্রকাশনায়: সমকালীন প্রকাশন
▪️পৃষ্ঠা: ১৮৭
▪️মুদ্রিত মূল্য: ২৮৭ টাকা
◾এবার পাঠ পর্যালোচনা ও পাঠ অভিমতে মন দেয়া যাক:
কুরআন-সুন্নাহ ও সালাফে-সালিহিনদের জীবনীর আলোকে আত্মোন্নয়নমূলক বই এটি। বইটিতে লেখক ১৮টি পাঠ রেখেছেন। প্রত্যেকটি পাঠই যুব সমাজের বর্তমান সমস্যাগুলো মোটাদাগে চিহ্নিত করে ও তার সমাধান দেখায়।
লেখক বইটির প্রথমে কবিতার মতো করে গোটা বইয়ের সারমর্ম ও উদ্দেশ্য তুলে ধরেছেন। আমার রিভিউয়ের শুরুর লাইন দু’টি সেই কবিতাটিরই অন্তিম লাইন।
বইটিতে বিভিন্ন আলোচনার প্রয়োজনে লেখক নিজের জীবন থেকে প্রাসাঙ্গিক কিছু সমস্যা তুলে ধরেছেন। দেখিয়েছেন এইসব সমস্যা থেকে উত্তরণের পথ।
তথাকথিত হারাম রিলেশনশীপ, ক্রাশের নামে চোখের যিনা, হতাশা ও মেকি সুখের পেছনে ছুটে আখিরাত নষ্ট করার পাঠগুলো বেশি হৃদয়কাড়া ছিল।
বেশিরভাগ আত্মোন্নয়নমূলক বইগুলো পড়তে বিরক্তি লাগে। তাই এই বিরক্তি এড়িয়ে যাবার জন্য লেখক কখনো গল্প বলেছেন, অথবা কখনো
সালাফে-সালেহিনদের জীবনী বলেছেন। যার কারণে বইটি সুখপাঠ্য হয়েছে। বইটিতে অতিরিক্ত কঠিন শব্দ নেই, আবার খুব সহজ শব্দও নেই। নির্মল, সুন্দর ও বোধগম্য শব্দ দিয়ে লেখা বইটি পাঠকের হৃদয়কে ছুঁয়ে যায়। বইয়ের ভাষার ব্যবহার দেখলেই বোঝা যায় লেখক ভাষার ব্যবহারে অত্যন্ত খেয়ালি ছিলেন।
বইটি যে শুধু সমস্যা সমাধানের কথা বলছে, তা কিন্তু নয়। বইটি যুবকদের মাঝে লুকিয়ে থাকা অমিত সম্ভাবনার কথাও বলছে।
এরপর বইটির সমস্ত বিষয়বস্তুর সারমর্ম ফুটে উঠেছে বইটির কভারে। কভারটা দেখলেই হৃদয়ের খুব গহীনে কোথায় যেন মৃদু টান লাগে। মনে হয় আমারও বেলা ফুরিয়ে এসেছে। এমন একটা কবরে আমাকেও রাখা হবে। অতএব আমারও ফেরা উচিত। বইটির বাইন্ডিং, ফন্ট, পৃষ্ঠার কোয়ালিটি ছিল বেস্ট।
বইটি পড়ে মনে হয়েছে, বইটি শুধু যুবকরা পড়লেই হবে না, বইটি সবার পড়তে হবে। সবাইকে জীবনের আসল মানে উপলব্ধি করতে হবে। বইটির খারাপ লাগা বলে কিছুই ছিল না।
বইটা সার্বিক দিক মিলিয়ে মাস্টারপিস ও অবশ্য পাঠ্য।
.
.
.
◾বইটি পড়ে ভেতরে যে অনুভূতির অনুরণন হয়েছিল, সেটা না বললে তো আর বইটির প্রয়োজনীয়তা বোঝা যাবে না। তাই একটু পাঠ অনুভূতিও বলছি:
দ্বীনে ফেরার পর সবার প্রথমে আরিফ আজাদ স্যারের বই পড়ি। আর সেখান থেকেই স্যারের বইয়ের প্রতি একটু আলাদা টান কাজ করে। এই বইয়ের ক্ষেত্রেও তেমন হয়েছিল। বইটির প্রতিটি পাঠ আমার জন্য একেকটা এক্সক্লুসিভ ছিল। বইটি পড়ার সময় কখনো কেঁদেছি, কখনো মৃদু হেসেছি আবার কখনো আফসোস করেছি।
বইটির কিছু কিছু পাতা আমার অশ্রুতে সিক্ত হয়েছে, আবার কিছু কিছু পাতা রব্বের প্রতি কৃতজ্ঞতার সিজদার সাক্ষী হয়েছে।
বইটি যখন পড়ছিলাম তখন লেখকের হৃদয় গলানো শব্দগুলো দেখে মনে হচ্ছিল ঝরা মুক্তো। আর এই মুক্তোগুলো আজলা ভরে কোলে তুলে রাখি। হাস্যকর হলেও সত্য যে এই শব্দগুলোর প্রতি খু্ব মায়া কাজ করেছিল। মনে হয়েছিল শব্দগুলো খুব আপন। শব্দগুলো জীবন্ত; হাসছে আবার কাঁদছে, আমাকে ফেরার জন্য ডাকছে।
.
.
.
◾একটা সম্ভাবনার কথা বলে ইতি টানছি:
বইয়ের শুরুতেই লেখক বলেছেন বইটি সাজিদ সৃষ্টির খসড়া। বইটি পড়ে আমিও খুঁজে পেয়েছি যুক্তির ফাঁদে অবিশ্বাসী ফড়িং ধরা সেই সাজিদের নিজস্ব একটি জীবনধারা। যারা হিমুর হলুদ ফেলে সাজিদের সত্যের সফেদ পথে পা বাড়াতে চায়, তাদের জন্য বইটি হবে প্রথম নির্দেশনা। আশা করব বর্তমান স্রোতের বিপরীতে পাল তুলে যুবকরা সাজিদ হয়ে উঠবে। বইটি পড়ে সাজিদে, সাজিদে মুখরিত হয়ে উঠবে আমাদের আশপাশ। বেলা ফুরাবার আগে নীড়ে ফিরবে সবাই।
Muhammad Tamimul Ihsan –
||বুক রিভিউ||
হুমায়ুন আহমেদের নুহাশপল্লীর মতো একটা বাড়ি বানাতে হলে কী পরিমাণ টাকা লাগবে? নিশ্চয়ই অনেক অনেক টাকা, তাই না? আচ্ছা যদি আপনাকে বলা হয় একদিন আপনি সত্যি সত্যিই নুহাশপল্লীর চেয়েও হাজার কোটি গুণ সুন্দর, অপরূপ, অকল্পনীয়, অভাবনীয় প্রাসাদের মালিক হবেন, বিশ্বাস করবেন? ইট আর পাথর দিয়ে নয়, সেই প্রাসাদ হবে মণী-মুক্তোর তৈরি। দৃষ্টিসীমা যতদূর বিস্তৃত হবে, ততদূর আলোকিত হয়ে পড়বে সেই মণি-মুক্তোর ঝলকানিতে। প্রাসাদের নিচে থাকবে ঝরনা।সেই ঝরনার কলকল ধ্বনি আপনি শুনতে পাবেন। সামনে থাকবে অনিন্দ্য সুন্দর ফুলের বাগান। সেই ফুলগুলো আপনি এর আগে আর কখনো দেখেননি। ফুলের গন্ধে ম-ম করবে আপনার চারিপাশ। আপনি চাইলেই সেখানে জোছনা নামবে। বৃষ্টি এসে ভিজিয়ে দেবে আপনাকে। চাইলেই কোকিলের গান, নদীর কলতান আর অরণ্যের সবুজ-সবকিছুই আপনাকে দিয়ে দেওয়া হবে। অনন্তকালের জন্য আপনি হয়ে যাবেন এই অপূর্ব সুন্দর প্রাসাদের মালিক। সেই প্রাসাদের সামনে দুনিয়ার নুহাশপল্লিকে তখন আপনার নস্যি মনে হবে। চাকচিক্য ঘেরা সেই প্রাসাদ দেখে আপনি এতই বিমোহিত, চমৎকিত আর বিস্ময়ভিভৃত হবেন যে, দুনিয়ার নুহাশপল্লির কথা আপনার মনেই থাকবে না।
আপনি এতক্ষণে বুঝে গেছেন আমি কিসের কথা বলছি। পরম আরাধ্য জান্নাত। প্রত্যেক মুমিন মুসলিমের অন্তরে লালিত স্বপ্ন।এ রকম একটি অনিন্দ্য সুন্দর প্রাসাদের স্বপ্ন দেখেছিলেন ফিরাউনের স্ত্রী আসিয়া (আ.)। তিনি আল্লাহর কাছে দুআ করে বলেছিলেন-
“হে আমার প্রতিপালক, জান্নাতে আপনার সন্নিকটে আমার জন্য একটি ঘর নির্মাণ করুন”।[সূরা-তাহরিম,আয়াতঃ১১]
কত অপূর্ব সুন্দর এই দুআ! এই দুআতে তিনি বলেননি, ‘হে আমার মালিক! ফিরাউনের প্রাসাদে এটা-ওটা আছে, জান্নাতেও আমার জন্য সেগুলোর ব্যবস্থা করে দিন। তিনি কেবল আল্লাহর কাছে থাকতে চেয়েছেন। আল্লাহর কাছে কাছাকাছি থাকতে পারার সৌভাগ্যের চেয়ে বড় আর কিছুই নেই। কিচ্ছু না।
জান্নাতে বাড়ি বানাতে হলে কিন্তু লাখ লাখ টাকার দরকার নেই। দৌড়ঝাঁপ দিয়ে জোগাড় করা রাজউকের সার্টিফিকেটও আপনার লাগবে না।নিতে হবে না কোনো মিথ্যার আশ্রয়। কেবল দরকার একটুখানি চেষ্টা। একটু সদিচ্ছা আর একটু আন্তরিকতা। জান্নাতে বাড়ি নির্মাণের কৌশল তো রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের শিখিয়ে দিয়েছেন। সেই কৌশল অবলম্বন করে আমিও চাইলেই অনায়েসে জান্নাতের অনিন্দ্য সুন্দর প্রাসাদের মালিক হতে পারি।
আমাদের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরয করা হয়েছে। ফজর, যোহর, আসর, মাগরিব, ইশা। এই ওয়াক্তগুলোতে ফরয সালাতের বাইরে সাধারণত আমরা আরো কিছু সালাত পড়ে থাকি। সেগুলোকে বলা হয় সুন্নাত এবং নফল সালাত। আল্লাহর রাসুল (স.) বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রতিদিন ১২ রাকাআত সুন্নাত আদায় করবে, আল্লাহ তায়ালা জান্নাতে তার জন্য একটি বাড়ি নির্মাণ করবেন। সেই ১২ রাকাআত সুন্নাতগুলো হলো-ফজর সালাতের পূর্বে দুই রাকাআত, যোহরেরআগে দুই রাকাআত এবং পরে দুই রাকাআত, মাগরিবের পরে দুই রাকাআত এবং ইশার পরে দুই রাকাআত। আমরা যদি নিয়মিত এবং যত্নের সাথে এই সালাতগুলো আদায় করি, তাহালে জান্নাতে একটি বাড়ি পাওয়ার সুসংবাদ দিচ্ছেন স্বয়ং আল্লাহর রাসুল (স.)। কত সহজ তাই না? লাখ লাখ টাকা লাগছে কী? লাগছে কোনো পরিশ্রম কিংবা নিতে হচ্ছে কোনো অসততার আশ্রয়?
আবার ধরুন, কোনো এক বন্ধুর সাথে কথা বলতে বলতে তর্কে জড়িয়ে পড়লেন। কথা কাটাকাটি, বাড়াবাড়ি শুরু হলো। আপনি নিশ্চিতভাবে জানেন যে, আপনি যা বলছেন বা বলতে চাইছেন তা একদম ঠিক ও নির্ভুল। অপরদিকে আপনার বন্ধু যা বলতে চাইছে বা বলছে তা সঠিক নয়। এই মুহূর্তে আপনার করণীয় কী? তর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়া? নাহ। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এভাবে বলেননি। এমন মুহূর্তে তিনি আপনাকে থেমে যেতে বলেছেন। তাই, থেমে যান। চুপ করে থাকুন। তর্ক বেশিদূর গড়ানোর সুযোগ দেবেন না। এতে ফিতনা ছড়ানোর ভয় থাকে এবং ভ্রাতৃত্ব নষ্ট হওয়ারও আশঙ্কা থাকে। এই যে আপনি সঠিক হওয়া সত্ত্বেও চুপ করে গেলেন, এর বিপরীতে আপনার জন্য কী পুরষ্কার অপেক্ষা করছে জানেন? এর বিপরীতে জান্নাতে আপনার জন্য বরাদ্দ হয়েছে একটি অপরূপ সুন্দর বাড়ি।
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আমি সেই ব্যক্তির জন্য জান্নাতের প্রান্তে একটি বাড়ির প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, যে সঠিক হওয়া সত্ত্বেও তর্কে লিপ্ত হয় না’।[সুনানে আবি দাউদঃ৪৮০২]
➡এতটুকুন অংশ “বেলা ফুরাবার আগে” বইটির “মেঘের ওপার বাড়ি ” অধ্যায়ের একটুকরো অংশ।
এভাবেই লেখক আরিফ আজাদ মোট ১৮টি অধ্যায়ের সমন্বয়ে রচনা করেছেন ২০২০ এর বইমেলার অন্যতম বেস্টসেলার এই বইটি।
যেখানে তিনি তরুণদের দ্বীনের পথে উঠে আসার সমস্যা ও বাধা-বিপত্তি সমূহ সম্পর্কে গভীরভাবে আলোচনা করেছেন।
✒সেখানে তিনি সমস্যা ও বাধা-বিপত্তি সমূহ তুলে ধরে,সেগুলোর সমাধান ধরে এগিয়েছেন।বইটিতে তিনি যে শুধু সমস্যা নিয়ে কথা বলেছেন তা নয়,কথা বলেছেন সম্ভাবনা নিয়েও,তরুণ সমাজের ভিতর লুকিয়ে থাকা অমিত সম্ভাবনাগুলোকে তিনি এই বইটার মাধ্যমে জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন সর্বাত্মকভাবে।
✒তরুণদের দ্বীনের পথে ফিরে আসার পথে হারাম রিলেশানশিপ ও জাস্ট ফ্রেন্ড ধরনের রিলেশানশিপ একটা বড় ধরণের বাধা।ফজরের সালাতে জাগতে না পারা,বিপদে অল্পতে ধৈর্য হারিয়ে অস্থির হয়ে ওঠা,জামাতে সালাত আদায়ে অনীহা,চোখের ব্যভিচার,তথাকথিত সুখের পিছনে জীবন পার করে দেওয়া সহ নানান সমস্যা নিয়ে তিনি কথা বলেছেন এই বইতে।
আমাদের আত্ম-বিস্মৃত আত্মা,ভুলের সমুদ্রে ডুবে থাকা অন্তর আর হৃদয় প্রদীপকে জ্বালিয়ে দিতেই তিনি এই বইতে চেষ্টা করেছেন গভীরভাবে।
যারাই বইটি পড়েছেন তাদের ৯০% মানুষই বলেছেন জীবনে নতুন করে ভাবতে শিখিয়েছে বইটি।আলেয়া আর মরীচিকার পিছনে না ছুটে নিজেকে দ্বীনের রঙ্গে,আল্লাহর রঙ্গে রঙ্গিন হতে অসাধারণ কাজ করেছে এই বইটি।
ব্যক্তিগতভাবে প্রচন্ড ভালো লাগার একটি বই।যারা দ্বীনের পথে ফিরে আসতে চায় তাদের জন্য প্রচন্ডরকম সাহায্য করবে এই বইটি।
সবশেষে ভাল থাকুক প্রিয় মানুষগুলো,ভালো থাকুক আমাদের সমস্ত দ্বীনি ভাই-বোনেরা।যাদেরকে ভালবাসি শুধু আল্লাহ ও তার দ্বীনের জন্য।
“ওয়ামা তাওফিকি ইল্লা বিল্লাহ”
■ একনজরে “বেলা ফুরাবার আগে” :
▪︎ লেখক : আরিফ আজাদ
▪︎ বইয়ের ধরণ : আত্ম-উন্নয়নমূলক
▪︎ ব্যক্তিগত রেটিং:৪.৫/৫
▪︎ প্রকাশনী :সমকালীন প্রকাশনী
Meher Afroz –
📗বুকরিভিউ📘
বই:বেলা ফুরাবার আগে।
লেখক: আরিফ আজাদ
প্রকাশনঃ সমকালীন
অনেকে দোকানে গিয়ে মোটিভেশনাল বই খোঁজে।আর সাথে করে নিয়ে আসে বিভিন্ন সেকুলার চিন্তাধারায় বেড়ে উঠা লেখকদের গাদাগাদা বই।ফলশ্রুতিতে যা হবার তাইই হয়। শিক্ষার নামে অপশিক্ষা ছড়ালে।চটকদার বাক্যপ্রলাপ বইয়ে যুক্ত করে দিলেই পাঠকমহলে গ্রহণযোগ্যতা মিলে না।বরং, বুকসেল্ফে তা অকর্মের মতো পরে থাকে।
কিন্তু ইসলামি ঘরানার লেখকবৃদ্ধগণ যখন আমাদের জীবনে ঘটে যাওয়া বা ঘটে যাচ্ছে এমনসব সত্যিকারের গল্প নিয়েই লিখেব। তখন তা হয়ে উঠে জীবন্ত। সর্বজনীন, সর্বকালের শুদ্ধ শিক্ষার মাধ্যম। আরিফ আজাদের লেখা ‘বেলা ফুরবার আগে’ বইটি ঠিক এমনই একটি বই। এই বইয়ের প্রতিটি গল্পে রয়েছে যেন নিজের অগোছালো জীবনকে গুছিয়ে নেওয়ার মোক্ষম বার্তা। আবার নিজেকে শুদ্ধ, সুন্দর এবং শান্তির দিকে বদলানোর প্রয়োজনীয় জ্ঞান উপকরণ।
তাছাড়া, জীবনের মূল্যবান সময় আমরা কোথায় দিচ্ছি?
আমার বা আপনার জীবনে সত্যিকার অর্থে কি প্রয়োজন?আমাদের জীবনটা কেমন হওয়া উচিত?
আমাদের মনে কোন জিনিসটি আত্মতৃপ্তি দেয়?
আমরা কাদের সাথে সম্পর্ক তৈরী করছি এবং সম্পর্ক গুলো তৈরি করার মাধ্যমে সৃষ্টিকর্তা কে ভুলে যাচ্ছি কি না?সৃষ্টিকর্তার নৈকট্য অর্জন করতে পারছি কি না?
এই দুনিয়াবী জীবনে কারা আমার আপনার ভালো চাই মন্দ চাই? এই প্রশ্নগুলো সহ আরো অনেক সুন্দর সুন্দর প্রশ্নের উত্তর সুন্দরভাবে রয়েছে বইটিতে।
পাঠ্যানুভূতিঃ—
এটা এমন একটি বই যে বই পাঠের মাধ্যমে হারাম রিলেশনে থাকা বন্ধুটি আল্লাহর তরে ছেড়ে দেবে প্রেমিকার হাত। গিটারের তারে হাত না বুলালে যে যুবকটির রাতে ঘুম হতো না, সে ছিঁড়ে ফেলবে গিটারের তার। মেয়েটি বাবা- মায়ের প্রতি আরো বেশি অনুরাগী হয়ে যাবে।ইন শা আল্লাহ।
ইসলামের বিধান পালনের লক্ষ্যে বইটির পাঠ্য অনুসরণ করা অত্যাবশকীয়।তাছাড়া বন্ধুকে দাওয়াহ দেওয়ার মাধ্যম হতে পারে বইটি।
রিভিউদাতাঃMeher Afroz